Romantic_Devil
#অন্ত_নীলা
#পর্ব_18
.
.
.
এদিকে শুভ্র বুঝতে পারতেছে না তার কি করা উচিত। মিম কে ডিভোর্স দিবে নাকি কিমের কাছে গিয়ে সরি বলবে? সরি কেনন বলবে? মেরেছে জন্য? অই যে কাজ টা করছে না মেরে উপায় কি? আর অসবের জন্যই বা সরি কেন বলবে? যা করেছে নিজের বউ এর সাথে করেছে। নিজের বউ এর উপর তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আর ডিভোর্স ই বা কেন দিবে? বিয়ের আগে জানলে বিয়েই করত না। এখন ত অই ছেলেও মিম কে নিবে না বলছে। তাইলে এমনি ই নিজের বউ কে ডিভোর্স কেন দিবে? দিবেনা সে।
আপন মনেই কথা গুলো ভাবতে থাকে শুভ্র। এদিকে ফোন যে বেজেই চলেছে বেজেই চলেছে তার দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। ফোন ও সাইলেন্ট শুভ্রর। হঠাত ফোন হাতে নিয়ে দেখে মা ফোন দিছে বাসা থেকে।
-হ্যালো মা।
-হাই হ্যালো পড়ে হবে। এক্ষুণি বাসায় আয়
-কেন মা কি হইছে?
-বাসায় আয় তারপর বলতেছি।
ফোন রাখতেই দেখল মা এর ১৫ টা মিসকল।ওহ শিট এতক্ষন ধরে মা ফোন দিচ্ছে আর আমি মাত্র দেখতেছি? নিজের উপর ই রাগ হয় শুভ্রর। আর কালক্ষেপণ না করে বাড়ির উদ্দেশ্য এ বের হয়ে পড়ে সে। রাস্তায় নাননা চিন্তা শুভ্রর মাথায় খেলা করতে থাকে। মা ত কখনো এত আর্জেন্ট যাইতে বলে না। সব কিছু ঠিক আছে ত? মিম ঠিক আছে ত? নাকি মিমের কিছু হল? কাল ত অমানুষ এর মত মারছি। ডাক্তার ও ত দেখাইনি ও ঠিক থাকবে* কেমন করে।*নিজের উপর আবার রাগ হচ্ছে শুভ্রর। মিম যতটা খারাপ কাজ ই করে থাকুক ওরে ডাক্তার দেখানো উচিত ছিল।
আজ শুভ্র বাইক নিয়ে বেড়িয়েছে। বাইক ত মনে হয় এখন ঝড়ের গতিতেতে চলতেছে। তবুও শুভ্রর রাস্তা শেষ হচ্ছেনা। বাসায় পৌছে বাইকটা কোনো মতে রেখে বাইক থেকে নেমে শুভ্র ভিতরের দিকে দৌড়।
-মা বল এত আর্জেন্ট ডাকলা কেন!
-মিম বাড়ি থেকে চলে গেছে।
-What?
-নে চিঠিটা পড়
শুভ্র চিঠিটা হাতে নেয়। কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠির ভাজ খুলে। চিঠিটা মিমের।
প্রিয় শাশুরি মা,
আমার সালাম নিবেন। আমি আপনার সাথে খুব কম সময় ই থেকেছি। কিন্তু আমি জানি আপনার মত ধৈর্যশীল মহিলা এই পৃথিবিতে কম ই আছে। আপনি আমার মা এর পর ই। আমাকে অনেক টাই নিজের মেয়ে ই করে নিয়েছেলেন। তবুও শুভ্র আর আমার আলাদা ভাবে কেয়ার করতেন। মা ও যে আপনার ছেলে আমি কি আপনার মেয়ে না? কাল রাতে আপনি ত জানতেন ও আমার সাথে কি করতে পারে। আপনি কেন আটকালেন না মা? প্লিজ বলুন কেন আটকালেন না? মা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না আপনার ছেলে কি করেছে। থাক বাদ দিন। আপনার উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। আপনাকে অনেক ভালবাসি মা। এই এত কম* সময়েই আপনার ধর্য সংসারের প্রতি ভালবাসা বুদ্ধিমত্তা* দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমি বড় হলে আপনার মত হব দোয়া করবেন। মা আমি এখান থেকে যাচ্ছি। আপনার ছেলের বউ হিসেবে হয়ত আমি ঠিক মেয়ে নই। ক্ষমা করবেন।
ইতি
আপনার অভাগী বউমা
চিঠিটা পড়ে শুভ্র হা হয়ে আছে। মা এর হাতে চিঠিটা দিয়ে দেয় সে। নিজের রুমে যেতে নিলেই মা আটকায়।
-তুই আমার অনেক খারাপ ছেলে ছিলি মারামারি করতি যা ইচ্ছে তাই করতি কিন্তু সব বাইরে।
তুই কখনো মেয়েদের এইভাবে অপমান ত করিস নি!
আজ নিজের বউ এর সাথে এটা তুই কীভাবে করতে পারলি শুভ্র? আমি তোকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম তুই তার থেলে আরো অনেক বেশি খারাপ। আমি তোকে বিন্দুমাত্র ভালমানুষ বানাইতে পারিনাই। তোর মা হিসেবে আমি সম্পূর্ণ ব্যার্থ।
মা এর কথার উত্তর দিতে পারেনা শুভ্র। মা এর থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে যায় শুভ্র। তার বিছানার উপর আরেকটা চিঠি পড়ে আছে। চিঠিটা নিশ্চই মিমের লিখা!
চিঠিটা নিয়ে আস্তে আস্তে খুলে শুভ্র। হ্যা মিমের ই লিখা,,,
প্রিয় বর্বর স্বামী
আমার সালাম নিবেন। মধ্যযুগীয় বর্বরতা আপনি এখনো ছাড়তে পারেন নি। আপনি নাকি আমায় ভালবাসেন? তবে কাল রাতে আমায় অইভাবে মারলেন কেন? নাকি ভালবাসা এখন মাইর এর মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া শুরু হইছে? আমি এমন এক অভাগিনী যে এত্তগুলা পানিশমেন্ট পাইলাম কিন্তু কেন এই কথাটা জিজ্ঞেস করার সুযোগ টাও পাইলাম না! কে আপনাকে কি বলছে জানিনা। আপনি না আমায় ভালবাসেন? আমায় একবারটি জিজ্ঞেস করলেন না পর্যন্ত আমি কি করছি? আমি আপনাকে মিথ্যা বলতাম? আচ্ছা মিথ্যা বল্লে আপনি সত্য মিথ্যা খোজ নিয়ে নিতেন।
আমার কি মনে হয় জানেন? আপনি আমায় বিন্দুমাত্র ভালবাসতেন না। ইভেন আপনি আমার থেকে বেশি আমার নামে গল্প রচনাকারী কে বেশি ভালবাসেন। কারণ কি জানেন? ভালবাসায় বিশ্বাস থাকে। আপনি ত আমায় বিশ্বাস ই করেন নি। করেছেন অই লোকটাকে!
তাহলে আপনি অই লোকটাকে বেশি ভালবাসেন না আমায় বেশি? নিজে চিন্তা করবেন কিন্তু একবার। আমায় ভালবাসলে এত পানিশমেন্ট দিতে পারতেন? আমি কি করছি? আমি ত এখনো বড়ই হইনাই। জোর করে বিয়ে করার ই কি ছিল আর এইভাবে মারার ই বা কি ছিল।?
আমি আপনার সাথে থাকবনা।
ভাল থাকুন। অনেক ভাল থাকুন। প্লিজ সব কিছু না জেনে কারো সাথে এমন ব্যবহার করবেন না। আদালতেও আসামীকে সুযোগ দেয়া হয়। আপনি ত তাও দেননি আমায়।
আপনাকে একসময় হয়ত ভালোই বেসে ফেলছিলাম। কিন্তু এখন ঘিন্না লাগে আমার নিজেকেই। আপনাকে ভালবাসছিলাম বলে। Now i hate you. Just go to hell with your anger.
ইতি
আপনার ছেড়ে যাওয়া বউ
,
,
,
,
#চলবে
#Romantic_Devil
#অন্ত_নীলা
#পর্ব_19
.
.
.
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মিম চিন্তা করে বের হয়নি কোথায় যাবে কি করবে। কিন্তু এখন রাস্তায় বেরিয়ে সত্যি ই চিন্তা হচ্ছে।বাবার বাসায় ত যাবেনা। বাবার কাছে বেশি না হলে কি অই ডেভিল টার সাথে বিয়ে দিত? আরো বলছে ঠিক মত যেনো সংসার করি। huh সংসার আর অই ডেভিল খাটাসের সাথে? অসম্ভব। কিন্তু কোথাও না কোথাও ত যেতে হবে। মিম নুফতি কে ফোন দেয়,,
-হ্যালো নুফতি তুই কই?
-এখন আমার কই থাকার কথা?
-তুই ভার্সিটি তে ? দেখ তেরা কথা বলিস না আমি বাড়ি ছেড়ে চলে আসছি।
-কি বলিস এসব?
-হ্যা যা সত্যি তাই বলি। আমি আব্বু আম্মুর অইখানে যাবনা কি করব প্লিজ বলে দে।
-মিম তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
-তুই একবার আমায় দেখলে বলবি আমি যা করে ছি সব ঠিক করেছি।
আর শুন খবরদদার অই ডেভিল বা আমার বাসায় যফি তুই ফোন করিস তাহলে আমার লাশ পাবি।
-এই তুই কই আছিস বল তো? আমি আসছি তোকে নিতে।
-আমি ভার্সিটির পেছনের গেট এর কাছে আছি তুই তাড়াতাড়ি আয়।
,,,,, এদিকে মিমএর টেনশন এ শুভ্রর পাগল প্রায় অবস্থা।
ছেলেটা কি সত্যি বলছিল! আমি ত মিমকে একবার বলার সুযোগ ও দেইনি। ছেলেটা যদি মিথ্যে হয়? রাগের বসে এটা আমি কি করে ফেল্লাম। নিজেই নিজের কপাল চাপড়াতে থাকে শুভ্র। নাহ এভাবে চলবেনা মিমকে# খুজতে যেতে হবে। শুভ্র বেড়িয়ে পড়ে মিমকে খুজতে।
,,,,,,,,,, অইত্ত দূরে নুফতি আসছে। আর কয়েক সেকেন্ড তাই ওর দেখা পাব। মিম দাড়িয়ে থাকতে পারতেছেনা। তার শরীর অবশ হয়ে আসতেছে। যেকোনো সময় পড়ে যাবে সে। শরীরের শেষ শক্তি টুকু দিয়ে নিজেকে দাড় করায়ে রাখে মিম।
,,,অইত্ত মিম এর এমন চেহারা হইছে কেন। যতই কাছে যাচচ্ছে নুফতির কাছে মিমের চেহারা টা ততই স্পস্ট হয়ে আসতেছে। মেয়েটা চেহারার একি অবস্থা করেছে। ইশশ। একি মিম কে ত কখনো এইভাবে বুরখা পড়তে দেখিনি। আজ হঠাত বুরখা পড়ল কেন? সব কিছু রহস্য ঘেরা লাগতে থাকে নুফতির কাছে। নুফতি মিমের কাছে যেতেই মিম কিছু বলতে পারেনা। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় নুফতির উপর। নুফতি একটা ট্যাক্সি নিয়ে মিমকে ওর বাড়িতে নিয়ে যায়।
,,,,,,,,-হ্যালো জামাই বাবাজি বল!(মিমের বাবা)
-আংকেল মিম কি আপনার অখানে গেছে?
-না ত মিম ত আসেনি। কেন বাবা সব ঠিক আছে ত?
-আংকেল মিম রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। ফোন টাও সুইচ অফ বলছে দোষ্টা আমার ই কাল একটু বেশি রাগ হইছিল।
-বাবা তুমি চিন্তা কর না। ও রাগ করে বাড়ি পালানোর রোগ আছে। আমি বকা দিলেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেত সন্ধায় ই ফিরে আসবে।চিন্তা করনা অটা নিয়ে।,,,, মিমের কব্বু ফোন রেখে দিল। মিম আগে মাঝেমাঝেই এমন# করত তাই মিমের আব্বুর কাছে ব্যাপারটা নরমাল কিন্তু শুভ্রর কাছে এটা প্রথম। আর শুভ্র যা করেছে তা নিছক বকাবকি নয় যে অভিমান করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবে।
শুভ্র আবার গভীর চিন্তায় ডুবে গেল।
,,,,,,জ্ঞান ফিরে মিম দেখে ও একটা সুন্দর ঘরে শুয়ে আছে। ঘরটা পুরোপুরি সাদা। দেয়াল আসবাবপত্র সব কিছু ই সাদা। সাদা রঙ মিমের খুব পছন্দ। এরকম ই একটা বেডরুম স্বপ্নে দেখত মিম ছোটবেলা। শুভ্রকে যে বলবে তার সাহস হয়নি কখনো। সব কিছু একটু একটু মনে আসছে মিমের। সে ত নুফতির সাথে ভার্সিটির বাইরে দাড়িয়ে ছিল। এখানে এল কীভাবে?
-কি ম্যাম ঘুম ভাংল?(নুফতি)
-না মানে আমি এখানে কীভাবে এলাম?
-আমার কোলে চড়ে!
-কোলে আর তোর ? তুইই আমায় নিতে পারবি? পাটলু কোথাকার।
-আমি মোটেও পাটলুনা। রেগুলার জিম করি। এটা আমার বাসা তোকে আমি এইনে নিয়ে এসেছি। বোরখা পড়ে ঘুমুতে কমফোর্টেবল ফিল করবি না জব্য তোর বুরখা খুলে দিয়েছি। আর তখনি এইসব দেখলাম।(মিমের হাতের দিকে ইশারা দিয়ে অখানে শুভ্রর মাইর এর দাগ) এইসব কি এইবার আমায় খুল্ব বলবি?
মিম আর পারল না। নুফতিকে জড়িয়ে ধরে ঝর ঝর করে কেঁদে দিল।
-শুভ্র মেরেছে আমায়।#
-কি বললি? আমি আগেই জানতাম ছেলেটা একটুকুও সুবিধের নয়। কি থেকে যে কীভাবে তোর বিয়েটা অর সাথে হয়ে গেল আমি কিছুই বুঝলাম না। আমি ভাইয়াকে বলেছি ভাইয়া যেকোনো সময় মেডিসিন নিয়ে আসবে।
-ডক্টর না দেখিয়ে কি মেডিসিন নেয়া যায়?
-কে বলল তোকে ডক্টর দেখায়নি? ডক্টর আংকেল তোকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে গেছিলেন। আর ভাইয়াও বাইরে অফিসে গেল। আসার সময় মেডিসিন আনবে।
-ওহ তোর ভাই ও আছে?
আর তুই যে এমন একটা রাজকীয় বাড়িতে থাকিস কখনো বলিস নি ত?
-হিহি ভাবছিলাম তোকে একদিন নিয়ে আসব। কিন্তু তুই যে এইভাবে আমার বাড়িতে আসবি বুঝতে পারিনি।
মিম প্রসংগ পাল্টাতে বলল,,
-আংকেল আন্টি কোথায়?
-অস্ট্রেলিয়া গেছে পনেরো দিনের মধ্যে আসবেনা। তুই নিশ্চিন্তে এখানে থাকতে পারিস।
বাসায় জানিয়েছিস? তোর আব্বু আম্মু চিন্তা করবে ত।
-করুক চিনন্তা। অই ডেভিলের তুলনায় রাস্তায় থাকা ভাল । ডেভিলের কাছে ছিলাম চিন্তা হয়নি এখানে আসছি বলে তারা চিন্তা য় মরে যাবে?
-কি যে বলিস তুই। নে ফোন নে বাবা মা কে ফোন দিয়ে জানা।
-উফফফফফফ অকে দে।
-হ্যালো বাবা আমি আমার এক ফ্রেন্ড্রের বাসাই আছি। তোমাদের কাছে বেশি হইছিলাম জন্য অই ডেভিলের সাথে বিয়ে দিছিলা তাই তোমাদের অইনে যাইনাই আমার যতদিন ইচ্ছে আমি এখানেই থাকব। আমায় নিয়ে চিন্তা করা লাগবেনা। ডেভিলের তুলনায় এই যায়গাটা স্বর্গ।
এক নিশ্বাসে কথাগুলা বলে ফোন কেটে দেয়য় মিম। তারপর ফোন থেকে সিমটা খুলে ইচ্ছে মত কামড়ে কামড়ে ঢিল দেয়। অইটা খুজে পেলেও অইটা আর ব্যবহারের যোগ্য নয়।
নুফতি মিমের কান্ড দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।
-কিরে মাথার তার ছিড়ল নাকি?
-আগের থেকেই ছিড়া।
-তাই ত দেখছি(হতাস হয়ে)
-কই ফোন দিচ্ছিস।
-ভাইয়াকে বলি আসার সময় তোর জন্য একটা সিম আনবেনি। অইটার যা দশা করলি। কোনো মানুষের সাদ্ধি নেই অইটা ঠিক করার।
,
,
,
,
#চলবে
No comments:
Post a Comment