Friday, October 26, 2018

অদ্ভূত প্রেমের গল্প পর্ব ১৭-১৮

No comments

♥-অদ্ভুত প্রেমের গল্প-♥

পর্ব------১৭\১৮

রীতার চাকরি হয়েছে। একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে। এরা বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো পার্টি থেকে বড়সড় কর্পোরেট সেমিনার এরেঞ্জ করে। রীতা এখানে একজন জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে জয়েন করেছে।

চাকরীটা রীতার খুব দরকার ছিল। বাসায় থাকতে থাকতে সে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিল। ঘর থেকে বের হয়ে সে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। আর অফিসটাও তাঁর খারাপ লাগছে না। সবাই বেশ হাসিখুশি, বন্ধুবৎসল। অফিস এর পর প্রায়ই এখানে ওখানে খাওয়া দাওয়া হয় দল বেঁধে। এটাও কাজেরই অংশ। এ এক অন্য স্বাদ। নিজেকে সে অন্যভাবে আবিষ্কার করছে। আগে রীতার জীবন ছিল ভার্সিটি আর বাসা। তাও এর মাঝে ছিল মায়ের কড়া অনুশাসন। ঠিকভাবে যেন নিশ্বাস ফেলা যেত না। ক্লাস এর অন্যান্য মেয়েরা ঢাকার বাইরে থেকে এসে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করত। আর রীতা ঢাকার মেয়ে হয়েও সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি পেত না। এই চাকরীটা হচ্ছে রীতার বড় হওয়ার সার্টিফিকেট। কারণ মা নাজমা হক মেয়ের চাকরী করার বিপক্ষে নন। বরং মনে মনে চাইতেন মেয়ে চাকরী করুক। চাকরী করলে নিজের পায়ের মাটি শক্ত হয়। নিজে চাকরী করতে পারেননি। এ নিয়ে তাঁর মনে আক্ষেপ আছে। তবে জীবনের আর বড় বড় আক্ষেপের চেয়ে এই আক্ষেপ নগণ্যই বলা যায়। সুতরাং মেয়ে চাকরী করছে এতে নাজমা হক খুশি। মায়ের খুশি রীতার জন্য অলিখিত সার্টিফিকেট। নইলে সে মনে শান্তি পায় না। যেমন পুলকের ব্যাপারটা নিয়ে সে অনেক অশান্তিতে আছে। বেশ অনেকদিন সে বাসায় এ নিয়ে চিন্তা করল। কতকিছু কতভাবে চিন্তা করল। কিন্তু কিছুতেই কোন কূলকিনারা পেল না। একটা সময়ে এসে সে এটা নিয়ে ভাবনা চিন্তাই বন্ধ করে দিল। যা হোক হবে!! আর ভালো লাগে না। কপালে যদি থাকে তাহলে পুলকের সাথে তাঁর বিয়ে হবে। নয়তো হবে না। তখনই চাকরীটা যেন তাঁকে আরো সাহায্য করলো। এখন সে অফিস এর সময়টা কাজ করে উপভোগ করে কাটিয়ে দেয়। আর বাসায় গিয়ে খুশি মনে সবার সাথে অফিসের গল্প করে, মাকে কাজে সাহায্য করে আর ছোট বোন রীতার সাথে খুনসুটিতে মাতে। হ্যাঁ, পুলকের সাথে আলাপ কমে গেছে। ফেসবুক এ নয়তো এসএমএস এ। ফোনে অফিস এ টুকটাক। বাসায় আসলে তো আর ফোনে কথা বলার যো-ই পাওয়া যায় না। পুলকের ঘটনা জানার পর থেকে মা ফোন আসলেই সরু চোখে তাকায়। তাই পুলকের সাথে কথা এসএমএস এই বেশি হয়। পুলক এ নিয়ে কোন অভিযোগ করে না। অন্যায় রাগ পুলকের মধ্যে নেই বললেই চলে। হ্যাঁ, এখন যদি রীতা সিনেমা দেখতে গিয়ে পুলকের সাথে কথা না বলে তাহলে পুলক মহাশয়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে। ঝগড়াঝাঁটি করে এক সা করবে। সেই রাগ কবে ঠাণ্ডা হবে রীতাও জানে না। প্রথম প্রথম এ ধরনের রাগ ঠাণ্ডা হতে ২-৩ দিন সময় লাগত। কিন্তু যেখানে আসলেই সমস্যা। সে বেলায় পুলক সব সময়ই আন্ডারস্ট্যান্ডিং। সামনে মা। পুলকের এসএমএস এর জবাব দেয়া যাচ্ছে না। শুধু একবার কোনাভাবে শুধু এসএমএস করলেই হবে যে '‘মা'’। ব্যাস!!! আর কিছু না! পুলক আর এ নিয়ে কোন সমস্যাই করবে না। মাঝে মাঝে রীতার মনে হয় সে পুলককে ঠকাচ্ছে। রীতার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে সে পুলককে আরো কত সময় দিত। রীতা তো আর তা দিতে পারে না।

পুলক বেশ খুশি হয়েছে রীতার চাকরি পাওয়াতে। রীতা বাসায় থেকে থেকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল। ওঁর জন্য খুব দরকার ছিল অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকা। পুলক এখন আর রীতাকে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলে না। সে বুঝতে পারে রীতা এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ডিস্টার্বড। আরো একটু সময় যাক। রীতার অস্থিরতা কমুক। রীতাকে অস্থির দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। রীতার যে কোন সমস্যা তো তারই সমস্যা। রীতার চাকরী পাওয়াতে পুলক ভেবেছিল এখন থেকে তাঁর আর রীতার বেশ ঘন ঘন দেখা হবে। এটা ভেবেও সে খুব খুশি হচ্ছিল। কিন্তু আদতে তা হচ্ছে না। লাঞ্চ টাইম এও রীতা সময় করে বের হতে পারে না। অফিস এর পর যাও দুএক দিন দেখা হয় তখন রীতার বাসায় যাওয়ার খুব তাড়া থাকে। দেরী হলে মা বকবে। পুলক মেনে নেয়। একটু একটু অভিমান জমতে চাইলেও সে জমতে দেয় না। বাসায় সমস্যা হলে রীতারই মন খারাপ হবে। রীতার মন খারাপ হোক এটা সে চায় না।
কখনো চায় না......

--চলবে.....

পর্ব-----১৮

‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নামে মুনীর চৌধুরীর একটা নাটক আছে। নাটকের একটা সংলাপ খুব জনপ্রিয়। সংলাপটা মানুষ কারণে অকারণে ব্যবহার করে। ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়’। এখন মানুষ যে বদলায় এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মানুষ কখন বদলায়? মানুষ বদলায় পরিস্থিতি বদলের সাথে সাথে। জেলে বন্দি থাকা মানুষ এক রকম। সেই একই মানুষ মুক্তি পেলে অন্য মানুষ। দুঃখে থাকা মানুষ এক রকম। আবার সেই একই মানুষ দুঃখ কাটিয়ে উঠলে অন্য মানুষ। পরিস্থিতি বদল। মানুষ বদল। নিজের বদলে যাওয়া সম্পর্কে মানুষ নিজেই অবগত না। কারণ পরিস্থিতির বদলে যাওয়া সম্পর্কেও মানুষ আগে থেকে বলতে পারে না। এমতাবস্থায়, আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই বলতে পারি যে মানবজাতি একটি অননুমেয় জাতি।

চাকরীর আগে রীতার জীবন ছিল অসম্পূর্ণ। সেই অসম্পূর্ণ জীবন পূর্ণ হয়েছিল পুলকের মত একজনকে পেয়ে। যে তাঁর জীবনের সব সমস্যাগুলোর ভার নিয়ে নিয়েছিল। রীতার কষ্ট হলে রীতা সেই কষ্টের ভারটা পুলকের কাঁধে রেখে হাল্কা হতে পারত। তাঁর তথাকথিত বন্দি জীবনে পুলকই ছিল আশ্রয়।

এরপর চাকরী পাওয়ার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটল। রীতার সামনে খুলে গেল নতুন জগৎ। যে জগতে পুলক আর তাঁর মা ছাড়াও বহু লোক আছে। যে দুনিয়াতে সময় কাটালে সব দুশ্চিন্তা ভুলে থাকা যায়। ততদিনে ‘পুলক’ নামক ব্যক্তিও তাঁর দুশ্চিন্তার তালিকার মধ্যে ঢুকে গেছে।

প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এমন একজন থাকে যার অনুমোদন ছাড়া সামনে এগোতে ঠিক সাহস হয় না। মনে যেন একটা কামড় লেগে থাকে। হতে পারে সেই মানুষটি আমাদের মা-বাবা, বন্ধু অথবা এর চেয়েও কাছের কোন মানুষ। কিন্তু এই কাছের মানুষের সংখ্যা যদি একের বেশি হয় আর তাঁদের মতামত যদি একই রকম না হয় তখন হয় একটি বিরাট সমস্যা।

রীতার কাছে পুলক আর তাঁর মা এরকমই দুজন মানুষ। যাদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব না। তাই সে এসব থেকে যতদূরে থাকা যায় থাকছে। অফিস করে দেরী হলেও মা এখন আর তাঁকে কিছু বলে না। এখন মেয়ে জব করে। মেয়ে বড় হয়েছে। তাও মেয়েকে জিজ্ঞেস করে-

-কীরে!! এত দেরী কেন?

-ওই শেষ দিকে আরিফ ভাই প্ল্যানিং এর ডিটেইলস জানতে চাইল। তারপর সবাই মিলে FFC তে কফি খেলাম। তাই দেরী হয়ে গেল।

নাজমা হক কিছু বলেন না। তবে তাঁর মাঝে কোন অসন্তোষ দেখা দেয় না। অফিস এর কলিগদের সাথে হাল্কা মেলামেশা তাঁর কাছে দোষনীয় মনে হয় না। খালি মৃদু স্বরে একবার বলেন-

-ভালো!!! অন্য কিছু না করলেই হলো।

কথাটা রীতা শুনেও না শোনার ভান করে চলে যায়।

যতক্ষণ মেয়ে পুলক নামক ছেলেটার থেকে দূরে থাকবে ততক্ষণ তাঁর কোনকিছুতেই আপত্তি নেই।

পুলকও আস্তে আস্তে রীতার পরিবর্তনগুলো টের পাচ্ছে। সে রীতাকে বোঝার চেষ্টা করছে। এমন একটা সময় ছিল যখন পুলককে কেউ মেনে নিতে পারত না। পুলকের মনে হত তাঁর জন্য এই পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে তাঁকে বুঝবে। সেই সময় রীতা তাঁর জীবনে এসেছিল। সে যেমন তেমন করেই। এখনকার পুলক আর আগের মত চট করে রেগে যায় না। সে বড় হয়েছে। এই ‘বড়’ সে হয়েছে রীতার সহযোগিতায়। সে এখন ঘটনার পিছনের ঘটনা বোঝার চেষ্টা করে।

রীতার সাথে তাঁর আজকাল ওইভাবে ফোনে কথা হয় না। এমন না যে আগেও খুব হত। কিন্তু এটা নিয়ে কখনোই পুলকের অভিযোগ নেই। বাসায় সমস্যা হচ্ছে। যখন রীতা সুযোগ পাবে তখন ফোন করবে। এটা নিয়ে অশান্তি করার তো কিছু নেই। হ্যাঁ, বাইরে আগে দেখা হত ভালই যখন রীতার ক্লাস থাকত। এরপর তো রীতা আর বাইরে তেমন বের হত না। তাই দেখাও হত না। এটা নিয়েও কেন জানি পুলকের তেমন অস্থিরতা ছিল না। এই পুরো সম্পর্কটাতেই পুলকের মধ্যে একটা নিরাপত্তাবোধ ছিল। ‘নিরাপত্তাবোধ’ শব্দটার বদলে আমরা যদি ইংরেজি শব্দ ‘secure’ ব্যবহার করি তাহলে হয়তো ব্যাপারটা আরো ভালো বোঝা যাবে। এরপর পুলকের কথা রীতা ওঁর মাকে বলল। এতে মাসখানেক রীতার খুব খারাপ সময় গেল। সৌভাগ্যবশত রীতার চাকরিটা হয়ে গেল।

কিন্তু এখন মাঝে মাঝে দেখা হলেও রীতাকে কেমন যেন অচেনা লাগে। এ যেন তাঁর আগের রীতা নয়। আগে রীতা অনেকদিন দেখা না হলে অস্থির হয়ে যেত। দেখা হওয়ার পর খুশিতে কিছুটা আবেগী হয়ে যেত। অনেকক্ষণ হাত ধরে বসে থাকত। কিন্তু এখন কোথাও যেন কিছু একটা গরমিল আছে। কিছু একটা নেই। কি নেই!!! সেটাই পুলক ধরতে পারছে না। পুলক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রীতাকে কত কিছু জিজ্ঞেস করে। এটাও নতুন। আগে রীতাকে তাঁর এত কিছু জিজ্ঞেস করা লাগত না। রীতা নিজে থেকে তাঁকে সব বলত। মাঝে মাঝে পুলক একটু হতাশ হয়ে যায়। হতাশা থেকে আসে রাগ। নিজেই নিজের রাগকে প্রশমিত করে। প্রশমিত রাগ থেকে আসে স্থবিরতা। সে কিছু বুঝে উঠতে পারে না।

আজকাল রীতার বাইরে বেশ পার্টি থাকে। সেরকমই এক পার্টি হচ্ছে পিজা হাট এ। পুলক রীতাকে ফোন দিল।

-হ্যালো!!

-হ্যাঁ, বল।

-কোথায় তুমি?

-আমি একটু পিজা হাট এ। অফিস এর কলিগদের সাথে আছি।

-আমি যে আজকে তোমার সাথে দেখা করতে চাইলাম। তুমি তো বললে আজকে বাসায় তাড়া আছে।

-হ্যাঁ ছিল। বাসায় বলে দিয়েছি ফোন করে যে আসতে দেরী হবে।

রীতার স্বর ঠাণ্ডা। কোন অপ্রস্তুতকর ভাব নেই গলায়। যেন এটাই স্বাভাবিক। পুলকের খুব রাগ হওয়ার কথা ছিল। খুব চেঁচানোর কথা ছিল। রাগে পাগল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রীতার ঠাণ্ডা নিঃস্পৃহ গলায় পুলক যেন অনুভূতিহীন হয়ে গেল। কার কাছে রাগের দাবি জানাবে!! এ তো তাঁর চেনা কাউকে মনে হচ্ছে না। এ অন্য কেউ। ‘ও আচ্ছা’ বলে ফোন রেখে দিল। শুরু হল পুলকের অভিমান জমা।

প্রিয় মানুষকে খুব বেশী অভিমান করতে দেওয়া উচিৎ না। কারণ একটু একটু করে অভিমান জমে পাহারসম অভিমান জমা হয়। সেই পাহাড় সরানোর ক্ষমতা আমাদের আর থাকে না।

রীতা জানে এসব। সে জানে সে পুলকের সাথে ঠিক করছে না। কিন্তু তাঁর জীবনের এত জটিলতা আর ভালো লাগছে না। সে সব ঝামেলা থেকে মুক্তি চায়। যেখানে তাঁকে পুলক আর তাঁর মায়ের মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নিতে হবে না। যেখানে তাঁর কোন মানসিক অশান্তি থাকবে না। একমাত্র কাজের মধ্যে, কাজের মানুষদের সাথে থাকলে সে এসবকিছু ভুলে থাকতে পারে। তাই সে যতক্ষণ পারে বাইরে কাটায়। এতে করে যে তাঁর আর পুলকের মধ্যেকার সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এটাও সে বুঝতে পারছে। কিন্তু তাঁর কিচ্ছু করতে ইচ্ছা করছে না। পুলক অভিমান করে আছে। একটা ফোন করলেই পুলকের সব রাগ অভিমান পানির মত গলে যাবে। সব জানে সে। কিন্তু রীতার কিচ্ছু করতে ইচ্ছা করছে না। কেন করছে না। তাও সে জানে না।

এক সপ্তাহ হয়ে গেছে পুলক রীতাকে কোন ফোন দেয় না। রীতা মাঝে মাঝে পুলককে ফোন এসএমএস করে। পুলক খুব ফরমালি রিপ্লাই করে। যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু পুলক বেশিক্ষন এই মাইন্ড গেম খেলতে পারলো না। পুলক সেই মানুষদের দলে যারা মনের ভিতর রাগ অভিমান জমিয়ে রাখতে পারে না। যখন রাগ হল চিল্লাচিল্লি করে ঠাণ্ডা। রীতার সাথেও তাই করত। কিন্তু এখন তো তাঁর রাগ অভিমানকে রীতা বুঝতেই পারছে না। নাকি বুঝতে চাইছে না।

পুলক রীতাকে একটা মেইল করল.....

না বলা ভালোবাসা পর্ব ১০

1 comment

❤️না বলা ভালোবাসা❤️
পর্বঃ-১০
লেখিকাঃ-সামা
তিথির আসার পর থেকেই সামার দিনগুলো যেন দেখতে দেখতেই কেটে যায়।মাঝে মধ্যে তানজিলের বাবা মাও এসে কিছুদিন করে থেকে যায়।তাই বেশ ভালোই চলছিলো সামা আর তানজিলের সংসার জীবন কিন্তু প্রায় কিছুদিন ধরেই সামার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।কিছু খায় না,কোথাও যেতে চায় না,বেশিখন বসে আর আগের মতো গল্প করে না।যখনই একটু সময় পায় তখনই বিছনায় নিজের শরীর ছেরে দেয়।সামার এমন হঠাত পরিবর্তনে তানজিল আর তিথি দুইজনি খুব চিন্তায় পরে যায়।সকালে খাবার টেবিলে বসে তানজিল সামা আর তিথিকে উদ্দেশ্য করে বলে........................
তানজিলঃ-তোমরা দুইজন রেডি থেকো আজকে............বিকেলে তোমাদের নিয়ে বের হবো
সামাঃ-হঠাত এই প্ল্যান কেন????
তানজিলঃ-প্ল্যান তো হঠাত করেই হয় আর তোমাদের নিয়ে অনেকদিন বাইরে যাই না তাই ভাবলাম আজকে যখন আমার ছুটি আছে একটু ঘুরে আসি কোথাও তোমাদের নিয়ে
সামাঃ-ওহহ
তিথিঃ-কিন্তু ভাইয়া আমার তো এক্সাম শুরু হবে কালকে থেকে আমি কিভাবে যাবো
সামাঃ-প্রবলেম নাই আমরা বেশিখন থাকবো না
তিথিঃ-না ভাবি তাও.........এমনিতেও অনেক পড়া জমে আছে আল্লাহই জানে কখন এইগুলা শেষ করবো
সামাঃ-তাহলে থাক............তোমার এক্সাম শেষ হলে একসাথে যাবো সবাই
তিথিঃ-আরে না না ভাবি...............তোমরা দুইজন যেয়ে আজকে ঘুরে আসো আর আমার এক্সাম শেষ হলে না হয় আবার যাবো
তানজিলঃ-হমম ঠিকই তো বলছে তিথি............আজকে আমরা দুইজন যাই ওর এক্সাম যখন শেষ হবে তখন ওকে নিয়ে আবার যাবো
সামাঃ-তাই বলে কি ওকে ঘরে একা রেখে যাবো?????
তিথিঃ-উফফ ভাবি আমি কি বাচ্চা মেয়ে নাকি যে তোমরা আমকে নিয়ে এত ভয় পাচ্ছো????
তানজিলঃ-একা থাকতে পারবি তো তুই????
তিথিঃ-ভাবি থাকতে পারলে আমি কেন পারবো না?????
সামাঃ-থাক তিথি অন্যদিন যাবো এমনিতেও আমার তেমন একটা ইচ্ছা নাই
তিথিঃ-ইচ্ছা নাই মানে...............কয়দিন আমি নোটিশ করতেছি ভাবি তুমি কেমন যেন হয়ে গেছো আর আগের মতো আমাদের সাথে গল্প করো না এমন কি ঠিক মতো খাও ও না.........কি হইছে তোমার বলো তো আমাকে
সামাঃ-আরে না কি বলতেছো
তিথিঃ-তাহলে আর কোন কথা না ভাবি প্লিজ তোমরা দুইজন যাও
তানজিলঃ-তিথি যখন এত করে বলতেছে তাহলে যাই না চলো আর বেশিখন থাকবো না আমরা
সামাঃ-হমম
অবশেষে তিথির অনেক জোরাজোরিতে সামা বাইরে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায়।একটা আকাশি কালারের শাড়ি পরে সামা আর তানজিল সামার শাড়ির সাথে মিলায়ে পাঞ্জাবি।এরপর দুইজন বের হয়ে যায়।আজকে সামার শাড়ি পরার একদমই ইচ্ছা ছিলো না শুধু তানজিলের জোরাজোরি করার কারণেই সে শাড়িটা পরছে।
এখন সামা আর তানজিল মুখোমুখি হয়ে একটা রেসটুরেন্টে বসে আছে।তানজিল সামার পছন্দ মতো সব খাবারই অর্ডার করছে কিন্তু সামা একটা খাবারও মুখে তুলে দেখতেছে না।আর সামা না খাওয়ার জন্য তানজিলও চুপ করে বসে সামার দিক তাকায়ে আছে।তাকায়ে আছে বললে ভুল হবে সে তো বসে বসে তার বউয়ের আজব সব কান্ডকলাপ দেখতেছে।সামা তার এক হাত দিয়ে নাক ধরে বসে আছে কিন্তু এইখানে খাবারের গন্ধ ছাড়া আর বাজে কোন গন্ধই নাই তাও সামা কেন যে নাকে হাত দিয়ে বসে আছে এই হিসাব তানজিল কিছুতেই মিলাতে পারলো না।তাই সে সামাকে বলেই ফেলে...........................
তানজিলঃ-আই কি হইছে তোমার এইভাবে নাকে হাত দিয়ে রাখছো কেন????
সামাঃ-গন্ধ
তানজিলঃ-কিসের গন্ধ????
সামাঃ-এই যে খাবারের
তানজিলঃ-খাবারের জায়গায় তো খাবারেরই গন্ধ থাকবে
সামাঃ-আমার একদম ভালো লাগতেছে না এই গন্ধ
তানজিলঃ-কি বলো কত সুন্দর গন্ধ আমার তো নাকে যাওয়ার সাথে সাথেই খুদা লেগে গেছে
সামাঃ-তো খাও না করলো কে শুনি
তানজিলঃ-তুমি না খাইলে আমি একা বসে কিভাবে খাই
সামাঃ-আমার বমি আসতেছে এই গন্ধে আমি খেতে পারবো না
তানজিলঃ-কি বলো...............সব তো তোমার পছন্দের খাবার
সামাঃ-উফফ বললাম তো বমি আসতেছে আমার আর একটা কথা বললে কিন্তু এইখানেই তোমার গায়ের উপর করে দিবো
তানজিলঃ-আচ্ছা বাট কি করবো এতগুলা খাবার???
সামাঃ-কি করবা মানে...............বাসায় যে তিথি আছে ভুলে গেছো.........ওর জন্য সব প্যাক করে নিয়ে চলো
তানজিলঃ-আচ্ছা এত রাগতেছো কেন তুমি?????
সামাঃ-উফফ থাকো তুমি বসে আমি নিচে গেলাম
তানজিলঃ-আচ্ছা দাড়াও আমি খাবারগুলা নিয়ে আসি
এরপর সামা খুব দ্রুত পায়ে সেইখান থেকে চলে আসে।আর এক সেকেন্ডও সেইখানে থাকলে মনে হয় সত্যি সত্যিই বমি করে ফেলতো সামা।তানজিল খাবারগুলো নিয়ে আসার পর দুইজন বাসায় যাওয়ার জন্য রিক্সায় উঠে।অনেকটা রাস্তা যাওয়ার পর হঠাত করেই সামা চিল্লায়ে উঠে বলে........................
সামাঃ-থামাও থামাও থামাও প্লিজ
তানজিলঃ-কিহহ এইভাবে চিৎকার করলা কেন?????
সামাঃ-ঐ দেখো
তানজিলঃ-কি দেখবো???
সামাঃ-আরে ফুসকার ভ্যান
তানজিলঃ-তো কি হইছে????
সামাঃ-তো আমি খাবো
তানজিলঃ-কিহহহ......!!!!!
সামাঃ-জি
তানজিলঃ-এত ভালো ভালো খাবার অর্ডার করলাম ঐ গুলা খাওয়া বাদ দিয়ে এই ফুসকা
সামাঃ-প্লিজ জান এক প্লেট খাবো শুধু প্লিজ প্লিজ প্লিজ
তানজিলঃ-এইসব খেলে শরীর খারাপ করবে তো তোমার............আর তোমার না বমি লাগতেছিলো
সামাঃ-এখন আর লাগতেছে না...............প্লিজ জান শুধু এক প্লেট
তানজিলঃ-আমি কি তোমার সাথে কথায় পারবো.........খাও বাট এক প্লেটই কিন্তু
সামাঃ-ওকে ট্রাই করবো
তানজিলঃ-আই কেবলি না বললা যে এক প্লেট খাবা আবার এখন বলতেছো যে ট্রাই করবা
সামাঃ-উফফ আমাকে খেতে দাও তো অনেক খুদা লাগছে
তানজিলঃ-খাওয়ার জিনিস খাওয়া বাদ দিয়ে যতসব আজাইরা জিনিস খাওয়ার রাজা উনি
সামাঃ-ভুল বললা রাণী হবে ঐটা রাজা না...............(কথাটা বলেই সামা হেসে দেয়)
তানজিলঃ-জি মেডাম..................চলো তো এইখান থেকে............আমার ফুসকা জিনিসটা একদম ভালো লাগে না
সামাঃ-কি বলো আমার তো সব থেকে পছন্দের খাবার এইটা
তানজিলঃ-ভালো খান
সামাঃ-তুমিও একটা নাও না
তানজিলঃ-নাহ এইগুলা আমি খাই না
সামাঃ-একটা খাও প্লিজ তাহলে বাসায় যেয়ে আদর করে দিবো
তানজিলঃ-সত্যি তো????
সামাঃ-তিন সত্যি
তানজিলঃ-তাহলে একটা কেন এক প্লেট খাইতে রাজি আমি
সামাঃ-ইশশ........................
অবশেষে অনেক চেষ্টার পর সামা অনেকদিন পর আবার একটু হাসে আর তানজিলও তার সামার হাসি মুখটা দেখে অনেকদিন পর শান্তি পায়....................................
চলবে.................................।

অদ্ভূত প্রেমের গল্প পর্ব ১৬

1 comment

♥-অদ্ভুত প্রেমের গল্প-♥

পর্ব-----১৬

পুরো ঘটনা কিন্তু পুলক বেশ স্বাভাবিকভাবেই নিল। যদিও কিছুটা খটকা থেকে যায়। যেখানে পুলকের সাথে রীতার বিয়ের জন্যই দেখা হয়েছিল এবং দুই পরিবারের সম্মতিতেই হয়েছিল। সেখানে এখন হঠাৎ করে কী সমস্যা দেখা দিতে পারে!! হ্যাঁ, পুলকের মা ডিভোর্সি। এটা তো তাঁরা লুকায়নি কখনো। রীতার মায়ের বান্ধবী তনুজা, উনার সাথেই পুলকের মা আফরোজা আক্তারের বিস্তারিত কথা হয়েছিল। যাই হোক!! এত কিছুর পরেও পুলক খুব একটা হতাশ হয়নি। রীতাকে সে ভালোবাসে। ‘ভালোবাসা’ কথাটা ঠিক পুলকের পছন্দ না। তাঁর কেন জানি মনে হয় রীতার জন্য তাঁর যে অনুভূতি তা শুধুমাত্র একটা শব্দ দিয়ে বোঝানোর মত না। এই ‘ভালোবাসা’ শব্দটা এখন ছেলে মেয়েরা দুই দিনের দেখাতেও ব্যবহার করে। তাঁর আর রীতার সম্পর্ক এত অগভীর না। ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে ‘shallow’। মানে হচ্ছে ‘অগভীর’। তাঁর আর রীতার সম্পর্ক এত shallow না। পছন্দের মানুষের মধ্যে বন্ধু খুঁজে পাওয়া যে কোটি টাকার লটারি পাওয়ার চেয়েও বেশী। তা পুলক খুব ভালো করেই জানে। তাই এটা যে এত সহজে পাওয়া যাবে না। এটাও পুলক জানে। এর জন্য সে মানসিকভাবে তৈরি আছে। তাঁর এখন দায়িত্ব হল রীতাকে শান্ত রাখা। মেয়েটা মুষড়ে পড়েছে। মেয়েটা খুব সহজে কাহিল হয়ে পড়ে। পৃথিবীর কয়টা প্রেম বাবা-মা একেবারে হাসিমুখে মেনে নিয়েছে!!! খুব কম। তাঁরা দুইজন যদি শক্ত থাকে। নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখে! তাহলে কতদিন ওঁর মা বেঁকে থাকবে।

কিন্তু রীতা এমনি এমনি মুষড়ে পড়েনি। সে চেনে তাঁর মাকে। যা একবার না। তা না-ই থাকে। তা কখনো হ্যাঁ হয় না। আর তাছাড়া তিনি প্রতিদিন রীতাকে একা পেলেই কেন পুলককে তাঁর বিয়ে করা ঠিক হবে না তা শোনান। এসব শুনে রীতার প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। সে পুলককে ফোন করে কাঁদে। পুলক তাঁকে অনেক বোঝায়। সে মায়ের সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু রীতা মানা করে। আর কিছুদিন যাক। দেখা যাক!! মাকে রাজি করানো যায় কিনা। কিন্তু সে ভেতরে ভেতরে জানে যে নাজমা হক কখনো রাজি হবে না। সেই মানুষ নাজমা হক নন।

রীতা শুয়ে ছিল। এমবিএর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। আজকাল আর বের হওয়াই যায় না। চাকরীর জন্য চেষ্টা করছে রীতা। অনলাইনে খুব অ্যাপ্লাই করছে। দেখা যাক কী হয়!! ঘরে থাকতে থাকতে তাঁর মন বিষিয়ে উঠছে। দরজা খুলে কেউ ঢুকছে। রীতা ভাবল মা ঢুকছে। সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। জেগে থাকলেই মা আবার তাঁকে পুলককে নিয়ে খারাপ কথা শোনাবে। পুলকের সাথে বিয়ে হলে সে কখনো সুখী হবে না। পুলককে তিনি কখনো মেনে নেবেন না। মায়ের এক ছেলেরা কখনো মায়ের কথা ছাড়া চলে না। পুলকের মা নিজে সংসার করতে পারেনি। তিনি কখনোই ছেলের বউকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না। নিজের সংসার না করার ঝাল ঠিকই তিনি ছেলের বউয়ের উপর উঠাবেন। রীতা জীবন দেখেনি। তিনি তো দেখেছেন। রীতার ভাল-মন্দ তাঁর চেয়ে ভালো কে বুঝবে!! এরকম আরো নানা কথা!! রীতার এসব শুনতে শুধু যে ভালো লাগে না তা না। তাঁর প্রচণ্ড কষ্ট হয়। পুলককে সে কতটা পছন্দ করে, পুলক তাঁর জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা যদি মা একটিবার বুঝত!!

নাজমা হক না। ঘরে ঢুকল মিতা। সে আজ স্কুল যায়নি। তাঁর শরীর ভালো না। হাল্কা জ্বর জ্বর আছে। সে এতক্ষণ মায়ের ঘরে শুয়ে ছিল।

রীতা বোনকে জিজ্ঞেস করল-

-কিরে!! তোর শরীর কেমন? জ্বর আছে এখনো?

মিতার কপালে হাত দিল রীতা। না তেমন জ্বর নেই। ঘামছে এখন মিতা। বড় বোনের পাশে শুয়ে পড়ল। হঠাৎ রীতার দিকে ঘুরে মিতা বলল,

-আপু!! তুমি কি একটা কথা জানো?

-কি কথা?

বোনটার দিকে তাকাল রীতা। এই বোনটা এই পুরো পরিবারের সবচেয়ে আদরের। ওঁর চুলে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো রীতা।

-কই? বল কি কথা?

-মা যে তোমাকে তাবিজ কবজ করছে এটা কি তুমি জানো?

-মানে???

বিস্ময়ে রীতা আর কিছু বলতে পারল না।

-হুম!! তুমি যখন ছাদে গেসিলা তখন তোমার বালিশ ছিঁড়ে তাবিজ ঢুকায়ে আবার বালিশ শিলাই করে রাখসে।

-দেখ মিতা!!! বানায়ে বানায়ে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না। আর মা অকারণ কেন আমাকে তাবিজ করবে!! তুই দিনকে দিন এরকম......।

রীতা কথা শেষ করতে পারল না। মিতা রীতার মাথার বালিশটা টান দিয়ে কি যেন হাতড়ে খুঁজতে শুরু করল। কি যেন পেয়েও গেল। পেয়ে রীতার হাতটা টেনে নিজের দিকে নিয়ে বালিশে পাওয়া জিনিশটা ধরাল। রীতা ধরে দেখল। হ্যাঁ, তাবিজের মতই কিছু একটা।

মিতা বলল,

- তোমরা তো ভাব আমি বাচ্চা। আমি মোটেও বাচ্চা না। আমি সব বুঝি। আমি সব জানি।

রীতা তাঁর বোনের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। মিতা আবার মাথা ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল।

প্রেমের সম্পর্কে প্রেমিক-প্রেমিকার পালিয়ে বিয়ে করা নতুন নয়। কিন্তু এখানে আমাদের গল্পের পাত্র-পাত্রী পালিয়ে বিয়ে করতে একেবারেই নারাজ। পুলকের যুক্তি এখানে প্রবল। সে কখনো তাঁর মায়ের অমতে রীতাকে বিয়ে করত না। যে মা তাঁকে এত বছর কষ্ট করে পেলে বড় করেছে। তাঁকে কষ্ট দিয়ে সে বিয়ে করবে না। কয়েক বছরের সম্পর্কের জন্য এত বছরের সম্পর্ক ভাঙ্গার কোন মানে সে খুঁজে পায় না। যে যুক্তি সে নিজে মানে সেই যুক্তির বিপরীতে সে রীতাকে কিছু করতে বলে না। রীতাও পুলকের সাথে একমত। পুলকের ইচ্ছা রীতার বাবা-মায়ের সাথে সে কথা বলবে। তাঁদেরকে সে অবশ্যই বোঝাবে। পুলক গুছিয়ে কথা বলতে পারে। সে অবশ্যই রীতার বাবা-মাকে রাজি করাতে পারবে। শুধু রীতাই কেন জানি পুলককে না করে যাচ্ছে সেই কবে থেকে।

এদিকে রীতার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। মাঝে একদিন রীতা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল। এত মানসিক চাপ বোধহয় সে আর সহ্য করতে পারছিল না। নাজমা হকও মেয়ের পরিস্থিতিতে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। এখন তাঁর সুর নরম। কিন্তু মোটেও তা পুলক আর রীতার পক্ষে না। সে এখন নরম সুরে মেয়েকে বোঝায় যে, রীতা এখন তাঁকে বুঝতে পারছে না। কিন্তু একদিন ঠিকই বুঝবে যে মা যা বলেছিল তাই ঠিক।

রীতা কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কথাই তাঁর কাছে ধ্রুব সত্যি। মায়ের সব নিষেধ সে মন থেকে মেনে নিত। শুরুতে কষ্ট লাগলেও পরে মনে হত এটাই ঠিক ছিল। তখন তাঁর জীবনে পুলক ছিল না। এখন পুলক আছে। পুলককে শুধু সে তাঁর প্রেমিক হিসেবে দেখে না। তাঁর বন্ধু, মেন্টর। আর দশটা পাঁচটা সম্পর্কের মত তাঁদের সম্পর্ক না। এটা সে মাকে কিভাবে বুঝায়!! রীতার বুকটা ভারী হয়ে উঠল বেদনায়। আজকাল মাঝে মাঝে সে মায়ের বলা কথাগুলো ভাবে। ছোটবেলার মতই কখনো কখনো তাঁর মনে হয় যে যদি মায়ের কথাগুলো সত্যি হয়। যদি সে আসলেই পুলকের সাথে সুখী না হয়? পুলক যদি তাঁকে অত্যাচার করে? এসব ভেবে তাঁর মনটা অপরাধবোধে ভরে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝেই ভাবনাগুলো আসে। পুলককে সে তাঁর সব কথা বলে। এই ভাবনাগুলোর কথা সে কখনো ওঁকে বলে না, বলতে পারবেও না.........

--চলবে......