#দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
১৩
-কাজী কে এগিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে আসতেই দেখি শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুচ্ছে মাহিরা।পাশে এসে বসলাম একটু দুরুত্ব রেখেই।মন খারাপ লাগছে?
-উহুম(মাহিরা)
-আমার বাবা মা আসবে।আমি খাবার অর্ডার করে দিয়েছি।
-আমিই রান্না করতাম।বাহির থেকে অর্ডার করতে গেলেন কেন?
-পরে দাওয়াত করবো।রান্না করে খাওয়াইয়ো(আরহান)
-ঠিক আছে।রুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে নিলাম।ওনার মা বাবা চলে এলেন।ওনাদের পা ধরে সালাম দিলাম।
-বেঁচে থাকো মা(আরহানের মা)।আমি আজ ছেলের বৌ না নিজের মেয়ে পেয়েছি।আজ ভাইজান(মাহিরার বাবা)থাকলে অনেক খুশি হতো।
-আন্টিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।(কিছুই করতে পারছিনা বাবার জন্য।নীলকে শাস্তি দিতে পারছিনা এ জানা সত্ত্বেও যে ও বাবাকে মেরেছে)
-জানি তোর অনেক কষ্ট হচ্ছে।কাঁদিসনা।আমরা আছি তোর ইনায়া আছে আর এখন তোর সবচেয়ে আপন যে তোর সবচেয়ে কাছের আরহান তোর সাথে আছে।প
-আন্টির কথা শুনে খানিকটা লজ্জা পেলাম।আরহানের দিকে তাকাতে পারলাম না।ওনারা ড্রয়িং রুমে এসে বসলেন।ডিনার সেড়ে ওনারা ইনায়াকে ওনাদের সাথে নিয়ে যেতে চাইলেন।
-না আমি মাম্মার কাছে থাকবো(ইনায়া)
-ইনায়া দাদা দাদির কাছে থাকবেনা????ইনায়া তো আমাদের একটু ও ভালোবাসেনা(আরহানের বাবা)
-বাবা এতো রাতে নিলে ওকে আনবো কখন।অনেক রাত হয়ে গেলো তো।তোমরাও থেকে যাও(আরহান)
-জি আঙ্কেল আন্টি আপনারা থেকে যান(মাহিরা)
-মাহিরা আঙ্কেল কে আর আন্টিকে হুম?বাবা মা বলবি এখন থেকে ঠিক আছে?(আরহানের মা)
-ঠিক আছে।থেকে যান।ভালো লাগবে আমাদের (মাহিরা)
-মাহিরা আমরা পরে এসে থাকবো।ইনায়া এদিকে এসো(আরহানের মা)।
-ইনায়ার কানে কানে কি যেন বললেন ওনি?সঙ্গে সঙ্গে ইনায়া জেদ ধরলো ও যাবে।ইনায়া মাম্মার কাছে থাকবেনা?
-না প্লিজ আজকে দাদুর কাছে থাকবো।প্লিজ পাপা মাম্মা।
-ইনায়া কোথা ও যেতে হবেনা ঘরে থাকো(কোথা ও যেন লজ্জা কাজ করছিল মাহিরার সাথে একা থাকার)
-না পাপা প্লিজ আমি যাবো।মাম্মা বলোনা পাপাকে।
-স্যার প্লিজ যেতে দিন ওকে(মাহিরা)
-মাহিরা তুমি ও/???(আরহান)
-প্লিজ!!!!!!
-ওকে যাও কিন্তু কালকের মধ্যেই চলে আসতে হবে(আরহান)।
-ওকে(ইনায়া)।
-ইনায়া চলে গেলো ওনাদের সাথে।রুমে যেতে নিলাম তখনই আরহান ডাকলো।
-মাহিরা একটু কথা আছে তোমরা সাথে(আরহান)
-কি?
-বারান্দায় এসো(আরহান)
-চলুন।দোলনায় বসলাম দুজনে।মাঝে বেশ দুরুত্ব।বলুন কি বলবেন।
-আঙ্কেলকে কে মেরেছে?তোমার কি কাউকে সন্দেহ হচ্ছে?
-না।বাবা এমনিতেই মারা গেছে।চোখ ভারি হয়ে আসছে।
-আঙ্কেলের খুন হয়েছে মাহিরা।ওনি কি নিজ হাতে গলা কাঁটবেন?নিজের পেটে নিজে ছুরি ঢুকাবেন?এটা তো সম্ভব না তাইনা?(আরহান)
-আমি কিছু জানিনা।যেতে দিন আমাকে উঠে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলল।মাহিরা খুনি স্বাধীন ভাবে ঘুরছে।কষ্ট পাচ্ছো তুমি।খুনির শাস্তি পেতে হবে।
-জানিনা বললাম না।বাংলা বুঝেন না?????(চিৎকার করে বললাম)এনিয়ে আর প্রশ্ন করবেন না আমাকে প্লিজ।দৌড়ে রুমে গেলাম।
-নিশ্চয়ই কিছু লুকোচ্ছে।কিন্তু কি?জানতে হবে।
চলবে
দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
১৪
-রাতে মাহিরার সাথে আর দেখা হলো না আরহানের।ফ্রেশ হয়ে খাটে শরীর এলিয়ে দিলো।অাঙ্কেলের নিথর দেহটির কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে।কতটা নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে ওনাকে ভাবতেই চোখ ভরে এলো আরহানের।
-অন্যদিকে মাহিরা বাবার চলে যাওয়ার পরথেকে প্রতিটি রাত নিঃশব্দে কেঁদে যায়।আজ ও তার ব্যাতিক্রম হলোনা।দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে বালিশ চেপে কাঁদছে।ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে আর এখন বাবা যে তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল ছিলো চলে গেল।খুনি কে তা জেনে ও কিছু করতে পারছেনা।আরহান ইনায়া কে হারানোর ভয় তাকে ভিতর থেকে জর্জরিত করছে।ওদের আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায়।যে করেই হোক আরহান যেন নীলের কথা না জানতে পারে।তবে নীল কে ছাড়বেনা। প্রাপ্য শাস্তি দিবেই।চোখ মুছে উঠে দাড়ালাম।বারান্দায় গিয়ে তারা দেখছি।শুনেছি মরে যাওয়ার পর মানুষ তারা হয়ে যায়।তাহলে বাবা মা এই তারা গুলোর মধ্যে কোথাও লুকিয়ে আছে।স্যরি বাবা কিছুই করতে পারছিনা তোমার জন্য।খাটে শুয়ে পড়লাম।চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
-সকালে ইনায়াকে দিয়ে আরহানের বাবার ড্রাইভার।ঘরে ফিরেই মাহিরার কোমড় জড়িয়ে ধরেছে ইনায়া
ছাড়ার নাম নিচ্ছেনা।মাম্মা মিস করেছিলে আমাকে(ইনায়া)
-অনেক মিস করেছি আমার বাবুটাকে।নাস্তা করেছো?
-দাদু অনেক বার বলেছে।আমি ও বলেছি মাম্মা পাপার সাথেই নাস্তা করবো।
-চলো পাপা কে ডেকে তুলি।ইনায়া কে নিয়ে আরহানের রুমের দিকে এগোলাম।বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।কি মায়াবী লাগছে ঘুমন্ত আরহান কে।ডাক দিতে যাবো তখনই ইনায়া থামালো।
-মাম্মা তুমি যাও পাপাকে আমি ডাকছি।
-ওকে। তাড়াতাড়ি এসো।বলে পাকঘরে চলে এলাম।
-পাপা উঠো পাপা!!!!!!!
-কি হলো ইনায়া?????
-আমার ডগি পুতুলটা চলছেনা।
-নতুন দেখে কিনে দেবো(আরহান)
-না পাপা এটা ঠিক করে দাও।প্লিজ প্লিজ পাপা।
-উফ ইনায়া প্রতিদিন এতো জেদ করো কেন বুঝিনা।আচ্ছা চলো।আগে ফ্রেশ হয়ে নেই তারপর দেখছি।
-না আগে ঠিক করতে হবে।তারপর ফ্রেশ হবা(মুখ গোমরা করে)
-পাপার মুখ থেকে ব্যাড স্মেল আসছে তো।
-না না এখনই আসতে হবে চলো।
-ওকে চলো।পুতুলটা কই?
-আলমারিতে।আলমারির চাবি মাম্মার কাছে।
-ওকে চলো চাবিটা নিয়ে আসি।
-হুম চলো।
-পাকঘরের কাছে এসে মাহিরা আলমারির চাবিটা দাও।
-আরহানের ডাক শুনে পিছে তাকিয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো মাহিরা।হাত দুটি সরিয়ে হাসতে লাগলো।আপনার চেহারার এমন অবস্থা কেন????পুরো জোকার লাগছে হা হা হা😂😂😂😂😂।ছোট্ট ইনায়াও হেসে একেবারেই কুটিকুটি।
-দ্রুত রুমে এসে আয়নায় নিজেকে দেখে খানিকটা ভয় পেলে ও হাসতে লাগলো আরহান।আসলেই জোকার লাগছে।মুখ ধুয়ে নিচে গিয়ে দেখি মা মেয়ে এখন ও হাসছে।ইনায়া!!!!!!(মিথ্যা রাগ দেখিয়ে)
-পাপা জোকার পাপা বলেই দৌড়াতে লাগলো ইনায়া।
-আরহান ও দৌড়াতে লাগলো।ইনায়া মাহিরার পিছে লুকিয়ে গেলো।
-ধরো পাপা।
-ইনায়া বেরিয়ে আসো।
-আসবোনা।বলেই দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
-ওর পিছনে দৌড়াতে গিয়ে মাহিরার সাথে ধাক্কা খেয়ে দুজনে নিচে পড়ে গেল।আরহান মাহিরার উপরে।মাহিরাকে যখনই দেখে ততোবার বিস্মিত হয় এতো সুন্দর যা রুপ কথায় বর্ননা করা যায়না।অজান্তে হাত দুটি মাহিরার চুল গুলোকে কানের পিছনে নিয়ে গেলো।গালের কাছে ঠোঁট নিতেই দুষ্ট ইনায়ার হাসির শব্দে দুজনের ঘোর ভাঙ্গলো।আরহান তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে মাহিরার ওপর পড়লো।
-আহ।
-স্যরি।উঠে পড়লাম।
-মাথা নিচে নামিয়ে নিলো।ইটস ওকে(মাহিরা)
চলবে
No comments :
Post a Comment