সিনিয়র রাগি গার্লফ্রেন্ড
রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আমি আর আমার কিছু বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
কলেজ থেকে বাসায় আসার পর আমাদের এই একটাই কাজ রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা।
যদিও এর পেছনে তেমন কোনো খারাপ উদেশ্যে নেই..কিন্তু অনেক বড় একটা মহৎ উদেশ্যে আছে আর সেটা হলো আমার আম্মুর জন্য একটা লক্ষি বউ খোজা।আম্মু সারাদিন বাসায় কাজ করে আর বলে আমার যদি আর একটা মেয়ে থাকতো তবে আমার সব কাজ করে দিতো..আমি আম্মুর সেই কথা শুনে মেয়ে খুঁজি..কিন্তু এর আগে যতগুলো মেয়ে পছন্দ হয়েছে
সব গুলার বয়ফ্রেন্ড আছে..তাই আর আম্মুর জন্য এখনো কাওকে বউ করে নিয়ে যেতে পাড়লাম না দুঃখ লাগে...
আসলে ঘটনায় আসি..
আমি সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি..আর আমার নাম পরিচয় তো সবাই জানেন তাই নতুন করে আর বললাম না....
রাফিঃদোস্ত এইভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না..একটা গান ধর তো.।
আমি;দোস্ত এমনি আছি এমনি থাকি..
শুধু শুধু মানুষের কান ঝালাপালা করে কোনো লাভ আছে...
নাজমুললঃআরে ধর না একটা গান...!নাজমুল যখন কথাটা বললো তখন আমাদের পাশ দিয়ে একটা মেয়ে হেটে যাচ্ছিলো..
আমি গান গাইতে শুরু করলাম...
কোন বাড়ির মেয়েরে তুই
রূপেতে আমার মনটা ভুলাইয়া
কোথায় যাস কোমড় খানি দুলাইয়া....
ঠাসসস
আরে মারে রে গেছি রে আমারে মারলো কিডারে
আরে কেনো চিল্লাছি শুনবেন তো নাকি?
আমি গান গাচ্ছিলাম তখন অই মেয়েটা ঘুরে এসে আমাকে চড় মারলো...
কিন্তু কেনো মাড়লো আমি তো কোনো দোষ করি নাই...
আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি...
আমিঃঅই আপনি আমাকে চড় মাড়লেন কেনো??
মেয়েঃঅই ফাজিল পোলা একটু আগে তুই কি যেনো বলছিলি আমি কোমড় দুলিয়ে যাচ্ছি??
আমিঃআমি কখন আপনাকে সে কথা বলতে গেলাম??
মেয়েঃভাব দেখে মনে হচ্ছে কিছুই জানে না..মন চাইতেছে জুটা পিটা করি...
আমিঃকরেই দেখুন না আপনার কি হাল করি...শুধু মেয়ে বলে কিছু বলছি না যদি কোনো ছেলে আমার
গায়ে এইভাবে হাত তুলতো এতোক্ষনে মেরে নাক ফাটিয়ে দিতাম।
মেয়েঃবাহ এতো সাহস নিজেরা দোষ করে আবার মারার হুমকি দিচ্ছিস ফাজিল পোলা...
আমিঃদেখুন আমি মোটেও ফাজিল না...আমি ফাজিল মেয়ে আমাকে শুধু শুধু চড় মারছেন...
মেয়েঃএইবার তো শুধু চড় মেড়েছি.এর পর যদি আবার বেয়াদবি করিস তাহলে ভাইয়াকে বলে তোকে এমন মাইর খাওয়াবো জীবিনে কোনো দিন ভুলতে পাড়বি না...
আমিঃআপনার ভাই আমাকে মারবে আর আমি কি চুপ থাকবো নাকি?তা শুনে কে আপনার ভাই?
মেয়েঃসাইফ খোকনকে চিনিস?
আমিঃহ্যা চিনবো না কেনো সে তো আমাদের সকলের বড় ভাই...
মেয়েঃআর অই সাইফ খোকন আমার আপন বড় ভাই...
কথাটা শুনে আমার অবস্থা খারাপ..
যদি সাইফ ভাই শোনে তার বোনকে আমরা নানান ধরনের কথা বলেছি তবে আমাদের সকলের খবর আছে একদম শেষ করে ফেলবে আমাদের...
আমরা সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি..
মেয়েঃকিরে তখন বললি যখন মারবে তখন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?এখন তো দেখছি ভাইয়ার কথা শুনে এক একজন পাথরের মূরতি হয়ে গেছিস..
আমিঃআসলে আপনাকে আমরা কেও চিনতে পারি নাই তো?তাই মিস্টেক হয়ে গেছে..আর এর আগে আপনাকে দেখি নাই তো??
মেয়েঃকেনো নতুন মেয়ে দেখলেই কি তাদের ডিস্টার্ব করিস নাকি??
আমিঃআরে নাহ তা হতে যাবে কেনো(ভয়ে ভয়ে কথা বলছি)
মেয়েঃদেখ এখন থেকে আমি এখানেই থাকবো..আর তোরা সবাই আমার নজরে থাকবি যদি কোনো দিন দেখেছি কোনো বেচাল ভাইয়াকে বলে সত্যি বলছি তোদের অনেক মাইর খাওয়াবো..
আমিঃসরি এই যে কানে ধরছি এখন থেকে আর এখানেই দেখবেন আমাদের..
মেয়েঃসেটা হলে তোদের জন্যই ভালো..
এই কথা বলে চলে গেলো..
রাফিঃভাই এটা মেয়ে নাকি অন্য কিছু...
আমি;এটা মেয়ে না ভাই একটা আটার ফ্যাক্টরি দেখলি না মুখে আটা ময়দা মেয়ে একদম ভুত থুক্কু পেত্নী হয়ে এসেছে..
নাজমুলঃশালা আস্তে বল যদি শুনে ফেলে তাহলে খবর আছে
আমিঃতবে দোস্ত আমি তো এই মেয়ের উপর
ক্রাশ খাইছি কিছু একটা কর না...
রাফিঃএকদম এই ভুল করতে যাস না.সাইফ ভাই কেমন তা তো ভালো করেই জানিস..
আমিঃআরে ধুর সাইফ ভাই কি করে জানবে?আমি তো তার বোনকে একটু পটাতে ট্রাই করবো মাত্র....
নাজমুলঃহ্যা তুমি পটাতে ট্রাই করবা আর মেয়ে পটে যাবে...এই মেয়ের সাথে একটু এদিক সেদিন হলেই তোর কপালে শনি আছে..তাই এই মেয়ের কথা ভুলে যা..
আমিঃভুলতে তো পারবো না...আমাকে এইভাবে চড় মারলো.কিছুতেই ভুলতে পারবো না আমি চড় খেয়েই এই মেয়ের উপর ক্রাশ খাইছি..
এখন হয় চড় ফিরিয়ে দিবো নাহয় প্রেম করবো.
রাফিঃদোস্ত তোর চল্লিশার দাওয়াত দিস কিন্তু??
আমিঃঅই শালা আমি এখনো মরলাম না আর তোর চল্লিসা নিয়ে পড়লি?
রাফিঃমরিছ নাই তবে এইবার মরবি তাও অই মেয়ের জন্য..
আমিঃদেখ দোস্ত আম এতো কথা শুনতে চাই না আমার অই মেয়েকে ভালো লেগেছে তোর শুধু মেয়েটার ফুল বায়ো বের করে দে.নাম কি আর কোনো বয় ফ্রেন্ড আছে কিনা??
আর পড়ালেখা কতদূর..
নাজমুলঃসেটা নাহয় বের করে দিবো..কিন্তু তোর যে কপালে শনির দশা আছে সেটা আমি দিব্বি দেখতে পারছি।।
আমিঃদোস্ত তুই গনক হলি কবে..এই নে না আমার হাত একটু দেখে দে তো অইই মেয়ে আমাকে গ্রহন করবে তো নাকি?
নাজমুলঃকোনো দিনো করবে না..
আমিঃধুর একটু ভালো দোয়া করতে পারিস না,,খারাপ দোয়া কেনো করবি??
রাফিঃচল এখন বাসায় চলে যায়..
আমিঃহ্যা চল..তবে দোস্ত এই মেয়ের শক্তি আছে তখন চড় মেরেছে এখনো আমার গাল ব্যাথা করছে..মনে হয় কেও মরিচ ডলে দিয়েছে এমন ভাবে জ্বালা করছে..
রাফিঃদোস্ত তোর বাপের ভাগ্য ভালো শুধু একটা চড় মেরেছে যদি আরো কয়েকটা মারতো মনে তোর মুখের প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হতো.??
আমিঃসত্যি বলেছি রে
ওদের বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে গেলাম।
কলিং বেল চাপতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো.?
আম্মুঃকিরে এতোক্ষন কোথায় ছিলি?
আমিঃএই তো একটু বাইরে ঘুরতে বের হয়েছিলাম তা আজ কোন মেয়েকে প্রপোজ করেছিলি??
আম্মুর এমন কথা শুনে কিছুটা অবাক হলাম...
আমিঃআম্মু তুমি কি বলছো এইসব?
আম্মুঃঠিকি তো বলছি কোনো এক রমনীর হাত তোর গালকে লাল করে দিছে সেটা তো দেখাই যাচ্ছে...
এইরে আমার তো মনেই ছিলো না..ভেবেছিলাম ব্যাথা করছে..কিন্তু এটাই তো মনেছিলো না হয়তো দাগ পরে গেছে..
আমি;আম্মু না মানে কিছুনা আমি দৌড়ে রুমে চলে গেলাম।
আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখি
গাল এখনো লাল হয়ে আছে আর গালে আঙুল এর ছাপ গুলো খুব ভালো ভাবেই বোঝা যাচ্ছে।
সেদিনের মত দিন কেটে গেলো।পরদিন সকালে আম্মুর ডাক শুনে ঘুম ভাঙে।
আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কলেজে চলে গেলাম।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন দেখি একটা কালো গাড়ি কলেজের ক্যম্পাসে ধুকলো...
গাড়ি থেকে সাইফ ভাই আর সেই মেয়েটা মানে গাড়ি থেকে নামলো। রাত্রী গাড়ি থেকে নামলো দেখে তো আমার গলা একদম শুকিয়ে গেলো।
আজকে আমি গেছি তাহলে বজ্জাত মেয়েটা মনে হয় সাইফ ভাইকে সব বলে দিয়েছে....
সাইফ ভাই ও তার দলবল আমাদের দিকে আসতেছিলো।
যত কাছে আসছে তত ভয়ে আমি কাঠ হয়ে যাচ্ছি।মন চাচ্ছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে কিন্তু পালাতেও পারছি না।
যখন আমার একদম কাছে এসে পড়লো আমি তো ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
চোখ খুলে দেখি সাইফ ভাই ও তার দলবল সহ আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেছে
আহ বাচলাম।
কিন্তু এই মেয়ে আমাদের কলেজে কি করছে এই মেয়ের তো এখানে থাকার কথা না।।।।
আমরা আবার আড্ডা দিতে শুরু করলাম।কিছুক্ষণ পর সাইফ ভাই আবার চলে আসছে..
আমরা সাইফ ভাইকে সালাম দিলাম।
সাইফ ভাই দাঁড়িয়ে পড়লো
সাইফ ভাইঃতা কি ব্যাপার তোদের পড়ালেখা কেমন চলছে?নাকি শুধু আড্ডা দিয়েই পড়ালেখার ১২টা বাজাচ্ছিস?
আমিঃআরে ভাই কি যে বলেন না আপনি পড়ালেখা তো ট্রেনের স্পিডে ছুটে চলছে সেটা থামার কোনো নামই নিচ্ছে না...তা ভাইয়া হঠাৎ কলেজে আসলেন কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি?
সাইফ ভাইঃআরে ঝামেলা না আমার ছোট বোন রাত্রীকে এই কলেজে ভর্তি করালাম।
তোরা এক কাজ করবি আমার বোনকে কেও ডিস্টার্ব করে নাকি সেটা দেখবি যদি কেও ডিস্টার্ব করে সোজা আমাকে বলে দিবি..
আমিঃতা নাহয় বলবো..কিন্তু আপনার বোনকে সেটাই তো জানিনা...
সাইফ ভাই তার এক চেলাকে বললো তার বোনকে ডেকে আনতে,,যদিও আমি খুব ভালো ভাবেই চিনি তার বোনকে।।
কিছুক্ষণ পর রাত্রী চলে আসছে।
সাইফ ভাই আমাদের তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
আর জানতে পারলাম সে নাকি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে।কিন্তু এ সময় কলেজে তো ভর্তি করার কথা না নিশ্চয় রাজনীতি করছে।
তবে এটা ভেবেও দুঃখ লাগছে যার উপর ক্রাশ খাইলাম সে আমার থেকে নাকি বর
দুঃখে কান্দন আহে।।
সাইফ ভাই চলে গেলেন।
রাত্রী সেখানেই ছিলো.
আমিঃআচ্ছা আপনার মত এতো ভালো একটা মেয়ে অই গুন্ডাটার বোন হলেন কেনো?অন্য কারো বোন হতে পাড়লেন না তাহলে আমার রাস্তাটা একটু ক্লিয়ার হতো...
রাত্রীঃমানে বুঝতে পারলাম না কিসের রাস্তা?
আমি;সেটা আপনার না জানলেও চলবে.
রাত্রীঃওকে ফাইন এখন আমি আসি.এই কথা বলে রাত্রী চলে গেলো।
আহা এটা ভেবেও শান্তি লাগে এক কলেজে পড়বো তাহলে পটাতে একদম সহজ হবে.যদিও ওই সাইফ ঝামেলা করবে কিন্তু প্রেমের জন্য মানুষ কত কিছু করে শুনেছি আমিও করবো।রাত্রীকে আমার আম্মুর ছেলের বউ বানাবো.😁😁😁
ক্লাস করে বাসায় আসছিলাম দেখি রাত্রী একা একা হেটে যাচ্ছে দেখে খুব খারাপ লাগলো আমার হবু বউ একা হেটে যাচ্ছে আমি থাকতে আমার বউটা হেটে যাবে এটা কি মানা যায়।
আমি দৌড়ে গিয়ে রাত্রীর সামনে দাঁড়ালাম।
রাত্রীঃকি ব্যাপার পিচ্চি পথ আটকালি কেনো?
আমিঃঅই আপনি আমকে পিচ্চি বললেন কেনো?
রাত্রীঃবারে তুই তো আমার থেকে জুনিয়র.
তারপর আমি রাত্রীর ঘা ঘেঁষে দাঁড়ালাম
রাত্রীঃআরে তুই আমার গা ঘেষে দাঁড়াচ্ছিস কেনো?
আমিঃদেখুন আপনি আমার বুক পর্যন্ত মাত্র তাহলে আমি আপনার জুনিয়র হলাম কিভাবে?
রাত্রীঃবারে তুই তো আমার থেকে এক ক্লাস নিচে তাই না??
আমিঃতো কি হয়ছে গায়ে তো আর সেটা লেখা নেই..থাক বাদ দেন.আপনি আমাকে তুই করে বলছেন শুনে ভালোই লাগছে.
একা একা যাচ্ছিলেন কেনো??সকালে না দেখলাম গাড়ি করে আসলেন গাড়ি কোথায়?
রাত্রীঃআসলে আমার গাড়িতে যেতে একদম ভালো লাগে না...আমার রিক্সাতে করে যেতে ভালো লাগে কিন্তু আশেপাশে কোনো রিক্সা ছিলো না তাই একাই হেটে যাচ্ছি।
আমিঃকিছু মনে না করলে একটা কথা বলি আমি কি আপনার সাথে হাটতে পারি??
রাত্রী;কোনো লুচ্চামি করবি নাতো??
আমিঃনাহ আপনি তো সাইফ ভাইয়ের বোন আপনাকে পাহারা দেওয়া তো আমাদের একটা দায়িত্ব এর মধ্যে পড়ে....
রাত্রীঃতাহলে চল আমার সাথে...
তারপর আমি আর রাত্রী হাটতে শুরু করলাম...
কেও কোনো কথা বলছি না..
হঠাৎ রাত্রী বললো কালকেও ব্যাবহারের জন্য আমি সরি...
আমিঃনা সরি বলার কি আছে..তবে একটু বেশি জোড়েই মেরে দিয়েছিলেন...
এই দেখুন এখনো মনে হয় লাল হয়ে আছে..
রাত্রীঃঅই দেখি দেখি কোথায় লাল হয়ে আছে?
আমিঃএই যে দেখুন অনেক লাল হয়ে আছে...
তারপর রাত্রী আমার গালে হাত দিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো
আহারে পিচ্চিই টার সত্যি অনেক লেগেছিলো
To Be Continue
Friday, October 26, 2018
সিনিয়র রাগি বউ পর্ব ১
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
আরো নতুন নতুন গল্প, কবিতা,জোকস পড়তে চাইলে আমার সাইটে ভিজিট করুন
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz