#দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
২৩
-গেস্ট রুমের দরজাটা হালকা চাপানো।বুক কাঁপছে আরহানের।দরজা টা ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকলাম ইনায়াকে নিয়ে।মাহিরা পিছন ফিরে বসে আছে।গোলাপী শাড়ীটা লাল হয়ে গেছে একেবারে।গলা ধরে আসছে।নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে ডাক দিলাম মাহিরা!!!!!কোন জবাব দিচ্ছেনা মেয়েটা ওর সামনে গিয়ে দেখি বুকের কাপড়টিকে চেপে ধরে রেখেছে বুকের সাথে।মুখের বিভিন্ন অংশে কাঁটা।সেগুলো থেকে রক্ত বেরুচ্ছে।কোনো একদিকে তাকিয়ে আছে।নিঃশ্বব্দে চোখের পানি ফালাচ্ছে।ওর সামনে বসে পড়লাম।ব্লাউজের হাতা দুটি ছিড়া।গায়ে হাত রাখতেই দেখি শরীর পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। মাহিরা কি হয়েছে?কে এসেছিলো?নীল এসেছিলো?হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।ওর পিছনে হালকা করে ধরলাম।কান্না থামছেইনা।মাহিরা বলো কি হয়েছে?খুব জোরে জড়িয়ে ধরেছে আমায়।বেশ খানিকক্ষণ পর ছাড়লো তবু ও ফুঁপিয়ে কাঁদছে।মাহিরা বলো কি হয়েছিলো?তোমার এ অবস্থা কেন?আচ্ছা এখন কিছু বলতে হবেনা।তুমি এখানে শুয়ে রেস্ট করো।বাহির থেকে খাবার অর্ডার করি।
-আমি ফ্রেশ হবো খুব আস্তে করে বললাম(মাহিরা)।
-ওয়াশরুমে যাও।উপর থেকে তোমার জামা নিয়ে আসি(আরহান)
-ঠিক আছে(মাহিরা)।ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।শরীর থেকে কাপড়টি ফেলে দিলাম।শরীরে আচড়ের দাগে ভরে গেছে।(ভাগ্যিস আরহান এসেছিলো না হলে যে ক্ষতি টা আজ হতো হয়ত বেঁচেই থাকতে পারতাম না।)
হঠাৎ দরজায় নক পড়লো।
-মাহিরা তোমার কাপড়(আরহান)
-দরজা হালকা খুলে কাপড় গুলি নিলাম।
-খাবারের অর্ডার দিয়ে ডাক্তারকে কল করলাম।জানালেন কিছুক্ষনের মধ্যে আসছেন।মাহিরার শরীরের অবস্থা ভালো না।কিছুক্ষন পর মাহিরা ফ্রেশ হয়ে বের হলো।ঠিক মতো দাড়াতে ও পারছে না।ওর হাত ধরে টেবিলে বসিয়ে দিলাম।ইনায়াকে আগেই খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।মাহিরাকে ও খাইয়ে দিলাম।কিছুক্ষন পরে ডাক্তার আঙ্কেল চলে এলেন।
-অবস্থা তো খুব খারাপ।জ্বর কবে থেকে(ডাক্তার)?
-আজই এসেছে(মাহিরা)
-এ্যন্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছি।আর এ ক্রিমটা আনাবেন।কাঁটা জায়গা গুলোতে লাগিয়ে দিবেন(ডাক্তার)
-ওকে(আরহান)
-তাহলে আমি আসি(ডাক্তার)
-জি অবশ্যই।ওনাকে এগিয়ে দিয়ে আসলাম।মাহিরা চুপচাপ বসে আছে।ঔষধ খাইয়ে দিলাম।মুখ আর হাতের কাঁটা জায়গা গুলোতে ক্রিম লাগিয়ে দিলাম।মাহিরা এখন বলো কি হয়েছিলো?(আরহান)
-একে একে পুরো কাহিনী বললাম ওনাকে(মাহিরা)
-আর চুপ থাকা চলবেনা।নীলের তো কিছু একটা করতেই হবে।(আরহান)
-যা করবেন বুঝে শুনে।আপনাদের কিছু হলে আমি বাঁচতে পারবোনা কেঁদে কেঁদে বললাম।
-কিছু হবেনা মাহিরা।ভয় পেওনা।আমার ফ্রেন্ড আশফি কে কল দিলাম।সে একজন পুলিশ অফিসার।হ্যালো আশফি!!!
-কি রে শালা এত বছর পর বন্ধুকে মনে পড়লো(আশফি)
-হুম।কি খবর?
-ভালো।মন খারাপ মনে হচ্ছে?(কিছুটা চিন্তিত হয়ে)
-হুম।কাল একটু বাসায় আসবি(আরহান)
-কেন কি হয়েছে?(আশফি)
-আসলেই বলি???
-ওকে। বাট কোন চিন্তার কারন না তো?(আশফি)
-চিন্তার বিষয়ই।কাল আয় বলছি।
-ওকে।
-ফোন রেখে মাহিরার দিকে তাকালাম।ওর পাশে বসে ওর মাথাটা আমার বুকে রেখে বললাম একজন বন্ধু হিসেবে ভাবো।ঘুমিয়ে পড়ো।
-ওনার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।
চলবে
দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
২৪
-সকালে ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে আরহানের বুকে আবিষ্কার করলাম।আমার জামা কাপড় চেক করলাম।নাহ সবই ঠিক আছে।কাল রাত এখানে ছিলেন আরহান।উঠে বসলাম।ইনায়াকে স্কুলে পাঠাতে হবে।ওকে ঘুম থেকে তুলে নাস্তা করিয়ে স্কুলে পাঠালাম।
-মাহিরা!!!!(আরহান)
-জি!!!
-ওর কপালে হাত রাখলাম।জ্বর এখন নেই।পেইন আছে?
-একটু তো আছেই।আপনি বসুন নাস্তা নিয়ে আসছি।
-ওকে।নিউজ পেপারটা নিয়ে পড়ছি।হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।উঠে গিয়ে দরজা খুললাম।
-হায় আরহান কি খবর???(আশফি)ওই তোর হাতের কি হলো????
-Minor accident. ভিতরে আয়।
-হুম।সোফায় বসলাম(আশফি)।
-আশফি!!!!!বুক কাঁপতে শুরু করেছে মাহিরার।এ সে আশফি নয়তো।কপালের ঘাম মুছে নিলাম।কেন এমন হচ্ছে?চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
-তোর মন খারাপের কারন টা তো বললিনা?(আশফি)
-প্রথম থেকে সব বললাম।
-ওহ মাই গড পুলিশ কে জানাস নি কেন?(আশফি)
-আগে তো আমিই জানতাম না।যখনই জানতে পারলাম তখন এ্যাক্সিডেন্ট হলো আর কাল তো তোর ভাবির সাথে এত কিছু হয়ে গেল(মন খারাপ করে)
-ভাবির কথা বলতে মন পড়লো আনিকা ভাবি কই?(আশফি)
-আনিকা না মাহিরা(আরহান)
-মাহিরা!!!!!(আশফি)(মাহিরা আশেপাশে আছো আমার।কেন তোমাকে এতো বছর পেলাম না?ভুলতে পারিনি আজ ও)
-হুম আমার সেকেন্ড ওয়াইফ(আরহান)
-ওহ।(এ আমার মাহিরা হতে পারেনা)
-মাহিরা!!!!! একটু চা নিয়ে এসো।
-জি আনছি।
-এখন প্লান কি(আশফি)?
-এখন কোন প্লান নাই।নীল কে কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দিতে চাই।
-ওকে আমি তোকে সাহায্য করবো দোস্ত(আশফি)।
ইনায়া মামনি কই?
-ও তো স্কুলে গেল।
-নাস্তা বানিয়ে ট্রেতে সাজিয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই মাথা ঘুরে যাবার উপক্রম হলো।এ কি দেখছি????কিছুটা সামলে নিয়ে ওনাদের সামনে গেলাম।
-আসসালামু আলাইকুম ভাবি। ওনারদিকে তাকাতেই পুরো পৃথিবী উল্টেপাল্টে গেল।(এতো দেখছি আমার মাহিরা।এখন তো ও আরহানের বৌ)
-কি হলো নাস্তা কর আশফি(আরহান)
-হুম করছি।
-মাহিরা এ আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড আশফি।আশফি ও মাহিরা।
-হুম।ভালো আছেন ভ...ভাবি(আশফি)?
-মাথা নিচে নামিয়ে নিলাম।(৫বছর অপেক্ষা করেছি তোমার দেশে আসার জন্য।তার আগেই এতো কিছু হয়ে গেল।)গলা ধরে আসছে।
-এক্সকিউজমি একটা কল রিসিভ করতে হবে। তোমরা কথা বলো। অন্যরুমে চলে গেলাম ফোনে কথা বলতে বলতে।
-কেমন আছো মাহিরা(আশফি)?
-(কিছু বলতে পারছিনা।কি বলবো।ওর সাথে ধোঁকা হয়েছে।)
-কথা বলবেনা আমার সাথে?(আশফি)
-অনেক কষ্টে জবাব দিলাম।ভালো তুমি কেমন আছো?
-এইতো।৫বছর অপেক্ষা করতে পারলেনা মাহিরা?(আশফি)
-করেছিলাম অপেক্ষা। পরিস্থিতি বাধ্য করেছে।প্লিজ মাফ করে দাও।
-ইটস ওকে।কতো স্বপ্ন দেশে ফিরে তোমাকে নিয়ে নতুন সংসার সাজাবো।হায়রে নসিব!!!!(আশফি)।ভালো আছো এখানে?
-হুম।
-অফিস থেকে কল আসলো।অনেক দিন যাওয়াই হয়না অফিসে(আরহান)
-কাল আপনার প্লাস্টার খুলবে(মাহিরা)
-ওহ মনেই ছিলোনা(আরহান)
-তো আমি আসি(আশফি)
-চল এগিয়ে দেই।গাড়ির সামনে আসতেই আশফি বললো
-ভাবির সাথে তোর সম্পর্ক কেমন?
-ইনায়ার জন্য ওকে বিয়ে করেছি(আরহান)
-আর ওনি?(আশফি)
-সেম কারন।আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।
-আরহান তুই আমাদের ভার্সিটিতে রোমিও ছিলি।সবচেয়ে রোমান্টিক ছেলে ছিলি।আর তুই এসব বলছিস।বিয়ের কয়দিন হলো?
-৬মাস(আরহান)
-৬টা মাস ওনাকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন?(আশফি)
-আমি আর কাউকে ভালবাসতে পারবোনা আশফি।
-তোর মুখে এসব মানায় না আরহান।চেষ্টা করে দেখ।সব সম্ভব।ওনি শুধু ইনায়ার জন্য সারাজীবন থাকতে পারবেনা।কারন ওনার ও একটা লাইফ আছে।
-তুই কি চাস?(আরহান)
-ওনাকে বুকে টেনে নেয়।ভালবাস নতুন করে।
-আশফি আর আরহান বের হতেই রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে পড়লো মাহিরা।কেন জানি আশফির জন্য আগের মতো ভালোবাসা অনূভব করতে পারছেনা।
-জীবনে বাঁচতে হলে ভালোবাসার দরকার আরহান।যেটা ওনার লাইফে নেই।ওনার লাইফ টা টাইপিকাল হাউজওয়াইফদের মতো।রান্না করো স্বামীর সেবা করো।বাচ্চার দেখা শোনা করো স্কুলে পাঠাও টাইপের জীবন।তোর ভালোবাসার দরকার আছে ওনার।একটা হাতের দরকার তার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দেয়ার জন্য একটা বুক দরকার যেখানে সে মাথা রেখে বাকিটা জীবন কাঁটিয়ে দিতে পারবে।ভাব আরহান।আনিকাকে তুই ভালোবাসতি।কিন্তু সে অন্যজনের সাথে চলে গেছে।যে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য সেই পাচ্ছেনা।আরহান চিন্তা কর।যে মেয়েটা তোর মেয়ের জন্য তোকে বিয়ে করেছে। মায়ের মতো আদর করছে ইনায়াকে।সে কি স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না?কথা গুলি ভেবে দেখিস।বায়।
-বায়।(আরহান)।আশফি এতক্ষন যা বলল সেটা একদম সত্যি।মাহিরা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।
চলবে
No comments :
Post a Comment