গল্পোঃ- আই লাভ ইউ
।
সিজন--৩
।
(পর্ব---০৬)
।
গাড়ি থেকে নামলাম। সবাই যে যার কাজে
ব্যস্ত
হয়ে গেল। সৌরভ আর শিহাব ভাইয়া মিলে
রান্নার
ব্যবস্থা করতে লাগল। আমি একটি গাছের
ছায়াতে
এসে বসলাম। তখনি ইভা এসে বললো...
- এসব কি?
- কোন সব?
- তানিশা মেয়েটার সাথে তোর এত কথা
কিসের?
- মানে?
- মানে ওর সাথে তুই কোনো কথা বলবি না।
- কেনো?
- জানিনা, আর যদি কথা বলিস তো তোর খবর
খারাপ
আছে।
- ওহ, তাহলে তো বেশি করে বলতেই হয়।
- কেনো? তুই বলবি কেনো?
- ভাবতেছি একটা প্রেম করবো। আর তানিশা
মনে
হয় আমাকে পছন্দও করে। আচ্ছা ওর সাথে
প্রেম
করলে কেমন হয়?
- হৃদয় তোকে থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করতে
মন
চাচ্ছে। বাজে একটা মেয়ে। কিস করে সবার
সামনে অপরিচিত ছেলের গালে।
- কিসের অপরিচিত? আর বললাম না সে
আমাকে
পছন্দ করে। ভাবছি আজ প্রোপোজ করবো। ঐ
তোর না বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। একটু আম্মুকে
বলিস
তো আমার আর তানিশার ব্যাপারে। বুঝিসই
তো যে
আমি আম্মুকে এসব বলতে পারবো না। আর
তাছাড়া
তানিশার মত তো কেউ আর আমাকে
ভালোবাসবে
না। আচ্ছা তানিশাও কি তোর মত চড় দিবে
আমার?
কথাটি শেষ করে ইভার দিকে তাকালাম।
কথাগুলো
যে ওকে মিন করেই বলেছি সেটা ও বুঝতে
পারিনি। তবে ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড
রাগ, অভিমান, আর ভালোবাসা লুকিয়ে
আছে। মনে
হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে। এবার ইভা বললো...
- তানিশাকে কত দিন চিনিস শয়তান ছেলে?
ওর মত
ভালোবাসবে না মানে কি? মুখ দেখলেই
বোঝা
যায় প্লে গার্ল। আর ও তোকে ভালোবাসবে?
- জানিনা, তবে আমি তাকে ভালোবাসবো।
আমার মত
ছেলেরা সব ছেলেদের মত না হলেও কষ্ট
সহ্য করতে পারে। তাই সেও না হয় কষ্ট দিক।
আমি
তার থেকে কষ্ট পেলেও ভালোবাসা মনে
করে
যত্নে রাখবো। আর এত কেনো তোকে
বলছি বা তুই কেনো এত কথা বলছিস? দুইদিন
পরই যাবি
তো অন্য ঘরে। আর আমার লাইফ আমি যাকে
ইচ্ছে ভালোবাসবো বা কথা বললো এতে
তোর কি?
কথাগুলো একটু ঝাঝালো কন্ঠে বললাম। ইভার
চোখে পানি টলমল করলেও তা বের করছে
না।
আমি সেখান থেকে চলে আসতে যাবো তখনি
সে বললো..
- নাহ তুই কাউকে ভালোবাসিস না আমাকে
ছাড়া। তুই
কাউকে ভালোবাসতে পারিস না আমাকে
ছাড়া। আর
সব কিছু আমাকে বলেই করতে হবে। আমি
যেটা
বললাম সেটাই করতে হবে।
- হিহিহিহিহি সরি এভাবে হাসা যাবে না
দাঁড়া এভাবে হাসতে
হবে..হা হা হা হা..... আমি তোকে
ভালোবাসি? হাসালি
রে। তোকে কেনো ভালোবাসবো আমি?
মোটেও না তোকে আমি ভালোবাসতে
কেনো যাবো? ঐ যা তো এখান থেকে। আর
যা
যারা যারা এ যাবত তোকে ভালোবাসি
বলেছে বা
পিছনে ঘুরেছে তাদের কাছে যেয়ে থাক।
এত
তাড়াতাড়ি লাইফের ইনজয় করা শেষ হয়ে
গেল? আর
শোন, আমি তোকে ভালোবাসি না বুঝলি?
কথাগুলো বলে ইভার দিকে তাকালাম। দেখি
সে
কান্না করছে। খুব খারাপ লাগছে যে এটা
ভেবে ও
যদি ভালোবাসে তো এখন কেনো বলছে না?
সেই কি আবার আমার কাছ থেকে শুনতে
চাই? কিন্তু
না। আমি আর বলবো না। সে ভালোবাসছে
তো
সেই এসে বলবে আমি কেনো বলতে যাবো?
- হৃদয় কি করছো এখানে? (তানিশা)
- কিছু করছি না তো।
- কখন থেকে তোমাকে ডাকছি। ঐ চল না
আমরা ঐ
নদীর দিকে যায়। তুমি নৌকা চালাবে আর
আমি
বসবো। প্লীজ চলো না প্লীজ।
- আরে আমি তো এটাই বলতে তোমাকে
খুজতেছি। হুমম চলো, আজ আমরা সারাদিন
দুজনে
ঘুরবো।
কথাটি ইভার দিকে তাকিয়েই বললাম। দেখি
সে এবার
প্রচন্ড রাগে তাকিয়ে আছে। মনে মনে হেসে
উঠলাম এক তাচ্ছিল্যের হাসি। যে হাসিতে
খালি
বিষাদের প্রতিরুপ বিদ্যমান।
ইভার সামনেই তানিশার হাত ধরলাম। চোখ বড়
বড়
করে সে এদিকে তাকিয়ে আছে। তানিশাকে
হাত
ধরে ওর সামনে দিয়ে নিয়ে আসলাম।
দুজনে অনেক্ষন ঘোরাঘুরি করে তিনটার সময়
রান্নার এখানে আসলাম। এবার তানিশা
আমার হাত ধরে
আছে। সেখানে যেয়ে দেখলাম সবাই সারি
সারি
মাদুরের উপর বসে আছে।
শিহাব ভাইয়া, মৌলি ভাবি, অদ্রিতা, ইভা,
শিমি, মাহিন, অপু সবাই
বসে আছে পরপর। আমরা যেতেই ইভা আর
অদ্রিতা তাকালো কেমন করে। সবাই
খাবারের জন্য
রেডি। আমরা যেতেই মৌলি ভাবি বললো...
- এই তোমরা কোথায় ছিলে?
- আপু, আমরা একটু ঘুরতেছিলাম। (তানিশা)
- হুমম ওনাদের তো খালি ঘোরাঘুরি। (ইভা)
- ভাবি ঐ একটু নদীর পাড়ের দিকে ছিলাম।
(আমি)
- এই দেখো না ওদের দুজনের কত মানিয়েছে।
মৌলি ভাবি শিহাব ভাইয়াকে ডেকে কথাটি
বললো। আমি
শুনে তো অবাক। তার মানে পানি অন্য দিকে
গড়াচ্ছে। হায় হায়...না না এটা হতে পারে
না। তবে
কথাটি শুনতেই ইভার দিকে তাকালাম। দেখি
মুখটা
শুকনো করে চেয়ে আছে। সাথে অদ্রিতাও
বেশ অবাক। মৌলি ভাবি, শিহাব ভাইয়া আর
তানিশা তিনজনই
হাসছে। আর এদিকে আমার হাত কাঁপছে।
- মেজো আম্মুকে বলতে হবে বুঝেছো?
(মৌলি ভাবি)
- হুমম, দেখি বলে।
- উফফ তোমরা থামো তো। এই ভাইয়া তোকে
আজ হবে বাসায় যেয়ে নি আম্মুকে বলে
দিবো।
(অদ্রিতা)
- আরে না না, ওদের দেখছিস না কত সুন্দর
মানিয়েছে অদ্রিতা। থাকতে দে বেশ
লাগছে।
(ইভা)
- চুপ সবাই। সৌরভ খেতে দাও তো। (আমি)
সবাই বসে গেল। আমি আর সৌরভ কেবল
সবাইকে
খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
খাসির
মাংসো আর পোলাও। একে একে সবাইকে
বেড়ে দিতে ইভার কাছে এসে দাঁড়ালাম।
ইভা আমার
দিকে তাকালো। আমিও ওর দিকে
তাকালাম। দুজনের
মুখে কোনো কথা নেই। আশে পাশে কে কি
বলছে তার দিকে কোনো লক্ষ্য নেই। ইভা
আমার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। ওর
চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টাতে আমি ব্যস্ত।
ওর প্লেটে খাবার বাড়ার কোনো নাম নেই।
তখনি
ইভা বললো...
- খুব কষ্ট দিতে শিখেছিস।
- কষ্ট যে আগে থেকেই পেয়েছি।
- ভালোবাসতে পারিস না?
- কেউ তো ভালোবাসে না আমায়।
- কে বলেছে বাসে না?
- কোনো একদিন যাকে বলেছিলাম
ভালোবাসি
সেই তো ফিরিয়ে দিয়েছিল।
- আরেকবার কি বলতে পারিস না?
- ভয় করে সে আবার ফিরিয়ে দেয় যদি।
- নাহ সে দিবে না।
- সে তো বাসে না।
- কে বললো তোকে বাসে না?
- তাহলে সে কেনো বলে না এসে বলে না
ভালোবাসি?
- হয়ত সে শুনতে চাই।
দুজনেই আবার চুপ হয়ে গেলাম। ইভা তাকিয়ে
আছে আমার দিকে পলকহীন। আমিও চেয়ে
আছি
তার দিকে। তখনি অদ্রিতা ইভাকে ধাক্কা
দিয়ে বলল...
- বাপরে বাপ,সেই থেকে তাকাচ্ছি কিন্তু
কারো
কোনো সাড়া নেই। এই ভাইয়া মাংস দে।
কখন
থেকে বসে আছি।
দুজনেই লাফিয়ে উঠলাম। সবাইকে খাবার
বেড়ে
দিয়ে তানিশার সামনে গেলাম। তানিশা
আমার দিকে
তাকিয়ে হাসলো। আমিও হাসলাম। তখনি সে
বললো...
- আপুরা কি বলছিলো শুনেছো?
- কি বলছিল?
- এমা তুমি শোনোনি?
- নাহ
- আচ্ছা হা করো তোমাকে খাইয়ে দিই।
খাবো না তবুও সে জোর করে গালে তুলে
দিল।
চিবাতে চিবাতে ইভাের দিকে তাকালাম।
দেখি সে রাগি
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এটাই তো চাই।ইভা
জ্বলে
পুড়ে কাঠ হোক। তবেই তো সে বুঝবে
ভালোবাসা কি।
..
পিকনিক শেষ করে বাড়ির দিকে রওনা
দিলাম।
আবারো সেভাবে বসতে হয়েছে। ইভা
কোনো কথা বলছে না। খালি বাইরে
তাকিয়ে
আছে। আমিও বেশ চুপচাপ আছি। এদিকে
তানিশা
বকবক করেই যাচ্ছে। একসময় বাড়িতে এসে
পৌছালাম। সব কিছুই স্বাভাবিক আছে।
খালি ইভা মুখটা
কালো করে আছে।
সন্ধ্যা নেমে গেছে। আমি ছাদে দাঁড়িয়ে
আছি।
হালকা মৃদু বাতাস এসে সবকিছু কেমন মাতাল
করে
দিচ্ছে। আমি ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে
আছি। তখনি
দেখলাম কেউ একজন আসছে। সে দিকে
তাকাতেই দেখি তানিশা।
- হৃদয় তোমাকে সেই কখন থেকে খুজছি।
- কেনো?
- তোমাকে কিছু কথা বলার আছে।
- হুমম বলো।
- জানিনা তুমি কিছু মনে করবে কিনা। আর
তা ছাড়া এটা
মেয়ে হয়ে যে বলছি কেমন লজ্বারও ব্যাপার
আছে।
- হুমম বলো আগে।
- সোজাসুজি কথা বলতে ভালোবাসি। আর
আমার
বেশি হেয়ালি পছন্দও না। তোমাকে আমি
ভালোবাসি।
কথাটি শুনে আমি চমকে উঠলাম। যে ভয়টা
পাচ্ছিলাম
সেটাই হলো। আমি মুচকি হাসলাম। তানিশা
আমার হাসি
দেখে বললো...
- তুমি হাসছো কেনো?
- আমার হাসিতে কোনো কারন থাকে না।
এমনি হাসি।
- ওহ, বাট আমার উত্তর?
- আচ্ছা, তুমি আমাকে কতদিন ধরে চিনো?
- কেনো ১০ দিন হবে।
- ওহ,,তা এত তাড়াতাড়ি ভালোবেসে ফেললে
তো
তাই।
- কেনো? কাউকে কি ভালোবাসতে ১০ বছর
লাগে?
- হুমম লাগে। কারন তোমার মাঝে আমার
প্রতি যে
ভালোবাসা আছে। সেটা ভালোবাসা না।
এটা কেবল
ভালোলাগার আকৃষ্টতা আর আবেগ প্রবনতা।
যার
প্রতিফলন থাকবে কয়েক মাস। একসময় তুমি
এর
থেকে বের হতে পারবে।
- কি সব বলছো? আমি তোমাকে সত্যিই
ভালোবাসি।
- ভালোবাসি বলাটা এত সহজ না তানিশা।
এটি সহজ শব্দদ
হলেও বলতে গেলে বা এর মাঝে থাকতে
জড়তা
আছেই। জুট করে কখনও কাউকে ভালোবাসা
যায়
না। হঠাৎ করে কাউকে ভালোবাসি বলা হয়ে
ওঠে
না। তুমি আমাকে ভালোবাসো না ভালো
লাগার
মধ্যে পড়ে আছো। যা একসময় ফুরিয়ে যাবে।
তানিশা চুপ হয়ে যায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে ও
আমার দিকে। আমি ওর তাকানো দেখে
আবারো
হাসলাম। এবারো সে হাসির রহস্যে কেমন
দৃষ্টিতে
চেয়ে আছে। তানিশা বললো...
- তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
- তা জেনে কি করবে?
- নাহ বলো,কাকে ভালোবাসো?
- ইভা আপুকে ভালোবাসে ভাইয়া। (অদ্রিতা)
আমি অদ্রিতার দিকে তাকালাম। এই মাত্র
সে আসলো।
তবে সে যা বললো তা শুনে আমি চুপ হয়ে
গেলাম। কারন সে সত্যি কথা বলছে।
- মানে? ইভার তো বিয়ে কদিন পরই।
(তানিশা)
- হুমম তো? (অদ্রিতা)
- তাহলে সে কিভাবে হৃদয়কে ভালোবাসে?
- হাহাহাহা...ইভা আপুর তো ভাইয়ার সাথেই
বিয়ে হবে।
আর এটা সবাই জানে। খালি ভাইয়াকে
জানানো হয়নি।
আমি ওর কথা শুনে চমকে উঠলাম। শরীরে সব
লোম যেন দাঁড়িয়ে গেল। মাথাটা কেমন
চক্কর
দিয়ে উঠল। আমি চোখ বড় বড় করে
অদ্রিতাকে
বললাম...
- এই এসব কি বলছিস তুই?
- হুমম ঠিকই বলছি। দুইদিন পর ইভা আপুর সাথে
তোমারই বিয়ে হবে।
অদ্রিতা কথাটি বলেই চলে গেল। তানিশা
আমার দিকে
করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তানিশা
মাথাটা নিচু করে
তখনি চলে গেল। আমি রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে
আছি।
আকাশটাকে দেখছি। হঠাৎ শুনলাম...
- হৃদয় তোকে কিছু বলার ছিল। (ইভা)
আমি কথাটা শোনা মাত্রই ইভার দিকে
তাকালাম। দেখি
সে মাথাটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে আছে। হয়ত
বলবে
তার কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে। তাই সে এ
বিয়ে করতে পারবে না।
- কথাগুলো অনেকদিন অনেকদিন হল বলা হয়ে
উঠছে না।
- হি হি হি..আমি জানি কি বলবি।
- কি?
- তুই কাউকে ভালোবাসিস। আর তাকেই বিয়ে
করতে চাস। কিন্তু বাড়ির সবাই আমাকে ঠিক
করেছে
তোর সাথে বিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু তুই এটা
মোটেও চাচ্ছিস না। অন্য কাউকে বিয়ে
করবি এটাই
তো বলতে এসেছিস তাই না? ওকে টেনশনের
কোনো দরকার নেই। আমি এ বিয়ে হতে
দিবো
না। আর তাছাড়া তুই যে আমাকে
ভালোবাসবিও না তা
সে ক্লাস টেন এ পড়ার সময় বলে দিয়েছিলি।
যাইহোকে ভালো থাকিস আমি তোর ক্ষতি
বা কষ্ট
হয় এমন কোনো কাজ করবো না।
কথাটি বলেই ছাদ থেকে চলে আসি। দৌড়ে
রুমে
চলে আসলাম। দরজা আটকে ধপ করে
বিছানায়
বসলাম। অদ্রিতা যখন এসে বললো ইভার
সাথে
আমার বিয়ে তখনি মনটা কেন জানি খুশিতে
নেচে
উঠেছিল। খানিকটা সময় ভেবেই ছিলাম
পেলাম
তাহারে অবশেষে। কিন্তু নাহ, এটা আর হলো
না।
আসলে সবকিছু তো আর চাইলেই হয়না।
(আমি বাঁচি না আমার জ্বালায়!আর সবার
গল্প লাগে)
.
to be continue............
Friday, October 26, 2018
I love you পর্ব ৬
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment