গল্প: মাস্তানি (৬ষ্ট ও শেষ পর্ব)
।
- সব পরিবারের মত আমাদের পরিবারেও সুখ
ছিলো।
ছিলো অনেক কিছুই। আমার যখন ১৪ বছর বয়স
তখন আমার.মা মারা যায় ক্যান্সারে।.সেদিন খুব
কেদেছিলাম আমি। সেদিন বুঝেছিলাম, মা আসলে কি
জিনিস। আব্বু মাকে খুব ভালোবাসতো। আব্বুও
ভেঙে পড়েছিলো খুব। কিন্তু আমি যখন
কলেজে উঠলাম।
অর্থ্যাৎ আমার আব্বু আম্মুর মারা যাওয়ার তিন বছর পরই
বিয়ে করে আরেকটা। তিনি ভেবেছিলেন আমি
একা করবেনা, মায়ের অভাব পূরন করবে বলে
বিয়ে করেছে।
কিন্তু না সেরকম কিছুই।হয়নি। আসলে সৎ রা আপন
হয় না কখনই। তিনি ছিলেন লোভি একজন মহিলা।
একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখি, আমার সৎ মা
আব্বুর বেড রুমে অন্য একটি লোকের সাথে
একই বিছানাতে... এসব দেখার পর, নিজেকে
কেমন অসহায় লাগতো। কিছু বলতে গেলেই
মারতো
আমাকে তিনি। এমনি একদিন কলেজ থেকে
ফিরে দেখি, সেদিনের সেই লোকটা রুম
থেকে বের
হচ্ছে। তার পরেই মা বের হয়,
- কি ব্যাপার মা, লোক টা কে? (আমি)
- কেনো? (মা)
- তোমার রুমে প্রতিদিন সে কি করে?
- মানে?? তোকে বলতে হবে কেনো?
- আমি আব্বুকে সব বলে দিবো।
- ঠাসসস...বেয়াদপ ছেলে, তুই
যদি তোর বাপকে কিছু বলিস সেদিন তোর বাবাসহ
তোকে খুন করবো। যা নিজের কাজ কর।
কথাগুলো চুপচাপ শুনে গেলাম।চোখ দিয়ে পানি
পড়তে লাগলো। তবে একদিন আব্বুকে সব বলি.
- আব্বু ঐ মহিলা ভালো না।
(আমি)
- কে,,?
- সৎ মা,,
- নিলয়, কাউকে সম্মান দিতে শেখোনি? তোমার মা
হয়।
- হুমম মা হয়, তবে সৎ মা।
- কি হয়েছে,,
- উনি তোমার অনুপস্থিতিতে বাইরের লোক এনে
তোমার বেডরুমে....
- ঠাসসসস,,বেয়াদপ ছেলে, তুমি কি বলছো
এসব...?
সেদিন আব্বুর মুখের দিকে কান্না ভরা চোখে
তাকিয়ে ছিলাম।
- বিশ্বাস না করলে তুমি দেখে নিও।
এইটুকু বলেই সেদিন চলে আসি
আমু ওনার থেকে। একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি। তখনি
চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায়। চিৎকার আসে
আব্বুদের
রুম থেকে। দৌড়ে সেখানে যেয়ে দেখি। আমার
আব্বুকে।সৎ মা আর সেই লোকটি খুন করছে।
ছুরি দিয়ে আঘাত করছে বারবার...
- আব্বু....(চিৎকার করে ডাক দিলাম)
- ঐটাকেও ধর (মা)
ওদেরকে ধাক্কা দিয়ে আব্বুর কাছে গেলাম।
সেদিন।আব্বু বলেছিলো, "নিলয় তুই কোনোদিন
রাগের বসে
কিছু করে বসবি না" তার পরেই তিনি মারা যায়,তখনি রাগ
উঠে যায় আমার। খুন আমি সেই লোকটাকে ও
আমার সৎ মাকে। তারপর থেকে আমি পাল্টে যায়।
একটা গ্যাং হয় আমার। যশোরের সবাই, আমাকে
একনামে চিনে। আমাকে ভয় পাই। হয়ে উঠি মাস্তান।
সারা এলাকায় মাস্তানি।করে বেড়াতাম। কিন্তু
আব্বুর কথাটি বারবার মনে পড়তো, তাই এখন ভালো
হওয়ার জন্য এখানে এসে নতুন করে ভর্তি হয়।
..
কিছু না বলেই নেহা সেখান থেকে চলে
গেলো। আমি
অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
কিন্তু সে কেনো চলে গেল? ক্লাসে বসে
আছি। কিন্তু
নেহা আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। তবে সেই
তাকানোর মাঝে আছে, একটা ক্ষোভ, একটা রাগ।
কিন্তু আমি কি করলাম? আমি তো তার কোনো
ক্ষতি
করিনি।
- নিলয়, তুমি বলোতো, মানুষ কেন স্বার্থপর হয়?
যেখানে বলা হয়ে থাকে মানুষ মানুষের জন্য?
(স্যার)
- স্যার, মানুষ স্বার্থপরতা শেখে পরিস্থিতির মধ্যে
পড়ে। যদি কারো সাথে খারাপ কিছু হয়, তো সে
সেখান থেকেই স্বার্থপর হয়ে যায়।
- তাহলে মা বাবা কেনো স্বার্থপর হয় না? (স্যার)
- হাহাহাহা,, স্যার, মা বাবা হল পৃথিবীর সব চাইতে অমুল্য
সম্পদ। যার এই দুটো সম্পদ নেই। মোটেও ধ্বনি
না স্যার। আর তারা মোটেও স্বার্থপর হয় না। কারন,
তাদের মন সন্তানের জন্য সবসময় পবিত্রতায় ভরা
থাকে। সন্তান যত বড়ই ভুল করুক না কেনো, মা
বাবার
কাছে সে কিছুই করে নি।।এটাই হল ভালোবাসা স্যার,
এটাই হল সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভালোবাসা। কিন্তু
কেনো স্যার, এমন প্রশ্ন?
- আসলে আমার ছেলেটা আবার ফিরে এসেছে
তো
তাই। (স্যার)
কিছু না বলে মুচকি হেসে।বসে পড়লাম। সামনে
তাকিয়েই দেখি, নেহা।নেই। কিন্তু কই গেল সে??
সারা ক্লাসে সে নেই। ক্লাস শেষ করে বাইরে
বের
হলাম। কেন জানিনা আজ মনে হচ্ছে এই কলেজে
আসা আমার আজ শেষ দিন। হয়ত আর আসতে
পারবো না। চারিদিক ভালো করে দেখে নিলাম
একবার। ক্যামপাস থেকে বের হওয়ার
আগে সব দিকে চোখটা বুলিয়ে নিলাম। ক্যাম পাস
থেকে বের হয়েই, আমি অবাক..
সামনে দেখি নেহাসদাড়িয়ে আছে। আর তার গায়ে
পুলিশের পোষাক।
- নেহা তুমি..?
- অবাক হচ্ছো?? এটা নাও..
(হাত বাড়িয়ে)
হাত বাড়িয়ে সে যা দিলো।সেটা হল আমার সেই
পিস্তলটা। যা আমার ব্যাগেই থাকতো। কিন্তু সে এটা
পেলো কোথায়? তাহলে আমার কাছে কি অন্য
একটা??
- কি হল ধরবা না?? (নেহা)
-......
- খুব খুজেছি তোমায়। তুমি খুব নিখুত মাস্তান ও খুনি।
বহু জায়গায় তোমায় খুজেছি। শেষে তোমাকে
এখানে
পেলাম।
-...... (অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম)
- সেদিন ঐ টিজার রা তোমাকে ভাই বলাতেই
সন্দেহ হয় আমার। তারপর থেকেই তোমাকে
ভালোবাসার ফাদে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু
তুমি পড়োনি। তবে রোজ দেখতাম তুমি তোমার
ব্যাগ থেকে নড়তে না। সন্দেহটা বাড়ে। আর
তোমার পরিচয়হীন স্বভাবে খোজ নিয়ে
জানতে পারি, তুমিই সেই মাস্তান নিলয়।
আর বড় কথা হল, সেদিন তোমায় শুনে ছিলাম
ফোনে
কথা বলাটা। শুনে নিয়েছিলাম কাউকে খুন করবে।
আর যাকে খুন করেছিলে, সে হল আমাদের
ডিপার্টমেন্ট এর একজন পুলিশ। তোমার উপর
নজরদারি রাখতেই আমি ওকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি
তাকেও মেরে দিলে।
- বাহ বাহ,,,তবে আগে কেনো
ধরোনি? কেনো আমার পূরোনো কথাগুলো
শোনার
পর ধরলে? আর আমি তো ভালো হতে
চেয়েছি।
-.......
- আমাকে ভালোবাসার নাটক করলা..?
- হুমমম..
- প্রমান হয়েই গেল, মেয়েরা আসলেই নিকৃষ্ট।
কথাটি শেষ করে নেহার হাতে থাকা পিস্তলটি
কেড়ে নিলাম। সোজা কপাল বরাবার ধরে যেই
নটিগার টানতে যাবো তখনি পায়ে গুলি করে আমায়
কেউ
একজন। পিছনে ঘুরে দেখি ৭ জন পুলিশের মধ্যে
কেউ একজন গুলি করেছে আমার।
..
কিছু মনে নেই আর, যখন ঙ্গান ফিরলো তখন
দেখি আমি থানার মধ্যে। বাইরে দাড়িয়ে আছে
নেহা।
- তো মি. নিলয়, খুব সমাজের হয়ে লেকচার দেন
তাই না? খুব বুদ্ধিমান ছিলেন তাই না? কিন্তু এখন আর
সে সব দিয়ে কাজ নেই। আপনার ফাসির ব্যাবস্থা
করছি।
কিছু না বলে চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকালাম।
মনে মনে বলে উঠলাম
- হায়রে মানুষ, ভালো হওয়ার সুযোগটুকু দিলি না। আর
তোকে তো বিশ্বা করেই সব নিজের মুখে
বলেছি সব। তারপরও তুই এমনটা করলি। আসলেই
বিশ্বাস নিয়ে
খেলাটা, তোর মত মেয়েদের।কাছে একটা মজার
ব্যাপার।।আমাকে বলে দিলেই তো হত,।নিজে
এসে ধরা দিতাম তোর কাছে। চেয়েছিলাম একটা
ভালো মানুষ হব আগে। তারপর নিজে এসে ধরা
দিবো। কিন্তু ভালো আর।হতে দিলি না।।তবে
এখানেই শেষ না। আমি।যেভাবেই হোক এখান
থেকে।বের হব। বের হয়েই শুরু করবো আবার
মাস্তানি। প্রথম খুন।হবি তুই। বিশ্বাসের খুন।করলি তুই
আমাকে। আর আমি।করবো তোর।দেহের খুন।
একটু জোরে হেসে উঠলাম। হাসিটা ছিলো এক
পৈশাচিক হাসি।
--------(সমাপ্ত)---------
Friday, October 26, 2018
মাস্তানি পর্ব ৬ (শেষ পর্ব)
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment