দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
২১
-আরহানকে স্যুপটুকে খাইয়ে দিয়ে বের হয়ে এলাম।ওনার মা আর বাবা ইনায়াকে নিয়ে বসে আছে।আমাকে দেখতে ওনার মা বলে উঠলেন।
-ইনায়াকে নিয়ে বাসায় চলে যাও।হাসপাতালে বাচ্চাটার কষ্ট হচ্ছে।আমি থাকবো হাসপাতালে।
-না মা আপনি আর বাবা ইনায়াকে বাসায় নিয়ে যান।আমি আছি।চিন্তা করবেন না(মাহিরা)
-আমি পাপার সাথে দেখা করবো মুখ ফুলিয়ে বলল ইনায়া।
-না ইনায়া পাপা আগে কেবিনে যাক তারপর দেখা করো(আরহানের মা)
-না না আমি এখনই পাপাকে দেখবো প্লিজ মাম্মা প্লিজ।
-ইনায়া দাদুর কথা শুনতে হয় মামনি(মাহিরা)
-একটু দেখি প্লিজ মাম্মা(ইনায়া)
-ওকে আসো। ওকে কোলে নিয়ে ওটির জানালার সামনে গেলাম।আরহানকে ঘুমপাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
হয়েছে ইনায়া???
-হয়েছে(ইনায়া)
-এবার দাদা দাদুর সাথে বাসায় যাও ওকে?(মাহিরা)
-ওকে।
-ওনারা চলে গেলেন।জানালার সামনে দাড়িয়ে আরহান কে দেখছি।অজান্তেই চোখের কোনা বেয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।হঠাৎ দেখি আরহান ইশারায় ডাকছে আমাকে।ওনার সামনে যেয়ে দাড়ালাম।বলুন।
-একটু পানি দেবে?(আরহান)
-বোতল থেকে গ্লাসে একটু পানি নিয়ে ওনাকে খাইয়ে দিলাম।
-ইনায়া কই?
-মা বাবার সাথে পাঠিয়ে দিয়েছি(মাহিরা)
-ভালো করেছো।একটু বসবে পাশে?
-ওনার পাশে বসলাম।কি বলবেন বলুন(মাহিরা)?
-ওর একটা হাত বুকের ওপর রাখলাম।ভালো লাগছেনা।প্লিজ কোথাও যেওনা।এখানেই থাকো।
-ঠিক আছে আপনি ঘুমান।আমি আছি(মাহিরা)।ওনি ঘুমিয়ে পড়লেন।এভাবে কতক্ষন এভাবে বসেছিলাম খেয়াল নেই।ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি ওনার বুকে মাথা রেখে আছি।সামনে তাকাতেই আমাকে দেখছেন।আ'ম সরি।কখন এভাবে ঘুমিয়ে গেলাম খেয়াল ছিলোনা।
-কোন সমস্যা নেই মুচকি হেসে বললাম।
-অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। পরদিন ওনাকে কেবিনে আনা হলো।মা এসেছেন ইনায়াকে নিয়ে।ইনায়াকে বাবাকে জড়িয়ে আদর করছে।
-পাপা আমি আর পানি খেতে চাইবোনা(কাঁদো কাঁদো গলায়)
-কেন মা কি হলো???(আরহান)
-আমার জন্য তুমি ব্যাথা পেয়েছো পাপা(ইনায়া)
-ওকে বাম হাত দিয়ে বুকে টেনে নিলাম।না মা তোমার কোন দোষ নেই।এভাবে বলতে হয়না।
-৮দিন পর আরহানকে রিলিজ দেয়া হলো।হাতে প্লাস্টার করে রাখা আছে।ঘরে ফিরেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়েছেন।বাম হাত দিয়ে কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝাই যাচ্ছে।ওনার জন্য কিছু খাবার আর মেডিসিন নিয়ে পাশে এসে বসলাম।এখন কাজ না করলে চলেনা?????(মাহিরা)
-না অনেক দিন কাজের সাথে কোন যোগাযোগ নেই।অনেক কাজ পড়ে আছে।একটা ফাইল তৈরি করছি।
-ল্যাপটপটি বন্ধ করে দিয়ে বললাম আগে খেয়ে নিন।তারপর কাজ।
-ওর এমন কাজে খানিকটা অবাক হলে ও পরমুহূর্তে বললাম কাজটা আগে কমপ্লিট করে নেই।
-বললাম না আগে খেতে হবে।চুপচাপ বসুন। খাইয়ে দিচ্ছি(রাগী গলায়)
-এবার জোরে সোরে ধাক্কা খেলাম।তবু ও কিছুটা সামলে নিয়ে খেতে লাগলাম।
-মেডিসিন টা খাইয়ে দিয়ে বললাম সাহায্য করতে পারি?(মাহিরা)
-হুম।ও আমার সামনে থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসে পড়লো।আমি বলছি আর ও লিখছে।চুল গুলো দখিনা বাতাসে উড়ছে।বাহিরের রোদ ওর গাল দুটোকে ছুঁইয়ে দিচ্ছে।কাজের সময় বার হাত দিয়ে ওর চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়া থেকে বারবার চোখের পাতা ফেলা বিষয় গুলো বেশ আকর্ষনীয়।
-আরহান!!!!!আরহান!!!কথা বলে না কেন?গায়ে হাত দিয়ে ঝাঁকালাম আরহান!!!!!!!!!!
-জি জি কিছু বলছিলে????(আরহান)
-কই হারিয়ে গেলেন???
-কোথা ও না এখানেই আছি।বলো কি হয়েছে?
-ফাইল কমপ্লিট (অবাক হয়ে)
-ওহ।থ্যাংকস।ইনায়া আর তুমি খেয়েছো?(আরহান)
-জি।ওনাকে ধরে খাটে নিয়ে শুইয়ে দিলাম।ঘুমিয়ে পড়ুন
-হুম।
-আমি আসি।ইনায়ার স্কুল থেকে কল এসেছিলো।যেতে বলেছে।
-ওহ।তুমি চলে যেও(আরহান)
-ওকে কাল সকালে যাবো।
চলবে
দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
২২
-পরদিন ইনায়াকে নিয়ে স্কুলে করে এলাম।বাহিরে গেলে ওর বায়না বেড়ে যায়।অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে আইসক্রিম কিনে ঘরে ফিরে এলাম।
-কাজ হলো ঠিক মতো????(আরহান)
-হুম হলো তো????খিদে পেয়েছে???(মাহিরা)
-না।ইনায়া কই?(আরহান)
-খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম(মাহিরা)
-ওহ।আপনার তো গোসলের টাইম হয়ে গেছে।চলুন।
-আগে একটু রেস্ট করো মাহিরা।
-রেস্ট পরে হবে।আগে গোসল।আসুন।ওনাকে ধরে উঠিয়ে দিলাম।নিজ হাতে গেন্জি খুলে দিলাম।ঠিকমতো তাকাতে পারছিনা ওনার দিকে।স্পন্জ দিয়ে শরীর মুছে দিয়ে জামা চেন্জ করে দিলাম।আপনি বসুন খাবার নিয়ে আসছি।
-মাহিরা!!!
-(পিছনে ফিরে) জি।
-কিছুনা যাও(আরহান)।
-প্লেটে কিছু খাবার ওনাকে খাইয়ে ঔষধ দিয়ে দিলাম।
উঠে চলে যাওয়ার জন্য যখনই সামনে আগালাম।ওনি আমার একটি হাত ধরে ফেললেন।কি হলো???
-একটু বসবে এখানে(আরহান)?
-আমি আছি।আপনি ঘুমান(মাহিরা)
-থ্যাংকস।ওর সাথে কথা বলতে বলতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনেই নেই।ওর সেবা যত্নে বেশ সুস্থ উঠেছি কয়োকদিনে।হাত এখন ও ঠিক হয়নি।
১৫ দিন পর
-সকাল থেকে খুব খারাপ লাগছে শরীরটা।জ্বর জ্বর লাগছে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাতে গেলাম।মাথা ঘুরাচ্ছে বার বার।ইনায়াকে নাস্তা করিয়ে স্কুলে নিয়ে গেলাম।স্কুল থেকে ফিরে এসে ঘরে ঢুকতেই মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিবো তখনই আরহান ধরে ফেলল।
-মাহিরা কি হলো তোমার?কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।ইনায়াকে ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দিতে??
-ড্রাইভার বাড়িতে না???(মাহিরা)
-ওকে।নাস্তা করেছো??
-উহুম।
-আসো নাস্তা খাবে।ওকে টেবিলে এনে নাস্তা করালাম।রুমে যেয়ে শুয়ে পড়ো ইনায়ার স্কুল ছুটি হলে আমি নিয়ে আসবো।(আরহান)
-আপনি ড্রাইভ করবেন কেমন করে(মাহিরা)?
-পারবো।চলো তোমাকে রুমে নিয়ে যাই।খাটে শুইয়ে দিয়ে বললাম।কোন কাজ করতে হবেনা।লাঞ্চ বাহির থেকে অর্ডার করবো।ইনায়ার ছুটি কখন???
-একটু পরেই(মাহিরা)
-আচ্ছা শুনো আমার কাছে একস্ট্রা চাবি আছে নিচে নেমো না তুমি।
-ওকে।কিছুক্ষন পর ওনি নিচে থেকে জোরে বললেন ইনায়াকে আনতে যাচ্ছেন।ঠিক আছে জলদি চলে আসবেন।
-নিচে নেমো না(আরহান)
-ঠিক আছে(মাহিরা)।পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষন পর কলিংবেল শুনতে পেলাম।(আরহান তো বলেছিলেন একস্ট্রা চাবি আছে ওনার কাছে।তাহলে বেল দিচ্ছেন কেন?চাবি রেখে গেছেন মনে হয়।)নিচে নামতে নামতে বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজলো।এমন করার তো কথা নয়।নিশ্চয়ই ইনায়া।আজ পিটুনি লাগাবো।মাথা ঘুরাচ্ছে।দরজা খুলে দেখি নীল।এখানে কেন???(বিরক্ত হয়ে)
-তোমার জন্য এসেছি জান।আসো তোমাকে আজ মন ভরে আদর দিবো।ওকে ধরার চেষ্টা করলাম।
-নীল ডোন্ট টাচমি (ওকে সরানোর চেষ্টা)
-কেন আরহানের টাচে খুব আনন্দ পাও বুঝি?ওর কোমড় জাপটে ধরলাম।
-নীল প্লিজ ছাড়।খুব খারাপ হয়ে যাবে(মাহিরা)।
-আজ তোকে নিজের করেই ছাড়বো।ওকে পিছনে ফিরিয়ে দেয়ালের সাথে জাপটে ধরলাম।জামার চেইন খোলার চেষ্টা করছি।
-দেয়ালের সাথে কপাল আটকে গেছে খুব ব্যাথা পাচ্ছি।কোনো মতে ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে আসতে নিবো তখনই নিচে পড়ে গিয়ে টেবিলের কোনায় লেগে কপাল কেঁটে গেল।
-খুব চালাকি করার চেষ্টা করছিলি তাইনা?ওর চুলের মুঠি টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম খালি একটি রুমে।
-নীল প....প্লিজ এ....এমন ক....ক..করোনা।পা ঝাপটাচ্ছিলাম।(শেষ রক্ষা হলোনা মনে হয়)চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
-ইনায়া দুষ্টমি করোনা।চাবি দিয়ে তালা খুলতে যাবো খেয়াল করলাম তালা ভাঙ্গা।মাহিরা ঠিক আছে তো।দ্রুত ঘরে ঢুকলাম।ফ্লোরে রক্তের দাগ মনে হচ্ছে কাউকে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
-পাপা মাম্মার কি হয়েছে(কাঁদতে কাঁদতে বলল)
-কিছু হয়নি বাবা চলো খুঁজি মাম্মা কে(আরহান)।মাহিরা!!!!!মাহিরা!!!!!!তারপর হঠাৎ করে যা দেখলাম.........
চলবে
No comments :
Post a Comment