♥গল্পঃমিষ্টি ভাবীর দুষ্ট বোন♥
পাট:৩
লিখাঃ মেন্টাল মিলন
|
|
|
----সাথী: তাই বুঝি,বিয়ানের হাতে পান খাওয়ার এত ইচ্ছা।
----আমি: ইচ্ছাটাতো ছিলই তাছাড়া আপনি নিজে যেহেতু খাওয়াতে চাচ্ছেন তাই আপনার হাতের পান খেতে মনটা প্রবল বেগ ধারন করেছে।
----সাথী: ওহ তাই তাহলে আমিও প্রবল বেগে আপনার জন্য একটা জাক্কাস পান নিয়ে আসি।
কথাটি বলেই চলে গেল, আর আমি ভাবতে থাকলাম মেয়েটি গিরগিটির মতো ক্ষনে ক্ষনে রং পাল্টায়।প্রথমে দেখে মনে হচ্ছিল যে মেয়েটি একটু চন্চলা হবে কিন্তু পরে মেয়েটিকে আবার দেখে এবং ভাবীর কথা শুনে মনে হলো নাহ মেয়েটি একটু শান্ত প্রকৃতির। আবার আজকের আচরন দেখে মনে হচ্ছে হুুম চন্চল টাইপেরই হবে মেয়েটি।আমাকে একটু সর্তক থাকতে হবে, মেয়েটির মতলবটা কি আমাকে আজ পান খাওয়াতে চাচ্ছে? এসব ভাবতেছি আর এরই মাঝে দেখি সাথী পান নিয়ে এসে পরেছে।
----সাথী: এই ধরেন পান....।
---আমি: পান টা হাতে নিয়ে দেখলাম কি কি দিছে, নাহ সব ঠিক আছে জর্দ্দা,চুন, সুপারী সবই আছে। তাই পানটি মুখে পুরে দিলাম, কিছুক্ষন চিবানোর পর আমার কাছে মনে হচ্ছে সব কিছু যেনো ঘুরতেছে।একি সাথীও যেনো আমার চারিপাশ দিয়ে ঘুরতেছে।তারপর কি হয়েছে বলতে পারবো না। যখন চোখ খুলে তাকালাম দেখলাম ভাবী মাথায় পানি ঢালছে, সজীব ভাই এবং বড় ভাই আমাকে ধরে রাখছে। ভাবীর আব্বা আম্মা পানি আনতেছে আর সাথীকে দেখলাম আমার সামনে বরাবর কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ওঠার জন্য চেষ্টা করলাম ভাবী বললো দাড়াও মাথাটা মুছে দেয়।মাথা মুছে দিয়ে একটা চেয়ারের কাছে নিয়ে বলল এখানে বসে একটু রেস্ট নাও।আমি বসতে ছিলাম তখনই দেখলাম সাথী শয়তানই এক হাসি দিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।আমি ভাবতে লাগলাম ভাবী এতো ভালো আর ভাবীর বোন এতো দুষ্ট কেনো??অবশ্যই দুষ্ট মেয়েরাই সহজে পটে যায়।তবে এভাবে চলতে থাকলে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিয়ের আগেই সাথীর সাথে প্রেম করতে পারবো। এসব চিন্তা করছি আর এরই মাঝে বড় ভাই আমার সামনের চেয়ারে বসলো।
---বড় ভাই: কি ব্যাপার সাথীর হাতে পান খেয়েই অজ্ঞান হেয়ে গেলে চুমা খাইলেতো তোমারে খুইজাই পাওয়া যাইত না, হা হা হা......
-----আমি: আরে বড় ভাই আপনিও মজা নিচ্ছেন?? আমিতো এর আগে কখনো পান খায়নি, তাছাড়া জর্দ্দাটা একটু বেশিই দিয়েছিল। ভেবেছিলাম কিছু হবে না।কিন্তু আমার ভাবনাটা মিথ্যে হয়ে গেলো আর আমি পরে গেলাম।
-----বড় ভাই: হুুম বুঝতে পারছি, তো শুনো প্রেম করতে গেলে এরকম ছোট ছোট কষ্ট করতে হবেই আর তাছাড়া অনেক কিছুই স্রেক্রিফাইস করতে হবে...বুজেছো??
----হুম বুজতে পারলাম।
আমরা কথা বলতে ছিলাম আর এরই মাঝে দেখি সাথী, সজীব ভাইকে নিয়ে এসে আমাদেরকে বলছে চলেন আপনাদেরকে আমাদের গ্রামটা একটু ঘুরিয়ে দেখাই।
----বড় ভাই বললো খারাপ হবে না চলো ঈশান গ্রামটা একটু ঘুরে আসি।
গ্রামের ভিতরের রাস্তা দিয়ে হাটতেছি, রাস্তাটির দু পাশে সারি সারি লাগানো গাছ আর দুপাশেই অনেক বিস্তৃতি এলাকা জুরে হলুদ শরিষা ফুলেন সমারহ, রাস্তাটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে।এরকম মনোমুগ্ধকর পরিবশে পছন্দের মানুষের সাথে উপভোগ করার সুযোগ পেয়ে মনটা খুশিতে বাকবাকুম করতেছে।বড় ভাই বলে উঠলো চলো শরিষা ক্ষেতে কয়েকটা ফটো তোলা যাক আমিও তার কথায় সায় দিলাম।আমরা একসাথে সেলফি তুলতে চায়লাম কিন্তু সাথী আসলো না,আমি আমাদের তিন জনের কয়েকটি ফটো তুললাম।অনেক আশা নিয়ে সাথীকে বললাম আপনি একাই দাড়ান আপনার একটা ফটো তুলি।
----সাথী: আসলে আমি ফটো তুলি না, এমনকি কেউ যদি ফটো তুলতে বলে তাহলেও আমার এলার্জী হয়।
কথাটি শুনিয়া সজীব ভাই এবং বড় ভাই উভয়ই অট্ট হাসিতে মেতে উঠলো।আমি বোকার মতো সাথীর দিকে চেয়ে রইলাম, অবশেষে নিজেকে সামলিয়ে বললাম তায় নাকি, তাহলে ফটো তুলার দরকার নাই।
আমি মনে মনে নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছি কেনো যে ফটো তুলতে চাইলাম, আর নিজে নিজেই অপমানিত হলাম।যাইহোক এই মেয়েকে কিছু বললে অনেক ভেবে চিন্তে বলতে হবে। সবাই এই সুন্দর প্রকৃতিকে উপভোগ করতেছে শুধু আমিই ব্যতিত।কেননা মনে যদি শান্তি না থাকে তাহলে স্বর্গে গিয়েও সুখ পাওয়া যায় না।অবশেষে সবাই চলে আসলাম।আমি রাতে সুয়ে সুয়ে ভাবতেছি কালকেইতো চলে যাবো কিন্তু এখন পর্যন্ত ভালোভাবে কথায় হলো না।তাহলে কবে মোবাইল নম্বর বা ফেসবুক একাউন্ট নাম্বার নিভো আর কবেই বা প্রেম করবো সেই চিন্তায় আমার ঘুম আসতেছে না।কালকে সাহস করে মোবাইল নাম্বার চাবো নাকি? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম।নাহ ফটো তুলতে গিয়ে একবার অপমানিত হয়েছি আবার নাম্বার চাইতে গিয়ে যদি আবার অপমানিত হই।আর তাছাড়া সব ক্ষেত্রে শুধু সাহস দেখালেই সফলতা পাওয়া যায় না, বুদ্ধিরও প্রয়োজন হয়। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরছি জানিই না। সকালে ঘুম থেকে ওঠে বাইরে বের হয়ে দেখি সবাই কাজে ব্যস্ত। সাথীও দেখি অনেক কাজ করতেছে।মনে মনে ভাবলাম আজকে তো সাথীর সাথে কথাই বলা যাবে না। তাই উদাস মনে চেয়ারে বসে আছি, কিছুক্ষন পর পিছন থেকে কে যেনো বলল বেয়াইয়ের কি মন খারাপ??
আমি পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি সাথী।তারপর বললাম না এমনি কেনো যেনো ভালো লাগতেছে না। ওহ....আচ্ছা আমি যায় আমার অনেক কাজ করতে হবে, এই বলেই সাথী চলে গেল।
দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেলো,সবাই রেডীও হয়েছে আমিও রেডী হয়েছি বাড়ীতে যাওয়ার জন্য।ভাবীর মনটা খারাপ তাদের পরিবার ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে আর আমার মনটাও খারাপ সাথীকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি বলে। সাথী আমার কাছে এসে বলল বেয়াই আবার আসবেন কিন্তু। আমিও তাকে কিছু বলতে যাব তার আগেই সে সজীব ভাইদের কাছে গেল,তাদের বিদায় জানাতে। আমি আর কিছু বললাম না। গাড়ীতে ওঠে পরলাম একে একে সবাই ওঠে পরলো। আমি সাথীর দিকে তাকিয়ে আছি।সাথী আমার চোখে একবার চোখ রেখেছিল। কিন্তু সেই চোখে আমার জন্য কোনো অনুভুতি আছে কিনা বুজতে পারলাম না। কি আর বলবো এ কয়দিনে আমি যা বুজলাম মেয়েটি আসলে অনেক রহস্যময়ী। কেননা একবার মনে হয় মেয়েটি আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক এ কারনে নিজে থেকেই অনেক সময় আমার সাথে কথা বলেছে। আবার মনে হয় আমার সাথে কথা বলতে তার কোনো আগ্রহ নেই। ধ্যাত আমি মনে হয় ব্যর্থ হলাম।হতাশ মন নিয়ে সজীব ভাইদের বাড়ী পৌছালাম।সকাল বেলায় খাওয়া দাওয়া করে বসে বসে ফেসবুক চালাচ্ছি আর তখনি ভাবী এসে বলছে কি করছো ঈশান??
---আমি :এই একটু ফেসবুক চালাচ্ছি...
---ভাবী: তুমি ফেসবুক চালাও? তাহলে আমাকে রিকুয়েস্ট পাঠাও না কেনো??
----আমি: ওহ আপনিও চালান নাকি??আচ্ছা আপনার আইডির নাম বলেন??
---- ভাবী: চাঁদের বুড়ী...
----আমি: কিহ! নাম আর খুঁজে পান নি?
ভাবী কিছু না বলে শুধু একটু মুচকি হাসলো।আমি রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে ভাবীর আইডি দেখতেছি। দেখলাম ভাবীর প্রতিটি স্টাটাসে সানজিদা আক্তার সাথী নামের এই আইডি ভালো ভালো কমেন্ট করছে এবং প্রতিটি কমেন্টে আপু শব্দটি উল্লেখ করেছে। কেনো যেনো আমার মনে হইতে ছিলো এই আইডি সাথীর আইডি হবে।নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভাবীকে বললাম, আচ্ছা ভাবী সানজিদা আক্তার সাথী এটা কার আইডি,আপনার প্রতিটা স্টাটাসে ভালো ভালো কমেন্ট করছে।
ভাবী: ওহ ঐটা আমার ছোট বোন সাথীর আইডি।
আমি: আমার মনে যেনো আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠলো। কিন্তু ভাবীকে তা বুজতে না দিয়ে বললাম, ওহ......।
ভাবী আমার এখান থেকে চলে যাওয়ার পর আমি সাথীকে রিকুয়েস্ট পাঠালাম।
তারপর বিকেল বেলায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি আমাদের বাড়ি চলে আসলাম। রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম এসেপ্ট করে নায়...পর পর ৩ দিন দেখলাম তাও এসেপ্ট করে নাই।আমার খুব রাগ হলো তাই এসএমস করলাম আমি আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়ছি প্রেম পত্র পাঠায়নি যে এতো ভাব ধরতে হবে।এসএমসটি পাঠিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম সাথী ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এসেপ্ট করছে এবং একটা এসএমেসও দিছে, এসএমেস টি এ রকমের ছিলো " আসলে কি জানেন আমি এখন পর্যন্ত কোনো ছেলের আইডি আমার কোনো ফেসবুক ফ্রেন্ড করি নি, এমনকি অপরিচিত কোনো মেয়েও ফ্রেন্ড লিস্টে নেই।তাই একটু দ্বিধায় আছিলাম। প্লিস রাগ কইরেন না আপনার রিকুয়েস্ট কিন্তু এসেপ্ট করেছি"।
আমি কিছুই লিখলাম না শুধু সিন করে রাখলাম। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম যাক একটু রাগ দেখিয়ে কাজ হয়েছে।
*****চলবে
(প্রিয় পাঠক গল্পটি কেমন লাগলো কমেন্টস করে জানাবেন সবাই
গল্পটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে
পড়ার সুযোগ দিন ধন্যবাদ)
♦কাল থেকে আমার পরীক্ষা শুরু সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন♦
Friday, October 26, 2018
মিষ্টি ভাবীর দুষ্ট বোন পর্ব ৩
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment