গল্প- কিছু অবাক করা ইচ্ছে।
.
.
.
ছেলেটার বকবকানি তে আমি সত্যিই অবাক.....
অবাক এর থেকেও আশ্চর্য কোন শব্দ থাকলে তা
ব্যবহার করতাম এই ছেলের জন্য।কিন্তু এই ছেলের
বকবকানিতে আমার আইকিউ কেন জানিনা দুর্বল
হয়ে পড়ে.....শুধু তার মতো ফাজিল মার্কা কথা
বার্তাই আমার মাথায় আসে......
তবে কিছু আশ্চর্য গুণ আছে বলতে হবে ছেলেটার
এতো ফাজলামো মার্কা কথা বার্তা বললেও কখন
যে ঠিক একটা সিরিয়াস কথা বলে ফেলে সেটা
হজম করা কষ্ট.....
।
অর্থী এইসব হাবিজাবি ভাবছিল আদিবকে নিয়ে।
মুহুর্তেই আবার মেসেঞ্জার এর টুং শব্দে বাস্তবে
ফিরে এসে দেখে আদিব এর মেসেজ।ঠিক রাত
১১টার পরে করেই ছেলেটা কেন জানিনা মেসেজ
দেয়।যদিও জিজ্ঞেস করবো করবো ভেবেও করা
হয়নি.....
।
-আচ্ছা চলুন একটা মজার খেলা খেলি!!ঠিক আছে?
.
আদিবের এই মেসেজ টা দেখে কিউরিসিটি বশত
বললাম -কি খেলা?
.
-রিলেশনশীপ খেলা।
.
-মানে?
.
-মানে ওই আরকি....আমরা দিনদুয়েক বয়ফ্রেন্ড
গার্লফ্রেন্ড থাকবো....
.
মাথা টা হটাত ঘুরে গেল..... প্রচণ্ড রাগ হলো....আজ
ওর ফাজলামোর লিমিট ক্রস হয়ে গেছে...একবার
ভাবলাম ব্লক দিবো....আবার কি ভেবে যেন বললাম,
.
-ফালতু কথা ছাড়ুন।কি উল্টা পাল্টা বলা শুরু করলেন?
.
- আরে না রেগে ভেবেই দেখুন অন্যরকম একটা মজা
লাগবে।দিন দুয়েকেরই তো ব্যাপার।
.
-আমি কিন্তু ব্লক দিবো আপনাকে
.
-ব্লক দিলেও কিছু বলতে পারব না করতেও পারব না।
.
-আমার বিএফ আছে
.
-তবে তো আরো জমবে।এই সুযোগে আপনিও বুঝে
যাবেন ও কতটুকু আপনাকে বিশ্বাস করে আর কতটুকু
ভালোবাসে
.
-আমাকে সুখে থাকতে ভুতে কিলাই নাই আমি এসব
ফালতু কাজে নাই
.
-প্লিজ প্লিজ
.
-ইনবক্সে বিএফ জিএফ?আপনাদের মতই মানুষদের
জন্যই এখন মানুষকে বিশ্বাস করা দায়
.
-আহ ওসব ছাড়ুন
.
-ইনবক্সেই তো?
.
-নাহ রিয়েলিতেও।দুইদিন যাষ্ট।
.
-রিয়েলিতেও মানে?আপনি আমাকে চিনেন নাকি
যে রিয়েলিতেও বলছেন?
.
-আরে ওটা গেইম ষ্টার্ট করার জেনে নিবো
.
শেষ মেষ ছেলেটার পাগলামোর লিমিট দেখার জন্য
রাজি হলাম।
।
আর পরের দিনই দেখি কলেজ শুরুর আগে টুং করে ওর
বার্তা।আমি তোমার কলেজের বাইরে।জলদি এসো।
.
সত্যিই অবাক হওয়ার কোন সীমা নেই।আমার
কলেজে চলে এলো।
.
ফিরতি মেসেজ দিলাম-আমি আজ কলেজ আসিনি।
.
-মিথ্যে বলো না।জলদি এসো।দেখে যাও।
.
উপায় না দেখে গেলাম ওর কাছে।সাধারণ থেকেও
সাধারণ ছেলেটা।কোন বিশেষত্ব দেখা যায় না।
একেবারে সাধারণ ড্রেসাপ....আমাকে দেখেই চলে
এলো
।
-চলো আজ হাটবো
.
আমি আবার অবাক
-মানে?আমার ক্লাশ আছে?আপনি...
.
-দুইদিনের জন্য তুমি করে বলার কথা ছিল কিন্তু।চলো
না
.
-কোথায় হাটবে?কেন ফুটপাথে
।
অগত্যা হাটছি ওর আছে.....কথায় জুড়ি নেই
ছেলেটার।কথার যেন পাহাড় নিয়ে এসেছে সাথে
করে....আমারও যে মন্দ লাগছিলো তা না....তবে
লক্ষ্য করলাম একটা মুচকি হাসি যেন লেগেই
আছে..... হাটতে হাটতে কবে যেন একটা ব্রিজের
গোড়ায় চলে এসেছি খেয়াল করিনি।
-বসবে কোথাও?
।
-এইখানে/হুম
।
আমাকে আবার অবাক করে ব্রিজের ফুটপাথ এ বসে
পড়লো ও।আর আমাকেও বসালো......আবার কথার
ট্রেন যেন ছাড়লো ওর....দুপুর পেরুতেই আমাকে বলে
চলো ওদিকে....
এইবার কেন জানিনা বাধ্য মেয়ের মতো চললাম.....
আমাকে একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে কোথায় যেন
হাওয়া হয়ে গেল ও।এদিক ওদিক দেখলাম...মনে মনে
ভাবছিলাম কোন পাগলের পাল্লায় যে পড়লাম কে
জানে?আবার ফেলে চলে গেল না তো..... এবার
একটা ছোট রাস্তার ছেলে আমার কাছে এসে
কয়েকটা ফুল দিয়ে রাস্তার ওপাশে দেখিয়ে চলে
গেল....
ওপাশে তাকাতেই দেখি আদিব।রাস্তার ওপাশ
থেকে হাসছে....টুং করে আবার মেসেজ আদিবের...
-খুব ইচ্ছে ছিলো এমন করে কাউকে ফুল দিবো আর দূর
থেকে সে অবাক হয়ে আমাকে দেখবে.....
.
এইবার সত্যি হেসে ফেললাম....এর অদ্ভুতের সীমা
নেই....
আবার আমার কাছে ফিরে এসে বললো,
-ইশ ইশ অর্থী তোমাকে নিয়ে যদি কিছুক্ষণ
লাফাতে পারতাম?
.
-লাফাবে?কেন?
.
-এটাও একটা ইচ্ছে।
.
-ওহ।
এইবার আর অবাক হলাম না।হয়তো আস্তে আস্তে ওর
অবাক করাটা আমার নিজের সাথে মানিয়ে
নিচ্ছি....
।
বিকেলের আগেই আমাকে আবার বাসার কাছে
ছেড়ে দিলো..... সারাদিন এটা ওটা বললো।এমন
ভাবে কথা গুলো বলছিল যে যেন সত্যিকার ভাবেই
আমরা আবদ্ধ...
.
প্রাইভেট এ যেতেই সবাই বান্ধবীরা আমাকে পেয়ে
বসলো আদিবকে নিয়ে প্রশ্ন করাতে...আমিও
আদিবের মতো অবাক করা উওর দিয়ে ওদের অবাক
করা শুরু করলাম.....হয়তো একদিনেই আমাকে ওর
স্বভাব পেয়ে বসেছে....এর মাঝে আমার ফোন
নাম্বার নিলো ও।
.
পরদিন আবার একই জায়গায় দেখা....এবার ও সোজা
টেক্সী করে নদীর পাড়ে নিয়ে একটা নৌকাতে
নিয়ে উঠলো.....অন্যরকম ভালোলাগা তে যেন দিন
যাচ্ছিলো..... ভালোলাগা ভালোবাসার মাঝে
তফাৎ টুকু যেন খোজার সুযোগ পাচ্ছিলাম না....
আসার সময় আবার টেক্সীতে ওর কাঁধে মাথা টা
দিলাম।কেন দিলাম নিজেও জানিনা।ও আমার হাত
টা ধরে হাতে একটা হাল্কা চুমু খেল।প্রায় সারাদিন
কাটিয়ে আগের মতো সময়ে বাসায় চলে এলাম।
আবার যথারীতি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।কিন্তু
বারবার ওকে মনে পড়ছিলো....ভাবলাম রাতে
মেসেজ দিবো।কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার ওর
আইডি নেই।ব্লক বা আনফ্রেন্ড করলো.....মেসেঞ্
জার এ টুং শব্দ হলেই অকারণে দেখি ও নাকি.....
কিন্তু ও নেই।এদিকে ওর নাম্বার নেই আমার কাছে।
আমারটা ওর কাছে আছে.....এদিকে ওকে আমার
ভাললাগতে শুরু করেছিল...
.
এটাও ওর স্বভাব ভেবে আস্তে আস্তে মানিয়ে
নিচ্ছিলাম প্রায় এর মাঝেই....
কলেজে ঢোকার সময় একটা বাচ্চা হাতে একটা
ছোট্ট ফুলের প্যাকেট ধরিয়ে চলে গেল।চোখ আপনা
আপনি রাস্তার ওপাড়ে চলে গেল।সেই চিরচেনা
হাসি নিয়ে আদিব দাঁড়িয়ে.... ছেলেটা যেন
অবাকের গোডাউন....
-তুমি?এতোদিন পর?
.
-আজ তোমার বার্থডে তাই উইস করতে এলাম....
.
-থ্যাঙ্কস.....কিন্তু আমাকে ব্লক দিয়েছ কেন?
.
-ব্লক না।আইডি অফ করেছিলাম
.
-কেন?
.
-এটাও একটা ইচ্ছে ভেবে নাও।
.
-অন্য আইডি খুলে আবার অন্য মেয়ের প্রেমে পড়েছ
বুঝি?
.
-একটা আইডিই চলাতে পারতাম না...আবার.....
.
-চালালেও বা আমায় বলবে কেন?
.
-বন্ধুকে সব বলা যায়....
.
-হুম
.
-অর্থী
এইবার ওর ডাক টা শুনে কেন জানিনা চকমে উঠলাম।
মনে হলো এই ডাক শোনার জন্য অনেকদিন অপেক্ষায়
ছিলাম...
-বল
.
-তোমার ফ্রেন্ড রা তোমার জন্মদিনে অপেক্ষা
করছে...যাও...বল
েই আমাকে এগিয়ে দিলো..
.
পেছন ফিরে দেখলাম আদিব চলে যাচ্ছে.....কিছু
যেন ওকে খুব বলতে ইচ্ছে করছে... দেখতে দেখতে ও
নেই আর.....ফোনেই বলবো ওকে...
কিন্তু মনে পড়লো ওর নাম্বার তো নেয়া হয়নি এবার
ও.....
.
কেন জানিনা মনে হচ্ছিলো মাথার উপর থেকে
আকাশ সরে গেছে........আবার অপেক্ষার পালা ওর
অবাক করার জন্য।
.
অপেক্ষা শুধু ওর হটাত কাজে অবাক হওয়ার জন্য....
.
.
.
ভাল থাকুক এইসব মানুষের ভালোবাসা গুলো
চিরজীবন থাকুক তাদের হাসিমাখা মুখগুলো......
(সমাপ্ত)
Friday, October 26, 2018
কিছু অবাক করা ইচ্ছে
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment