Friday, October 26, 2018

I love you পর্ব ৪

No comments

গল্পোঃ- আই লাভ ইউ

সিজন--৩

(পর্ব---০৪)

বিকেলে সাইকেল নিয়ে বের হয়েছি। মেইন
গেট এর কাছে আসতেই ইভা পিছন থেকে ডাক
দিল। আমি প্রথমে শুনেও না শোনার ভান করলাম।
তখনও ইভা ডাক দিয়ে আমার কাছে আসলো।
- হৃদয়,আমাকে নিবি সাইকেলে?
- নাহ, মেয়েদের আমি সাইকেলে নিই না।
- তো মেয়েদের নিতে কে বলেছে? খালি
আমাকে নিবি। আমি উঠবো তোর সাইকেলের
পিছনে।
- আমি যাকে তাকে সাইকেল এ নিই না। আর আম্মু
দেখলে বকা দিবে তোকে সাইকেলে নিয়েছি
বলে।
- মেজো বকবে মানে কি? বেশি বুঝিস না বুঝলি?
কথাটা শেষ করতেই অন্য একটি নারী কন্ঠ
ভেসে উঠল। আমি সেদিকে তাকি দেখি তানিশা
আসছে। মনের মধ্যে শয়তানটা আবার নাড়া দিয়ে
উঠল। কেমন যেন অপমানের শোধ নেবার
ইচ্ছেটা আবার বেড়ে গেল।
- তানিশা, তোমার জন্যই তো সেই থেকে দাঁড়িয়ে
আছি। চলে আসো ঘুরি সাইকেলে দুজন।
ইভা থাকাতে তানিশাকে তুমি বললাম। তানিশাও অবাক ইভা ও
অবাক। বেশ মজা পাচ্ছি। ইভাকে বোঝাতে হবে
ভালোবাসা কি। আর সব ছেলেরা এক হয় না। সবার
ভালোবাসা একই রকম হয় না সেসব বোঝাতে
হবে। তবেও আমি ওর সামনে আবার ভালোবাসা
নিয়ে দাঁড়াবো। তা না হলে সে বুঝতেই পারবে না
ভালোবাসার মানুষটা কষ্ট কেন পায়।
- সত্যিই তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করেছিলে?
তানিশার মুখে তুমি শুনে আমি অবাক। আমি না হয় তুমি
বলেছি ইভাকে দেখানোর জন্য। বাট সে
কেনো আমাকে তুমি বলবে? হায় হায় শেষে কিনা
বাংলা নতুন ছবি রিলিজ হবে নাকি? "দুই বউ এক স্বামী"।
যাই হোকে এখন সেটা বাদ দিলাম। তানিশাকে নিয়ে
বের হয়ে চলে আসলাম। সারা বিকেল তানিশাকে
নিয়ে ঘুরলাম। এইবার সত্যি সে আমাকে তুমি করে
বলছে। নাম্বারটাও নিয়ে রেখেছে। দিতে চাইনি
তবুও জানিনা কেনো দিলাম।
..
"স্বপ্নে তোকে বাড়ির দিকে এগিয়ে দিতে যাই
স্বপ্নে এসে দাঁড়াই পাড়ার মোড়ে
কখন তুই ফিরবি ভেবে চারিদিকে তাকাই
টান লাগাই তোর বিনুনি ধরে।
স্বপ্নে আমি ভিক্টোরিয়ায় তোর পাশে দাঁড়াই
স্বপ্নে বসি ট্যাক্সিতে তোর পাশে
স্বপ্নে আমি তোর হাত থেকে বাদাম ভাজা খাই
কাঁধ থেকে তোর ওড়না লুটোয় ঘাসে।
তুলতে গেলি – কনুই ছুঁলো হাত
তুলতে গেলি – কাঁধে লাগলো কাঁধ
সরে বসব? আকাশভরা ছাতে
মেঘের পাশে সরে বসল চাঁদ।
ক’টা বাজলো? উঠে পড়লি তুই
সব ঘড়িকে বন্ধ করল কে?
রাগ করবি? হাতটা একটু ছুঁই?
বাড়ির দিকে এগিয়ে দিচ্ছি তোকে…
স্বপ্নে তোকে এগিয়ে দিই যদি
তোর গার্জিয়ানের তাতে কি যায় আসে?
সত্যি বলছি, বিশ্বাস করবি না
স্বপ্নে আমার চোখেও জল আসে!"
কবিতাটি অজান্তেই ছাদে দাড়িয়ে দু হাত মেলে
সন্ধ্যার পরিবেশে ইভাকে ভেবে বলে
ফেললাম। যখন শেষ করেছি তখনি শুনি...
- তানিশাকে ভেবে কবিতা নাকি?
- ইভা তুই?
- কেনো আসা বারন? আচ্ছা তাহলে চলে যায়?
(গম্ভীর গলাতে)
- আরে না।
কথাটি শেষ করেই ইভার দিকে তাকালাম। মুখটা বেশ
শুকনো। চোখ দুটো ফোলা মনে হল।ইভা কান্না
করেছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই। কিন্তু
কেনো? সে কেনো কান্না করবে? কি
হয়েছে? আমি কিছু করে বসলাম অজান্তেই? আমার
ব্যবহারে সে কি কষ্ট পেয়েছে? তাহলে কি
আম্মুকে বলে দিবে আবার?
- হৃদয়, তুই অনেক খারাপ।
কথাটি শুনে চমকে উঠি। কেন খারাপ তার কারন
খুজতে বসলাম। কিন্তু পেলাম না। তাই জানতে
চাইলাম...
- মানে..কেনো খারাপ?
- মানুষকে কষ্ট দিতে তোর খুব মজা লাগে তাই না?
এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা। কারন ইভাকে কষ্ট
দিয়ে মজা পাচ্ছি। কিন্তু সে কেনো কষ্ট পাচ্ছে?
আমি আর বেশি কিছু ভাবলাম না। এই বাড়িতে আর
থাকবো না।ইভা আমার থেকে কষ্ট কেনো
পাচ্ছে। সবাই আমার সাথে এমন আদুরে আলাপন
কেনো করছে? জানিনা আমি। তবে ইভা কষ্ট
পাচ্ছে তাই চলে যেতে হবে আমার।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিচে চলে আসলাম।
সবাই ড্রয়িংরুম এ বসে গল্প করছে। আম্মুও আছে।
তাই সেখানে যেয়ে বললাম...
- আম্মু আমি কাল সকালে চলে যাবো।
- মানে কি?
- হুমম আম্মু চলে যাবো। ভালো লাগছে না
এখানে।
- থাপ্পড় চিনিস?
- হুমম চিনি। ৭ বছর আগে দিয়েছিলা মনে আছে
তো।
- চুপ, তোর ছোট চাচু এখানে আসছে কাল আর
তুই যাবি মানে?
- কেনো আসছে তিনি? হঠাৎ করে?
- ইভার বিয়ে ঠিক করেছি। তিনদিন পর ইভার বিয়ে তাই
তোকে থাকতে হবে বুঝলি?
কথাটি শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
বুকের হৃদস্পন্দন হঠাৎ করেই যেন থেমে
গেল আমার। ছ্যাৎ করে উঠল বুকের বা পাশটাতে।
এখন বুঝলাম আমাকে সবাই থাকতে কেনো
বলছে। তার মানে ইভার বিয়ে। নাহ এটা মেনে
নিতে পারবো না বা পারছি না। চোখে পানি চলে
আসছে। চোখ ঝাপসা হওয়ার আগেই জোরে
হেটে রুমে চলে আসলাম।
খুব কান্না পাচ্ছে। জোরে খুব করে কান্না করতে
ইচ্ছে করছে। যাকে সেই ছোট থেকেই
ভালোবাসি তার তিনদিন পরই বিয়ে? সে হারিয়ে যাবে
আমার থেকে। আমি কষ্ট পাচ্ছি। ইভাও কি একই
কারনে কষ্ট পাচ্ছে? নাহ, সেতো আমাকে
ভালোবাসেই না। সে কেনো কষ্ট পাবে?
.
রাত ১১ টা। কিছুই ভালো লাগছে না। মন চাচ্ছে
ইভাকে আবারো যেয়ে বলি ভালোবাসি। কিন্তু সে
যদি না করে অপমান করে দেয়। তাহলে আর মুখ
দেখাতে পারবো না। আর এতদিন না বলে বিয়ের
সময় এসে তাকে বলবো ব্যাপারটা কেমন দেখায়
না?
.
গিটারটা হাতে নিয়ে টুংটাং করতে লাগলাম।
.
আমার অজানায় হলো কি,
তোমাকে তা কখনো বুঝতে দেবো না,
বৃষ্টির পানে আকাশে চেয়ে,
তোমাকে আমি খুঁজবো না।
আকাশের পানে চেয়ে চেয়ে,
ভালোবাসিটা আর বলবো না।
তুমিও কি আমার মতো,
একটু ভালোবাসবেনা!
তুমিও কি আমার মতো করে,
একটু কাছে ডাকবেনা!
- এত রাতে ছাদে কেনো? (ইভা)
কথাটি শুনে ইভার দিকে তাকালাম। ওর দিকে তাকিয়ে
বুঝলাম ও বেশ খোজ মেজাজেই আছে। কিন্তু
আমি ঠিক ভালো নেই। মনের মাঝে তাকে
হারানোর ভয়ে আমি দুমড়ে মুচড়ে আছি।
- কথা বলছিস না যে?
- কংগ্রেচুলেশন ইভা।
- কেনো?
- তিনদিন পর তোর বিয়ে তাই। তা কার সাথে বিয়ে
হচ্ছে?
- কেনো? তুই জেনে কি করবি? তোর কি এসব
জানার খুব দরকার?
- নাহ এমনি জিঙ্গাসা করলাম। আচ্ছা ছেলে কি করে?
- ছেলেটা একটা আস্ত হাম্বা,গাধা,বান্দর, গর্দভ। আর
আপাতত বেকার।
- ওহ,,তুই রাজি?? মানে এই বিয়ে করতে তুই ইচ্ছুক?
- হ্যা...কেনো ইচ্ছুক থাকবো না? কেউ তো
আর আমাকে ভালোবাসে না। আর শোন, তোর
আর তানিশার ব্যাপারে আমি যাওয়ার আগে কথা বলে
যাবো সবার সাথে। তোদেরও বিয়ের ব্যবস্থা
করে দিয়ে যাবো।
কথাটি শুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে
থাপড়িয়ে ওর গাল লাল করে দিই। এ ছেমড়ি বুঝে না
নাকি একে আমি ভালোবাসি? কিন্তু সেটা আসল কারন
না। কারন হল এ এখন তানিশা আর আমাকে নিয়ে
মজাতে মেতে আছে। আমি যেমন ওকে
দেখিয়ে তানিশাকে নিয়ে ঘুরেছি এখন সেটার
প্রতিশোধ নিচ্ছে।

No comments :

Post a Comment