#দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
২৭
-এটা তে কি?
-নিজেই দেখে নাও মিষ্টি হেসে বলল আরহান।
-ওকে।
- এটা পরে নিচে চলে এসো(আরহান)।
-ইনায়াকে পাঠিয়ে দিন।রেডি করিয়ে দিই।
-আমি করিয়েছি।তুমি রেডি হয়ে নিচে আসো।
-মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম।ওনি চলে যেতেই দরজা লাগিয়ে প্যাকেট টি খুলে দেখি লাল টুকটুকে একটি জামদানি শাড়ী তার সাথে ম্যাচিং করা কাঁচের চুড়ি।আর এক পাতা লাল টিপ।ওনি এসব কি মনে করে এনেছেন?শাড়ীটি পরে নিলাম সেই সাথে একহাতে কাঁচের চুড়ি পরে অপরহাতে একটি ব্রেসলেট পরে নিলাম।ওনার মা বিয়ের পর গিফট করেছিলেন বেসলেট টি।
-ইনায়া দুষ্টমি করোনা মা(আরহান)।ইনায়া খুব আনন্দে আছে এবং সেগুলো ওর চোখে মুখে প্রকাশ পাচ্ছে।
-পাপা কখন যাবো??তাড়াতাড়ি চলো না।
-তোমার মাম্মা......বলতেই মাহিরা বলে উঠলো।
-চলুন।
-ওর দিকে তাকাতেই বিষম খেলাম।লাল পরী লাগছে আজ ওকে।হুম চলো।বেরিয়ে গেলাম।কমলাপুর রেলস্টেশন এ বসে আছি তিনজন।আধা ঘন্টা পর ট্রেন চলে এলো।তিনজনে সিটে বসে পড়লাম।
-পাপা এটা কি ট্রেন???
-হুম মামনি এটা ট্রেন(আরহান)।
-কি মজা কি মজা ইনায়া ট্রেনে উঠেছে।
-মাহিরা!!!!!
-জি!!!
-কিছু ভাবছো?
-ভাবছিলাম বাবার কথা।আস্তে আস্তে বাবা কে ভুলে যেতে শুরু করেছি আরহান।কিন্তু এটা আমি চাইনা। দুফোটা অশ্রু গাল বেয়ে পড়লো।
-ওর হাতের ওপর হাত রাখলাম।এটা স্বাভাবিক মাহিরা।যতো আপন মানুষই চলে যাক না কেন সময়ের সাথে সাথে আমাদের মনে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হতে থাকে।
-হুম(মন খারাপ করে নিচে তাকালাম)
-মাম্মা মন খারাপ করোনা প্লিজ।মাহিরার গলা জড়িয়ে ধরেছে ইনায়া।
-না মামনি মাম্মা মন খারাপ করছিনা(মাহিরা)
-তাহলে একটু হাসো গলা জড়িয়েই বলল ইনায়া।
-এই নাও মাম্মা হাসলাম বলেই মুচকি হাসলো মাহিরা।
-হাসলেই ভালো লাগে তোমায়(আরহান)
-হু!!!!!(অবাক হয়ে)
-না মানে কেবিনে চলো কথা পাল্টে দিলো আরহান।
-ওকে চলুন।চলো ইনায়া(মাহিরা)
-কেবিনের খাটটিতে তিনজন বসে আছি।ইনায়া মাহিরার কোলে মাথা রেখে শুতেই ঘুমিয়ে পড়লো।চুল হাতিয়ে দিচ্ছে মাহিরা।আপনি ঘুমুবেননা? (আরহান কে উদ্দেশ্য করে)
-হাই তুলতে তুলতে বললাম ঘুমতো পাচ্ছে(আরহান)
-তাহলে ঘুমিয়ে পড়ুন না আমি আছি(মাহিরা)।
-ওকে।শুয়ে পড়লাম। মাহিরা তোমার কি কোন বয়ফ্রেন্ড ছিলো?
-(ওনি হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন করছেন কে?আশফির কথা কি জেনে গিয়েছেন নাকি?)কেন বলুন তো?
-এমনেই (মৃদূ হাসলো আরহান)
-ওহ।
-জানো তুমি যখন লজ্জা পাও তখন তোমাকে ভীষন মায়াবী লাগে।
-ওনার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলাম।
-You are blushing (আরহান)
-নিচে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালাম নাহ তেমন কিছুনা(মাহিরা)
-হুম।ওর মুখের ওপর চুল গুলো আলতো হাতে কানের পিছনে গুঁজে দিলাম।
-পুরো শরীরে শিহরন বয়ে গেল মাহিরার।আরহানের এমন ব্যাবহারের সাথে মাহিরা পরিচিত নয়।
-(আসলে আশফি বলে যাওয়ার পর থেকে আরহান মাহিরাকে নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে শুরু করেছে।এবং সময়ের সাথে সাথে বুঝতে পারছে বুকের কোন একটা অংশে মাহিরার জন্য একটু একটু করে ভালবাসার জন্ম নিচ্ছে)।আরহান উঠে বসে ইনায়াকে এক কোনায় শুইয়ে দিলো।মাহিরার গাল দুটি ধরে ওর চোখ দুটোতে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে গালে আলতো করে চুমো একেঁ দিলাম।
-ইয়া আল্লাহ কি করছেন ওনি এসব।এগুলো সম্ভব নয়।বিয়েটা হয়েছে শুধু ইনায়ার জন্য।চোখ বন্ধ করে ফেললাম।চেয়ে ও সরাতে পারছিনা ওনাকে।
-ওর ঠোঁটের কাছে আসতেই ফোন বেজে উঠলো।(উপস কি করছিলাম?)ফোন বের করে দেখি আশফি কল করছে।হ্যালো আশফি বল দোস্ত।
-কি খবর রোমিও?
-হুম ভালো।তুই কেমন আছিস?
-এইতো ভালো।কই তুই?(আশফি)
-ওহ তোকে তো বলাই হয়নি তোর ভাবি আর ইনায়াকে রাঙ্গামাটি যাচ্ছি।
-ওহ।অজান্তেই আশফির চোখ দুটি ভরে এলো।(মাহিরা কে হৃদয়ের সব টুকু দিয়ে ভালবাসে আশফি।তাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না।)হানিমুন!!!!
-আরে যাহ তেমন কিছুনা এক গাল হাসলো আরহান।
-নীল বেটার কি করবিরে?
-রাঙ্গামাটি থেকে আসি তারপর ওর খবর নেব। জানিস ঐদিন নুহাশের সাথে দেখা হইছে।
-ঐ লুচ্চা নুহাশ!!!!কই দেখলি ঐডারে?(আশফি)
-যেখানে প্লাস্টার খুলতে গেলাম ঐখানকার মেইন ডাক্তার ও(আরহান)।
-বাহ।তা ওর লুচ্চামি কমলো??
-কই আর কমলো?মাহিরা দেখে বলছিলো বাহ ভাবি তো হেব্বি হোহো করে হেসে উঠলো আরহান।
-আশফি ও হাসছে।কিন্তু ওর চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।ওকে দোস্ত বেস্ট অফ লাক ফর ইউর হানিমুন।পরে কথা হবে ওকে?বায়।
-বায়।মাহিরা আ'ম সরি।আসলে তখন কি করতে যাচ্ছিলাম বুঝতে পারিনি।
-ইটস ওকে।আপনি শুয়ে পড়ুন।
-হুম।তুমি ঘুমাবেনা?
-ঘুম তো পাচ্ছে(মাহিরা)।
-ইনায়াকে মাঝখানে দিয়ে ওপাশে শুয়ে পড়ো(আরহান)
-ওকে।ইনায়া কে মাঝখানে শুইয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম বামপাশে।
চলবে
#দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
২৮
(অসুস্থতার কারনে ছোট হয়ে যাচ্ছে।সুস্থ হলে বড় করে দিবো)
-ঘুম ভেঙ্গে পাশ ফিরতেই ঘুমন্ত মাহিরার মায়াবী মুখটির দিকে চোখ পড়লো আরহানের।কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিতেই নড়ে উঠলো মাহিরা।তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিলো আরহান।ইনায়া মাহিরার বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমোচ্ছে।উঠে বসে পড়লো আরহান। আর কতসময় লাগবে কে জানে?খাট থেকে নামতেই খাট নড়ে উঠলো।
-খাট হঠাৎ নড়ে উঠায় মাহিরার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ঘুমন্ত ইনায়ার কপালে চুমো খেয়ে জড়িয়ে ধরলো।আরহান দাড়িয়ে মাহিরার দিকে চেয়ে আছে।আপনি কখন উঠলেন?
-এইমাত্রই।তুমি একটু থাকো।বাহিরে গিয়ে দেখে আসি কতক্ষণ লাগবে।
-ওকে।ওনি চলে গেলেন।আস্তে আস্তে ইনায়াকে ডাকতে লাগলো মাহিরা।
-কেবিনে ঢুকে আরহান বলতে লাগলো এই সব ঠিক করে নাও।৫মিনিট পর পৌছে যাবো।
-ঠিক আছে।ইনায়া উঠে বসে মাহিরাকে জড়িয়ে ধরে মাহিরার বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে রয়েছে।মামনি উঠো!!!!
-ঘুম আসছে মাম্মা(ঘুমের ঘোরে)
-আসো তোমার মুখ ধুয়ে দেই তাহলে আর ঘুম আসবেনা।আরহান ইনায়াকে কোলে তুলে পানির বোতল থেকে কিছুটা পানি দিয়ে ইনায়ার মুখ ধুয়ে দিলো।ঘুম গেলো?
-হুম।আরহানের কাঁধে মাথা রাখলো চোখ বন্ধ করে।
-মাহিরা সব ঠিকঠাক করে নেমে পড়লো ওরা ট্রেন থেকে।
-একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে বরাদ্দকৃত হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।ইনায়া জানালা দিয়ে মাথা বের করে রেখেছে।ইনায়া মামনি মাথা ঢুকাও(আরহান)।
-না পাপা দেখবো।
-ইনায়াকে কাছে টেনে নিলো মাহিরা।চলো এক সাথে দেখি।জানালার কিছুটা কাছে গিয়ে একসাথে বাহিরের পরিবেশ দেখতে লাগলো মাহিরা আর ইনায়া।হোটেলে পৌছে রুমে চলে এলাম তিনজনে।রুমটি বেশ বড়।দুটো খাট আছে রুমে।(বেশ ভালোই হলো)
-মাহিরা ফ্রেশ হয়ে নাও ইনায়াকে নিয়ে।খেতে যাবো।
-ঠিক আছে।চলো মামনি।লাগেজ থেকে জামা বের করে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লাম ইনায়াকে নিয়ে।ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।আপনি ও ফ্রেশ হয়ে আসুন।
-হুম।ওয়াশরুমে ঢুকে গেল আরহান।
-ইনায়া কে নিয়ে ফোনে গেমস খেলায় ব্যাস্ত মাহিরা।হঠাৎ পিছনে দরজা খোলার শব্দে তাকিয়ে আরহান কে দেখতে পায়।গায়ে কোন কাপড় নেই।বুকে ফোঁটা ফোঁটা পানি জমে আছে।(কেন জানি মাহিরা চোখ সরাতে পারছেনা)
-আসলে শার্ট নিতে ভুলে গেছি(আরহান)।
-দিচ্ছি।নিচে নামতে যাবো তখনই উড়নায় ওপর পাড়া লেগে পড়ে যেতে নিতেই আরহান ধরে ফেলল।ওনার বুকের সাথে লেগে দাড়িয়ে আছি।
-মাহিরা চোখ বড় করে তাকিয়ে আমার দিকে।ওর কোমড় জড়িয়ে আছি। ছেড়ে দিয়ে নিচে থেকে উড়না তুলে ওর হাতে দিলাম।পরে নাও।
-উড়না গায়ে জড়িয়ে ওনাকে শার্ট বের করে দিলাম।
-শার্ট গায়ে জড়াতে জড়াতে মাহিরাকে এক নজরে দেখছে আরহান।
-বুক ধুকপুক করছে মাহিরার।ক্যান্টিনে গিয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম।
-এখন কি রেস্ট করবে নাকি কোথাও যাবে?(আরহান)
-ঘুরতে যাবো পাপা(ইনায়া)।
-মাহিরা তুমি???
-চলুন ঘুরে আসি(মাহিরা)
-ওকে চলো।বেরিয়ে পড়লাম।
চলবে
No comments :
Post a Comment