#দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
২৫
-চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ালাম।রুমের দরজা খুলতেই দেখি আরহান দাড়িয়ে আছে।উড়না ঠিক করতে করতে বললাম দুপুরে খেতে বলতেন আপনার বন্ধুকে?
-ওর কাজ আছে তাই চলে গেল(আরহান)।
-ওহ।ইনায়া এসেছে?
-ড্রাইভার রাস্তায় আছে বেশিক্ষন লাগবেনা।
-হুম।চলুন নাস্তা করবেন।ওনার পাশ দিয়ে নিচে চলে গেলাম।ওনি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে এসে বসলেন।আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছেন।এর কারনটা বুঝতে পারছিনা।নাস্তা এনে ওনার সামনে এসে বসলাম কিছু বলবেন?
-সামনে ছুটি আছে।ভাবছি রাঙ্গামাটি যাবো।ইনায়ার ভালো লাগবে(আরহান)।
-হুম ঠিক বলছেন(মাহিরা)।
-পরে ওখান থেকে এসে নাহলে নীলের কথা চিন্তা করা যাবে।
-হুম।ইনায়া এসেছে মনে হয়।দরজা খুলতেই গলা জড়িয়ে ধরলো মাম্মা!!!!!
-ওরে আমার বাচ্চাটা টিফিন খেয়েছো আজকে???
-হ্যা পুরোটা খেয়েছি।
-গুড।
-ইনায়া যাও গোসল করে এসো(আরহান)
-ওকে পাপা।
-মাহিরা!!!
-জি!!!
-রুমে এসো(আরহান)
-আপনি যান।ওকে গোসল করিয়ে আসছি।
-ওকে।আর শুনো???
-জি!!!!কফি হলে ভালো হতো।আমি ছাদে থাকবো(আরহান)
-ওকে(মুচকি হেসে)।ইনায়া গোসল করিয়ে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম।দুকাপ কফি নিয়ে ছাদে গিয়ে দেখি আরহান দোলনায় বসে আছেন।
-এলে???
-হুম।আপনার কফি (ওনার দিকে এগিয়ে দিয়ে)
-থ্যাংকস।
-ওয়েলকাম।ওনার পাশে বসলাম।কি বলবেন বলুন?
-কিছু বলার জন্য না এমনিতেই ডাকলাম(আরহান)
-ওহ। কফিতে চুমুক দিলাম।
-জানো জীবনে যাকে সবচেয়ে বড় বন্ধু ভেবেছিলাম সে ছেড়ে চলে গেছে।অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।কিন্তু এখন আর কষ্ট লাগেনা।
-আনিকার কথা বলছেন(মাহিরা)?
-হুম।ইনায়ার ৫মাসের সময় ওকে রেখে চলে গেছে।
-(খুব অবাক লাগলো আরহানের কথায়।কেমন মা!!!এতো ছোট বাবুকে ফেলে চলে গেলো)কেন গিয়েছিলো?
-আমার এক কলিগ নাম প্রত্যয়।ও প্রায়ই বাসায় আসতো।আনিকার সাথে অনেক কথা বলতো।ধরে নিয়েছিলাম ফ্রেন্ডসিপ।কিন্তু আনিকা অনেক রাত পর্যন্ত বারান্দায় দাড়িয়ে ফোনে কথা বলতো।ওকে এতোটাই ভালোবাসতাম যে কখনোই সন্দেহ করতে পারিনি।ইনায়ার যখন ৪মাস ৫দিন তখন আনিকা সিলেটে মিটিং এর বাহানা দিয়ে চলে যায়।ইনায়া তোলা দুধ খেতো তাই ওর তেমন একটা সমস্যা হয়নি।তারপর খবর পেলাম যে মাহিরা সেখানে প্রত্যয়ের সাথে গেছে এবং তারা লিভটুগেদার করতে শুরু করেছে।(কথা গুলো বলতে বলতে কখন যে চোখের পানি চলে এসেছে বুঝতে পারিনি)আনিকা ঢাকায় আসার পর ওকে জিঞ্জেস করতেই এড়িয়ে গেলো।এর মাসখানেক পর ও চলে যায় একরাতে হুট করেই।আটকাইনি।জানতাম আটকিয়ে লাভ নেই।
-বুঝতে পারছি আপনার কষ্ট টা(মাহিরা)।
-কিন্তু চিন্তা করোনা।এই আরহান সবসময় তোমার সাথে আছে। কখনো তোমার হাত ছাড়বোনা।একটা বন্ধু হিসেবে সবসময় তোমার সাথে থাকবো।I promise.
-Thanks.
-ওর একটা হাত ধরে আলতো করে চুমো দিয়ে বললাম আমার ওপর বিশ্বাস আছে তো???
-জি আছে।
-ওর গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসলাম।
চলবে
#দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
২৬
-মাম্মা!!!! ইনায়া কেঁদে উঠলো হঠাৎ।
-কিরে কান্না করে কেন ইনায়া???দৌড় লাগালো মাহিরা।কিরে মা কি হইসে???ইনায়া মাহিরাকে জড়িয়ে ধরলো।কি হয়েছে সোনা??
-কে জানি দাড়িয়ে আছে ওখানে(কাঁদতে কাঁদতে বলল)
-লাইট অন করে দেখি আলনায় ঝোলানো আরহানের কোট।ইনায়া এটা তো পাপার কোট ছিলো(মাহিরা)।
-বুঝতে পারিনি(কাঁদোকাঁদো গলায়)
-ওকে কোলে নিয়ে বললাম চলো ছাদে যাই পাপা আছে।
-কি হলো কাঁদছিলো কেন আমার বাচ্চাটা(আরহান আহ্লাদী গলায় বলল ইনায়ার দিকে ভালো হাতটি বাড়িয়ে)
-আলনায় আপনার কোট দেখে মনে করেছে কেউ দাড়িয়ে আছে বলেই একগাল হাসলো মাহিরা।
-তাই নাকি মামনি(আরহান)?
-হুম(ইনায়া)।
-ইনায়া কি জানে আমরা পরশু রাঙ্গামাটি যাবো(আরহান)?
-রাঙ্গামাটি!!!!!খুশিতে লাফিয়ে উঠলো ইনায়া
-হুম মামনি(আরহান)।মাহিরা যা শপিং করার কালকের মধ্যে করে নিতে হবে।
-শীতের কাপড়চোপড় লাগবে।ইনায়ার সোয়েটার ছোট হয়ে গেছে।আপনার ও তো লাগবে।
-নাহ আমার কালো লম্বা স্যুটটা আছে ওটা দিয়ে চলবে(আরহান)
-ওটা ইদুরে কেঁটে রেখেছে অন্যমনষ্ক ভাবে মাহিরা বলল।
-কিহ???? চোখ বড় বড় করে বলল আরহান
-হুম।
-হায়রে আমার এতো শখের স্যুটটা(মনখারাপ করে)
-চলুন আজকে কিছু প্যাকিং করি(মাহিরা)।
-না এখন আমরা ঘুরতে যাবো তাইনা মামনি???(আরহান)
-এখন কোথা ও যেতে হবেনা।কাল আপনার প্লাস্টার খোলার পর যাবেন(মাহিরা)
-ওকে।তাহলে চলো প্যাকিং শুরু করি(আরহান)
তিনজনে নিচে নেমে এলাম।প্যাকিং করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো আরহান আর মাহিরা।ইনায়ার বেশ মজা হচ্ছে।দূরে কোথা ও বেড়াতে যাবে তারা।
পরদিন
-তিনজনে হসপিটালে এসেছি।আরহানের প্লাস্টার খোলা হচ্ছে।শুনেছি ডাক্তার নাকি আরহানের বন্ধু।
-ওনি কে?(মাহিরা কে উদ্দেশ্য করে)(ডাক্তার)
-আমার মাম্মা(ইনায়া)
-তাই নাকি মামনি ইনায়ার গাল ধরে(ডাক্তার(নুহাশ)?
-হুম।
-কি আরহান ভাবি তো হেব্বি(দুষ্ট হাসি দিয়ে)
-ঐ তোর লুচ্চামি এখন ও গেলোনা না?এখন আবার শুরু আমার বৌ বলতেই থেমে গেল আরহান।মাহিরার দিকে একপলক তাকালো।মাহিরা ও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহানের দিকে।
-জোরে গলা খাকারি দিলো নুহাশ।আমি আছি।
-আরহান অন্যদিকে তাকালো।
-আরে আমি তো আগে থেকেই এমন। ডাক্তার হবার পর একটু বেশি হয়েছি।(নুহাশ)
-হুম বুঝছি।এখন লুচুর রাজা হয়েছিস(আরহান)এক গাল হেসে বলল।
-হুম।আচ্ছা শোন ভাবি আর পাকনি বুড়িকে নিয়ে আসবি বাসায়(নুহাশ)
-আসবো সময় করে।পরশু আমরা রাঙ্গামাটি যাচ্ছি।
-আরহানের কানে বললাম হানিমুন!!!!!!
-আরে যাহ বাল বেশি বুঝোস।ওর বিল মিটিয়ে মার্কেটে যাবার জন্য রওনা হলাম।
-আপনার হাত ঠিক আছে(মাহিরা)?
-হুম।ব্যাথা নেই(আরহান)
-তাহলেই ভালো(মাহিরা)।মার্কেটে গিয়ে ইনায়ার জন্য কিছু শীতের কাপড় কিনলাম।আরহান কে জোর করে ওনার পছন্দের কিছু কাপড় কিনালাম।
-তুমি কিনবেনা কিছু?(আরহান)
-না।আমার আছে হয়ে যাবে ঐগুলো দিয়ে।
-ওকে।(জানতাম এমনটাই বলবে।তাই আমি ও ব্যাবস্থা করে রেখেছি)।হঠাৎ ফুচকার দোকানের সামনে এসে মাহিরা কি যেনে ভেবে চলে যেতে লাগলো।ওর হাত ধরলাম খাবে?
-নাহ(খেতে তো মন চাইছে।ফুচকা দেখলে মাথাই ঠিক থাকেনা আমার)পেট ভরা(মাহিরা)।
-সবসময় এতো না না করো কেন বুঝিনা।আসো ওকে টেনে নিয়ে এলাম।এই মামা দুই প্লেট ফুচকা দাও(আরহান)
-একটাতে বেশি করে ঝাল দিয়েন মামা(মাহিরা)
-ঝাল খেতে হবেনা।পেট খারাপ করবে মাহিরা(আরহান)
-কিছু হবেনা।মামনি তুমি কি খাবে?
-আইসক্রিম(ইনায়া)
-না আগে একটা স্যান্ডুইচ খেতে হবে তারপর আইসক্রিম (মাহিরা)
-ওকে মাম্মা।
-ইনায়াকে স্যান্ডুইচ কিনে দিলাম।তিনজনে খাওয়া সেড়ে ঘরে ফিরে এলাম।প্যাকিং শেষ করলাম। ডিনার করে রুমে এসে দেখি মাহিরা ইনায়া কে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে।(ওর গানের মায়ায় ডুবে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে) বাহ খুব ভালো গাও।
-উঠে বসলাম।আপনি কখন এলেন?(মাহিরা)
-মাত্রই।গান বন্ধ করলে যে?(আরহান)
-ও ঘুমিয়ে গেছে(মাহিরা)
-হুম।(আরহান)
-আমি আসি।যেতে নিলেই হাত ধরলেন পিছন থেকে।
-শুনো!!!!
-জি!!!!(বুক কাঁপছে)
-যদি কিছু মনে না করো এখানেই শুতে পারো মাঝে তো ইনায়া আছেই(আরহান)।
-ওনার কথা শুনে বড়সড় ধাক্কা খেলাম।
-মানে যদি কিছু মনে না করো(আরহান)
-ইনায়ার একপাশে শুয়ে পড়লাম।ওনি অপরপাশে শুয়ে পড়লেন।
-মাহিরা!!!!
-জি।
-কখনো চাঁদ দেখেছো ছাদে উঠে???
-(আশফির সাথে একবার দেখেছিলাম।পিছন থেকে জড়িয়ে ছিলো সে।আর বলছিলো ভালোবাসি মাহিরা)।চোখে পানি আসতেই মুছে নিলাম। নাহ।
-চলো(আরহান)
-কই???
-চাঁদ দেখবো(আরহান)
(আজ কেমন যেন দুজনের প্রতি দুজনের ভালোলাগা কাজ করছে)।চলুন
-হুম চলো।দুজনে ছাদে উঠলাম।(চাঁদটাকে আজ অপূর্ব লাগছে।)(আরহান)
-অপলক চোখে তাকিয়ে আছি চাঁদের দিকে(মাহিরা)
-একটা গান গাইবে??(আরহান)
-হু??????(অবাক চোখে আরহানের দিকে তাকালাম)
-হুম।আমি ও কোম্পানি দিতে পারি(আরহান)
-আজ আরহানের কিছু কথা মাহিরাকে অবাক করছে।তবু ও গেতে লাগলাম।সাথে সাথে ওনি ও শুরু করলেন।দুজনে একই গান গাচ্ছি"রোদ্দুর হাসি"
-ভালোবাসি তোমার ঐ রোদ্দুর হাসি(আরহান)
রোদ্দুর হাসি(মাহিরা)
দেখে স্বপ্ন কাঁটে আমার দিবানিশি (আরাহান)
কি হলো আজ আমি ভেবে না পাই
ভেবে না পাই(মাহিরা)
-------------------
সব হারালে শুধু তোমাকে চাইই(আরহান)।------------
এভাবেই রাতটি কেঁটে গেল আরহান আর মাহিরার।সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই খেয়াল করলো দুজনে ছাদে বসে ঘুমিয়ে গেছে।মাহিরা লজ্জা পেয়ে নিচে নেমে গেলো।
-ইনায়া বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। ওর গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।(কাল দুজনে একসাথে গান গাইলাম)ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো মাহিরার।গোসল সেরে কি খাবার রেডি করতে শুরু করলাম।
-ইনায়া চলো দেখি মাম্মা কি করে?ইনায়াকে কোলে নিয়ে নামছে আরহান।
-ওর ঘুম হয়েছে(মাহিরা)?
-হুম হয়েছে।তাইনা মামনি?(আরহান)
-জি।
-তিনজনে নাস্তা সেরে রেডি হতে গেলাম।শাড়ি পাল্টাচ্ছি তখনই দরজায় নক পড়লো।শাড়ি ঠিক করে বললাম আসুন।
-একটা ব্যাগ ওকে দিয়ে বললাম এটা নাও।
চলবে
No comments :
Post a Comment