Friday, October 26, 2018

দ্বিধা ১৯ ও ২০ পর্ব

No comments

দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
১৯
-ঘরে ফিরে ইনায়ার রুমে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো আরহান।(মাহিরা পুরো কালো একটি জামা পরেছে সেই সাথে লাল উড়না।লম্বা চুল গুলোকে ছেড়ে দিয়েছে।
চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে।সত্যি এরুপ পাগল করার মতো)।
-আরহান আপনি চলে এসেছেন?(মাহিরা)
-মাহিরার কথায় ঘোর ভাঙ্গলো আরহানের।মাত্রই এলাম।কোথাও যাচ্ছো মনে হয়?
-জি একটু কাজে। ফিরতে বেশি সময় লাগবেনা(আমতা আমতা করে বলল)।খাবার গরম করে রেখেছি।খেয়ে নিয়েন।ইনায়া খেয়েছে।
-রাতের ১১টায় কি কাজ শুনি(আরহান)?
-আছে অনেক ইম্পরট্যান্ট।আমার যেতে হবে।
-এতো ঘামছো কেন?জানো মানুষ কখন ঘামে যখন সে বড় কোন মিথ্যা বলে অথবা কোন কিছু লুকোয়।তোমার কোন টা?
-কোনটাও না।যেতে দিন। পাশে দিয়ে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলল আরহান।
-চোখ মিলাতে পারছোনা মাহিরা।কি লুকাচ্ছো বলো।দেখো কোন সমস্যা থাকলে বলো একসাথে সল্ভ করবো।
-কোনো সমস্যা নাই।যেতে দিন আমাকে।
-হাত ছেড়ে দিয়ে বললাম যাও।রাতের এগারোটায় তোমার এখন কি কাজ বুঝতে পারছিনা।তবে আশা করি ভুল কিছু করবেনা যার জন্য সারাজীবন তোমাকে পস্তাতে হবে।
-সামনে ও আগাতে পারছেনা পিছে ও যেতে পারছেনা।কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে মাহিরা।কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মাহিরা।আরহানের পায়ের কাছে বসে পড়লো।আরহান সাহায্য করুন প্লিজ পারছিনা আমি।কি করবো?বাবার সাথে কেন মরে গেলাম না।শুধু আপনাকে আর ইনায়া কে হারানোর ভয়ে আমাকে আজ তার কাছে যেতে হচ্ছিলো।
-মাহিরার সামনে বসে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম কি বলছো এসব মাহিরা???
-আপনাদের হারাতে চাইনা।বাবা চলে যাওয়ার পর আপনার আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছি।সে আপনাদের ছাড়বেনা(কাঁদতে কাঁদতে বললাম)।
-ওকে উঠিয়ে রুমে এনে খাটে বসিয়ে এক গ্লাস পানি ওর দিকে ধরলাম।খেয়ে নাও।গ্লাসটি নিয়ে এক ঢোকে পানি গুলো খেয়ে নিলো।এখন বলো কে সে?কে আমাদের ক্ষতি করতে চায়?বলো মাহিরা?
-দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।নীল।
-নীল!!!!!(ভ্রু কুঁচকে)
-মাথা ঝাঁকালো।জি।ও বাবা কে মেরেছে।
-তুমি জানতে???(আরহান)
-জি।
-মাহিরা আঙ্কেল মারা গেছে তিনমাস হতে যাচ্ছে।আর তুমি আজ বলছো???(রাগি গলায়)
-আপনাদের হারানোর ভয়ে চুপ থাকতে হয়েছে এতোদিন।আপনারা ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই।ইনায়া আমার পৃথিবী আর আপনি.......চুপ হয়ে গেলাম(কি বলতে যাচ্ছিলাম)
-আর আমি?????(আরহান)
-কিছুনা।শুধু এটাই জানি আমি আর ইনায়া আপনাকে ছাড়া কিছুইনা। নীলকে ছাড়বোনা।ওর প্রাপ্য শাস্তি ওকে দিয়েই ছাড়বো।
-রাত এগারোটায় শাস্তি দিতে যাচ্ছিলে??(আরহান)
-ফোনের মেসেজ অপশন অন করে ওনাকে দিলাম।
-ছিঃ হাউ ডেয়ার হি!!!!!মাহিরা তুমি কি বোকা????এক বলার প্রয়োজন মনে করোনি???নীল কে এতোই শক্তিশালী মনে করেছো???আমার ওপর বিশ্বাস নেই তোমার????(চিৎকার করে)
-আছে আরহান।কিন্তু.....
-কোন কিন্তু না মাহিরা।কাল আমার থানায় যেয়ে ওর নামে কেস করবো।ওর হাত ধরে বললাম আমি তোমার সাথে আছি।সবসময় থাকবো।
-জি।
-ওর কপালের চুল গুলো সরিয়ে আলতো করে চুৃমো একেঁ দিলাম।ঘুমিয়ে পড়ো।গুড নাইট।
-গুড নাইট।পরদিন সকালে তিনজনে থানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।গাড়ি ড্রাইভ করছে আরহান।ইনায়া পিছনে বসেছে।সামনের সিটে আরহানের পাশে বসেছে মাহিরা।
-মাহিরার হাতের ওপর একটি হাত রাখলো আরহান।
-আরহানের হাতের ছোঁয়া পেয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
-ইশারা দিয়ে বললাম চিন্তা না করতে।(আরহান)
-হুম।থানায় পৌছাতেই ইনায়ার পানি খাওয়ার বায়না ধরলো।
-পাপা পানি খাবো।
-ওকে পাপা এনে দিচ্ছি।মাম্মার সাথে দাড়াও।
-ওকে।
-আরহান রাস্তার অপরপাশে চলে যায়।পানি কিনে ফিরবে তখনই অতিপরিচিত একটা গাড়ি দেখতে পেলাম।দ্রুতবেগে আসছে আরহানের দিকে।
আরহান!!!!!!(চিৎকার করে ডাকলাম)।গাড়িটি আরহান কে ধাক্কা দিয়ে সামনে চলে গেল।
চলবে

#দ্বিধা
তাবাস্সুম রিয়ানা
২০
-সাথে অনেক মানুষের ভিড় জমে গেল।ইনায়া কে দৌড়ে গেলাম।ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখি আরহানের কপাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।সাদাশার্টটি লাল হয়ে গেছে। নিচে বসে পড়লাম।আরহান!!!!!!দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
-মাম্মা পাপা কথা বলে না কেন?
-ইনায়ার কোন কথাই কানে আসছেনা।অবশ লাগছিলে নিজেকে।হঠাৎ করে এক মহিলা বলে উঠলো।
-ওনাকে হাসপাতালে নিতে হবে।
-চোখ মুছে উঠে দাড়ালাম।একজন এ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনলেন।এ্যাম্বুলেন্সে ইনায়া আর আমি বসে আছি।কাপড় দিয়ে ওনার মাথা চেপে ধরে আছি।পায়ের থেকে ও ব্লিডিং হচ্ছে।
-মাম্মা পাপা কি আর কথা বলবেনা????
-বলবে মামনি অবশ্যই বলবে।পাপা ইনায়ার সাথে কথা বলা ছাড়া থাকতেই পারবেনা।ইনায়া আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।হাসপাতালে পৌছে গেলাম।ওটি তে যাওয়া পর্যন্ত আরহানের সাথেই ছিলাম।ডাক্তার ওনি ভালো হয়ে যাবেন তো???
-আমরা চেষ্টা করবো।ওনি আপনার কি হন????
-আমার হ...হাজবেন্ড বলতেই চোখ থেকে পানি চলে এলো।প্লিজ বাঁচান ওনাকে।
-আপনি চিন্তা করবেন না।আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করবো(ডাক্তার)।
-একটি বেঞ্চে বসে পড়লাম ইনায়াকে নিয়ে।হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি নীল দাড়িয়ে আছে।এখানে কি(রাগী গলায়)
-আমার জানটাকে দেখতে এলাম।আহা কান্না করে একেবারে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।ওর দিকে হাত বাড়াতে জোরে চড় দিলো আমাকে।
-একদম ধরার চেষ্টা করবেনা আমাকে নীল।আরহান কি দোষ করেছিল কেনো ওর সাথে এমন করেছিস?
-বলেছিলাম না পুলিশকে না জানাতে?এখন দেখ আরো কি কি সহ্য করতে হবে তোমাকে।
-এতো দিন চুপ ছিলাম।আর চুপ থাকবোনা আমি।তোকে জেলে পাঠিয়েই ছাড়বো।চলে যা এখান থেকে।
-যাচ্ছি এখন।শীঘ্রই দেখা হবে।বায়(নীল)
-নীল চলে যেতেই আরহানের মা বাবা হুড়মুড় করে ঢুকলো ভিতরে।মা কাঁদছেন।
-বৌ মা আমার ছেলে কই???
-মা ওনি ওটিতে আছেন(মাহিরা)
-মাহিরার চোখ মুছে বললাম কাঁদিস না একদম।তুই কাঁদলে ইনায়াকে সামলাবে কে?
-ওনাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম।
-মিসেস আরহান!!!!!(ডাক্তার)
-জি!!!!(মাহিরা)
-পেশেন্টের ঞ্জান ফিরেছে যেকোন একজন গিয়ে দেখা করে আসেন।
-ওনি ভালো আছেন তো??(মাহিরা)
-ডান হাত টা ভেঙ্গে গেছে।প্লাস্টার করে দিয়েছি ঠিক হয়ে যাবে(ডাক্তার)
-মা আপনি যান।ওনি চলে গেল আরহানের কাছে।ইনায়া চুপচাপ বসে আছে।মামনি কিছু খাবে???
-না।খিদে নেই।
-খিদে নেই বললে তো হবেনা মা।কিছু খেয়ে নাও।
-ইনায়া দাদুর সাথে আাসো।মাহিরা কিছু খাবে???
-না বাবা আপনি ওকে নিয়ে কিছু খাওয়ান।
-না বৌমা তুমি ও চলো।
-ঠিক আছে চলুন।
-মা ইনায়া কই(আরহান)
-মাহিরার সাথে আছে।
-ওহ।তোমরা কখন এলে?(আরহান)
-মাত্রই এলাম।কিছু খাবি আরহান?
-না মা খিদে নেই।
-একদম কথা বলবিনা।বৌমা কে দিয়ে খাওয়া পাঠাচ্ছি।বের হয়ে দেখি মাহিরা হাতে একটি বক্স নিয়ে বসে আছে।এখানে কি বৌমা?(মা)
-ওনার জন্য স্যুপ এনেছি(মাহিরা)
-যেয়ে খাইয়ে দিয়ে আসো।
-ওকে।আপনারা বসুন।
-ওনার কাছে এলাম।একটি বাটিতে স্যুপ ঢেলে ওনার সামনে বসলাম।
-কেমন আছো মাহিরা???(আরহান)
-ভালো।খেয়ে নিন।চামচে একটু স্যুপ নিয়ে ওনার দিকে ধরলাম।ওনি খেয়ে নিলেন।নীল এসেছিলো এখানে।
-এখানে ও এসেছে??(আরহান)
-জি।
-কোন ক্ষতি করতে পারেনি তো তোমাদের??
-না কিছু করতে পারেনি।
চলবে

No comments :

Post a Comment