Friday, October 26, 2018

অদ্ভূত প্রেমের গল্প পর্ব ১৩-১৪

1 comment

♥-অদ্ভুত প্রেমের গল্প-♥

পর্ব-----১৩/১৪

শনিবার। পুলক আরাম করে দেরী করে ঘুম থেকে উঠল। রীতার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আজকে দেখা হবে তাঁদের। বেশ অনেকদিন পর দেখা। শেষ দেখা সপ্তাহ দুয়েক আগে হয়েছে। কোন শার্টটা পরবে? মন ভালো থাকলে নিজের দিকে একটু মনোযোগ দিতে ভালো লাগে। রেডি হয়ে ভালমত নিজেকে আয়নায় দেখে সন্তুষ্ট হল পুলক। খারাপ না।

আজকে রীতাকে বিয়ের কথা বলবে। এখন তো আর সেই বয়স নেই যে অনির্দিষ্টকাল ধরে প্রেম করে যাবে। পুলকের মনে কোন ‘কিন্তু’ নেই। সে রীতাকে পছন্দ করে। রীতাও তাঁকে পছন্দ করে। এটাই সবচেয়ে বড় কথা যে রীতা তাঁকে পছন্দ করে। তাঁকে বোঝে। তাঁকে সহ্য করে। এর চেয়ে বেশী আর কিছুই চাওয়ার নেই।

-কি হে!! কী অবস্থা? শুকায়ে গেস দেখি। খাওয়া দাওয়া কর না, নাকি?

রীতাকে দেখে পুলক বলল।

পুলককে দেখে রীতার হাসি যেন ধরেই না। কতদিন পর দেখা। যেন কয়েক বছর পর দেখা হল। ও পুলকের হাতটা ধরল। আহ!! খুব আনন্দ হচ্ছে রীতার। বাচ্চা মেয়েদের মত পুলকের হাত ধরে দোলাচ্ছে রীতা। রীতার এরকম পাগলামি পুলকের খুব মজা লাগে। কারো কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ আগে সে কখনোই ছিল না। সে সারাজীবন এরকম অনুভব করতে চায়।
-কই? এত শুকাইলা কেমনে?

পুলক আলতো করে গালে হাত বুলায় রীতার।

-কই শুকাইসি। আমি একদম ঠিক আছি।

-বললেই হল!!! যাই হোক বাদ দেও। চল কোথাও বসি। আর হাঁটতে ইচ্ছা করতেসে না।

-ওকে

দুইজনে বসল।

-রীতা তোমার বাসায় কবে যাবো?

-মানে? বাসায় কেন যাবা?

-আরে!! বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

-ও বিয়ে? না বাবা! এখনি না।

-কেন? এখনি না কেন?

-আগে আমার মাকে বলা লাগবে।

-কি বলা লাগবে?

-আরে! তোমার আমার কথা।

-এতে এত বলাবলির তো কিছু নাই। এমনিতেও আমাদের দেখা বিয়ের উদ্দেশ্যেই হয়েছিল। এবং তা আমাদের অভিভাবকদের কথামতই।

-তাও আমি মাকে আলাদা করে বলতে চাই। তুমি তো জানো মায়ের কাছ থেকে কিছু লুকালে আমার শান্তি হয় না। মনে হয় যে কিছু একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে।

-আচ্ছা বাবা!! ঠিক আছে। তুমি মায়ের সাথে কথা বল।

-কিন্তু পুলক!! আমি চাকরি না পাওয়ার আগে বিয়ে করতে চাচ্ছি না।

-আচ্ছা তাও সই। বিয়ে তো আর বললেই হয়ে যাচ্ছে না। তোমাকে একটু বুক করে রাখি। নইলে কবে আবার কোন দিকে দৌড় দিবা। ঠিক আছে কোন?

-(কৌতুকময় স্বরে) তা অবশ্য ঠিকই বলসো। কোনোই ঠিক নাই। এক লোকের সাথে আর কত?

-(রাগতস্বরে)কি??? আমার সাথে আর থাকতে ভালো লাগছে না? ওকে। থাক। তোমার আর আমার সাথে থাকা লাগবে না।

পুলক রাগে উঠে দাঁড়াতে গেল। রীতা জোর করে ওঁকে হাত ধরে বসিয়ে পুলকের গালে একটা চুমু দিল।

-আমার বোকা বাবু।

পুলক রীতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাগের পরপরই তক্ষুনি কেউ রাগ থামিয়ে দিলে খুব কান্না আসে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষমানুষের কান্না মোটেও শোভন নয়। সে তাড়াতাড়ি উঠে পরল।

-চল। খিদে লেগেছে। আজিজে যাই।

রীতা বসা অবস্থায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাঁর দিকে। ওঁকে টেনে তুলে ওরা আজিজ সুপার মার্কেট এর দিকে চলল।

নাজমা হক আজকে একটু বের হয়েছিলেন। বাসার আকুয়ারিয়ামের জন্য গোল্ড ফিশ কিনতে হবে। মিতার খুব শখ হয়েছে গোল্ড ফিশ কিনার। বেশ অনেকদিন ধরে চিল্লায়ে কানের পোকা নাড়িয়ে দিচ্ছে মেয়েটা। গোল্ড ফিশ কিনে আনো! গোল্ড ফিশ কিনে আনো! মেয়েটা এত অস্থির আর অবাধ্য!! যা বলবে তাই তাঁর কিনা লাগবে। মেয়েদের শার্ট পড়া একদম পছন্দ না নাজমা হকের। রীতাকে সে কখনো সালওয়ার কামিজ আর শাড়ি ছাড়া কিছু পড়তে দেননি। কিন্তু মিতা ঠিকই শার্ট পড়ে ঘুরে বেড়ায়। তাঁকে কিছুই বলা যায় না।

একটু আজিজেও যাওয়া দরকার। রীতা-মিতার বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনতে হবে। লোকটার জন্মদিন সামনের সপ্তাহে। হঠাৎ নাজমা হক যেন ভূত দেখলেন। তিনি দেখলেন তাঁর সামনে দিয়ে রীতা একটা ছেলের হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল। তাঁর মেয়ে রীতা।

Arranged marriage এর বাংলা কী? সাধারণত এর বাংলা আমরা বলি ‘বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করা’। আর কি কোন ভাবানুবাদ আছে? যাইহোক!!! বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করার যে পদ্ধতি তা কিন্তু বেশ সময়সাপেক্ষ। প্রথমে বাবা মায়েরা চেনা অচেনা সবাইকে ছেলে বা মেয়ে দেখতে বলে। অনেকে ঘটকও নিয়োগ করে। এরপর শুরু হয় প্রাথমিক প্রার্থী বাছাই। প্রাথমিক প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটাও বাবা মায়েরাই করেন। বিশেষ করে মায়েদের উৎসাহ এতে বিপুল। তাঁরা পারলে অন্যের বিয়ের পাত্র পাত্রীও বাছাই করে দিয়ে আসেন। প্রাথমিক প্রার্থী বাছাইয়ের পর সেখান থেকে ফাইনাল বাছাই করেন পাত্র বা পাত্রী। এরপর পাত্র বা পাত্রীর বাছাইকৃত প্রার্থী যাচাইয়ের পালা। প্রথমে পুরো পরিবার মিলে যাচাই। এরপর একজন বনাম একজন যাচাই। এভাবে কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী বাছাই না হওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকে। এই বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করার কাহিনী বিশদভাবে বলার কারণ আর কিছুই না। এটাই বোঝানো যে, এটি খুবই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তা যদি না হত, তাহলে নাজমা হক একদিনের নোটিসে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতেন। নিজেকে এতটা প্রতারিত তাঁর আগে কখনো মনে হয়নি। তাঁর মেয়ে একটা ছেলের সাথে হাত ধরে মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে!!! তাহলে ডাক্তার পাত্রের পক্ষের লোকজন যা বলেছে সব সত্যি!! তিনি এখনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত, তাঁর সবচেয়ে বাধ্য যে মেয়ে সেই মেয়ে এই কাজ করে বেড়াচ্ছে!!!

রীতা-মিতার বাবার পাঞ্জাবি আর কেনা হয়নি। ওই দৃশ্য দেখে তিনি আর ওখানে দাঁড়াতে পারেননি। বাসায় চলে এসেছেন। এখন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। তারপর কয়েক ঘণ্টার ঘুম। তারপর ভাববেন কী করা যায়!!

রীতা বাসায় আসলো সন্ধ্যার পর। এসে দেখল বাসায় বেশ থমথমে ভাব। মিতা ফেসবুক এ চ্যাট করছিল। ওঁকে জিজ্ঞেস করলো।

-কিরে!! বাসা এরকম থমথমে কেন?

মিতা ঠোঁট উলটিয়ে কাঁধ ঝাঁকাল। তাঁর এসব কিছুতে খেয়াল নেই। যতক্ষণ না তাঁকে কেউ বিরক্ত করছে ততক্ষণ সেও কাউকে বিরক্ত করে না। সিম্পল!!

বাসাতে সবসময় মায়ের চিল্লাপাল্লা থাকেই। বুয়াকে বকা দিচ্ছে নইলে মিতাকে। নাহলে টিভিতে সিরিয়াল। কোন না কোন আওয়াজ এর সাথে তাঁর মায়ের সম্পৃক্ততা থাকেই। যখন থাকে না তখন বুঝতে হবে বড় কিছু ঘটেছে। রীতা মায়ের ঘরে উঁকি দিল। ঘর অন্ধকার করে মা শুয়ে আছে। ঘরে ঢুকল না রীতা। পুলকের কথাটা মাকে বলতে হবে। আজকে তো বলার প্রশ্নই আসে না।

নাজমা হক খুব জলদি স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। তিনি রীতাকে কিছু বললেন না। বরং এরপরের কয়েকদিন তিনি অন্যান্য দিনের চেয়ে খুব বেশী স্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলেন। ব্যাপারটা বাসার প্রায় সবাই খেয়াল করল এবং খুব স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলো না। কাজের বুয়া ভয়ের চোটে অন্যান্য দিনের চেয়ে আরো হড়বড় করে কাজ করতে থাকল। সারাদিনে সে ৩টা চায়ের কাপ ভাঙল। নাজমা হক কিছু বললেন না। মিতা স্কুল থেকে এসেই এম টিভি ছেড়ে বসেছিল স্কুল এর ড্রেস চেঞ্জ না করেই এবং অপেক্ষা করছিল কখন তাঁর মায়ের হুংকার শোনা যাবে। এটা প্রতিদিনেরই রুটিন। মিতা স্কুল থেকে এসেই টিভি ছাড়ে। নাজমা হক হুঙ্কার ছাড়ে ‘ওই শয়তান’। তখন মিতা দৌড়ে নিজের রুমে যায়। কিন্তু আজকে সে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোন হুঙ্কার শুনতে পেল না। সে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুল এর ড্রেস চেঞ্জ না করেই টিভি দেখল। মাঝে ওই অবস্থাতেই খেল। নাজমা হক কিছু বললেন না। রীতা-মিতার বাবা আরিফ সাহেব আসেন অফিস করে। কোন অস্বাভাবিকতাই তিনি ধরতে পারেন না। রাতের খাবার খেয়ে ঘুম দেন। পরিবারের মধ্যে এই অস্বাভাবিকতা যার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রকট হয়ে ধরা পড়ল সে হচ্ছে রীতা। সে তাঁর মাকে চেনে। খুব বড় কিছু ঘটেছে। পুলকের কথা কি মা কোনভাবে জেনে গেছে? রীতা পুলককে এসএমএস করল, “পুলক! আমার খুব ভয় করছে। মায়ের আচরণ সুবিধার ঠেকছে না।“ ভয়ে সে পুলককে ফোন পর্যন্ত করছে না। দুই দিন সে ল্যাপটপও অন করেনি, ফেসবুক এও যায়নি।

দুই সপ্তাহ পরের ঘটনা। নাজমা হক একজন নামকরা হুজুরের কাছে গিয়েছেন। সাথে আছেন বান্ধবী তনুজা। হাজার ঝগড়াঝাঁটি হলেও তনুজাকে তিনি সব কথাই বলেন। সদ্য ঘটে যাওয়া চাক্ষুষ ঘটনাও তিনি তনুজার কাছে বলেছেন। মেয়ের এই প্রতারণা তিনি মানতে পারছেন না। নিশ্চয়ই কোন বাজে ছেলের পাল্লায় পড়েছে। নইলে রীতা তাঁর এমন মেয়ে নয়। মা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব মেয়েকে এই বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করা।

তনুজাই বলেছে এই হুজুরের কথা। এই হুজুরের পড়া পানি খেলে কাজ হয়। সাথে হুজুর তাবিজও দিয়ে দিবেন। হুজুরের তাবিজে কাজ হবে না, এরকম কোন নজির নেই। মেয়ে চেয়েও ছেলের কথা মনে করতে পারবে না। প্রত্যেকবার কাজ হয়েছে।

হুজুরের অনেক সাক্ষাতপ্রার্থী। বাইরে একজন খাদেম গোছের একজন আছেন। তিনি এসে একজন একজন করে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন। অবশেষে তাঁদের পালা আসল। হুজুর চোখ বন্ধ করে আছেন। খাদেম হুজুরের কানে কানে কিছু,
বললেন। হুজুর চোখ খুলে তাকালেন।

বললেন,

-তাবিজ কার লাগবে?

নাজমা হক আর তনুজা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছেন। তনুজা অভয় দিলেন। ইশারা করলেন জবাব দিতে।

-জি হুজুর!! আমার মেয়ের।

-বিস্তারিত বল।

নাজমা হক সব বললেন। হুজুর চোখ বন্ধ করে সব শুনলেন।

এরপর বললেন,

-এক গোছা চুল লাগবে। এক সপ্তাহ পর বাদ মাগরিব আসবা।

কথা শেষ হতেই হাতে খাদেমকে ইশারা করলেন। খাদেম দুই মহিলাকে ইশারায় বাইরে নিয়ে এলেন........

--চলবে.....

1 comment :

  1. আরো নতুন নতুন Golpo পড়তে ভিজিট করুন
    www.valobasargolpo2.xyz

    ReplyDelete