কোনো এক বান্ধবীর বিয়ের গল্প -
আমি কলি! আজ আমার বিয়ে।
এক সময় ভাবতাম বিয়ে হয়তো খুব মজার একটা মুহূর্ত! কিন্তু নাহ্, আজকে পরিবারের মানুষগুলোকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। চিরচেনা এই মাতৃভূমি আর প্রানের প্রিয় বান্ধবীদেরকে ছেড়ে এক অজানার উদ্দেশ্যে পারি জমালাম।
চোখ দিয়ে বিনা বাধায় পানি গড়িয়ে পড়ছে!
অবশেষে দীর্ঘ ২ঘন্টা জার্নির পর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে পৌছালাম। প্রহর শেষে রাত্রি হলো, সাজানো বাসর ঘরে ঢুকলেন অজানা অচেনা একটি মানুষ (স্বামী)। তবুও তাকে মেনে নিতে হয়েছে আমার।
.
তন্দ্রাহীন রাতের শেষে সকাল হলো! ঘর থেকে বের হয়ে দেখি, সব অচেনা মুখ! তবুও মা বলছে, সবার সাথে আমাকে মানিয়ে নিতে হবে। সবার মন জয় করতে হবে।
"জীবনে অনেক পরীক্ষা দিয়েছি, কিন্তু এমন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবো এটা কখনো ভাবিনি। আসলেই মেয়েদের জীবনটা অনেক কষ্টের।"
.
মায়ের কথামতো এখন আমি সবার সাথে মানিয়ে চলতে পারি। সবার মন জয় করে নিয়েছি।
নিজেকে এখন আর "মেয়ে" মনে হয় না!
এখন আমি কারো স্ত্রী, কারো ভাবি, কারো চাঁচি ।
পূর্বের দিনগুলো শুধু স্মৃতির পাতায় উঁকি দেয়।
এভাবেই চলে গেল বিয়ের মাস পাঁচেক।
ইদানিং লক্ষ্য করছি শাশুড়ি মা আমার প্রতি অসন্তুষ্ট! কিন্তু কেন?! সেটা আমি নিজেও জানি না।
তারপর শুনতে পেলাম, ওনি নাকি আমার চেয়েও বড় ঘরের কোনো মেয়েকে বউ করে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েটি ভালো ছিলো না।
আমাকে পছন্দ করেছেন আমার শশুড় আমার শশুড় ছিলেন অনেক ভালো একজন মানুষ !!!
যাই হোক এসব কোনো ব্যাপার না। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের শাশুড়িদের মধ্যে বউ বিদ্বেষী একটা মনোভাব থাকে! সেটা যারা ভালবাসা দিয়ে জয় করে নিতে পারে, তারা অনেক সুখী হয়। আর যারা পারেনা তাদের দুঃখের কোনো সীমা নেই।
.
দিনদিন শাশুড়ি মা আমার প্রতি অনেক অবিচার করা শুরু করছে! আমিও মাঝেমধ্যে একটু প্রতিবাদ করি।
একদিন ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়েছিলো বলে ধমকের সুরে বলতে লাগলো,
- কি হলো বউ?! একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারো না? নাস্তা তৈরি করবে কে?
- আমার শরীরটা ভালো না মা! একটু জ্বর।
- তো?
- আজকের নাস্তা'টা যদি আপনি তৈরী করে ফেলতেন। - ও আমি রান্না করে দেই! আর তুমি বসে বসে খাও। এই জন্য তোমাকে বিয়ে করিয়ে নিয়ে আসছি?!!
- না মা! আপনি তো আমাকে কাজের মেয়ের পরিবর্তে নিয়ে আসছেন! কাজের মেয়েদেরকেও'তো একটু ছুটি দিতে হয়। তাই না?
- ওরে বাবা তোমার এতো বড় সাহস! আমার মুখের উপর কথা?!!
ছোটলোকের মেয়ের এতো বড় কথা.....
.
উল্টাপাল্টা বলে বাড়ি উজার করে তুললো। এমন সময় আমার স্বামী এসে, এই অসুস্থ্য অবস্থায় আমাকে মারধর শুরু করলো। খুব মারলো আমাকে।
একটুও দয়া হয়নি ওনার.....!
.
আমরা মেয়েরা বাপের বাড়ি, মা বাবা, ভাইবোন সবাইকে ছেড়ে একটা অচেনা মানুষের হাত ধরে চলে আসি! তখন ওই মানুষটাকেই পৃথিবীর সবচাইতে আপন করে নেই! তিনি হলেন স্বামী।
শশুড়, শাশুড়ি সবার জ্বালা সহ্য করা যায়! কিন্তু যখন স্বামী নামক মানুষটা আমাদেরকে না বুঝে! তখন এই কষ্টটা কোনো ভাবেই সহ্য করা যায় না। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।
.
এই মারের পর আমার শরীরের জ্বর আরো বেড়ে গেল! শশুড় আব্বা কিছু ট্যাবলেট কিনে দিয়ে গেলেন! আর বললেন, - মা তুই কিছুদিনের জন্য তোর বাপের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আয়।
এদিকে আমি তোর শাশুড়ি আর আমার ছেলেটাকে একটু বুঝায়।
.
ট্যাবলেট খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম! সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার সেই চিরচেনা মাতৃভূমির উদ্দেশ্যে পারি জমালাম।
দীর্ঘ সময় জার্নির পর বাড়িতে গিয়ে পৌছালাম! আমাকে দেখেই মা দৌড়ে আসলো, - কিরে মা ভালো আছিস?
আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম! - না মা আমি ভালো নেই! আমি আর ওখানে যাব না মা। ওরা আমাকে মারে।
-
মা ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো!
- থাক মা তোকে আর যেতে হবে না! তুই ঘরে আয়, গোসল করে ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দে.....
এভাবে ২দিন কেটে গেল।
তৃতীয় দিনের রাতে মা আমাকে কাছে টেনে বলছে,
- দেখ মা আমরা বাঙ্গালী ঘরের মেয়ে, আমাদের বিয়ে একবারেই হয়! আমি বলছি না যে, তুই ওখানে গিয়ে অত্যাচার সহ্য কর! কিন্তু আমার একটা অনুরোধ, তুই আর একবার যা......
বিনয়ী, নম্রতা, ভদ্রতা এই গুণগুলো ফুটিয়ে তুল। দেখবি সুখের দেখা মিলবেই। কোরআনে বলা হইছে, "আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন!"
.
এক বুক আশা, আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস নিয়ে আবারো ছুটে গেলাম স্বামীর সংসারে।
.
[এটাই মেয়েদের জীবন! হাজারো কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করেও টিকে থাকতে হয় এই সমাজ সংসারে! নাহলে কলঙ্কিনীর অপবাদ নিয়ে আত্মহত্যা করতে হয়।সব মায়েদের বলি আপনি যেমন আপনার মেয়ে কে পরের ঘরে সুখি দেখতে চান তেমনি পরের ঘরের মেয়ে কে নিজের মেয়ে মনে করুন তবেই না একটা সংসারে সুখ শান্তি আসবে........................
Monday, October 15, 2018
বান্ধবীর বিয়ের গল্প ( ভালোবাসার গল্প )
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
আরো নতুন নতুন Golpo পড়তে ভিজিট করুন
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz