Monday, October 15, 2018

ভালোবাসার গল্প - ভাবনার গহীনে পার্ট 19

No comments

#ভাবনার_গহীনে
writer :Afroja
Part 19 :
মোবাইলের ডায়েল নাম্বারের কী গুলো তে রুপাঞ্জনার নাম্বার টা প্রেস করে রেখে দিয়েছে আফরাজ । ভাবছে কল দিবে কি দিবে না । অনেক ভাবনার পরে কল টা দিয়েই দিলো আফরাজ ।

_হ্যালো
আসসালামু আলাইকুম
কে বলছেন (রুপাঞ্জনা)
_..................
_হ্যালো
কে ? (রুপাঞ্জনা)
_...................­.
_কি আজব কথা বলেন না কেন
কে ? (রুপাঞ্জনা)
_...................­..
_চুপ করে থাকার জন্য কল দিয়েছেন ,
যত্তসব আলতু-ফালতু কাজ করে (রুপাঞ্জনা)

কেটে দিলো রুপাঞ্জনা , আফরাজ একটা কথাও বলতে পারলো না , বলবে কিভাবে , বলার মতন মুখ রেখেছি নাকি সে । কি করে রুপাঞ্জনার সাথে দেখা করা যায় , ভাবছে ডিরেক্ট রুপাঞ্জনার বাসায় চলে যাবে , খোজ নিয়ে শুনেছে কোয়াটারে রুপাঞ্জনা একা থাকে । একবার গিয়ে কথা বলা টাও খুব দরকার । এখন যেই ভাবা সেই কাজ আফরাজ রুপাঞ্জনার কোয়াটারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে

_হ্যালো মনি কোথায় তুমি (রুপাঞ্জনা)
_ম্যাম , বাসায় আছি । কেন (মনি)
_আজকে অফিসে এলে না (রুপাঞ্জনা)
_ম্যাম মা একটু অসুস্থ আছে , তাই আসতে পারি নি (মনি)
_একটা খবর অন্তত দিবা তাই না (রুপাঞ্জনা)
_ম্যাম হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে যায় , তাই আর কোন খবর দিতে পারি নি , ম্যাম স্যার কে একটু ম্যানেজ কইরেন প্লিজ (মনি)
_টেনশন নিও না , আন্টির খেয়াল রেখো , আর স্যারকে আমি বুঝিয়ে বলবো , কেমন ? (রুপাঞ্জনা)
_জ্বি ম্যাম , অনেক ধন্যবাদ , তা কোথায় এখন (মনি)
_এই তো বাসার সামনেই আছি , ভেতরে যাচ্ছি , ভাবলাম তোমাকে একটু কল দেই , তার জন্য আর কি (রুপাঞ্জনা)
_সবার সব খেয়াল রাখেন ম্যাম , অথচ নিজের খেয়াল রাখার সময় থাকে না আপনার (মনি)
_তোমরা আছো না , আমার খেয়াল টা না হয় তোমরাই রাখবা , আর শু..................­. (ঘরের মধ্যে ঢুকেই চোখ কপালে রুপাঞ্জনার , গলায় কথা আটকে গেছে তার) মনি পরে কথা বলছি (রুপাঞ্জনা)
_ok mam (মনি)


ফোন রেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সোফার দিকে
নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে রুপাঞ্জনার । আফরাজ বসে আছে তার বাসায় , তার ড্রইং রুমের সোফায় ।


_কি চাই (রুপাঞ্জনা)
_কেমন আছো (আফরাজ)
_যেমন টা চেয়েছেন সেই রকম (রুপাঞ্জনা)
_রুপাঞ্জনা আমার তোমার সাথে অনেক কথা আছে (আফরাজ)
_মাফ করবেন , আমার আপনার সাথে কোন কথা নাই (রুপাঞ্জনা)
_রুপাঞ্জনা প্লিজ , আমি তোমাকে কয় খুজেছি জানো , অবশেষে তোমাকে আমি পেয়েই গেলাম , (আফরাজ)
_কেন , ডোজের পরিমান টা কি কম হয়ে গেছিলো নাকি চার মাস আগে , তাই এখন আবার দিতে চলে এসেছেন (রুপাঞ্জনা)
_রুপাঞ্জনা (আফরাজ)
_বেরিয়ে যান এইখান থেকে এক্ষুনি , ১ বছর আগে একটা রাতের জন্য আমাকে আমার সব কিছু থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে , ৪ মাস আগে ঠিক তেমনি আরেকটা রাত আমাকে আমার স্বামীর ঘর থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে , আর নতুন করে আমি কিছু হারাতে চাই না , নিজেকে সামলে নিয়েছি এই কয়েকদিনে , ভবিষ্যতেও পারবো , প্লিজ বেরিয়ে যান (রুপাঞ্জনা)

আফরাজ এক রকম বাধ্য হয়েই চলে যায় । আর রুপাঞ্জনা সেইখানেই বসে কাদতে থাকে

_নাহ এই লোক কে বিশ্বাস নেই , আর কাউকে কোন দিন ও বিশ্বাস করবো না আমি । আর কাউকে ভালোও বাসবো না আমি । আর কোন মায়ায় জড়াবো না নিজেকে । এখন থেকে ভুলেই যাবো যে আফরাজ নামের কেউ ছিল আমার জীবনে , দরকার পড়লে আবারো পালাবো , এইবার পালাবো এই শহর ছেড়ে । দেখি কিভাবে পায় আমায় (রুপাঞ্জনা)
_রুপাঞ্জনা এইভাবে বের করে দিবে একদম ভাবি নি , অন্তত কথা টা তো শুনতো আমার , এতো টা শক্ত হয়ে গেছে রুপাঞ্জনা , না জানি আবার কিছু করে বসে কিনা , (আফরাজ)

এমন সময় শাখাওয়াতের ফোন

_হঠাৎ এই সময় ফোন দিল , আমি যে রুপাঞ্জনার বাসার গিয়েছিলাম কোন ভাবে জেনে যায় নি তো । কি করবো , রিসিভ করবো (আফরাজ)
_হ্যালো কিরে এতো রাতে কল দিলি (আফরাজ)
_কল দিয়েছিলি শাহরীন কে (শাখাওয়াত)
_নাহ মানে ,,,,,, মানে (আফরাজ)
_আরেহ শালা এমন মানে মানে করছিস কেন , মবে হচ্ছে তোকে আমি ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিয়েছি । নিজে এতো বড় একজন lowyer , আর এখন নিজেই ভয় পাচ্ছিস , ভাবলাম তুই ক দিছিস কিনা , তাই জিজ্ঞাসা করলাম (শাখাওয়াত)
_নাহ মানে , একটু ব্যস্ত ছিলাম আর কি৷, তাই কল দিতে পারি নি রে দোস্ত (আফরাজ)
_আচ্ছা কোন ব্যাপার না , শোন না আমি কাল সুইজারল্যান্ড যাবো , কয়েকদিন থাকবো ওইখানে , এই সুযোগে ওকে বলার চেষ্টা করিস আমার ব্যাপার টা (শাখাওয়াত)
_তুই কালই যাবি , এতো দিন তো বললি না যে (আফরাজ)
_আরে আজই সব ঠিক হলো , আর তুই তো জানিসই আমার এমন হুট করেই বাহিরে যাওয়ার ডাক আসে , আচ্ছা শোন কাল কে দুপুর দুইটায় আমার ফ্লাইট , কাল একবার সকাল ১০ টায় দেখা করবি দোস্ত , কিছু কথা আছে (শাখাওয়াত)
_কোথায় আসবো আর কি কথা আছে , (আফরাজ)
_আগে আয় , পরে সব বলবো (শাখাওয়াত)
_কোথায় আসবো , সেইটা তো বল (আফরাজ)
_ডিরেক্ট এয়ারপোর্টে চলে আয় , ওইখানকার একটা কফি-সপে বসে কথা বলে টাইম পাস করবো আর খাওয়া দাওয়াও হবে দেন বিদায় জানাবি আমাকে , হা হা হা (শাখাওয়াত)
_আচ্ছা দেখি , কোন কেস এর সিডিউল আছে কিনা যদি না থাকে তাহলে অবশ্যই আসবো (আফরাজ)
_যদি না তুই আসবিই ok আর কোন কথা নাই , সব সিডিউল ক্যান্সেল করে দে , বাই (শাখাওয়াত)
_আরে আরে শুন না , ধুর এমনিতেই রুপাঞ্জনার চিন্তায় মাথার সব গুলিয়ে যাচ্ছে তার উপরে ওর প্যারা , (আফরাজ)


পরদিন সকাল ১০ টায় আফরাজ এয়ারপোর্টে পৌছায় , সেইখানে গিয়ে দেখে শাখাওয়াত আর রুপাঞ্জনা বসে আছে , আফরাজ তাদের দেখে বেশ বিরক্ত হলো , হয়তো খারাপ লেগেছে তার । যাই হোক , আফরাজ গিয়ে তাদের সাথে বসলো , রুপাঞ্জনা বেশ অবাক হলো , শাখাওয়াত মানে তার বস আফরাজ কে নিয়ে এসেছে কেন ?


_শাহরীন ওইদিন তো তুমি এমন ভাবে চলে গেলে আর ওর সাথে পরিচয়ই করাতে পারলাম না তোমাকে । ও হচ্ছে আমার সব থেকে কাছের বন্ধু আফরাজ । আর আফরাজ এই হচ্ছে শাহরীন । (শাখাওয়াত)
_হ্যালো মিস শাহরীন (আফরাজ)
না চাইতেও উত্তর দিতে হচ্ছে রুপাঞ্জনাকে ,
_নাইস টু মিট ইউ (রুপাঞ্জনা)
_আচ্ছা শাহরীন আমি তো বেশ কিছুদিন থাকবো না তাই তোমার যদি কিছুর প্রয়োজন পরে তাহলে আফরাজ কে বলতে পারো , ও সব সময় তোমার হেল্প করবে , অবশ্য ওর বউ যদি ওকে পারমিশন দেয় তো , (শাখাওয়াত)
_আমার প্রয়োজনে আমি ওনাকে কেন বলতে যাবো , আর আপনি কি নতুন বাহিরে যাচ্ছেন নাকি স্যার , যার জন্য আপনি আমাকে আরেকজন এর উপরে রেখে যাচ্ছেন , এর আগে বাহিরে যান নি , এখন হঠাৎ আরেকজন কে বলে যাচ্ছেন কেন (রুপাঞ্জনা)

আফরাজ শুধু রুপাঞ্জনার দিকে তাকিয়ে আছে এক মনে , দেখছে তার রুপাঞ্জনার কত চেঞ্জ হয়েছে , নিজেকে এখন আর অন্যের ভরসায় রাখতে চায় না সে

_নাহ মানে শাহরীন হয়েছে কি (শাখাওয়াত)
_excuse me আপনারা কথা বলেন আমি একটু আসছি (রুপাঞ্জনা)
_দোস্ত ও রাগ করছে (শাখাওয়াত)
_দেখে তো তাই মনে হচ্ছে (আফরাজ)
_আচ্ছা শোন আমি তোকে কেন এইখানে এনেছিস জানিস , (শাখাওয়াত)
_কেন (আফরাজ)
_এতো দিন ওকে ভরসা করে রেখে যাওয়ার মতন কাউকে পাই নাই , আমি জানি তুই পারবি ওর খেয়াল রাখতে পারবি , তুইই পারবি ওকে সামলাতে , আর তোকে ছাড়া আমি আর অন্য কাউকে ভরসা করতে পারছি না , প্লিজ দোস্ত আমার অবর্তমানে ওকে দেখে রাখবি , ওর আশে পাশে থাকবি , কথা দে (শাখাওয়াত)
_কিন্তু,,,,,,,,,,,,,­,,,,, (আফরাজ)
_কোন কিন্তু টিন্তু না , আর ভাবির টেনশন একদম করবি না তুই , তোর বিবাহিত জীবনে এর ছায়াও পরবে না , দোস্ত তুই শুধু আমায় কথা দে যে তুই ওকে দেখে রাখবি ও বারন করার পরেও ওর আশে পাশে ছায়ার মতন থাকবি কথা দে দোস্ত (শাখাওয়াত)
_ওকে একবার হারিয়েছি নিজের কারনে , আর ওকে আমি হারাতে দেবো না , ওকে আমার সবটুকু ওকে আগল রাখবো , ওর গায়ে আর একটা ফুলের আচোর ও লাগতে দেবো না , ওকে আমার সর্বস্য দিয়ে ভালোবাসবো {মনে মনে } (আফরাজ)
_কিরে কি ভাবছিস , কিছু তো বল (শাখাওয়াত)
_হ্যা হ্যা , কি (আফরাজ)
_কিছুই বলছিস না , আমার কিন্তু খুব টেনশন হচ্ছে (শাখাওয়াত)
_প্রমিস করছি ওর কিছু হতে দেবো না , আগলে রাখবো আমি , (আফরাজ)
_শালা এমন ভাবে বলছিস মনে হচ্ছে তোর বউকে তোকে আগলে রাখার কথা বলছি আমি হা হা হা (শাখাওয়াত)
_নাহ মানে তুই বললি যে , তাই আর কি (আফরাজ)
_যাক শুনেও ভালো লাগলো , (শাখাওয়াত)
_কি,,,, কি শুনে ভালো লাগলো (আফরাজ)
_নাহ কিছু না এমনি (শাখাওয়াত)
_ওহ (আফরাজ)
_আচ্ছা শুন,,,,,

To all the passenger of flight No.3309 are requested to pass the emigration the fight is ready to Fly Switzerland .

_সময় হয়ে গেছে রে দোস্ত এখনই যেতে হবে । এনাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে , শাহরীন কোথায় গেলো , যাওয়ার আগে একবার দেখে যাবো না ওকে (শাখাওয়াত)
_স্যার আমি আছি , ভালো থাকবেন , আর খুব তারাতারি ফির আসবেন । (রুপাঞ্জনা)
_আর তুমিও খুব ভালো থাকবে , আমি দোয়া করি খুব ভালো থাকো , আর হ্যা আমাকে যে খুব তারাতারিই আসতে হবে , ok আসি তাহলে আর আফরাজ দোস্ত তোকে যা বললাম আমার কথা টা রাখার চেষ্টা করবি (শাখাওয়াত)
_ইনশাআল্লাহ (আফরাজ)
_বাই (শাখাওয়াত)
_বাই (রুপাঞ্জনা+আফরাজ)

আফরাজ আর রুপাঞ্জনা কে বিদায় দিয়ে শাখাওয়াত চলে গেলো , আর আফরাজ ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে পিছনে ফিরতেই দেখে রুপাঞ্জনা নেই , সাথে সাথে আফরাজের বুকের ভেতরে টা মোচর দিয়ে উঠে । একরকম দৌড়ে এয়ারপোর্টের বাহিরে চলে আসে আফরাজ । বাহিরে এসে দেখে রুপাঞ্জনা ট্যাক্সি করে চলে যাচ্ছে ।




To be continued..

No comments :

Post a Comment