Friday, October 26, 2018

অভিমানী ভালোবাসা পর্ব ১

No comments

............ ইংরেজি ক্লাস চলছে প্রতিদিনের মত আজকেও সব ছাত্র-ছাত্রীর সামনে ক্লাসে কান ধরে দাড়িয়ে আছে মৃনাল। ২০ মিনিট ধরে কানে হাত দিয়ে আছে মৃনাল আর ক্লাসের ম্যাডাম হাত নামাতেই বলছেন না ম্যাডামের এমন আচরন দেখে মৃনালের কাঁদো কাঁদো মুখ ভাষা নির্বাক। আর ক্লাসের সবাই মৃনাল কে দেখে হাসাহাসি করছে.. এমন সময় ক্লাসের ভিতর তুতুল প্রবেশ করে কোন রকম কথা না বলে মৃনালের গালে #ঠাসসসস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো। 
.... মেয়েটা হঠাৎ করে মৃনাল কে থাপ্পর মারাতে ক্লাস টা নিথর হয়ে গেছে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না এ কি হলো ক্লাসে। ক্লাসের ম্যাডাম বলে উঠলেন....
- কি হয়েছে মা? তুমি এভাবে ক্লাসের ভিতর ঢুকে কোন রকম কথা না বলেই মৃনাল কে থাপ্পর মারলে কেনো? (ম্যাডাম)
- থাপ্পর আমি সাধে মারিনি! যাকে মেরেছি তাকেই জিজ্ঞেস করুন কেনো মারছি? (তুতুল)
- মৃনাল তুমি এমন কি করছো যার কারনে এই মেয়েটা এমন ভাবে তোমাকে থাপ্পর মারলো তাও আবার একটা ক্লাস রুমে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায়? (ম্যাডাম)
- ম্যাডাম আমি কিচ্ছু করিনি বিশ্বাস করুন আর জানিনা আমাকে কেনো এমন ভাবে মারল মেয়েটা! (মৃনাল)
- সব মিথ্যা কথা সব তুমি সব জানো? 
তুমি আমার বান্ধবীর সাথে এমন টা না করলে ও পারতে? (তুতুল)
- আমি আপনার বা বা বান্ধবী....? কি বলছেন এসব? (মৃনাল কাঁদো কাঁদো কন্ঠে তোতলাতে তোতলাতে )
- এহহহ ন্যাকা কিচ্ছু জানেনা ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে জানেনা মনে হচ্ছে! 
- আচ্ছা মা আমাকে বলোতো কি হয়েছে আমিতো এসবের কিছু বুঝতে পারছি না? (ম্যাডাম)
- এই ছেলেটা আমার বান্ধবীর সাথে প্রেম করে ওর সব কিছু কেরে নিয়ে এখন আমার বান্ধবীকে অনেক কিছু বলেছে। আর যার কারনে আমার বান্ধবী সুইসাইড করতে চেয়েছিলো আর এর সব কিছুর পিছনে শুধু এই ছেলে জরিত! 
...... তুতুলের এমন কথা শুনে মৃনালের মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙে পড়ল। কি বলছে এই মেয়ে আর কে ই বা তার বান্ধবী আর তার বান্ধবীর সাথে আমিই বা কি করলাম এসব কথা ভাবতে লাগলো মৃনাল।
- আপনি এসব কি বলছেন? আমি আপনার বান্ধবীর সাথে কি করেছি? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। (মৃনাল)
- শুধু তা ই না আমার বান্ধবী এখন মা হতে চলেছে আর সব কিছু করেছো শুধু তুমি তুমি তুমি।(অনেক জোরে জোরে তুতুল কথা গুলো বলল)

....... ক্লাসের ম্যাডাম এমন কথা শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না তার ছেলে অন্য একটা মেয়ের সাথে এমন বাজে কাজ করতে পারলো। ক্লাসের ম্যাডাম ই হলেন মৃনালের মা। মৃনাল কে তার মা একটা কসে থাপ্পর দিলেন গালে....।

- মা... আমি কিছু করি.....(পুরোটা শেষ না করতেই)
- চুপ একদম চুপ। তোকে এতোদিন এতো কস্ট করে মানুষ করলাম আর তার প্রতিদান তুই এভাবে দিলি। তোকে আমার সন্তান ভাবতে ও লজ্জা লাগছে। ছি ছি ছি.! 
......মৃনাল তার মায়ের মুখে এমন কথা শুনে কেঁদেই দিলো এবার। চোখ থেকে অঝোরে জল ঝরছে মৃনালের। ক্লাস টা পুরাই স্তব্ধ হয়ে গেছে সকল ছাত্র- ছাত্রীরা কিছুক্ষন আগে মৃনাল কে দেখে হাসছিলো আর এখন তারা সবাই স্তব্ধ। 

... তুতুলের বান্ধবীর সাথে মৃনাল রিলেশন করছিলো আর এখন তার গর্ভে মৃনালের সন্তান তাও আবার অবৈধ ভাবে।
তুতুল এমন করুন অবস্থা যেনে আর চুপ করে থাকতে পারেনি। তার বান্ধবী এসব কথা মৃনাল কে বলাতে মৃনাল মেনে নেয় নি আর তার কারনে তুতুলের বান্ধবী আত্বহত্যা করতে চেয়েছিলো।
তারপর ঘটলো এক অন্য রকম ঘটনা। কিছু ছেলে এসে মৃনালের শার্টের কলার চেপে ধরে ক্লাসের ভিতর থেকে বের করলো আর সোজা মাঠের মধ্যে নিয়ে গেলো মৃনাল কে ছেলেগুলো। এসব ঘটনা মৃনালের মা নিজের চোখে দেখে কান্না শুরু করে দিলো কারন মৃনাল ই তার একমাত্র সম্বল তাছাড়া আর কেউ নেই। মৃনালের বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। অনেক কস্ট করে মৃনাল কে এতবড় করেছে। 

... মৃনালের চারিদিক অন্ধকার লাগলো কারন এসব ঘটনার কিছুই বুঝতে পারছে না মৃনাল। কিছুক্ষন পর একটি গারিতে করে কিছু লোক আসলো হাতে লাঠি নিয়ে মনে হচ্ছে মৃনাল কে মারবে। তুতুল বলে উঠলো.... 
- ভাইয়া এই ছেলেটা আমার বান্ধবীর সাথে অমন আচরন করেছে? (মৃনাল কে দেখিয়ে বলল তুতুল)
- তুই নিশ্চিন্তে থাক তুতুল তোর বান্ধবীর যে এমন ক্ষতি করেছে তাকে এতো সহজে ছারছি না! (তুতুলের ভাইয়া)
- ভাইয়া তুমি এই ছেলেকে এমন শাস্তি দাও যেনো আর কখন ও কোন মেয়ের সাথে এমন করতে না পারে! (তুতুল)

.... এতোক্ষনে মাঠের মাঝে কলেজের অনেক স্টুডেন্ট এসে গেছে। অনেকে বলছে কি ব্যাপার ইংরেজি ম্যাডামের ছেলেকে এভাবে ওরা এনে কি করবে। 
কিছুক্ষন পর তুতুলের বাবা ও চলে আসলো কলেজ মাঠে..... আর তুতুলের বাবা হলেন এম পি.. তাই তার হাতে অনেক ক্ষমতা আর সেই ক্ষমতার প্রয়োগ তুতুল ও করছে। মৃনালের মা এসব নিজ চোখে দেখতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। তুতুলের বাবা বলল...
- মা তুতুল কোন ছেলেটা তোর বান্ধবীর সাথে এমন আচরন করেছে? 
- বাবা এই ছেলেটা করেছে এমন আচরন! (মৃনাল কে দেখিয়ে বলল)
- তাহলে তুমিইইই সেই ছেলে যার কারনে আমার মেয়ে ও কাঁন্না করেছে। তুমি জানো আমার মেয়েটা নিজের জন্য না তার বান্ধবীর জন্য কান্না করেছে। আর এর সব কিছু তোমার জন্য হয়েছে। কথাটা বলেই সকল স্টুডেন্টস এর সামনে আবার একটা থাপ্পর মারল মৃনাল কে। 
- স্যার বিশ্বাস করুন আমি এসবের কিচ্ছু জানিনা! (মৃনাল)
- বাবা ও মিথ্যা কথা বলছে ও সব জানে। (তুতুল)

..... এসব ঘটনা কলেজের প্রিন্সিপাল যেনে গেলেন। প্রিন্সিপালের ও বিশ্বাস হচ্ছে না এসব কথা। 
- বাহ বাবাবাবাবা বাহহহ.. বেশ তো কান্না করতে পারো দেখছি। আমার বান্ধবীর সাথে নস্টামি করে এখন কান্না করা হচ্ছে। নস্টামি করার আগে ভাবেননি? (তুতুল মৃনাল কে কথাগুলো বলল)
-........... নিশ্চুপ? (মৃনাল)
- কি হলো কথা বলুন চুপ করে আছেন কেনো? 
...... মৃনাল তুতুলের কথা শুনে চুপ করে আছে কোন কথা বলছে না আর কি ই বা বলবে তাকে। কারন কথা বলার কোন ভাষা ই খুজে পাচ্ছে না মৃনাল। মৃনাল কে পুরো কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা নানান ভাবে ধিক্কার দিতে থাকলো। সবার এমন আচরনে মৃনালের মনে হচ্ছে এর থেকে মৃত্যু ও ভালো। 
সবছেলে গুলো মৃনাল কে মারতে এগিয়ে আসল। লাঠি দিয়ে আঘাত করবে এমন সময়, তুতুলের বান্ধবী প্রিয়া যার জন্য এতোকিছু সে চিৎকার করে বলল.....
-তুতুল.....ঐ ছেলেটা নয় ওকে মেরোনা....? 
... প্রিয়ার এমন কথা শুনে তুতুল তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এ কি বলল প্রিয়া এসব এই ছেলেটা নয়। তাহলে আমি কি ভুল ছেলেকে ধরলাম। এসব ভাবতেই তুতুলের গা শিহরে উঠছে। 
প্রিয়া এসে বলল...
- তুতুল এসবের মানে কি? এই ছেলেটা কে? (মৃনাল কে দেখিয়ে) 
-প্রিয়া তোর সাথে যে ছেলেটা চিট করেছে সে এই ছেলেটা না? 
- তুতুল তুই রং জায়গায় এসে পরেছিস। এই ছেলেকে তো আমি চিনি ই না। আর আমার সাথে যে ছেলে চিটিং করেছে সে এই ছেলে নয়।
....... প্রিয়ার মুখে এমন কথা শুনে তুতুল স্তব্ধ। কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে তুতুলের চোখে ও জল জমে গেছে। 
তুতুল মৃনালের কাছে গিয়ে বলল.....
- সরি!(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
...... মৃনাল তুতুলের কথা শুনে কোন কিছু না বলে ওখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। তার এমন অবস্থা দেখে তুতুল এবার কেঁদেই দিলো। না জেনে না ঠিক করে অন্য একজন কে অপরাধী বানালাম
এই পাপের ক্ষমা কি করবে আমাকে আরো নানান রকম কথা ভাবছে তুতুল....।

.... এসব কথা মনে করে তুতুল নিজেকে অনেক বড় অপরাধী ভাবছে আর কান্না করছে। কান্না করে সারারাত পার করে দিলো তুতুল...! অধরা মনে মনে ঠিক করলো আমাকে ওর কাছ থেকে যেভাবেই হোক সরি বলতে হবে । 
.#তারপরের_দিন
.... মৃনাল রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে যাচ্ছে এমন সময় তুতুল পিছন থেকে মৃনাল কে ডাক দিলো। 
- এই যে একটু থামবেন প্লিজ? (তুতুল)
... মৃনাল পিছন ফিরে দেখলো কালকের মেয়েটা যে আমাকে থাপ্পর দিছে ও অনেক অপমান করছে। তাই না থেমে আবার হাটা শুরু করল মৃনাল। এবার তুতুল দৌড়ে চলে আসলো মৃনালের সামনে আর মৃনালের পথ আটকে দাড়ালো তুতুল। 
- কি ব্যাপার আপনি আমার পথ আটকে দাড়ালেন কেনো? (মৃনাল)
- আমি আসোলে সরি কালকের জন্য? (তুতুল)
- আপনি কে? 
..... এবার তুতুল তার দুই হাত দুই দিয়ে দুই কান ধরলো আর কান ধরেই বলল...
- সরি.....? আমাকে ক্ষমা করে দিন? 

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

No comments :

Post a Comment