Friday, October 26, 2018

অভিমানী ভালোবাসা পর্ব ২

No comments

অভিমানী__ভালোবাসা
#লেখাঃ_মৃনাল___
#_পর্বঃ_২য়__...
.......... তুতুল মৃনালের সামনে কান ধরে দাড়িয়ে আছে কিন্তু মৃনাল কিছু বলছে না। মৃনালের নিশ্চুপ থাকা দেখে এবার তুতুল কান ধরা অবস্থায় মাটিতে হাটু গেড়ে বসলো........
- সরি.......! (হাটু গেড়ে কাঁদো কাঁদো অবস্থায়য় বলল তুতুল)
- আজব তো আপনি কে? আর আমার সামনে এভাবে হাটু গেড়ে সরি বলার কারন কি? (মৃনাল)
- প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন? (কান ধরা অবস্থায়) আমি না জেনে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আপনি আমাকে ক্ষমা না করলে আমি কোনোদিন ও নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। (এবার কেঁদেই দিলো তুতুল)
- দেখুন আমি আপনাকে চিনি না জানি না।আপনি আমার সামনে এমন ন্যাকামি বন্ধ করুন আমাকে যেতে দিন আমার ক্লাসের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে নাহয় প্রতিদিনের মতো আজকে ও ক্লাসে সবার সামনে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে হবে। 
- প্লিজ মৃনাল আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি এমন ভূল কোনদিন ও করিনি আর করব ও না! 
- আরে কি আজব আপনি কি পাগলী নাকি? আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চাচ্ছেন আমি কি আল্লাহ্‌ না ভগবান যে আপনাকে ক্ষমা করব! আপনি প্লিজ আমার পথ ছেড়ে দাড়ান আর হ্যা আশে পাশে সবাই দেখছে আমাদের কাহিনি তাই প্লিজ.........! 
.......... মৃনাল কথা গুলো তুতুল কে বলে তার পাশ কেটে চলে গেলো কলেজের দিকে। আর এদিকে তুতুল রাস্তায় বসে নিজের ভুলের জন্য কাঁদছে। রাস্তার আশে পাশের সকল লোকজন হা করে তাকিয়ে আছে তুতুলের দিকে। আর দেখবে না ই বা কেনো কারন তুতুল হলো এম পি এর মেয়ে। এম পি এর মেয়ে যদি রাস্তা ঘাটে এমন ভাবে ক্ষমা চায় তাহলে এম পির ইজ্জতে লাগবে না। 

তুতুল ওখান থেকে চোখ মুছতে মুছতে বাসায় চলে গেলো। সে তার এই ভুলের জন্য নিজে নিজে অনুতপ্ত। এমন ভুল আজ অব্দি কোন দিন করেনি তুতুল আর যখন ভুল করেই ফেলেছে তাও আবার ক্ষমা পাচ্ছে না। বাসায় এসে তুতুল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে তার কান্না দেখে মা, বাবা, ভাই দৌড়ে তুতুলের কাছে এলো। তুতুলের এমন কান্না করাতে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে গেছে । 
- তুতুল এই তুতুল লক্ষী মা আমার এমন ভাবে কাঁদে না সোনা। এমন কি হয়েছে যার কারনে তুই এভাবে কাঁদছিস? (মা)
- আপু তুই এভাবে কাঁদছিস কেনো? তোর চোখের জল আমি সহ্য করতে পারিনা তুই জানিস না। দেখ আর কাঁদলে মোটেও ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম। কেনো কাঁদছিস প্লিজ বল? (ভাই)
- মা তুতুল কি হয়েছে বল না? (মা)
........ তুতুল কারো ই প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না আর কি বা জবাব দিবে তার পরিবার কে। হু....হু...হু.. করে কাঁদতে কাঁদতে তুতুল তার মাকে জরিয়ে ধরলো।তুতুল এমন কান্না কখন ও করেনি আজ করছে।
তার কান্না দেখে পাশে থাকা মা ভাই আর তুতুলের বাবা সবার ই চোখের কোনে পানি জমে গেছে। সবাই তুতুলের পাশে বসে আছে। 

....আর এদিকে মৃনাল আজকে ক্লাসে লেইট করে আসার জন্য আবার কান ধরে দাড়িয়ে থাকল ক্লাসে। 
- মা ও মা ১৫ মিনিট হয়ে গেছে এবার বসি? (মৃনাল তার মা অথ্যাৎ ক্লাসের ম্যাডাম কে বলল)
- কোন বসাবসি নেই যতক্ষন না প্যারাগ্রাফ টা মুখস্থ না পাচ্ছি ততক্ষন কান ধরে দারিয়ে দাড়িয়ে পরো? আর হ্যা খবর দার ক্লাসে মা ডাকবে না বলে দিলাম! ক্লাসের ম্যাডাম)
- আচ্ছা ব্রেঞ্চে বসে বসে মুখস্থ করি? 
- কোন বসাবসি নেই দাড়িয়েইই....? আর তাছাড়া আপনি আজকে ১৫ মিনিট লেইট করে এসেছেন তাই শাস্তি দ্বিগুন! 
- ঐ তুমি আমার মা না অন্যকিছু নিজের ছেলেকে এতোগুলো স্টুডেন্টস এর সামনে কান ধরিয়ে রেখেছো। এমনিতেই কেউ আমার প্রমে পড়ে না আর এখন তো পরবেই না! (অনেক রাগ করে আর মন খারাপ করে কথা গুলো বলল মৃনাল)
- ও হ্যালো এটা ক্লাস রুম বুঝেছেন আর এখানে সবাই সমান। আর কোন মেয়ে পটবে কি না পটবে তাতে আমার কোন কিছু যায় আসে না আমি আমার কাজ করে যাবো! 
.......... এতোক্ষনে মৃনাল বুঝে গেছে যে তার কোন কথায় কাজ হবে না। শাস্তি পেতেই হবে তাও আবার নিজের মায়ের হাতে। আপনারা নিশ্চয়ইই ভাবছেন মৃনাল অনেক খারাপ ছাত্র এটা ভেবে থাকলে ভূল ভাবছেন কারন মৃনাল ছাত্র হিসেবে ভালই। আসোলে তার মা মানে ইংরেজি ম্যাডাম প্রতিদিন একটা না একটা ভুল খুজে বের করবে আর ক্লাসে সবার সামনে শাস্তি দিবে। 
... মৃনালের মা মৃনাল কে খুব খুব খুব ভালোবাসে আর আদর করে। বাসায় মৃনাল নিজে হাতে তুলে কখন ও খায় না মা ই খাইয়ে দেয় মৃনাল কে। সব সময় আদরে আদরে রাখবে মৃনাল কে শুধু ক্লাসেই একটু শাসন করে মৃনাল কে। 
মৃনাল এখন ক্লাসে দাড়িয়ে আছে সবার সামনে......
-... ম্যাডাম..?(মৃনাল)
- হুম কি হয়েছে বলো? কোথায় বুঝতে অসুবিধে? (ম্যাডাম)
- আমি এখন বসি আর তো ২০ মিনিট আছে ক্লাসের এইটুকু সময় শুধু! 
- আচ্ছা ঠিক আছে বসতে দিতে পারি একটি শর্তে? 
- শর্ত....? (অবাক হয়ে হয়ে) 
- হ্যা শর্ত! 
- কি... কি..কি.. সেই শর্ত? (তোতলাতে তোতলাতে)
- শর্তটা হলো তোমাকে এখন ক্লাসে সবার সামনে একটা গান বলতে হবে যদি গান গাও তাহলে বসতে দিতে পারি! 
- গা গা গা গান....? পারব না বলতে?
- তাহলে বসতে ও যে দিবো না। আর এর পরের ক্লাসের শিক্ষক কে বলে দিয়ে যাবো যেনো তার ক্লাসেও দাড়িয়ে রাখে। 
- কিইইইইইইইই...? 
- হ্যা......! 

..... মৃনাল ভিতরে ভিতরে রাগে ফুলছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। কারন মায়ের উপর কথা বলার সাধ্য নেই মৃনালের। মৃনাল মনে মনে ভাবছে যদি গান না বলি তাহলে তো এই ক্লাসের আছে এখন ১৫ মিনিট আর এর পরের টা ৫০ মিনিট মোট ৬৫ মিনিট। এই ৬৫ মিনিট দাড়িয়ে তাও আবার কান ধরে থাকলে তো অবস্থা পুরাই কেরোসিন হয়ে যাবে আমার। তার থেকে বরং গান ই গাওয়া টা ভালো হবে। 
মৃনালের মনে দ্বিধাবোধ কাজ করছে কারন এর আগে মনে মনে গান গেয়েছিলো এমন ক্লাসে সবার সামনে না।
তাই না জানি কেমন হবে গান আর যদি ভালো না হয় সবাই কেমন মনে করবে এসব ভাবছে মৃনাল এমন সবাই ছাত্র - ছত্রীরা বলে উঠলেন......

- কি হলো গাওয়া শুরু করো.... (সকল শিক্ষার্থী একসাথে বলল)
মৃনাল তার মায়ের দিকে একটি বার তাকালো দেখল তার মা একটু মুচকি মুচকি হাসছে। মৃনাল কে প্লানিং করে এই গান গাওয়ার ফাঁদে ফেলছে তার মা। কারন বাসায় থাকতে গান বলতে বলাতে মৃনাল না বোধক বাক্য ছাড়া হ্যা বোধক বাক্য বলেনি। 
- কি হলো গাও...? (ম্যাডাম)
এবার মৃনাল গানটা শুরু করে দিলো...

....... ও মশা ও মশা রে তুও অপরাধী রে আমার যত্নে তৈরী রক্ত গুলা দে ফিরাইয়া দে আমার রক্তের সাথে খেলা করার অধিকার দিলো কে মশা তুই বড়ো অপরাধী তোর ক্ষমা নাই রে.... 
.. এএএএএএ হে.হে. হে.হে.. হাহি হে.. উ উ উ লা লা লালা লালি রে। 
. রোজ রাইতে বেলা গুনগুনিয়ে মশা কানে কানে কয়.. তোর রক্তের স্বাদ বরই মিস্টি খেতে হবে ভাই... । 
.. আমি মশার কথা শুনে দিলাম মশাকে থাপড়ানী থাপড়ানী খাইয়া মশার জান হইলো কুরবানী, ,,,, এবার মশার বর আইসা আমার কানের কাছে কয় তুই মোর গফ রে মারছিস তোর জান করমু ক্ষয়। রে.রে.রে রেরে রে রারি রে... হা হা হা হা হাহা হা হাহি হে.... 
...... ও মশা ও মশা রে তুই অপরাধী রে আমার স্কিনের মাঝে কামর দেওয়ার অধীকার দিলো কে। আমার গালের রক্ত চুসে খাওয়ার অধীকার নাই রে কিন্তু তবুও আমার দেহের রক্ত চুসে খাইছিস রে। 
ও মশা ও মশা রে তুই অপরাধী রে আমার যত্নে তৈরী দেহের রক্ত পান করেছিস রে। 
আমার স্কিনের মাঝে ফুটা করার করার অধীকার দিলো কে মশা তুই বড় বেইমান তোর ক্ষমা নাই রে.......এএএএএএ
.. সমাপ্ত.....

..... মৃনাল গাওয়া শেষ করে চোখ দুটো খুলে দেখলো সবাইক কেমন হা কইরা তাকাই আছে মৃনালের দিকে। আর সবাই হো হো হো কইরা হেসে দিলো ক্লাসের ভিতর। 
আর সবথেকে বেশি হাসলো তো ক্লাসের ম্যাডাম কারন এটা কোন গান বলছে মৃনাল মশার গান। আর এই গান শুনে কি কেউ না হেসে থাকতে পারে বলুন। আপনারা ও হেসেছেন বুঝি হাসলে ও সমস্যা নেই। 
মৃনাল কি বলবে বুঝতে পারছে না। মনে মনে ভাবলো আমার গাওয়া টা কি খুব পঁচা হইছে। 

..... এদিকে তুতুল কেঁদেই চলেছে আর তার বাবা মা ও কাঁদছে । 
এমন সময় টিভি তে দেখতে পেলো যে তুতুলের কান্নার রহস্য কারন সব কিছু দেখাচ্ছে টিভিতে। মৃনালের সামনে কান ধরে যখন সরি বলছে আর মৃনাল তার পাশ কেটে চলে গিয়েছে তখন এই পুরো অংশ টা কেউ ভিডিও করে ফেলেছে আর চ্যানেলে দিয়ে হেডলাইন করেছে...
.... এম পির মেয়ে একটা সাধারন ছেলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে কিন্তু ছেলেটি ক্ষমা না করাতে কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছে। 
.... এতোক্ষনে সবাই বিষয় টা বুঝতে পেরেছে। এই সব দেখে তুতুলের বাবা ও তার ভাইয়া প্রচন্ড রকম রেগে গেছে।
- কি ঐ ছেলের এত্ত বড় সাহস আমার বোনের সাথে এমন ব্যাবহার করে ওরে তো আমি..... ( তুতুলের ভাইয়া জয় অনেক রেগে)
- ভাইয়া প্লিজ কিছু করতে হবে না ছেড়ে দাও ওকে? (তুতুল)
- কি বলছিস এসব তুই? তোর চোখে জল এনেছে তাই না এবার আমিও ওর চোখ ই তুলে ফেলব। বাবা তুমি শুধু একবার বলো আমাকে আমি বাকিটা দেখে নিচ্ছি..? (জয়)

.... তুতুলের বাবা জয় কে বলল ঐ ছেলেকে মারতে। কারন ঐ ছেলের কারনে এতক্ষন থেকে তুতুল কান্না করছে। 
তুতুল বলছে....
- বাবা...? ভাইয়া প্লিজ আমার কথা টা একবার শুনো। ঐ ছেলেকে তোমরা কিচ্ছু....... ( পুরোটা না বলতেই অধরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে)
.... কিছু লোক নিয়ে সোজা কলেজে চলে গেলো তুতুলের ভাইয়া জয়। আর ক্লাসের ভিতর এখন ও মৃনাল ঐভাবে দাড়িয়ে আছে গান গাওয়ার পর। জয় মৃনালের জামা টেনে ধরে গাড়িতে করে মৃনাল কে নিয়ে গেলো। কেউ কিচ্ছু বলতে পারলো না মৃনালের মা এসব দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলো ক্লাসের ভিতর। আর সকল ছাত্র-ছাত্রী মৃনালের মার কাছে এগিয়ে গেলো। 

... মৃনাল কে সোজা তুতুলের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। জয় গিয়ে দেখলো গিয়ে দেখল তার বোন তুতুল সেন্সলেস হয়ে পরে আছে তার মায়ের কোলে।
আর তা মা কান্না করছে। জয় তুতুলের মুখে জল ছিটা দিলো আর তুতুল চোখ মেলে তাকালো। তুতুল চোখ মেলে তাকানোর পর দেখতে পেলো মৃনাল কে আর তা দেখে পুরো থমকে গেলো তুতুল। জয় বলল.......
- তুতুল বোন আমার এই ছেলের জন্য তুই কান্না করছিস তাই না। দ্যাখ কেমন শার্টের কলার চেপে কলেজ থেকে উঠাইয়ে নিয়ে আসছি? (মৃনাল কে দেখিয়ে বলল)
....... তুতুল মৃনালের দিকে তাকিয়ে দেখল ছেলেটা কেমন জানি করছে। মাথা টা নিচের দিকে করে আছে তুতুলের দিকে একটি বার ও তাকাচ্ছে না। আর দুইটা ছেলে মৃনালের শার্টের কলার এখন ও চেপে ধরে আছে।

... জয় মৃনালের চুলের মুঠি ধরে তুতুলের দিকে মুখ করালো আর বলল.......
- বল যে আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দিন? (জয় মৃনাল কে বলতে বলল)
-আমি তো কোন অপরাধ করিনি তাহলে আমি কেনো মাফ চাইবো? (মৃনাল)
- অপরাধ করিসনি মানে? তুই সব থেকে বড় অপরাধ করেছিস আমার বোন কে কাঁদিয়ে। ক্ষমা চাইবি না এবার বন্দুকের ট্রিগার টায় চাপ দিবো? ( মৃনালের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে)

তুতুল এসব নিজে চোখে দেখে তার ভাইয়া কে বলতে লাগল...
- ভাইয়া প্লিজ ওকে ছেড়ে দা.....? (পুরোটা না বলতেই)
- তুতুল তুই চুপ থাক? 
... ভাইয়ার কথা শুনে অধরা চুপ হয়ে গেলো। আর এদিকে মৃনালের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে তারা। কোন উপায় না পেয়ে মৃনাল বলল তুতুলকে......
- (কাঁদো কাঁদো গলায়) আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দিন আর এমন করব না কখনও...?

..... তুতুল মৃনালের কথার কোন উওর দিচ্ছে না পুরো স্তব্ধ হয়ে আছে। তুতুল ভাবছে দোষ করলাম আমি আর ক্ষমা চাচ্ছে অন্যজন। জয় দেখলো তার বোন ক্ষমা করেনি তাই মৃনাল কে আবার বলল...
- ঐ ভালো করে ক্ষমা চা? এমন ভাবে বলছিস আমার বোন কথাই বলছে না? (জয়)
এবার মৃনাল কেঁদে কেঁদে বলে ফেলল..?
- আমাকে ক্ষমা করে দিন ম্যাডাম? 
.....এবার তুতুল চাপা কন্ঠে বলল........?
... চলবে

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

No comments :

Post a Comment