Friday, October 26, 2018

অভিমানী ভালোবাসা পর্ব ৩

No comments

#অভিমানী__ভালোবাসা
#লেখাঃ_মৃনাল___
#পর্বঃ_৩য়__.......
.... তুতুল কাঁদতে কাঁদতে চাপা কন্ঠে বলল...
- ঠিক আছে । 
.... মৃনালকে তারা ছেড়ে দিলো আর মৃনাল বাসার উদ্দেশ্য যাত্রা করল। এদিকে তুতুল মনে মনে বলছে....
- ভাইয়া আজ তোমরা যেটা করলে মৃনালের সাথে সেটা মোটেও ভালো করলে না। এমনিতেই আমি অনেক বড় অপরাধী হয়ে আছি ওর কাছে আর আজকে যেটা হলো তার কোন ক্ষমা আছে বলে আমার মনে হয় না। ভাইয়া তোমাদের ক্ষমতা আছে বলেই যে কাউকে এমন করতে পারো না।
কথা গুলো মনে মনে বলল তুতুল আর চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু ঝরে পরল। 
কিছুক্ষন পর সব কিছু ঠিক হয়ে গেলো। কিন্তু তুতুলের মনের মাঝে যে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে সেই ঝড়ো হাওয়া কোনভাবেই থামছে না। মনে হচ্ছে হৃদয় টা ভেঙে চুড়ে খান খান হয়ে যাচ্ছে অনুতাপে। তুতুলের মনের কথা এমনিতেই ছেলেটা আমাকে ক্ষমা করেনি তার উপর আজ আমাদের বাসায় যা ঘটলো এখন ও আর ক্ষমা করবেই না। না না না এই অপরাধের বোঝা আমি মাথায় বয়ে বেরাতে পারব না। এমন নানান রকম কথা ভাবতে লাগলো তুতুল। 

... এদিকে মৃনাল তার বাসায় এসে গেছে তার মা তাকে দেখে দৌড়ে আসলো আর মৃনালের গালে হাত দিয়ে কাঁদতে লাগল তার মা। মায়ের কান্না দেখে মৃনাল বলল... 
- ঐ জানু তুমি না অনেক ভালো আর কিউটি তাহলে এভাবে কাঁদছো কেনো? (মৃনাল তার মা কে ভালোবেসে জানু আর কিউটি বলে ডাকে কারন তার মা নাকি সব মায়ের থেকে কিউট)
- বাবা তোর কিছু ক্ষতি করেনি তো ওরা? 
- আরে মা না কোন ক্ষতি করেনি আমার। আমার আবার কি ক্ষতি করবে?
- তাহলে কেনো ওরা তোকে এভাবে ধরে নিয়ে গেলো?
_.......? (নিশ্চুপ) 
.... মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে মৃনাল কিছুটা থমকে গেলো। ভাবছে কি উওর দিবো। 
- মা খুব খিদে পেয়েছে চলো তো খেতে দাও? 
- আগে আমার প্রশ্নের জবাব দে?
- আরে জানু আমার। কিচ্ছু না চলোতো?
- আরে আরে কি করছিস ছাড় বলছি ছাড় আমাকে? 
.... মৃনাল আর কোন কথা না বলে তার মাকে কোলে তুলে নিলো। আর তারপর ঘরে চলে গেলো মা কে নিয়ে। প্রায়ই তার মাকে কোলে তুলে মৃনাল। মৃনাল ও তার মা কে অনেক ভালোবাসে। মৃনাল তার মাকে খাটের পাশে বসালো আর তারপর মৃনাল খাটে শুয়ে পড়ল..... 
- কি হলো বসে আছো যে? (মৃনাল)
- তো কি করব? (মা)
- আরে কান্না টা বন্ধ করে যাও খাবার নিয়ে আসো আর আমাকে খাইয়ে দাও? 
... মৃনালের মা উঠে খাবার আনতে গেলেন রান্না ঘরে। আর মৃনাল শুয়ে শুয়ে মেয়েটার কথা ভাবছে মানে তুতুলের । 
মৃনাল নিজেকে একটু অপরাধী মনে করল। মৃনাল ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে তুতুলের দিকে আর তার চোখ লাল হয়েছে কাঁদতে কাঁদতে। 
মৃনাল ভাবছে একটা মেয়ে এতো সুন্দর হয় কি করে। সে আমার দিকে তাকালে আমার এমন হয় কেনো। আমি আবার মেয়েটার প্রেমে ট্রেমে পরে গেলাম না তো? আরে না না এ কি সব ভাবছি আমি এ হতে পারে না। এমন সময় মৃনালের ভাবনার ইতি ঘটিয়ে দিলো তার মা.... 
- এই যে নিন হা করুন? আর কত খাইয়ে দিতে হবে আপনাকে? এবার একটা বিয়ে করে বউয়ের হাতে খাবেন? (মৃনালের মা)
- আচ্ছা মেয়েটা এতো সুন্দর কেনো? কি চোখ, কি তাকানোর চাহুনি, মনে হচ্ছে পরীইইইইইই...! 
- ঐ কি সব বাজে বকছিস? কোন মেয়ে কার কথা বলছিস? 
.... মায়ের কথা শুনে ঘোর কাটলো মৃনালের। মনে মনে বলছে এই রে কি হতে কি বলে ফেললাম আমি, তারপর তোতলাতে তোতলাতে বলল....
- না না মা কই কিচ্ছু নাতো! এমনি ই বললাম আর কি? 
- হইছে এবার নে হা কর আমার অনেক কাজ আছে? 
..... মৃনাল তার মায়ের হাতে খেতে লাগল আর শুধু মেয়েটার কথা ভাবতে লাগলো।
তুতুল নিয়ে ভাবতে ভাবতে মায়ের হাতে কামর বসিয়ে দিলো মৃনাল....
- ঐ কি হয়েছে তোর? হাতে কামর দিলি কেনো? 
- না না আসোলে কেমন করে যে কামর দিলাম...... ! (একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল)

.... রাতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছে মৃনাল এমন সময় একটা অপরিচিতা একাউন্ট হতে রিকুয়েস্ট আসলো মৃনালের কাছে। মৃনাল ভাবছে এটা কি গ্রহন করব নাকি করব না শেষে গ্রহন ই করল। আর সাথে সাথে মেসেজ আসলো.....
- i am so sorry 
মৃনাল রিপ্লে করল......
- but why? kno sorry bolchen? r apni e ba k? 
- ami tutul. 
...... যখন মেয়েটি বলল আমি তুতুল তারপর সাথে সাথে মেয়েটিকে ব্লক করলো মৃনাল। আর ঘুমিয়ে গেলো। 
তুতুল ওপাশ থেকে মোবাইলের স্কিনের উপর তাকালো আর দেখতে পেলো তাতে লেখা।
.. You can't reply to this conversation. Learn More.
....তুতুলের আর বুঝতে বাকি রইলো যে আমাকে ব্লক করা হয়েছে। তুতুলের অনেক খারাপ লাগলো মৃনাল ব্লক করাতে। সে নিজেকে আরো বেশি অপরাধী মনে করলো? তুতুল রাতে জেগে জেগে ভাবছে কি করা যায় অনেক চিন্তাধারার পর তুতুল সিদ্ধান্ত নিলো কলেজ চেঞ্জ করার। মৃনাল যে কলেজে পরে সেই কলেজে পড়ার তবেই এর কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে। বাবা মাকে অনেক বোঝানোর পর রাজি হলেন। আর সব কিছু ঠিক ঠাক ভাবে কাজ করলো তুতুল। এখন শুধু কিছু সময় অপেক্ষা.... 

..... ৭ দিন পর...... 
......প্রতিদিনের মতো আজকে ও মৃনাল ক্লাসে দাড়িয়ে আছেন। এটা প্রতিদিনের রুটিন । দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছেন মেয়টাকে কি ব্লক করাটা আমার ঠিক হয়েছে। সেদিনের পর আমার কাছে ও আসেনি আর কোন প্রকার যোগাযোগ ই করেনি। এসব ভাবতে লাগল আনমনে এমন সময় কে যেনো বলে উঠল....
- আসতে পারি ম্যাডাম?
.... মেয়েলি কন্ঠ আর কন্ঠা টা ও কেমন চেনা চেনা লাগছে মৃনালের। তারপর দরজার সামনে চোখ মেলে মৃনাল হাজার ভোল্টেজের ইলেকট্রিক শকড খেলো। আর বলছে মনে মনে
- আরে এ তো সেই মেয়েটা যে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলো আর পরে আমি ক্ষমা চেয়েছি। এমন সময় ম্যাডাম বলে উঠলেন....
- জ্বি আসুন? 
...... তুতুল ক্লাসের ভিতর প্রবেশ করলো আর ব্রেঞ্চে গিয়ে বসল। ক্লাসের সকলে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে তুতুলের দিকে শুধু মাত্র মৃনাল ই তাকাচ্ছে না তার দিকে। সত্যি বলতে তুতুল অনেক সুন্দর দেখতে যে কোন ছেলে পাগল হয়ে যাবে। ক্লাসের বাকি মেয়েরাও মনে হয় তার উপর ক্রাশ খেয়েছে নাহলে এভাবে তাকিয়ে থাকে? ক্লাসের ম্যাডাম বিষয়টা বুঝতে পেরে বললেন
- ব্লাকবোর্ড এর দিকে তাকাও? (সবাইকে বলল)
.... ম্যাডামের কথা শুনে সবাই তাকালো ব্লাকবোর্ড এর দিকে। তুতুলের মাথায় একটা জিনিস আসছে না আর তা হলো ক্লাসের সবাই বসে ক্লাস করছে আর মৃনাল ই দাড়িয়ে। আর মনে মনে বলল সেদিন ক্লাসে এসেও দেখছি দাড়িয়ে থাকতে আর আজকেও দেখতেছি দাড়িয়ে থাকতে ব্যাপার টা কি পায়ে আবার কোন সমস্যা নেই তো ছেলেটার আরে না না পায়ে সমস্যা হলে তো হাটতেই পারবে না আর ও তো হাটতে ও পারে তাহলে কাহিনি টা কি? 
.. তুতুল মৃনালের দিকে বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে আর মৃনাল সেটা লক্ষ্য করে অনেক লজ্জা বোধ করছে। কারন সে ই দাড়িয়ে আছে দেখে। 
.... এদিকে ম্যাডাম ভাবছেন কি ব্যাপার মৃনাল তো প্রতিদিন ই ৩০ মিনিট যাওয়ার পর আমাকে বসার জন্য বলে আর আজ ৪০ মিনিট হয়ে গেলো তবুও বসছে না। 
তারপর ম্যাডাম মৃনাল কে বসতে বলল আর মৃনাল ও ভদ্র ছেলের মতো বসে পরল..... 
। 
বলতে গেলে একরকম নিস্তব্ধতায় ক্লাস শেষ হলো আর মৃনাল তো একবারেই পিন ড্রপ সাইলেন্ট হয়ে ছিলো। 
... ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে মৃনাল ম্যাডামের পিছু পিছু গেলো আর তুতুল মৃনাল কে ফলো করলো। মৃনাল পিছন থেকে ডাক দিলো ম্যাডাম অথ্যাৎ তার মা কে....
- মা....? (মৃনাল)
.... মৃনালের মা পিছন ফিরে বলল....? 
- কি হয়েছে? 
- কিছু টাকা হবে?
- কেনো টাকা কি করবি?
- নানা মানে লাগতো!
- কারো প্রেমে পড়লি না তো আবার যে এমন ভাবে এখানে টাকা চাচ্ছিস? 
-ঐ জানু প্রেমে পরেছি তো?
- তা শুনি মেয়েটা কে?
- কে আবার আমি যাকে জানু বলে ডাকি তার? 
- হইছে আর আমার প্রেমে পড়তে হবে না পারলে কোন সুন্দরীর প্রেমে পর? 
- তোমার মতো সুন্দরী একটাও নেই তাই তো তোমার প্রমে পরেছি? 

.... মৃনালের মা মৃনালের কথা শুনে বলছে পাগল ছেলে একটা। মৃনালের মা ব্যাগের ভিতর দেখলো একটা ই মাত্র ৫০০ টাকার নোট আছে আর সেটা মৃনালের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল...... 
- এই নে ধর? 
- আমার এতো লাগবে না ৫০ টাকা হলেই হবে? 
- আচ্ছা এইটা রাখ তোর হাতখরচ চালিয়ে নিস?
- মা তুমি আমাকে ৫০ টাকা দাও?
- বাবা শোন না বলছিলাম আমার কাছে খুচরা নেই। তুই পুরোটাই রাখ তোর কাছে?
....... মৃনাল তার মায়ের কথা শুনে মায়ের হাত থেকে ব্যাগ টা কেড়ে নিয়ে দেখল ব্যাগে আর কোন টাকা নেই। এই নোটটাই ছিলো শুধু আর সেটাই এগিয়ে দিয়েছে.....
- মা তোমার কাছে তো টাকা নেই আর তবুও তুমি শেষ টাকাটা আমায় দিয়ে দিতে চাইলা? 
- আরে পাগল তুই তো আমার সব কিছু তোকে দিবো না তো কাকে দিবো বল? 
- না মা আমি এ টাকা নিতে পারব না। এই টাকা নিলে তুমি বাসায় যাওয়ার টাকা পাবে না। তার থেকে বরং আমি হেটে হেটে চলে যাচ্ছি। 
- আরে বাবা শোননা আমার কথা? 
- না মা আমি কিছু শুনতে চাই না।
..... মৃনাল তার মাকে কথাটা বলে মায়ের ব্যাগে টাকাটা রেখে চলে আসল। তার মা পিছন থেকে ডাকছে কিন্তু মায়ের কথা না শুনে হেটে চলে আসলো। মা এবং ছেলের সব কান্ড দেখে ফেলল তুতুল আর মনে মনে বলছে আমি না জেনে খুব বড় ভুল করছি মৃনাল যে ম্যাডামের ছেলে আগে জানতাম না। আর এখন ম্যাডাম কি আমায় ক্ষমা করবে নানান রকম প্রশ্ন মাথায় তুতুলের। 

তুতুল দেখলো মৃনাল চলে যাচ্ছে হেটে হেটে তাই দৌড়ে মৃনালের সামনে গিয়ে দাড়ালো। 
- এই শুনো? (তুতুল)
- দেখুন আপনি করে বললে খুশি হবো? কি বলবেন তারাতারি বলুন আমার অনেকটা পথ যেতে হবে! (মৃনাল)
- বলছিলাম কি চলোনা তোমাকে আমি নামিয়ে দেই আমার গাড়িতে করে? 
- সরি 
- কেনো?
- লাগবে না আমাকে ড্রপ করতে আমি ছোট খোকা না যে আমাকে ড্রপ করে দিতে হবে! সরুন সামনে থেকে আমার? 
...... কথাটা বলেই মৃনাল তুতুলের পাশ দিয়ে জোরে জোরে হাটা শুরু করে দিলো। মৃনাল রাস্তা দিয়ে হাটছে এমন সময়....
পিপিপ....পিপ... পিপিপ...পিপ... পিছন থেকে গাড়ীর হর্ণ এর শব্দ শুনতে পাচ্ছে আর রাস্তার পাশ দিয়ে গেলো। 
আবার কিছুক্ষন পর একই ভাবে হর্ণ বাজলো। এবার মৃনাল ভাবলো কি ব্যাপার আমি তো সাইট দিলাম তবুও এমন ভাবে হর্ণ বাজায় কেনো? মৃনাল পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল আর চমকে উঠলো কারন সে আর কেউ নয় তুতুল ই পিছন থেকে বার বার হর্ণ বাজিয়ে মৃনাল কে বিরক্ত করছে। মৃনাল রাগে কটমট করল তুতুল কে দেখে কিন্তু কিছু বলল না। এবার মৃনাল হাটার বদলে জোরে দিলো দৌড়ানি তুতুলের ভয়ে কিন্তু কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধা হয়। তুতুল ও গাড়ী চালানোর স্পিড বাড়িয়ে দিলো আর মৃনালের পিছু পিছু ছুটল এবং নন স্টপ হর্ণ বাজিয়েই যাচ্ছে আর তার হর্নের শব্দে রাস্তার পাশের লোক ও কানে আঙুল দিয়ে রইলো। মৃনাল খুব জোরে দৌড়াচ্ছে আর তুতুল তার পিছু পিছু যাচ্ছে। এবার মৃনাল একটু থামলো আর জোরে জোরে হাফাতে লাগল বুকে হাত দিয়ে আর হাফাবেই না কেনো কারন যে জোরে দৌড়ানি দিছে। মৃনাল থামার পর তুতুল ও গাড়ী স্টপ করল। মৃনাল খুব রেগে গেলো তুতুলের উপর আর তুতুলের কাছে গিয়ে বলল......
- এই যে ম্যাডাম কি সমস্যা আপনার? তখন থেকে পিপিপ... পিপি দিয়েই যাচ্ছেন দিয়েই যাচ্ছেন তাও আবার নন স্টপ ভাবে? 
- আমার গাড়ী আমি পিপিপ আমি বাজাতেই পারি তাতে তোমার কি?
- আচ্ছা আপনি কি চাচ্ছেন বলুনতো?
- লিফট....! 
- আমি কাউকে কিছু দিতে পারব না সরি!
- আরে আমি নিবো না আমি আপনাকে লিফট দিবো আর না হলে পিপিপ বাজাতেই থাকব কিন্তু?
- আমি কারো কাছ থেকে লিফট নিতে পারব না!
....... মৃনাল তারপর আশে পাশের কিছু লোক ডাকলো আর ঘটনা খুলে বলল। লোকগুলো যখন ই তুতুল কে দেখলো আর সবাই পালিয়ে গেলো। মৃনাল এর কিছুই বুঝতে পার না। আবার হাটা শুরু করলো মৃনাল আর তুতুল ঠিক একই ভাবে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এবার মৃনাল আর সহ্য করতে না পেরে কানের ভিতর দুই আঙুল দিয়ে আবার দিলো দৌড়। আর দৌড়াতে দৌড়াতে বাসায় এসে পৌছালো মৃনাল। বাসায় গিয়ে সোজা ধপ করে বিছানায় পড়ে গেলো আর বলতে লাগল বাপ্রে বাপ এ মেয়ে না গুন্ডী রে বাবা কেউ এমন করে নাকি। এই কাজ আমি করলে ইভিটিজিং এর নাম করে এক কোটি কেস বানানো হতো অথচ কেউ কিছু না বলে পালিয়ে গেলো। 

.... রাতের খাওয়া করে মৃনাল শুয়ে শুয়ে আজ রাস্তায় যা ঘটে গেলো তা ভাবছে আনমনে অমনি ধপাস করে একটা শব্দ হলো ঘরের ভিতর। মৃনাল লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ল আর একজন কে দেখে আউউউউউউ করে চিতকার করে দিলো মৃনালের চিৎকার শুনে তার মা দৌড়ে ঘরের দরজার কাছে এলো। আর একটি চিৎকার দিবে এমন সময় তুতুল এসে মৃনালের মুখ চেপে ধরলো....
- খবরদার চিৎকার দিবে তো তোমাকে ফাঁসিয়ে দিবো আর বলব তুমি আমাকে জোর করে এতো রাতে তোমার ঘরে নিয়ে আসছো....? (তুতুল) 
মৃনালের মুখ চেপে ধরে আছে তুতুল আর মৃনালের মা ঘরের বাইরে থেকে মৃনাল কে ডাক দিচ্ছে কিন্তু মৃনাল কোন কথা বলতে পারছে না। 
- আমি তোমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিচ্ছি তোমার মা কে বলবা ঘরে কিচ্ছু হয়নি বলবা খারাপ স্বপ্ন দেখেনি যদি উল্টা পাল্টা কিছু বলো তাহলে খবর আছে? (তুতুল)
.... তুতুলের এমন কথা শুনে কি করবে বুঝতে পারলো না মৃনাল তারপর বলল...
- মা কি কি কিচ্ছু হয়নি আমার আমি ঠি ঠি ঠি ঠিক আছি। খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলাম তা তা তাই এমন চিৎকার দিছি! (মৃনাল কথাগুলা ঘরের ভিতর থেকে তার মা কে বলল)
- বাবা তুই একটু দরজা টা খোল প্লিজ আমি একটি বার তোকে দেখেই চলে যাবো আমার কেমন জানি লাগছে মৃনাল প্লিজ খোল না বাবা দরজা টা একটু? (মৃনালের বলল মৃনাল কে কথাগুলা)
..... তুতুল মনে মনে ভাবলো যদি মৃনালের মা ঘরে এখন এসে পরে তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে আর আমি ধরা পরে যাবো। না যে করেই হোক সামালাতে হবে। 
- ঐ খবরদার যদি দরজা খুলছো তাহলে মজা কাকে বলে বুঝিয়ে দিবো! (তুতুল)
- প্লিজ আপনি আমার ঘর থেকে চলে যান। আমি ঘরের দরজা খুলে মায়ের কাছে যাবো?
- ঐ তুমি কি ছোট খোকা নাকি যে মায়ের কাছে থাকতে হবে। যা বলছি করবি নাকি আমি কিছু করব হু? (অনেক রাগি ভাবে বলল)
...... এদিকে মৃনালের মা ঘরের বাইরে থেকে ভাবছে কি হলো এখনো ঘরের দরজা খুলছে না কেনো? কি হয়েছে ঘরে
- মৃনাল ঐ মৃনাল বাবা দরজা টা খোল না? আমার ভালো লাগছে না বাবা তোকে একটু দেখব আর চলে যাবো? কার সাথে ফিসফিস করে কথা বলছিস? (মা)
.... মৃনাল মনে মনে বলছে এবার বুঝি ধরা খাই...
- আ আ আ না মা কই কারো সাথে কথা বলছি না তো? আমি একাই আছি ঘরের মধ্যে আর কেউ নাই। (মৃনাল)
- কেউ নাই তাহলে তোর দরজা খুলতে কি সমস্যা? দরজা খুলবি নাকি দরজা ভেঙে ফেলব ?
..... মৃনাল ভাবছে এই রে এবার আমি শেষ মা তো রেগে গেছে এখন কি করি।
- ঐ মেয়ে তোমার জন্য আজ আমার এই অবস্থা? কেনো আসতে গেলে আমার ঘরে এতো রাতে? (মৃনাল তুতুল কে বলল)
- বা রে আসবো না কেনো? আমাকে এতোদিন ঘরে ঘোরাচ্ছো কেনো? (তুতুল)
- আমি কি করলাম সাথে? প্লিজ আপনি চলে যান নয়তো কোথাও লুকিয়ে থাকুন। মা যে পরিমান রেগে গেছে তাতে দরজা খুলতেই হবে! 
- আমি কোথাও লুকাতে পারব না দরকার হলে তুমি লুকাবে? 
- প্লিজ আপনি আমার সাথে এমন করবেন না। আপনাকে হাত জোর করে বলছি আপনি চলে যান? 
- না আমি যাবো না এখান থেকে! (অনেকটা জেদ নিয়ে বলল তুতুল)
.... মৃনালের মা আবার বলে উঠলেন...
- মৃনাল কি হলো দরজা টা খলছিস না কেনো? ঠক ঠক ঠক.....? (দরজায় ঠোকা দিয়ে বলছে)
- আপনি প্লিজ কোথাও লুকান নাহলে আমি শেষ হয়ে যাবো আজ? (মৃনাল অনেক অনুরোধ করে বলছে তুতুল কে)
..... এবার তুতুল মৃনালের কথা মত ঘাটের নিচে লুকিয়ে পড়ল.... । আর মৃনাল গিয়ে ঘরের দরজা খুলে দিলো মৃনালের মা ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো। 
- কিরে এতোক্ষন লাগে তোর ঘরের দরজা খুলতে? আর কার সাথে এমন ফিসফিস করে কথা বললি? (মৃনালের মা)
- না না ক ক কই কারো সাথে না। আমিতো একা একা কথা বললাম আর কি? তুমি দেখো কে কে কেউ নেই ঘরে? (তোতলাতে তোতলাতে বলল মৃনাল)
- কিরে তোর হয়েছি কি? তুই তো কখনো তোতলাস না আজ এমন কি হলো যে তোতলাচ্ছিস? 
- না মা আমার কিছু হয়নি তুমি যাওতো আমি ঘুমাবো? 

.... মা ছেলের সব কথা তুতুল ঘাটের তলা থেকে শুনছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। 
- তোর ঘরে কেউ একজন আছে আমি একটু খুজে দেখি? 
- মা কেউ নেই আমার ঘরে বিশ্বাস করো?
- আমি খুজলে তোর কোন সমস্যা? 
- আ আ না মানে আমার আবার কি কি কি সমস্যা! 
- আচ্ছা ঘাটের নিচে দেখিতো কাউকে পাই কি না? 
........ মায়ের মুখে এমন কথা শুনে মৃনালের হার্ট আট্যাক করার মতো অবস্থা। আর এদিকে তুতুল ও মনে মনে বলছে আজ আমিও গেলাম। মৃনাল ভাবছে এখন যদি মা তুতুল কে দেখে ফেলে তাহলে তো আমাকে.....? শালা তুতুল টা ও আসার আর সময় পেলো না রাতের মধ্যে আসতে হলো....! 
- না না মা খাটের নিচে কেউ নেই তো? 
- কেউ নেই তাহলে আমি দেখলে কি সমস্যা তোর?
- না না না স স সমস্যা নেই তো। বলছিলাম কি তুমি যাও আমি ঘুমাবো?
- কোন ঘুমা ঘুমি নেই আজ মা ছেলে সারারাত গল্প করব!
- কিইইইইইই( অবাক হয়ে)
- হ্যা গল্প। আচ্ছা সর আগে খুজে দেখি কে আসছিলো তোর ঘরে । 
........ মৃনালের মা মৃনালের কোন রকম কথা না শুনে খাটের নিচে লাইট মেরে দেখতে লাগলো আর মৃনাল আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া করে একটা উয়া বড় চিৎকার দিলো।
আর মৃনালের মা খাটের নিচে দেখলো........?

চলবে...?

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। 

No comments :

Post a Comment