মি.ক্ষ্যাত
-(২য় পর্ব)
-
রাতে বসে বসে ফোনে গেমস খেলছিলাম এমন সময় অবনীর ফোন।আমি জানতাম ও ফোন দিবে।ভেবেছিলাম আরো আগে ফোন দিবে।
আমি:-হ্যা বল।
অবনী:-কইরে তুই?তোর আজ আসার কথা ছিলো আসলিনা কেনো?
:-সময় পাইনি তাই।
:-তোর এত কিসের কাজ?
:-আছে।
:-আমি কিছু জানিনা,সকালে ১০মধ্যে আমাদের বাসায় চলে আসবি নয়তো তোর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ শেষ।আর আঙ্কেল আন্টিকে বিয়ের আগের দিন আসতে বলবি।
:-আমি যেতে পারবোনা।আমার কাজ আছে।আব্বু আম্মুরা সবাই যাবে।
:-তোর কাজে গুষ্টি কিলাই।তুই কালকেই আসবি নয়তো তোর সাথে আর কোনদিন কথা বলবোনা আমি।
:-সকাল হোক তারপর দেখা যাবে।
:-তুই এমন করছিস কেনো আমার সাথে?
:-আমি আবার কি করলাম?
:-কী করলি বুঝিস নাই তুই?আজ দুইটা দিন আমাকে ইগনোর করছিস।সারাদিনে কম করে হলেও আমাকে ১০বার ফোন করতি অথচ এই ২দিনে একবারো ফোন করিস নি।কী হয়েছে তোর?
আমি চুপ করে রইলাম।অবনীর কথাগুলো সত্যি।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে অবনী আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবলোলো নারে।খুব ভালোবাসি তোকে।কিন্তু চাইলেই আমরা সব সময় সব কথা বলতে পারিনা।
:-চুপ করে আছিস কেনো?
:-আম্মু ডাকছে পরে কথা বলবো।
অবনীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।আজ দুদিন কী হয়েছে বুঝতে পারছিনা,অবনীর সাথে কথা বলতে গেলেই গলাটা ভারি হয়ে আসছে।নিজেকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছি অবনী আমার জন্য না তবুও এই মনটা কিছুতেই মানছেনা।অবনী হলো রাজকন্যা, ওকে একজন রাজকুমারের সাথেই মানায়।আমিতো মি.ক্ষ্যাত।আমার মত ক্ষ্যাতমার্কা ছেলেকে অবনীর সাথে মানায় না।
এসব ভাবতে ভাবতে আবার অবনীর নম্বর থেকে ফোন আসলো।রিচিভ করার সাহস হচ্ছেনা। আমি জানি ফোন রিচিভ করলে অবনী অনেক প্রশ্ন করবে যার উওর দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।আজ নিজেকে বড্ড অযোগ্য মানুষ। মনে হচ্ছে।কেনো যে আমি বড়লোক ঘরে জন্ন নিলাম না।আজ যদি ভালো ঘরের সন্তান হতান তাহলে অবনীকে হারাতে হতোনা।
একের পর এক ফোন কল এসেই যাচ্ছে।যত সময় ফোন না ধরবো তত সময় ফোন দিতেই থাকবে তাই ফেনটা অফ করে রাখলাম।আমি চাইনা অবনী বুঝোক ওর প্রতি আমি দুর্বল।রাতে অনেক কান্না করলাম।কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই।
সকালে দরজায় ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৮টার একটু বেশি বাজে।বিছানা ছেড়ে ওঠে দরজা খুললাম।দরজা খুলতেই আমার গালে ঠাস করে কেউ ১টা থাপ্পর মারলো।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরেকটা থাপ্পর পড়লো আমার গালে।অবনীকে এত সকালে আমার সামনে দেখবো ভাবিনি।
অবনী:-এই কুওা তোকে আমি কতবার ফোন দিয়েছি?ফোন ধরিসনি ভালো কথা কিন্তু ফোন অফ করেছিস কেনো?
আমি:-আমার ফোন আমি অফ করবো তাতে কার কি।
:-আরেকটা কথা বললে থাপ্পর দিয়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো।এখনি রেডি হ।আমার সাথে করে তোকে নিয়ে যাবো।
:-আমার কাজ আছে,আমি যেতে পারবোনা।
:-তোর কোনো কাজ করতে হবেনা।তুই এখনি আমার সাথে যাবি।
:-বললাম না আমার কাজ আছে।
:-ঠিক আছে কর তুই তোর কাজ।মনে রাখিস তুই না গেলে আমার মরা মুখ দেখবি।
:-এখানে মরার কথা আসছে কেনো?
:-আমি কী করতে পারি সেটা তুই ভালো করেই জানিস।বাকিটা তোর ইচ্ছে।
:-ঠিক আছে তুই বস আমি রেডি হচ্ছি।
নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে যেতে হচ্ছে।আমি না গেলে অবনী নিজের ক্ষতি করতে এটা আমি শিউর।ও যা বলে তাই করে।
আমি রেডি হয়ে নিলাম।আব্বু আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অবনীর সাথে রওনা হলাম।অবনী ওদের কার নিয়ে এসেছে।ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে আমি আর অবনী পিছনের সিটে বসে আছি।অবনী কিছু বলছেনা আমিও বলছিনা।দুজনেই চুপ করে আছি।অবনীদের বাসা আসা পর্যন্ত কেউ কথা বলিনি।
অবনীদের বাসাটা খুব সুন্দর করে সাঁজানো হয়েছে।এই বাড়ির একমাএ মেয়ের বিয়ে বলে কথা।বিয়ের এখনো ৩দিন বাকি।এরই মধ্যে অনেকেই চলে এসেছে।যারা এসেছে তারা সম্ভবত অবনীদের কাছের আত্মীয়স্বজন।আমার সাথে ঘোরার মত এই বাসাতে কেউ নেই সম্ভবত। একা একা রুমে বসে ফেবু চালাচ্ছি।এখানে আসার পর অবনীর দেখা পাচ্ছিনা।সম্ভবত বিজি আছে।
২দিন পর
আজকের রাতটা পার হলেই অবনী অন্যকারো ঘরের বউ হয়ে যাবে।এই কয়দিন অবনীর সাথে অনেক কেনাকাটা করেছি।অবনীর সব দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে দিয়েছে ওর বাসার লোকজন।বুকে কষ্ট চেপে সব কাজ করছি আমি।ঘড়ির কাটায় ১টা বেজে ৪৫ মিনিট।বিয়ে বাড়ি হলেও এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে।শুধুমাএ আমার চোখে ঘুম নেই।ঘুম থাকবেই কী করে ঘুমটাতো অবনী কেড়ে নিয়েছে।অবনী আমার সামনে অন্যকারো হয়ে এটা মন থেকে মেনে নিতে পারছিনা।
সারারাত ঘুম হলোনা।খুব ভোরে একটা কাগজে চিঠি লিখলাম।আমি এখান থেকে চলে যাবো।অবনীর বিয়ে চোখের সামনে দেখতে পারবোনা।
প্রিয় অবনী
প্রথমেই নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানাই।দোয়া করি তোদের বিবাহিত জীবন সুখের হোক।তোকে আজ কিছু কথা না বলে পারছিনা। ৪টি বছর ধরে এই কথাটা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা।তোকে আকার ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছি অনেক কিন্তু তুই বুঝিস নি।জানিস ভার্সিটির ছেলে মেয়েরা যখন আমাকে ক্ষেত বলতো তখন খুব খারাপ লাগতো কিন্তু পরোক্ষণেই তোর কথা মনে পড়লে মনটা ভালো হয়ে যেতো।আমি জানিনা তুই কখনো আমাকে ফ্রেন্ডের থেকে বেশি কিছু ভেবেছিস কিনা কিন্তু আমি ভেবেছি।তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম।মাঝখানে রুমান এসে সব এলোমেলো করে দিলো।হ্যা আমি তোকে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি।জানি আমার ভালোবাসা আজ মূল্যহীন।অবশ্য আমার মত ক্ষ্যাতমার্কা ছেলের জন্য ভালোবাসা না।আর যেখানে তোর মত পরী আছে সেখানেতো আমার চান্সই নেই।রুমান আর তোকে খুব ভালো মানাবে।আর মাএ কয়েক ঘন্টা পরেই তুই অন্যকারো জীবন সঙ্গী হয়ে যাবি।দোয়া করি সুখি হ।আমাকে ক্ষমা করে দিস।আমি চলে যাচ্ছি।জানিনা তোর সাথে আর কখনো দেখা হবে কিনা।ভালো থাকিস।অনেককিছু বলার কিন্তু বলা হলোনা।আর কিছুক্ষণ পরে ভোর হয়ে যাবে।সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠলে আমি যেতে পারবোনা।তাই সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগেই চলে যাচ্ছি।
ইতি
মি.ক্ষ্যাত
চিঠিটা টেবিলের উপর রেখে দিলাম।তারপর আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসলাম।রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।এখনো ভোরের আলো ভালোভাবে ফোটেনি।লোকজনের চলাচল খুব কম।মাঝে মধ্যে দুএকজনকে দেখা যাচ্ছে।সম্ভবত তারা নামাজে যাচ্ছে।আমি হাঁটছি।গন্তব্য কোথায় জানিনা।বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছেনা।হাঁটতে হাঁটতে ট্রেন স্টেশনে চলে আসলাম।সকালের ট্রেন এখনো অনেক দেরী।ভাবছি বাসায় যাবোনা।কয়েকদিনের জন্য দুরে লুকিয়ে থাকবো।নানুদের বাসায় যাওয়া যায়।ব্যস্ততার কারণে অনেকদিন যাওয়া হয়না।আজ না জানিয়ে গিয়ে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো।ট্রেন স্টেশন থেকে আবার হাঁটা শুরু করলাম।এবার উদ্দেশ্য বাস স্টপ।আমার নানুদের বাসায় যেতে হলে বাসে করেই যেতে হতে।
বাস স্টপে আসতে আসতে অনেকটা সকাল হয়ে গেলো।অনেকটা পথে হেঁটেছি।তা ৩থেকে ৪ কিলোমিটারতো হবেই।অনেক ক্লান্ত লাগছে। একটা বেন্চের উপর বসে পড়লাম।
৮টার সময় বাস আসলো।বাসে ওঠে পড়লাম।এখন গন্তব্য নানু বাড়ি।বাসে ওঠেই সিট পেয়েছি।সকাল সকাল বাসগুলোতে একটু ভিড় কম থাকে।সবথেকে ভালো লাগছে জানালার কাছে সিট পাওয়াতে।
বাসের জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখছি।মাঝে মাঝে খোলা মাঠ মাঝে মাঝে বাড়ি আবার কোথাও কোথাও ছোট বিল,সেই বিলে ফুটে আছে সাদা শাপলা।অবনীর শাপলা ফুল খুব প্রিয়ে ছিলো।অবনী বলতো শাপলা ফুলেন ঘ্রেন নিলে নাকি মনটা ফ্রেশ হয়ে যায়।খুব ইচ্ছে আছে একদিন অবনীর কথা বাস্তবে প্রমাণ করে দেখবো।
""অবনী বাসের জানালার পাশে বসে আছে।আমি ওর পাশে বসে আছি। বাইরে থেকে বাতাস এসে অবনীর চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে।অবনী ওর অবাধ্য চুলগুলোকে বারবার কানে গুজে দিচ্ছে কিন্তু থাকছেনা।আমি এসব থেকে মিটমিট করে হাসছি।অবনী আমাকে হাসতে দেখে রাগী লুক নিয়ে বললো
:-চুপ করো নয়তো মুখে জ্যান্ত টিকটিকি ছেড়ে দিবো।
আমি অবনীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।আমাকে চুপ হয়ে যেতে দেখে অবনী ফিক করে হেসে ওঠলো।মাতাল করা সেই হাসি।আমি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি অবনীর দিকে""""
ভাইয়া টিকিট দেন।
কারো ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।হুস ফিরতেই আমার পাশে অবনীকে খুজতে লাগলাম।কিন্তু পেলাম না।পকেট থেকে টিকিট বের করে হেলপারের হাতে ধরিয়ে দিলাম।এখন ইচ্ছে করছে বাস হেল্পারের নাক ফাটিয়ে দিতে।আমার এত সুন্দর স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো।
বাসের হেলপারের মত আমার পকেটে থাকা ফোনটাও চিল্লানি শুরু করেছে।পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি অবনী ফোন দিয়েছে।আমি ফোন কেটে অফ করে রাখলাম।অবনীর সাথে আমি আর কোনদিন কথা বলতে চাইনা।যত বেশি কথা বলবো ততবেশি কষ্ট বাড়তে থাকবে।
জ্যামের কারণে নানু বাড়িতে আসতে আসতে ১ঘন্টার জায়গায় দের ঘন্টা লেগে গেলো।আমার সবথেকে বিরক্তিকর লাগে জ্যামে বসে থাকা।
নানি, নানি,মামা,মামি সবাই আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে।অনেকদিন পর আসলাম নানু বাড়িতে।তাও প্রায় ৮থেকে ৯মাসতো হবেই।আগে কয়েকদিন পর পরই আসতাম।বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্ততাও বেড়েছে তাই আসা হয়না।
-
-চলবে
Friday, October 26, 2018
মি. ক্ষ্যাত পর্ব ২
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
আরো নতুন নতুন গল্প, কবিতা,জোকস পড়তে চাইলে আমার সাইটে ভিজিট করুন
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz