ভীতুর ডিম

"ভীতুর ডিম"
↓
লেখা: Farjul Islam Ovoy (অধরা আকাশ)
↓
আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু "ইমরান" স্টুডেন্ট হিসেবে অনেক ভালো,ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে,,,।।
একটু লাজুক টাইপের,,,,, কোনো দিনও দেখলাম না কোনো মেয়ের দিকে ফিরে তাকাতে,ছেলে হিসেবেও অনেক ভালো বন্ধু বলে বলছি না সত্যিই অনেক ভালো,,,, তবে দুদিন ধরে লক্ষ্য করছি ও কেমন যেন অন্য মনষ্ক হয়ে গেছে,,,,তাই আজ জিজ্ঞেসই করে ফেললাম,,,,
→কিরে ইমু তোর হইছে টা কি,,,,??(আমি)
→কই কিছুনাতো,,,কি হবে,,,!!(ইমরান)
→না,,,,দুদিন যাবৎ তুই কি যেনো ভাবিস মনে মনে,,,, কি হইছে বলতো,,,,।।
→একটা বড় সমস্যায় পড়ে গেছি,,,, দোস্ত তুই আমারে একটু হেল্প কর,,,তোকে ছাড়া এই কাজ আমি একা করতে পারবো না,,,কাজটা করে দিবি তো,,,??
→আরে কি কাজ বলবি তো নাকি,,নাহলে বুঝবো কেমনে,,,।।
→দোস্ত আমি ক্রাসিত,,, আমাদের এলাকারই কোনো একটি মেয়ের উপ্রে (লাজুক লাজুক ভঙ্গীতে)
→হাহাহাহাহাহাহাহা,,, তুই হবি ক্রাসিত,,, আমি বিশ্বাস করি না,,,।।
→নারে দোস্ত সত্যিই বলছি,,,, মেয়েটিকে আগে থেকেই একটু একটু চিনতাম,,,তুই ও চিনবি,,, আগে এমনটা হয় নাই বাট দুদিন আগে আমাদের বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল,,,, আমিতো দেখে পুরাই ফিদা,,,,।।
→এখন মেয়েটা কে সেটা বল তারাতারি,,,,, আমার দোস্ত প্রেমে পরছে আর আমি তাকে সেই প্রেম করিয়ে দিতে পারবো না,,,এটা হয় নাকি,,!!
→দোস্ত তয় একটু সমস্যা আছে,,,।।
→আরে ধুততততততত,,,, কোনো সমস্যা নাই, তুই শুধু বল মেয়েটা কে,,,,।।
→বলছি,,,,বাট ওর একটা বড় ভাই আছে,,, খুব ডেন্জারাস,,,, যদি ও ওর ভাইরে বলে দেয়,,,!!
→আরে তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না,,,,, কোনো ভাই,টাইের বেল নাই,,,।।
↓
আমার বন্ধু ছিলো একটু ভীতু টাইপের,,,,কখনও কোনো মেয়েলি সাবজেক্ট এ মাথা ঘামায়না,,,, প্রচন্ড ভয় কাজ করে ওর মাঝে,,,,,তয় আমিও কিন্তু একটু একটু ভীতু,,,,,।।
→মেয়েটির নাম হলো "জান্নাত"
→দোস্ত কি কইলি,,,,, আরেকবার বলতো,,,,।।
↓
এই বইলাই মারলাম এক দৌড়,,,,এক দৌড়ে বাসায় এসে আগে দুই গ্লাস পানি পান করলাম,,,,, দোস্ত আমার কারে পছন্দ করলো,,,,ঐ মাইয়া যে ডেন্জারাস,,,, ওর সামনে গিয়া এই কথা কইলে আমার মাথার চুল একটাও থাকবে না,,, সব টাইনা চিড়ে ফেলবে,,,,,,মেয়েতো যেমন তেমন ওর ভাইতো পুরাই,,,,,,,, ওর ভাই এগুলো
জানলে আমার শরীরের হাড় একটাও আস্ত থাকবে না,,, এখন কি করি,,,,,,একটু পরে ইমুর ফোন,,,,
→কিরে দোস্ত দৌড় দিয়ে চলে এলি যে,,??
→কিরে ফহিন্নি তুই এলাকায় আর মাইয়া খুইজা পাইলি না,,,,ওরেই পছন্দ করতে লাগবো,,,।।
→দোস্ত এভাবে বলিশ না,,,তুই ছাড়া আর কে আমাকে হেল্প করবে বল,,,??
→তাই বলে জীবন বাজী রাইখা,,,, আমি পারুম না,,,,।।
→দেখ দোস্ত,,,,, দুই দিন যাবৎ আমার পড়ালেখা কিচ্ছু হচ্ছে না,,,,, একটু চেষ্টা করে দেখ,,,,।।
↓
ইমু আমারে পুরাই টেনশনে ফালাইয়া দিলো,,,,সারারাত ভেবেও কোনো পথ খুজে পেলাম না,,,,, কিভাবে মেয়েটির সাথে কথা বলা যায়,,,,, হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এসে গেলো,,,,,সকালেই চলে গেলাম ইমুর বাসায়,,,,।।
→দোস্ত একটা বুদ্ধি পাইছি,,,,।।
→কি,,,,,??
→ঐ মেয়েটির নাম্বার জোগাড় করতে পারবি,,,,??
→ঐ মেয়ের নাম্বার পাবো কথায়,,, আর নাম্বার দিয়ে কি হবে,,,,??
→আগে তুই নাম্বারটা জোগাড় কর,,, তার পর ব্যবস্থা করতেছি,,,,।।
↓
তার দ্বারা আর নাম্বার যোগাড় করা হবে না জানি,,,, অবশেষে আমার এক বন্ধু তার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের বান্ধবির ছোট বোনের কাছ থেকে অনেক কষ্টে নাম্বারটা কালেক্ট করলাম,,,।।
তারপর ওরে নাম্বারটা দিয়া কইলাম,,
→দোস্ত এই যে তোর ক্রাসের নাম্বার,,, এখনই এই নাম্বারে ৫০ টাকা রিচার্জ বর,,,।।
→কেন,,,, টাকা রিচার্জ করতে হবে কেন,,??
→তোরে করতে কইছি কর,,,।।
→করছি,,, এখনই,,,,,।।
→ফোন দিয়ে,,, বল ভুলে টাকাটা ওনার নাম্বারে চলে গেছে,,,,ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ কর,,,!!
→দোস্ত তুই বল,,,আমার ভয় লাগতেছে,,,।।
→ঐ প্রেম করবি তুই আর কথা বলবো আমি,,,,ফোন দে তারাতারি,,,।।
↓
টিরিং,,,,,, টিরিং,,,,, টিরিং,,,,,,
→হ্যালো,,,,।।(ইমু)
→হ্যালো,,,কে বলছেন,,,(জান্নাত)
→জ্বী আপু আপনি আমাকে চিনবেন,,,, আমিও আপনাকে চিনি না,,,বাট,,,,(সারা শরীর কাঁপতেছে)
→তাহলে ফোন দিছেন কেন,,,,, লুতুপুতু করার জন্য,,,,(রাগান্বিত হয়ে)
→আসলে একটু আগে আপনার নাম্বারে ভুলে ৫০ টাকা চলে গেছে তো তাই ফোন করলাম,,,।।
→তো আমি কি করবো,,,,ভুল করছেন এখন ভুলের মাশুল দেন,,,।।
→প্লীজ আপু,,,,,, আপনিও একজন স্টুডেন্ট আমিও স্টুডেন্ট,,,,বুঝেনই তো কতো প্যারা,,,।।
→ঐ আমি যে স্টুডেন্ড আপনারে কে বলছে,,,, আমি কাজের বুয়া,,,,মাইনষের বাসায় কাজ করে খাই,,,,।।
→তাই বুঝি,,,,,তাহলে আমাদের বাসায় কাজ করে দিয়ে যান,,,,, ৫০ টাকার বদৌলতে,,,,।।
→এহহ শখ কতো,,,,,,বাই,,,, আমার কাজ আছে,,,।।
টুট,,,,,,টুট,,,,,,টুট,,,,,,
→কিরে দোস্ত কিছুই তো হলো না,,,,(ইমু)
→ধুর,,,,অনেক কিছু হইছে,,,,,,।।
→কেমনে কি,,,,??
→কাল আবার ফোন করবি,,,।।
↓
পরের দিন রাতে,,,,,,।।
→হ্যালো,,,,(ইমু)
→জ্বী বলেন,,,,,,(জান্নাত)
→কি ব্যাপার আসলেন নাতো আমাদের বাসায় কাজ করতে,,,,।।
→কিহহহহ,,,,রাবিশ,,,।।
→যাই হোক,,,, আপু টাকাটা,,,,??
→দেখুন ভাইয়া,,, আমার পক্ষে একবারে ৫০ টাকা দেওয়া সম্ভব না,,,, আমাকে প্রতিদিন আমার আব্বু দেয়ই মাত্র ৫০ টাকা,,,২০ টাকা রিকশা ভাড়া,,,২০ টাকা টিফিন,,,১০ টাকা রিচার্জের জন্য,,,সো আমি আপনাকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিতে পারবো,,,।।
→সমস্যা নাই ৫০ টাকা ৫০ দিনে দিয়েন,,,,দিলেই হইলো,,,।।
→মানে,,,,,,, পাগল নাকি,,,,,এক টাকা করে আবার রিচার্জ করা যায় নাকি,,,,,??
→না দিলেও চলবে,,,।।
→এই আপনার মতলব টা কি বলুন তো,,,,??
→নাতো কোনো মতলব নেই তো,,,,,তবে কিছু একটা অপেক্ষা করতেছে,,,,বড়ই রহস্যময়,,,।।
→বলুতো শুনি,,,, কি সেই রহস্য,,,??
↓
এভাবেই আস্তে আস্তে চলতে থাকে তাদের এগিয়ে চলা,,, দুষ্টু মিষ্টি খুনশুটি,,,গল্প, কবিতার, আরো কতো কি,,,,,,,এক সময় ভালো একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে ওদের মাঝে,,,।।
↓
→দোস্ত অনেক হইছে,,,,এবার সত্যটা উন্মোচন করা উচিত,,,, (আমি)
→নারে দোস্ত আমার দ্বারা হবে না,,,, তুই বল,,,,আমার খুব ভয় লাগে,,, যদি ওর ভাইরে বইলা দেয়,,,,,,
→ধুর বোকা,,,,,এখন আর বলবে না,,।।
→যাই হোক,,,, তুই ফোন করে বলিশ,,,,,দেখ কি বলে,,,,।।
↓
অবশেষে বাধ্য হয়ে আমাকেই ফোন করতে হলো,,,।।
→হ্যালো,,,(আমি)
→জ্বী কে বলছেন,,,,(জান্নাত)
→আমি ইমরান এর খুব ক্লোজ একজন বন্ধু,,,,,(ও আমাদের কে আগে থেকেই একটু একটু চিনতো)
→ওহহহ,,,জ্বী বলুন ভাইয়া,,,,।।
→আমি চাচ্ছি আজই এই রহস্যের সত্যতা উন্মোচন করতে চাই,,,,।।
→কিসের রহস্য,,,,,কি বলতে চাইছেন আপনি,,,,???
↓
তার পর যা যা করেছি,,,,যা যা বলার সবকিছু সরাসরি খুলেই বলে ফেললাম,,,,ও তো অবাক,,,,!!
সব শেষে বললাম,,,,,, ইমরান তোমাকে সত্যিই বড্ড বেশি ভালবাসে,,,,,ওকে ফিরিয়ে দিও না,,,,,
পরে জান্নাত সরাসরি দেখা করতে চাইলো,,,,,দিন তারিখও ঠিক করে ফেললাম,,,,।।
কিন্তু সমস্যাটা হলো ইমু কে নিয়ে,,,,,ভয়ে যাইতেই চাইছে না,,,, তবুও জোড় করে ঠেলেঠুলে নিয়ে গেলাম,,,, সাথে একগুচ্ছ লাল গোলাপ,,,কিছু গিফট আর চকলেট,,,,।।
↓
দুজনই এক গলির চিপায় দাঁড়িয়ে আছি,,,,জান্নাতও অপেক্ষা করছে রাস্তার পাশে বাট আমাদের দেখতে পাচ্ছে না,,,,,, চারপাশটা ভালো ভাবে দেখে নিলাম সাথে করে কাউকে নিয়ে এলো নাকি আমাদেরকে মার খাওয়ানোর জন্য,,,,,না সব ঠিকঠাকই আছে,,,,,,
কিন্তু ইমু কিছুতেই তার সামনে যেতে চাইছে না,,,, আমাকে আগে যেতে বলছে,,,,,প্রেম করবে ও আর দেখা করবো আমি,,,,কেমনটা লাগে,,,,!!
ইমু হঠাৎ দিলো এক ধাক্কা,,,, এক ধাক্কা গলির বাইরে,,,,বাধ্য হয়ে জান্নাতের সামনে গেলাম,,,,হাটুদ্বয় কাঁপতেছে,,,,,
→ও তাহলে তুমি সেই "ভীতুর ডিম"(মুচকি হেসে)
→আরে নাহহহ,,,, আমি কেন হতে যাবো,,,,!! আমি ওর বন্ধু,,,,,।।
→তো সেই ভীতুর ডিম কোথায়,,,,ও আসেনি,,,,??
→আসছে,,, ঐ গলিতে,,,,, ভয়ে আসেনা,,,,।।
শেষমেশ,,,,, জান্নাতই সেই গলিতে গিয়ে ভীতুর ডিমটাকে কান ধরে বাহিরে নিয়ে এলো,,,,।।
বন্ধু আমার ভয় আর লজ্জায় পুরো লাল,,,,।।
অল্প সময়েয় ওদের মাঝে সুন্দর একটা বোঝাপড়া হয়ে গেলো,,,,,যেন হাজার বছরের চেনা,,,,,,।। সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে,,,।।
চলছেই তাদের পথচলা দুজন দুজনার হাত ধরে,,,,,,তবে আমাকে ব্যতীত না,,,,,বড্ড পাগল ছেলেটা,,,, ভীতুর ডিম,,,,,আজও সে ভয় পায়,,,,, প্রত্যেকবার ডেটিং এ যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যাবেই,,,,,, তার পাশে আমাকে বসতে হবেই,,,,।।
"বেচে থাকুক আজীবন তাদের ভালবাসা"