Friday, October 26, 2018

অভিমানী ভালোবাসা পর্ব ৪

No comments

#অভিমানী__ভালোবাসা
#লেখাঃ_মৃনাল___...
#পর্বঃ_৪র্থ__.......
- এতরাতে এমন রাক্ষসের মতো চিল্লাচ্ছিস কেনো? 
- খুশিতে চিল্লাচ্ছি মা খুশিতে? (কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো মৃনাল)
-হইছে হইছে আর ঢং করতে হবে না অনেক রাতে হয়েছে এখন লক্ষী ছেলের মতো ঘুমিয়ে পর? (মৃনালের মা)
- মা খাটের নিচে কেউ নেই? 
- না কেউ নেই। এখন ঘুমিয়ে পর?
- স.. স.. সত্যি কেউ নেই? 
-হুম সত্যি কেউ নেই! 
..... কথাটা বলেই চলে গেলো মৃনালের মা ঘর থেকে আর সাথে সাথে মৃনাল ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো। আর ভাবছে কি ব্যাপার তুতুল গেলো কোথায় খাটের নিচেই তো ছিলো। মৃনাল এবার খাটের নিচে তাকিয়ে দেখল ঠিক ই তো তুতুল নেই খাটের নিচে তাহলে গেলোটা কোথায়? 
মৃনাল ভাবছে ভূত নয়তো আবার। ও মা গো তুমি গেলা কেনো আমার বড্ড ভয় করছে! মৃনাল খাটের নিচে তাকিয়ে আছে এমন সময় তুতুল মৃনালের পিঠে টোকা দিলো আর মৃনাল ভাবলো ভূত তাই আবার চিৎকার দেওয়ার আগে মৃনালের মুখ আবার চেপে ধরে বিছানায় ধপাস করে পড়ে গেলো মৃনাল ও তুতুল। তুতুল মৃনালের বুকের উপর পরে আছে আর মৃনাল অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে তুতুলের চোখের দিকে। চোখ একবিন্দু ও সরাচ্ছে না মৃনাল। 
- এই যে হ্যালো এমন করে কি দেখছো? (তুতুল)
.... তুতুলের কথা শুনে মৃনালের ঘোর কেটে গেলো আর তুতুল কে সরিয়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো মৃনাল। 
- কই কিছু না তো? কি আবার দেখব? আপনি প্লিজ আমার ঘর থেকে চলে যান নয়তো আবার মা আসলে আর রক্ষা হবেনা? 
- চলে যেতে পারি একটা শর্তে?
- কি? 
- আমার অপরাধ গুলো তোমাকে ক্ষমা করে দিতে হবে? 
- আচ্ছা ঠিক আছে দিলাম এবার প্লিজ যান? 
- না এভাবে বললে হবেনা তোমাকে বলতে হবে... তুতুল তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে তোমার সমস্ত অপরাধ আমি ক্ষমা করে দিলাম!
....মৃনাল ভাবছে এখন তুতুলের কথা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই তাই বাধ্য হয়ে বলল....
- তুতুল তুমি খুব ভালো,খুব মিস্টি, তোমার সব কিছু অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম (মৃনাল)
- এইতো গুড বয়! 
- এবার প্লিজ যান? 
- আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি।

..... তারপর তুতুল মৃনালের ঘর থেকে চলে গেলো মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে। 
আর মৃনাল একটা হাফ ছাড়ল আর বলছে যাক বাবা বাঁচলাম। ভাগ্য ভালো মা দেখেনাই যদি দেখতো না জানি কি বলতো আমাকে। 
... মৃনাল রাতে ঘুমাতে পারছে না। শুধু তুতুলের মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে আসছে। তুতুল কে ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পরলো মৃনাল।
। 
... (তারপরের দিন সকালে)..
.. দরজায় ঠক ঠ ঠক কেউ শব্দ করছে মৃনাল খুব বিরক্ত হয়ে গেলো আর বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলতে গেলো দরজা খোলা মাত্রই মৃনাল দেখতে পেলো তুতুল মুচকি মুচকি হাসছে। প্রথমে ভাবলো চোখের সমস্যা বোধহয় পরক্ষনে চোখ দুটো কচলিয়ে দেখলো না ঠিক ই আছে এটা তুতুল ই। তুতুল কে দেখে আবার মৃনালের অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো ভাবছে কালকে রাতেই না চলে গেলো এখন আবার আসলো কেনো? আর তাছাড়া এখন তো মা বাসায় আছে। মৃনাল হা করে তাকিয়ে আছে তুতুলের দিকে। এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে তুতুল মৃনাল কে আস্তে করে একটা ধাক্কা দিয়ে তুতুল মৃনালের ঘরের ভিতর আবার প্রবেশ করলো আর মৃনালের জামা,প্যান্ট একটা গুলো বের করলো। 
- এই আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? আপনি আবার আমার ঘরে এসে আমার জামা প্যান্ট গুলো বের করছেন কোন সাহসে? (মৃনাল রেগে রেগে বলল)
- রেগে কোন লাভ নেই আপনি এখন আমার সাথে ঘুরতে যাবেন। তাই আপনার জামা গুছাচ্ছি! (তুতুল)
- আপনি এসব কি বলছেন? ঘুরতে যাবো মানে? কোথায় ঘুরতে যাবো? আমি কোথাও যাবো না বলে দিলাম। আপনাকে কে বাসায় ঢুকতে দিয়েছে? (এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলল মৃনাল)
- আরে আস্তে আস্তে এতো জোরে জোরে পেশ্ন করলে উওর দিবো কিভাবে। প্রথমত আমি এসব ঠিক ই বলছি। আর দ্বিতীয়ত আমার সাথে ঘুরতে যাবেন। তৃতীয়ত আমার যেখনে ইচ্ছে হবে নিয়ে যাবো আর চতুর্থ হলো আপনার মা ই আমাকে বাসাতে ঢুকতে দিয়েছে। 
- কিইইইইইইই মা ঢুকতে দিয়েছে? (অবাক হয়ে)
তুতুল একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল ...
- হ্যা। 
..... তুতুলের মুখে এসব কথা শুনে মৃনাল তার মায়ের সাথে কথা বলার জন্য তার মায়ের কাছে গেলো । মৃনালের মা রান্না ঘরে সকালের নাস্তা বানাচ্ছে। 
- মা মা ( চিৎকার করে)
- কিরে কি হয়েছে সকাল সকাল এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেনো? 
- মা তুমি নাকি তুতুল কে বাসায় ঢুকতে দিয়েছো? 
- হ্যা আমি দিয়েছি কিন্তু কি হয়েছে? কিছু করেছে তুতুল? 
- আগে বলো কি করেনাই। আমার ঘরে ঢুকে আমার জামা কাপর গুলো গুছিয়ে একটা ব্যাগে ঢুকাচ্ছে আর বলছে ওনার সাথে নাকি ঘুরতে যেতে হবে। 
- হ্যা তো যাবি ঘুরতে। আর তুই তো তেমন ঘুরতে ও যাস না! 
- মা তুমিও এমন কথা বলছো ধ্যাত....।
.. মৃনাল মায়ের কাছ থেকে অনেকটা বিরক্ত নিয়ে চলে গেলো। আর তার ঘরে গিয়ে দেখলো জামা কাপর ব্যাগের ভিতর ঢুকানো শেষ । তুতুলে মৃনাল কে দেখে বলল....
- হুম এখন ৫ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নাও? আর না হলে তোমার মাকে কি বলব তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে! (তুতুল)
- আমার না গেলে হয় না? 
- আচ্ছা থাক যেতে হবেনা তোমার মায়ের কাছে যাচ্ছি? 
- এই না না না মায়ের কাছে যেতে হবেনা আমি রাজি! 
- হুম তাহলে এখনও এখানে কেনো? 
- কি করব? 
- যাও রেডি হয়ে আসো? (ধমক দিয়ে) 

তারপর মৃনাল আর কোন কিছু না বলে রেডি হয়ে আসলো। একসাথে নাস্তা করে বেরিয়ে পরলো তারা দুজন। তুতুল তার বাবার দামি গাড়ী নিয়ে এসেছে তুতুল নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করছে আর মৃনাল তার পাশের ছিটে বসে আছে। 
মৃনাল চুপচাপ বসে আছে আর তুতুল ও চুপচাপ গাড়ি চালয়ে যাচ্ছে। 
- আচ্ছা তুমি কি বোবা? (তুতুল)
- কেনো বলুনতো? (মৃনাল)
- এই যে আমি গাড়ি চালাচ্ছি আর তুমি চুপ করে আছো? 
- আমার কিছু বলার ছিলো ও না আর বলব ও না! 
... মৃনাল ও তুতুল প্রায় একরকম নিস্তদ্ধতায় কাটিয়ে দিলো পুরো পথ আর একটা বিশাল বড় বাড়িতে এসে থামালো গাড়ি। বাড়িটা অনেক সুন্দর আর সাজানো সাধারনত বিয়ে হলে এমন করে সাজানো হয়। আলোক সজ্জায় সজ্জিত পুরো বাড়ি। 
- এটা তো বাড়ি এখানে আনলেন কেনো? 
- এই বাড়িতে আমরা বিয়ে করব তাই। 
- কিইইইই আমি পারব না বিয়ে করতে প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন? 
- ঐ চুপ আর একটা কথ বললে মুখে টেপ লাগিয়ে দিবো। আমি যা বলব ঠিক তাই করবে নাহলে বুঝবা.....? 
... মৃনাল আর কোন কথা না বলে তুতুলের পিছু পিছু গেলো আর বাড়ির ভিতর ঢুকতেই মৃনাল দেখতে পেলো একটা মেয়ে বেরিয়ে আসলো আর সেই মেয়ে প্রিয়া তাকে দেখে মৃনালের মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো আর ভাবছে এখন প্রিয়ার সাথে আমার বিয়ে দিবে না তো আবার। 
প্রিয়া দৌড়ে এসে তুতুল কে জরিয়ে ধরলো। আহহহ কি যে খুশি দুই বান্ধবী তা বলার মতো না আর সেটা মৃনাল দেখে রাগে ফুলসে। প্রিয়া মৃনাল কে দেখিয়ে বলল... 
- আচ্ছা তুতুল এটা সেই ক্যাবলা টা না যাকে তুই......?( বলাও শেষ আবার হাসিও শুরু প্রিয়ার)
এবার মৃনালের কাঁদো কাঁদো মুখ। আর ভাবছে কি আমি ক্যাবলা। আমাকে ক্যাবলা বলে এত্তগুলা লোকের সাথে অপমান করলো। তুতুল মৃনালের দিকে তাকালো তুতুলের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মৃনালের ভালো লাগছে না।
তাই তার বান্ধবী কে বলল...
- কিরে এখানেই দাড় করিয়ে রাখবি না ভিতরে ঢুকাবি? (তুতুল)
... তারপর মৃনাল আর তুতুল দুইটা ঘরে প্রবেশ করলো। আর মৃনাল ঘরে শুয়ে শুয়ে ভাবছে আমি কি সত্যিই ক্যাবলা।

পরের দিন ঘম থেকে উঠে দেখে বাড়িতে আত্বীয়জন অনেক আর সবাই হাসি খুশি মৃনালের মনে একটাই চিন্তা আমার সাথে কারো বিয়ে দিবে না তো। 
.. অবশেষে ঝমকালো বিয়ের অনুস্টান আরম্ভ হলো কনে আর বর কে দেখে মৃনাল হাফ ছেড়ে দিলো। আজ তুতুল শাড়ী পরেছে, হাতে চুরি ঠোটে লিপস্টিক হাল্কা মেকাপ, চোখে কাজল সব মিলিয়ে পুরো ফাটাফাটি লাগছে তুতুল কে আর পায়ে নূপুর ও পরেছে আর তার শব্দে মৃনালের মনের মাঝে ঝন ঝন করছে। মৃনাল তুতুল কে বার বার আর চোখে দেখছে বিয়ে বাড়িতে যখনই তুতুল মৃনালের দিকে তাকায় তখনই মৃনাল কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে চোখ সরিয়ে নেয় আর তা দেখে তুতুল মুচকি মুচকি হাসে। মৃনাল এমনিতেই কোন মেয়ের দিকে তাকায় না কিন্তু আজ যে কি হয়েছে বার বার শুধু তুতুলের দিকে তাকাচ্ছে। তুতুল ওখান থেকে সরে গেলো আর মৃনাল এদিক ওদিক খুজতে লাগলো মনে মনে বলছে
- কি ব্যাপার তুতুল গেলো টা কোথায় এখানেই তো ছিলো এখন পুরো বিয়ে বাড়ি খুজেও পাচ্ছি না। হঠাৎ মৃনাল বুঝতে পারলো কেউ পিছন থেকে তার শার্টের কলার চেপে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর একটি ঘরের ভিতর মৃনালকে নিয়ে গিয়ে ওয়ালের সাথে চেপে ধরল। মৃনাল দেখলো এ আর কেউ নয় তুতুল আহহহ কি চোখ। মৃনাল তুতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এতো সুন্দর চোখ কারো হতে পারে। মৃনালের উপর চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে তুতুল 
- কি ব্যাপার তোমার? (তুতুল) 
.. এবার মৃনাল কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেলো আর বলল
- কি কি কিছুনা তো। আমাকে এভাবে ধরে আছেন কেনো? আমাকে ছেড়ে দিন ? (মৃনাল)
- আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলে কেনো শুনি? রেগে (তুতুল)
- তুমি এতো সুন্দর যে না তাকিয়ে থাকতে পারিনি। পুরাই একটা ডানাকাটা পরী। (মনে মনে বলল মৃনাল)
- ঐ হ্যালো কিছু বললেন? 
- না কই কিছুনা তো। আমি কেনো আপনার দিকে তাকাবো?
- আমি সিওর তুমি আমার দিকেই তাকাচ্ছিলে বার বার। 
- আমার বয়ে গেছে তোমার দিকে তাকাতে থক্কু আপনার দিকে তাকাতে। (কথাটা বলেই মৃনাল জিহব্বায় কামর দিলো)
... আচ্ছা শুনো? (তুতুল)
- জ্বি বলুন? 
- আমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে তাই না? 
- হ্যা হ্যা অনেক সুন্দর লাগছে পুরো পেত্নীর মত সুন্দর। 
.... মৃনালের মুখে এমন কথা শুনে তুতুল অনেক রেগে গেলো। আর তারপর মৃনালের মুখ টা চেপে ধরে গালে একটা কামর বসিয়ে দিলো বেচারা মৃনাল চিৎকার দিবে তার ও উপায় নেই কারন মুখ চেপে ধরে কামর দিছে। অনেক শক্ত করেই কামর টা বসালো তুতুল মৃনালের গালে সব কয়টা দাঁতের দাগ লেগে গেছে এবং গাল টা লাল হয়ে গেছে। তুতুল মৃনাল কে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। মৃনাল একটু ঘর থেকে বের হলো আর বিয়ে বাড়ির সব লোক মৃনালের দিকে তাকিয়ে হাসছে। মৃনাল এর কিছু বুঝতে পারলো না। একটা মেয়ে বলে উঠলো
- দ্যাখ দ্যাখ ছেলেটার গালে কেমন কামোরের দাগ ফুটে উঠেছে। হিহিহি। 
সবাই একসাথে মৃনাল কে দেখে হেসে উঠলো। মৃনালের লজ্জায় মাথা কাটা যাবার অবস্থা। একটা হাত গালের মধ্যে রাখলো মৃনাল আর উপলব্ধি করলো হাত দিয়েও বুঝতে পারছে যে গালে কিছু একটা হয়েছে। মৃনাল দৌড়ে তার ঘরে গেলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলে লাগলো.....
- এ্যাাাাাাহহহ হ্যাএ্যাাাাাাা হু হু হু
মৃনালের কান্না দেখে তুতুল.........?
চলবে............?

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

No comments :

Post a Comment