ভাবনার_গহীনে
writer :Afroja
Part 10 :
_রুপাঞ্জনা , এই রুপাঞ্জনা , অহ শীট এ তো সেন্সলেস হয়ে গেছে আর গা এতো গরম কেন , (আফরাজ)
↓
কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয় আফরাজ রূপ কে । তারপর ডক্টর আংকেল কে কল দেয় । আতিয়াও বসে আছে রূপ এর কাছে । মেয়েটা কেমন যেনো নিঃস্তেজ হয়ে পরে আছে বিছানায় । সত্যি আফরাজ কাল রাতে ভিষণ অন্যায় করেছে । আতিয়াও রূপ এর গালের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছে আসলে কাহিনী কি হইছে । ডক্টর আংকেল আসলেন , আর তিনি সব টা বুঝে নিলেন
↓
_আফরাজ এতো জ্বর আসলো কিভাবে ওর , সুস্থ মেয়েটা (ডক্টর)
_আসলে আংকেল (আফরাজ)
_আসলে নকলে পরে আগে একটু বাহিরে এসো (ডক্টর)
_জ্বি আংকেল আসুন (আফরাজ)
_আফরাজ এতো জেদ কেনো তোমার , তুমি জেদের বসে মেয়েটার গায়ে হাত তুলে দিয়েছো । কাজ টা কি ঠিক করলা নাকি তুমি বলো তো , ওর গালের কালো দাগ গুলোই তো বলে দিচ্ছে তুমি ওকে কত টা জোরে মেরেছো , কি এমন হয়েছিল আফরাজ যে এতো জোরে আর এভাবে মারতে হলো মেয়েটা কে (ডক্টর)
_আংকেল আপনি তো জানেন যে আমার যখন রাগ উঠে তখন আমি সব ভুলে যাই । আর ও আমায় না বলে আমার জিনিসে হাত দিয়েছিল তাই আর রাগ টা সামলাতে পারি নি । তাই রাগের মাথায় হাত টা উঠে গেছে , কিন্তু আংকেল বিশ্বাস করেন আমি একটুও বুঝতে পারি নি (আফরাজ)
_সামান্য তোমার জিনিসে হাত দিয়েছে বলে তুমি এই ব্যবহার করবা । তোমার কাছে অন্তত এইটা আশা করি নি , আর তোমার জিনিস ওর জিনিস আলাদা কি আফরাজ , তুমি আর ও এখন স্বামী -স্ত্রী তাই তোমাদের জিনিস তোমাদের দুইজনেরই । দেখো আমি তোমার বাবার বন্ধু ছিলাম সেই সুবাদে তুমি আমার ছেলের মতন , এখন থেকে যা করবা বুঝে শুনে ভেবে চিনতে করবা (ডক্টর)
_জ্বি ডক্টর আংকেল । (আফরাজ)
_আর শুনো ইনজেকশন পুষ করে দিয়েছি , আর জ্বর টা মনে হয় বাড়বে । সেন্স টা আসতে সময় লাগবে কারন শরীর খুব দুর্বল , জ্বর বাড়লে এই মেডিসিন গুলা খাবিয়ে দিও , আর হ্যা ও এতো দুর্বল কেন ? ও কি খাইয়া দাওয়া করে না , নাকি সেইদিকেও নজর দাও না তুমি (ডক্টর)
_আংকেল আত্তু তো আছেই ওই তো দেখে সব (আফরাজ)
_আত্তু আর তুমি এক হলা ওর কাছে আফরাজ , কি সব বলো , নাকি শুধু দায়ে পরে বিয়ে করেছো মেয়েটা কে । যাই হোক ওর খেয়াল রেখো , আর কিছু বললাম না (ডক্টর)
_জ্বি আংকেল (আফরাজ)
↓
ডক্টর চলে যাওয়ার পরে আফরাজ রুমে আসে ।
↓
_আত্তু , তুমি নিচে যাও আমি এইদিকে আছি । আর ওর জন্য সুপ করো , ওকে হালকা কিছু খাওয়াতে হবে (আফরাজ)
_জ্বি ভাইয়া (আতিয়া)
আফরাজ বসে আছে রূপ এর পাশে । মেয়েটা কি শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে । একদম চুপচাপ , মায়া লাগছে আফরাজের । কেনো যে তখন হাত তুলেছিল নিজেও জানে না । নিমিষেই সব এলো মেলো হয়ে গেলো ।
এরই মাঝে আস্তে আস্তে রূপ চোখ মেলে তাকায় । রূপ এর জ্ঞান ফেরা দেখে আফরাজ আগ্রহ নিয়ে রূপ এর কাছে যায় , কিন্তু লাভ হয় নি , রূপ চুপচাপ শুয়েই আছ কোন কথা বলছে না আফরাজের সাথে , ও হয়তো ঘোর থেকে এখনো বের হতে পারে নি । গতকাল রাতে আফরাজের বলা কথা গুলো এখনো কানে বাজে রূপ এর । আফরাজ যে তার পাশে বসে তার হাত ধরে কথা বলছে হয়তো সেই কথা গুলো রূপ এর কান অবদি যাচ্ছে না , সে গতকাল রাতের কথাই ভেবে চলছে । হঠাৎ করেই আফরাজ খেয়াল করলো রূপ এর চোখের কোনা বেয়ে পানি পরছে । এই দেখে আফরাজ রূপ এর হাত টা ছেড়ে দেয় । আর রূপ আস্তে ওইদিকে ফিরে যায় । আফরাজ আর কোন কথা বলে নি , ককয়েকবার নাম ধরে ডেকেছিল কিন্তু রূপ সাড়া দেয় নি , আফরাজ ওইপাশে গিয়ে দেখে রূপ আবার ঘুমিয়ে গেছে । তাই সেও একটা নিঃশ্বাস ফেলে সেইখান থেকে সরে যায় ।
↓
সেইদিন রাতে রূপ এর প্রচুর জ্বর আসে , শরীরের কাপে বেচারি কুকড়ে ওঠে , আফরাজ পাশেই ছিল , এতো কাপানি সে এর আগে কখনো দেখে নেই , ডক্টর আগেই বলে দিয়েছিল যে রাতে জ্বর আসবে , কিন্তু আফরাজ এখন কি করবে , রূপ এর জ্বর ক্রমশ বাড়ছে , আফরাজ দেখলো রূপ গুটিশুটি মেরে শুয়ে কাপছে , তারাতারি করে কম্বল দিয়ে রূপ এর শরীর জড়িয়ে দিল , রূপ এর ওড়না টা গলায় ফাস লেগে গেছে , তাই আফরাজ আস্তে করে ওড়না টা গলা থেকে খুলে সরিয়ে দিল , ওড়না টা সরাতেই আফরাজের নজর পরে রূপ এর ঘাড়ে । রূপ এর ঘাড়ে এর জায়গায় অসম্ভব সুন্দর একটা তিল আছে , ভালো লাগার মতন একটা জিনিস তিল টা । রূপ এমনিতেই ফর্সা ছিল আর কালো তিল টা এমনিতেই অনেক সুন্দর ভাবে দেখা যাচ্ছে খুব ভালো লাগছে । পরক্ষনেই আফরাজ সরে যায় রূপ এর কাছে থেকে , পাশে এসে শুয়ে পরে বরাবরের মতই দুইজনের মাঝে আছে একটা দূরত্ব । মাঝ রাতে কারো বিড়বিড় শব্দে আফরাজের ঘুম টা ভেঙে যায় , আফরাজ উঠে দেখে রূপ কুকড়াচ্ছে , কপালে হাত দিয়ে দেখে প্রচুর জ্বর , আফরাজের খুব মায়া হলো রূপ কে দেখে আফরাজ হাত টা সরাতেই রূপ হাত টা ধরে ফেলে , অনেক শক্ত করেই ধরে হাত টা , আফরাজ ছাড়াতে পারছে না , আর গায়েও অনেক জ্বর তাই আফরাজ নিজেই আস্তে করে রূপ কে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে , রূপ এর শরীরের তাপ আফরাজ শরীরে গিয়ে পরে , রূপ ও আফরাজ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে , রূপ তো সেন্সলেস , ঘুমের মধ্যে কি করছে তার ঠিক নেই , রূপ আফরাজ কে পাগলের মতন জড়িয়ে ধরে আছে , আর আফরাজ ও রূপ কে শক্ত করে ধরে আছে । রূপ আফরাজের পিঠে জ্বরের তাড়নায় কয়েকটা খামচি ও বসিয়ে দেয় , তারপর আস্তে আস্তে রূপ স্বাভাবিক হয়ে ঘুমোতে থাকে । আর আফরাজ ও আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে । সকালবেলা রূপ এর ঘুম ভাঙে আর সে নিজেকে আফরাজের বুকে পায় , মাথায় একটা বাজ পরে , আর গায়ের ওড়না টাও নেই , আফরাজ কে দেখছে রূপ কি সুন্দর লাগছে আফরাজকে , সুঠাম দেহ , মায়াবী চেহারা , আর খোচা খোচা দাড়ি গালে , অনেক সুন্দর লাগছে তবে রূপ এর মুহুর্তে ওইদিন রাতের কথা মনে পরে যায় আর তার চোখ বেয়ে পানি পরে যায় । আর রূপ জোড়াজুড়ি করতে থাকে , আর তখনই আফরাজের ঘুম ভেঙে যায়
↓
_জ্বর কমেছে (আফরাজ)
_চুপচাপ ওইদিকে ফিরে যায় (রূপ)
_কি হলো দেখি জ্বর টা কমেছে কিনা (আফরাজ)
_আমি ভালো আছি , কাউকে এতো কষ্ট করতে হবে না (রূপ)
_এই দুইদিন তো কষ্ট দিয়েছো , (আফরাজ)
_সরি মাফ করবেন , আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি (রূপ)
↓
আফরাজ জোর করেই রূপ এর কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর টা এখন একটু কমেছে । তাই সে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয় । ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে যখন আফরাজ রেডি হচ্ছে তখন রূপ আফরাজ এর পিঠের দিকে নজর দেয় । অনেক গাঢ় একটা আচড়ের দাগ , আফরাজ আয়নায় লক্ষ্য করে রূপ তাকে দেখছে , তখন সে বলে ,
↓
_কেউ একজন কাল রাতে এইভাবে আচড় দেয় আমায় । বাহ বাহ মানুষ যে কেন এতো বড় বড় নখ রাখে কে জানে , এইভাবে আরেকজন কে ব্যাথা দিতে কিভাবে পারে (আফরাজ)
_আমি কখন করছি এমন টা (রূপ)
_কাল রাতে , জ্বরের তাড়নায় আপনি আমায় খামচে দিয়েছেন একেবারে , (আফরাজ)
_ 😒😒😒😒😒(রূপ)
_মুখ ভেংচিয়ে লাভ নেই উঠেন ফ্রেশ হোন , নাস্তা খেতে হবে তারপর আবার মেডিসিন নেয়ার সময় হয়ে গেছে (আফরাজ)
↓
রূপ আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায় আর নাস্তা করে নেয় , তারপর আফরাজ আতিয়া কে রূপ এর সব মেডিসিন বুঝিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায় আর রূপ এই ফাকে পালিয়ে যাবার প্ল্যানিং করে ফেলে । বিকেলে আফরাজ বাসায় এসে দেখে আতিয়া ঘুমাচ্ছে , তাই আর আতিয়াকে না ডেকে আফরাজ সোজা উপরে রুমে চলে যায় । গিয়ে দেখে রূপ রুমে নেই, তারপর বারান্দায় গিয়ে দেখে সেইখানে ও নেই । তারপর রুমে এসে দেখে বিছানায় সাদা কাগজ পরে আছে । আফরাজ কাগজের ভাজ খুলতেই দেখে একটা চিঠি । লিখা ছিল
↓
_মাফ করবেন আমি আপনার গলায় ঝুলে পরতে চাই নি । পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে বাধ্য হয়েছিলাম । আর আপনার উপরে কোন জোর খাটাতেও চাই না আমি । পারলে আমায় মাফ করবেন । আমি চলে যাচ্ছি , কোথায় যাবো জানি না তবে এই শহর ছেড়েই চলে যাবো , নিজের পরিবার থেকেও নেই আর আমি অন্য কারো উপরে আর বোঝা হতে চাই না । ক্ষমা করবেন আমায়
ইতি
দুইদিনের জন্য উরে এসে জুড়ে বসা
একজন অতিথি মাত্র
↓
চিঠি পড়ার পরে আফরাজ আরো রেগে যায় , অন্য কোনদিকে না তাকিয়ে তারাতারি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে ।
↓
_এই মেয়েকে যদি আজ পাই , কি যে করবো আমি এই মেয়েকে । কত বড় সাহস তার একটা চিঠি দিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে । কি ভেবেছে কত দূরে যাবে সে । বেশি দূর যেতে পারবে তার ধারনা তাহলে সে আমার ধারণা সম্পর্কে কিছুই জানে না (আফরাজ)
↓
↓
↓
To be continued😭😭😭
Monday, October 15, 2018
ভালোবাসার গল্প - ভাবনার গহীনে পার্ট 10
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
আরো নতুন নতুন Golpo পড়তে ভিজিট করুন
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz