গল্প: মাস্তানি (৩য় পর্ব)
।
আগামীকাল এক্সাম..। তাই ক্লাসে মনোযোগ
রাখছি। অবশ্য আগে যখন এক্সাম দিতাম তখন মান্তানি
করে পাস করতাম। কিন্তু এখন সেটা করা যাবে না।
সামনে তাকিয়ে দেখি নেহা আজো তাকিয়ে
আছে। কি মেয়েরে বাবা..অপমান করবে আবার
দেখবেও। তখনি লেকচারার স্যার আসলো রুমে।
- কাল এক্সাম, সবাই ভালো করুক এটাই চাই। (স্যার)
- স্যার সবাই আর কই বলেন, ভালো তো একাই
করে একজন সে হল নেহা। (রফি)
- হুমমম.. তা ঠিক..নেহার কাছ থেকে প্রথম কেউ
নিতে পারবে না। (স্যার)
ওনাদের কথা শুনছিলাম নিশ্চুপ দর্শকের মত। মনে
মনে হাসছিলাম ও বটে। চাইলেই মাস্তানি করে প্রথম
কেনো,,কলেজটাকেও আমার আয়ত্তে নিতে
পারি। কিন্তু সেটা আমি করবো না।
..
আজ এক্সামের পর ক্লাসে এসেছি। সবাই যে যার
মত গল্প করছে। আর আমি চুপচাপ বসে আব্বুর কথা
ভাবছি। ভাবছি মা নামের খারাপ মহিলার কথা। যে কিনা
আমার.....
- কাল এক্সাম হয়ে গেছে। তার রেজাণ্ট আজকে
দিচ্ছি। (স্যার)
- -------(সবাই চুপ)
- এই সাপ্তাহিক এক্সামে প্রথম হয়েছে নিলয় হাসান।
আর দ্বিতীয় হয়েছে নেহা। (স্যার)
সবাই ঘুরে আমার দিকে তাকালো। আমি আমার মত
বসে থাকলাম। নেহা আরো অবাক হয়ে তাকিয়ে
আছে আমার দিকে। সবাই হয়ত আশা করেনি এমনটা।
কিন্তু সেটাই হল..
- কংগ্রেস নিলয়. (স্যার)
সবাই যখন বাহ বাহ দিচ্ছে তখন নেহা তাকিয়ে আছে
আমার দিকে। যা আমার অসহ্য লাগছে।
- নিলয়, তুমি নিশ্চয় সারারাত পড়েছো? (স্যার)
-......
- আচ্ছা তোমার বাবা কি করেন?
- বেঁচে নেই স্যার।
- ওহ সরি,, তোমার আম্মু কি করেন?
মা নামের কথা শুনে মাথায় রাগ উঠে গেলো। বহু
কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে চুপ করে থাকলাম। তখনি
স্যার আবার জিগাস করলো..
- কি হল বলো..
- বেঁচে নেই।
- তোমার আব্বু আম্মু বেঁচে নেই? সো স্যাড,
সরি নিলয়। বাট তোমার পড়াশোনার খরচ কে চালায়
তাহলে? আর ওনারা কিভাবে মারা গেলেন??
স্যারের কথা শুনে রাগি চোখে ওনার দিকে
তাকালাম। কিন্তু ওনার মুখটা দেখে কেমন মায়া হল,
এসব প্রশ্ন আমাকে এ যাবত যারাই করেছে
তাদেরকে রাগের বশে মেরে ফেলেছি। কিন্তু
আজ নিজেকে সামলাতে হচ্ছে।
কিভাবে বলবো আমি স্যারকে, আমার পড়াশোনার
খরচ আসে মাস্তানি করে? কিভাবে বলবো, আমি
নিজেই আমার সৎ মাকে মেরে ফেলেছি নিজের
হাতে? কিভাবে বলবো, আমার সৎ মায়ের হাতে
আমার নিজের বাবা খুন হয়? তাই এসব প্রশ্ন যারা
জানতে চাই তাদেরকে মেরে ফেলি আমি।
- রোড এক্সিডেন্ট করে দুজনেই মারা যায়। (আমি)
- সরি নিলয়, যাই হোক তুমি ভালো করে পড়াশোনা
করো..পড়ার খরচ চালাতে সমস্যা হলে আমাকে
বলতে পারো। (স্যার)
স্যারের কথাশুনে মনে মনে হেসে উঠলাম।
সত্যিই হাস্যকর কথাটি। আমার যা টাকা আছে তাতে এ
কলেজের সবাইকে চালাতে পারবো।
..
ক্লাস শেষ করে বাইরে বের হলাম। তখনি নেহা
এসে আমার সামনে দাঁড়ালো । মেয়েদের সেই
ঘটনার পর আমার সহ্য হয় না। মনে হয় সবাই আমার সৎ
মায়ের মতই। তাই তাদেরকে এড়িয়ে চলি..
- সরি নিলয়...
-......??
- আসলে ঐ দিন তোমাকে অপমান করার জন্য।
- ওকে...বাই
আর কিছু না বলে ওর সামনে থেকে চলে
আসলাম। আমি জানিনা সব মেয়েরা একই রকম কিনা?
তবে মেয়েদের দেখলে আমার সৎ মায়ের কথা
মনে পড়ে যায়। তাই মাথাটা গরম থাকে সবসময়।
..
(পরেরদিন)
- আচ্ছা বলোতো, ধর্ষনের জন্য দায়ী
নারীদের পোষাক নাকি ছেলেরা নিজেই??
(স্যার)
ক্লাসে বসে আছি। লেকচারার স্যার রোজ কেমন
পড়ানো শেষে উদ্ভট প্রশ্ন করে। আজো তার
ব্যতিক্রম হয়নি। তবে প্রশ্ন শুনে সবাই চুপষে
গেল। তবে সবার ধারনা এমন প্রশ্নের উত্তর
নেহাই দেবে। কারন, সে তো প্রথম ক্লাসে।
- নেহা বলো ধর্ষনের জন্য কাকে দায়ী করবে
তুমি? (স্যার)
- আসলে স্যার ধর্ষকের জন্য মূলত ছেলেরাই
দায়ী।
- কেন? (স্যার)
- কারন, ছেলেদের মন খুব নিকৃষ্ট হয়। ওরা
মেয়েদেরকে যেমন নির্যাতন করে। তেমনি যা
ইচ্ছে তাই করায়।
- আপনি কি ধর্ষন হয়েছেন নাকি? বা এমন নির্যাতনের
স্বীকার হয়েছেন? (আমি)
নেহার কথা শুনে মায়ায় রক্ত উঠে গেল। তাই উঠে
দাঁড়িয়ে কথাটি জোরে বললাম। সবাই আমার দিকে
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এমনি স্যার ও।
- আসলে নেহার ধারনা ভূল স্যার। কারো মন কখনও
নিকৃষ্ট হয় না। নিকৃষ্ট করে দেয়। নিকৃষ্ট হয়
সামজের কিছু বেশি বোঝা মানুষদের কারনে। তারা
ধর্ষিতার দিকে আঙ্গুল তোলে। কিন্তু একবারো
ভাবে না তার পরিবারের সাথে যদি এমন হত?
আর ধর্ষকের জন্য ছেলে মেয়ে উভয় দায়ী।
কারন, আমাদের মনটা ঠিক তখনি নিকৃষ্ট পর্যায় থাকে।
ফ্যাশানের নামে আমরা, মেয়েরা ছেলেদের
শার্ট প্যান্ট পরি। কিন্তু একবারো ভাবি না এসব পরলে
তার দিকে কারা লোলুভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
আমরা মুসলিমতার নামে, বোরখা পরি টাইট করে।
কিন্তু একবারো ভাবি না এই পোষাকে তার বাহ্যিক
সৌন্দর্য কেমন পর্যায়ে যাবে।
আমরা ছেলেরা সমাজে বাস করি, কিন্তু একবারো
ভাবি না এই সমাজেই ধর্ষন হয়। তারা পাড়ার মোড়ে,
রাস্তায় দিন রাত ভোর টিজ করে বেড়াবে। এখন
তাদের সামনে যদি এমন পোষাক পরে কেউ যায়।
নিশ্চয় সেই ছেলেদের মনটা আরো নিকৃষ্ট
হবে। ফলে যা হবার তাই হবে। আমরা ছেলেরা
নিজের ধর্মের কথা ভুলে রাস্তায় আড্ডা মেরে
বেড়ায়। যদি আমরা সৃষ্টি কর্তার ভয়ে পরোপারের
জন্য ভালো কাজ করি, নামাজ পড়ি তাহলে এমন ধর্ষক
আর হবে না সমাজে। এমন বাজে ছেলে আর
হবে না সমাজে। শালীনতা বজায় রেখে পোষাক
পরি তাহলে হবে না এই সমাজে কেউ ধর্ষিতা।
- বাহহ....(সবাই একসাথে)
আমি কথাগুলো বলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লাম। মনে
পড়লো আমিও তো এই সমাজের একজন খারাপ
ছেলে। যার হাতে খুন হয়েছে কত মানুষ। তবে
আমি সেটার থেকে বের হতেই এখানে এসেছি।
ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টাতে আছি।
...
ক্লাস শেষ করে আমি সবার শেষে ও একটু দেরি
করে ক্যামপাস থেকে বের হলাম। ক্যামপাস
থেকে বের হতেই একটু দুরে আসতেই
দেখি..
কয়েকটা ছেলে নেহাকে টিজ করছে। সামনে
যেয়েই..বললাম
- এখানে কি হচ্ছে?
- সরি ভাই...আপনি এখানে জানতাম না। ভুল হয়ে
গেছে। (ওদের মধ্যে লিডার টাইপ ছেলেটা)
সে কথাটি বলেই দৌড়ে পালালো..তখনি নেহা আমার
দিকে তাকালো।
- কে তুমি? (নেহা)
- মানুষ..
- সে তো বুঝলাম..কিন্তু ওরা তোমার দেখে ভয়
পেয়ে চলে গেলো কেনো?
- আমি কি জানি?
- তোমাকে ওরা ভাই বললো..কে তুমি?. সত্যি
করে বলো..
নেহার দিকে রাগি চোখ নিয়ে তাকালাম। এতে সে
চুপ হয়ে গেল। আমি আর কিছু না বলে সেখান
থেকে সোজা হেটে চলে আসলাম।
হাটছি আর ভাবছি, ওরা কিভাবে চিনলো আমায়? তাহলে
কি এখানেও আমার থাকা হবে না? আমি তো মাস্তানি
ছেড়ে দেয়ার জন্যই সবকিছু ছেড়ে চলে
এসেছি এখানে। কিন্তু ওরা আমাকে ঠিকই চিনলো..
..
(পরেরদিন)
Friday, October 26, 2018
মাস্তানি পর্ব ৩
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
আরো নতুন নতুন Golpo পড়তে ভিজিট করুন
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz