গল্প: মাস্তানি (দ্বিতীয় পর্ব)
।
- এই যে ছেলে..
কলেজে এসে ক্লাসে ঢুকতে যাবো তখনি
নেহা ডাকলো। ঘুরে তাকাতেই সে বললো.
- আপনি তো খুব বেয়াদপ। কাল কথা বললাম
অথচ.পাত্বায় দিলেন না।
- হুম..
- আবার হুম বলছেন? আচ্ছা আমরা তো সেম ক্লাস
তুমি করেই বলতেছি। ওকে..
সামান্য হেসে ক্লাসের দিকে গেলাম। সমস্থ
ক্লাসে চুপচাপ থাকি আমি। কারো সাথে কথা বলি না।
শেষের
দিকে বসি।
- আগামী সপ্তাহে তোমাদের সাপ্তাহিক
এক্সাম নিবো। সবাই প্রস্তুতি গ্রহন করো ঠিব
ভাবে। (স্যার)
স্যার এসে কথাটি বললো..। তবে তখনি স্যার আমার
কাছে আসলো..
- আচ্ছা নিলয় তোমার বাসা
কোথায়?
-......
- কি হল বলো..? (স্যার)
- স্যার আমি একটু বাইরে
যাবো..
- ওকে..
স্যারের কাছ থেকে চলে আসলাম। কারন, আমি জানি
না আসলে স্যারের কথার উত্তর দিতে হত। আর
আমি
চাই না কেউ আমার সম্পর্কে জানুক। আমি চাই না
কেউ জানুক আমি মাস্তান। আমি খারাপ ছেলে। ফেলা
আসা দিনগুলির মত চাই না আর
আমি লাঞ্চনা।
..
বাইরে থেকে ক্লাসে আসলাম আবার। সোজা
বেন্চে এসে বসলাম। তখনি দেখি নেহা আমার
দিকে তাকিয়ে আছে। সবার কাছে ক্ষ্যাত হতে
পেরেছি। কিন্তু নেহা
কেনো তাকাচ্ছে? তখনি স্যার বললো..
- আচ্ছা বলো তো তোমরা, মানুষ মননশীল। সবাই
জানি আমরা আমাদের কোনো এক সময় মরতেই
হবে। কিন্তু আমরা মানুষরা কেনো এত বড়াই করি?
কেনো দুনিয়াতে এত কিছু করি?
স্যারের কথা শুনে ক্লাসে কেমন যেন নিরাবতা ভর
করলো। সবাই যে যার মত লজিক নিয়ে স্যারের
সামনে তুলে ধরছে। আর আমি আমার জায়গায় বসে
সব দেখছি।
ঠিক সে সময় রফি বললো..
- স্যার নেহা তো ফার্স্ট গার্ল তাই আমরা ওর কাছ
থেকে জানতে চাচ্ছি।
তখনি সবাই একসাথে ইয়েস
বললো.।
নেহা উঠে দাঁড়াতেই বললো...
- স্যার আমরা সবাই জানি জন্মালেই মরিতে হয়। কিন্তু
মানুষ সেটা ভুলে যায় তার সমাজের কু ব্যবস্থার
মধ্যে পড়ে। মানুষ ভুলে তার অবস্থানকে। তাই তারা
দুনিয়ার মায়াতে পড়ে সব ভুলে বসে।
- হুমম..আর কেউ বলবে? (স্যার)
তখনি রফি আমার হাতটা তুলে ধরলো..। আমি হাবার মত
ওর দিকে তাকালাম। কিন্তু স্যার তখনি বললো..
- হুমম নিলয় তুমি বলো।
খানিক চুপ থেকে আশেপাশে তাকিয়ে নিলাম। সবার
মাঝে নিরাবতা ভর করেছে কিন্তু নেহা আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। তখনি বললাম..
- স্যার আমরা জানি মানুষ মরণশীল। এটাই জানি
আমাদের কোনো এক সময় মরতেই হবে। কিন্তু
আসল কথা হল আমরা বড়াই করি কেনো? আমাদের
যেকোনো সময় চলে যেতে হবে ওপারে
তবুও আমরা বড়াই করি। আসল কথা হল মানুষের মন যত
নরম ততটাই নিকৃষ্ট। কারন, আমরা উপরে উপরে যত
যায় দেখাই না কেনো, ভিতরে থাকে
অহংকার, লোভ। মূলত লোভ টাই আমাদের মনটাকে
নিকৃষ্ট করে তোলে ফলে আমরা ব্যভিচার এ লিপ্ত
হতে থাকি। দুনিয়ার সাময়িক সুখে তখন বিভর হয়ে যায়।
এর ফলে ভুলে যায় আমাদের মরন সংবাদের কথা। যা
এক চরম সত্য। সুতরাং মানুষের মনে
সম্পদের অহংকার, লোভ, উপরে ওঠার চেষ্টাতে
বিভর
থাকা এসবের কারনে আমরা সব ভুলে বসি। তাই এত
বড়াই করে চলেছি।
কথাগুলো শেষ করতেই ক্লাসে একটা হাত তালির
রোল পড়ে গেলো। তখনি নেহার দিকে চোখ
পড়লো,
মেয়েটা সেই থেকেই তাকিয়ে আছে আমার
দিকে। হুট করেই দেখলাম সে মুচকি হাসলো
তাকিয়ে।
মাথাটা নিচু করলাম..
- চমৎকার বলেছো নিলয়.
(স্যার)
.
ক্লাস শেষ করে ক্যামপাস থেকে বের হতে
যাবো, তখনি নেহা আসলো আমার কাছে..
- আমি সরি।
- কেনো? (আমি)
- আসলে প্রথমদিন তোমাকে ক্ষ্যাত, বেয়াদপ
বলে কত
কথা বলেছিলাম।
- হিহিহি..
- হাসছো কেনো?
- কারন, আমি যদি ক্লাসে ভালো কিছু না বলতাম তবে
তুমি কি এসে কথা বলতে? আমি ক্ষ্যাত ই থাকতাম
তোমার কাছে। সো ইটস ওকে। তুমি তোমার মত
থাকো...
কথাটি বলে সেখান থেকেচলে আসতে যাবো।
তখনি
নেহা বললো..
- তোমার বাসা কোথায়? আর তুমি হুট করে থার্ড
ইয়ারে ভর্তি হলে কেনো??
কথাটা শুনে ওর দিকে তাকালাম। কিন্চিত হেসে আমি
ঘুরে চলে আসলাম। ফুটপাত ধরে হাটছি, আর মনে
মনে পুরোনো কথা ভাবছি। যে ছেলের দিকে
তাকাতে
মানুষ ভয় পেত আর সেই ছেলের সাথেই এখন
কত লোক কথা বলছে। আসলেই সবাই ঠিকই বলে,
ভালো মানুষ হতে কোনো অর্থের দরকার
পড়ে না। আমি ভাবিনি ভালো মানুষ হতে পারবো।
তবে আজ মনে
হচ্ছে ঠিক রাস্তাতেই যাচ্ছি। বড্ড মনে পড়ছে
আব্বুর কথা। ওনার চলে যাওয়ার সময় শেষের কিছু
কথা খুব মনে পড়ছে।
জোরে হেসে উঠলাম। সবাইআমাকে খারাপ
ভাবে। কিন্তু কেউ কোনোদিন জানতে চাইনি আমি
কেনো
খারাপ হলাম?সবাই আমাকে মাস্তান বলে পিছনে কতই
না গালি দেয়। কিন্তু কেউ কোনোদিন জানতে
চাইনি আমি কেনো মাস্তান? কেন আমি মাস্তানি করি?
আসলে আমরা সবাই মানুষ। তবে আমাদের সঠিক
মনষ্যত্বের অভাব। আমরা পাপি কে ঘেন্না করি কিন্তু
তার পাপকে না
.
(পরেরদিন)
.
ক্যমপাসে বসে আছি। তখনি নেহা আসলো..
- এটা ধরো.
- কি এটা?
- নোটস, আগামী সপ্তাহে তো এক্সাম তাই
তোমাকে
দিচ্ছি।
- লাগবে না।
- মানে? তুমি তো নতুন, জানোই না যে কেমন
হবে।
- দরকার নাই বললাম না?
(ঝাড়ি দিয়ে)
কথাটি বলে নেহার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে
তখনও তাকিয়ে আছে। ধপ করে আমার পাশে সে
বসে
বললো..
- কে তুমি? তোমার বাসা
কোথায়? (নেহা)
ঘুরে তার দিকে তাকালাম। নেহা আমার দিকে তাকিয়েই
কথাটি বললো..
- কেনো? (আমি)
- আমি জানতে চাই। কারন, আমি দেখেছি তুমি কারো
সাথে মিশো না। কারো সাথে কথা বলো না। তাই
ভাবলাম..
- কি?
- আমি জানি মানুষ প্রেমে ছ্যাখা খেয়ে এমন হয়ে
যায়।
তাইভাবলাম তুমি হয়ত ছ্যাখা খেয়েছো।
নেহার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলাম। তবে কিছু না
বলে সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম। কি
বলে মেয়েটা?
যাচ্ছে তাই..
ক্লাসে বসে আছি। আজো দেখলাম, আমার পিছন
থেকে কেউ একজন কাগজ ছুড়ে নেহার গায়ে
মারলো..তখনি নেহা উঠে এসে বললো..
- ছি. নিলয়, তোমাকে আমি ভালো ছেলে বলে
মনে
করেছি। আর তুমি কি না সবার মত আমাকে
ভালোবাসি বলে দিলা? তোমার মত ক্ষ্যাত ছেলে
আর বেয়াদপ ছেলে আর একটাও নাই।
- মানে কি?
- কাগজে ভালোবাসি লিখে তোমার নাম দিয়ে
আমাকে কাগজ ছুড়ে মেরে বলছো মানে কি?
বেয়াদপ
একটা, মন চাচ্ছে থাপ্পড় দিই।
- এই যে শুনুন, আমি মারিনি।
পিছন থেকে কেউ একজন মেরেছে।
- ফাজলামো হচ্ছে?? আজ মাফ করে দিলাম,
নেক্সট টাইম এমন কিছু দেখলে তোমার খবর
আছে।
কোনো কথা না শুনেই সে চলে গেল। মাথায় রাগ
উঠিয়ে সে চলে গেলো। মন চাচ্ছে ব্যাগ
থেকে পিস্তলটা বের করে পিছনে থাকা
ছেলেটার কপালে গুলি করি, এর পর নেহাকে।
কিন্তু আব্বুর কথা মনে পড়তেই চুপ হয়ে বসে
পড়লাম। কিছু ভালো লাগছে না।
তাই ক্লাস থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। আজ
আব্বুর মৃত্যু বার্ষিকী। আব্বুর শেষ কথা
ছিলো,
- নিলয়, আমি জানি তুই রাগী, তাই রাগটাকে নিজের
নিয়স্ত্রনে রাখিস। মনে রাখিস, প্রকৃত বীর সেই,
যে তার রাগ কে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে
পারে।
এসব ভাবতে ভাবতে
ক্যামপাস থেকে বের হলাম।
(Waiting for next part
Friday, October 26, 2018
মাস্তানি পর্ব ২
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
আরো নতুন নতুন Golpo পড়তে ভিজিট করুন
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz