Monday, October 15, 2018

ভালোবাসার গল্প - ভাবনার গহীনে পার্ট 13 এবং 14

1 comment

#ভাবনার_গহীনে
writer :Afroja
Part 13 :
এভাবেই দিন যাচ্ছে আর সময় পার হচ্ছে আর সাথে রুপাঞ্জনার আফরাজের প্রতি ভালোবাসাও গাঢ় হচ্ছে । কিন্তু আফরাজ কিছুই বুঝায় না । তার মনে কি আছে সে নিজেই হয়তো জানে না । না চাইতেও রুপাঞ্জনা আফরাজ কে ভালোবাসে । আর আফরাজ সব দিক দিয়েই রুপাঞ্জনাকে প্রটেক্ট করে । এইটা কি ভালোবাসা নাকি শুধুই দায়িত্ব । রুপাঞ্জনা বার বার জানতে চেয়েও পারে নি । সব বাধা পেরিয়ে রুপাঞ্জনা জিজ্ঞাসা করতে যায় ,

_উহুম উহুম (রূপ)
_কিহ উহুম (আফরাজ)
_আসবো ভিতরে (রূপ)
_তুমি আবার কবে থেকে পারমিশন নেয়া শুরু করেছো (আফরাজ)
_নাহ মানে (রূপ)
_আরেহ আসো (আফরাজ)
_কি করছিলেন (রূপ)
_এইতো কাল একটা কেইস এর শুনানি আছে কোর্টে ওই টার ব্যবস্থা করছিলাম (আফরাজ)
_ওহ (রূপ)
_তুমি কি কিছু বলবা রুপাঞ্জনা (আফরাজ)
_নাহ মানে আসলে হ্যা মানে (রূপ)
_কিছু বলতে চাচ্ছো কিন্তু সংকোচ হচ্ছে তাই তো , তা বলেই ফেলো কি বলবা (আফরাজ)
_আসলে আমি না ,,, আমি আ,,,প,,,,, (রূপ)

ক্রিং ক্রিং........

_১ মিনিট রুপাঞ্জনা কল টা পিক করি আগে , খুব দরকারি ফোন কথা বলতে হবে একটু (আফরাজ)

বলতে গিয়েও বলা হলো না । রুপাঞ্জনা প্রতি মুহূর্তে দগ্ধে যাচ্ছে এই ভেবে যে আফরাজ এর মনে কি আছে । কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ।

সময় যাচ্ছে , দেখতে দেখতে ছয় মাস পেরিয়ে গেলো তাদের বিয়ের । অথচ তাদের সম্পর্ক টা সেইখানেই আটকে আছে । সামনে বাড়াতে চেয়েও রুপাঞ্জনা আগাতে পারে নি । কারন আফরাজ যে এক ধাপ পিছিয়েই আছে । এরই মাঝে একদিন রুপাঞ্জনার বড় বোনের আগমন ঘটে । যা রুপাঞ্জনার একদমই কাম্য ছিল না । সে তো কারো সাথে কোন রকম যোগাযোগ রাখে নি , তাহলে তার বড় বোন কিভাবে তার ঠিকানা খুজে পেলো । বোনকে দেখে খুশির হওয়ার চেয়ে অবাক হয়েছে বেশী আর তার থেকে বেশী ভয়ে ছিল । আর ভয় টা ছিল আফরাজের । যদি সে এসে দেখে তার বোন এই বাড়িতে তাহলে প্রচুর রাগ করবে কারন ৬ মাস আগে এই এদের জন্যে তাদের দুইজন কে প্রচুর বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তাতে অবশ্য আপুর কোন দোষ ছিল না ও তো ছিলই না । অবশ্য একদিক দিয়ে খুব ভালোই হয়েছিল যে সে আজ আফরাজের মতো মানুষের বউ । বোনের মেয়েটা মাশাল্লাহ অনেক কিউট রুপাঞ্জনার । রুপাঞ্জনা কে মাম্মাম ডাকে । সেও সাথে এসেছে

বোনের সাথে কথা বলতে বলতে বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে , যেখানে বাঘের সেইখানে রাত হয় । আফরাজ সাহেব চলে আসছে ।

_রুপাঞ্জনা ইনি কে ? (আফরাজ)
_ই,,,ই,,,,ইনি আমার বড় বোন (রূপ)
_হ্যা কে কে (আফরাজ)
_আমার আপু (রূপ)
_ওহ তাই (আফরাজ)
_আসসালামু আলাইকুম (বড় আপু)
_জ্বি
_রুপাঞ্জনা আমি উপরে গেলাম আতিয়া কে দিয়ে কফি পাঠাও উপরে (আফরাজ)
_হুম (রূপ)
_উনি মনে হয় রাগ করলেন তাই না রে (বড় আপু)
_না না আপু তুই বস আমি একটু আসছি (রূপ)
_এই এই এইসব কি করেছিস , এতো খাবার কে খাবে (বড় আপু)
_তুই খাবি সাথে আমার মাম্মাম ও (রূপ)

রুপাঞ্জনার বড় আপুর মেয়েটা অনেক কিউট । নাম আদৃতা । অনেক কিউট করে কথা বলে ।

রুপাঞ্জনা এই দিকে ভয়ে শেষ । আফরাজের এমন চুপচাপ থাকাই ঝড়ের আভাস । এইদিকে আফরাজের মেজাজ চরমে । সে বার বার করে বলে দিয়েছিল যে , রুপাঞ্জনা যাতে তার পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ না রাখে , কিন্তু সে সেই কাজ টাই করেছে । এখন , মেজাজটা খুব খারাপ আফরাজের । ইচ্ছে করছে রুমের সব ভেঙে ফেলতে । এমন সময় রুপাঞ্জনার বড় আপুর ছোট্ট মেয়েটা তাদের রুমে আসে । আফরাজ কে দেখছে আর বার বার লুকাচ্ছে । আফরাজের নজর সেই ছোট মেয়েটার দিকে যায় । সে বার বার লুকাচ্ছে এইটা আফরাজের নজরে পরে । তাই সে দরজার কাছে গিয়ে মেয়েটা কে ধরে তারপর , কোলে তুলে নেয় , মেয়েটা এতোই কিউট যে দেখবে সেই আদর করবে । আফরাজ কে দেখে আদৃতা একটু ভয় পেয়ে যায় । সে চুপচাপ করে আফরাজের কোলে বসে আছে ।

_তোমার নাম কি মামুনি (আফরাজ)
_আদৃতা , তোমাল নাম তি (আদৃতা)
_হা হা হা , আমার নাম তোমার মুখে দিয়ে আসবে না তো আম্মু (আফরাজ)
_আমাল মাম্মাম তোমাল তি হয় (আদৃতা)
_মাম্মাম কোন মাম্মাম (আফরাজ)
_ওইতে নিতে যাকে বলেতো তোমাকে কফি দিতে সেই তো আমাল মাম্মাম , আমাল মামুনির বোন আমি মাম্মাম বলি (আদৃতা)
আদৃতার কথা শুনে আফরাজ হেসেই যাচ্ছে ,
_ওহ আচ্ছা , সে আমার কেউ হয় না (আফরাজ)
_কিন্তু মাম্মাম যে আমাতে বলল তোমাকে আন্তেল ডাকতে (আদৃতা)
_হা হা হা , আচ্ছা ঠিক আছে , ডেকো , আর তোমার মাম্মাম আমার বউ হয় বুঝলা পাকনি (আফরাজ)
_যেমন আমাল মামুনি আমাল বাবাইয়ের বউ সেই রকম (আদৃতা)
_হা হা তুমি তো খুব পাকা পাকা কথা বলো
আচ্ছা আদৃতা একটা কথা বলো তো , তোমাদের এইখানে কে আসতে বলেছে , তোমার মাম্মাম ? (আফরাজ)
_নাহ তো মাম্মাম এর সাথে তো আমাদের কথাই হয় নাই জানো আমি মাম্মালের জন্য অনেত কেদেছি পরে আমার মামুনি মাম্মামের কাতে নিয়ে আসতে । (আদৃতা)
_তোমার মাম্মাম তোমাদের আসতে বলে নাই (আফরাজ)
_নাহ তো , জানো আন্তেল আমাল মাম্মাম অনেত খুব পতা । আমাল তব চতলেত খেয়ে নিয়েতে , মাম্মাম আমাল চতলেত গুলো দিলো না (আদৃতা)
_হা হ হা আচ্ছা আমি তোমার সব চকলেট কিনে দিবো ঠিক আছে । তোমার মাম্মাম চকলেট খায় ? (আফরাজ)
_হে তো আন্তেল অনেত চতলেত খায় মাম্মাম (আদৃতা)
_আচ্ছা আচ্ছা তাই (আফরাজ)

এমন সময় রুপাঞ্জনা এসে পরে ।

_আদৃতা মাম্মাম কোথায় তুমি ? (রূপ)
_এইতো মাম্মাম আমি এইতানে , আতো (আদৃতা)
_তুমি এইখানে কি করছো চলো মামুনি তো এখন চলে যাবে , (রূপ)
_আত্তা , আন্তেল আমি তইলা যাই (আদৃতা)
_আচ্ছা মামুনি তুমি আবার এসো , তখন তোমায় চকলেট কিনে দিবো (আফরাজ)
_আত্তা , তা তা তইলা যাই (আদৃতা)

সেইদিনকার মতন সব ঠান্ডা থাকে । আফরাজও চুপচাপ । আচ্ছা এই আফরাজ কি ? এমন কেন ? কি আছে তার মনে কে জানে ? তার মনের খবর জানতে রুপাঞ্জনার অনেক কাঠ-খর পুরাতে হবে মনে হচ্ছে । আচ্ছা দেখাই যাক না কি হয় ?



#ভাবনার_গহীনে
writer :Afroja
Part 14 :
_ইদানিং আফরাজ তেমন একটা কথা বলে না আমার সাথে । কেমন জানি হয়ে গেছে সে । কাজের চাপের জন্যে নাকি আমার কোন ভুলের জন্য কে জানে , আর কাল শুনলাম কাকে যেন divorce এর কথা বলেছেন উনি , তার মানে কি উনি আমায় এখন divorce দিয়ে দিবেন , না না কি ভাবছি যা তা , মানুষ টা খুবই ভালো একজন মানুষ , আমিও না কি ভাবছি এইসব , উনি উকিল মানুষ , তার জন্য হয়তো কাকে কি বলেছেন , কিন্তু উনি তো ক্রিমিনাল এডভোকেট তাহলে divorce এর কথা কেন বলবেন , জানি না কি হতে চলেছে । (রূপ)

রাতে রুপাঞ্জনা শুতে যাবে ওমনি আফরাজ বলে উঠে

_রুপাঞ্জনা একটা কথা বলার ছিল (আফরাজ)
_জ্বি বলুন না , শুনছি (রূপ)
_তুমি কাল থেকে অন্য রুমে ঘুমাবে কেমন (আফরাজ)
_কেন ? (রূপ)
_কেন আবার কি , ঘুমাতে বলেছি ঘুমাবে , এই চার মাস তো ঘুমালে আরো ঘুমাতে চাও নাকি বলো তো , তাছাড়া আমারও রাতে ঘুমাতে সমস্যা হয় তাই এই রুমে আর ঘুমাতে হবে না তোমার । আর তাছাড়া ফুপ্পিজান ও আর আসবে না , সো তুমি এখন অন্য রুমেই ঘুমাতে পারো (আফরাজ)
_ঠিক আছে (রূপ)
_ok thanks (আফরাজ)
_আতিয়া , আতিয়া (রূপ)
_রাত ১২ টা বাজে এখন আতিয়া কে কেন ডাকছো (আফরাজ)
_রাত ১২ টায় বললেন কথা টা তাই রাত ১২ টায় ডাকছি যদি আরো আগে বলতেন তাহলে আরো আগেই ব্যবস্থা করে ফেলতাম (রূপ)
_মানে কি (আফরাজ)
_আতিয়া এই আতিয়া , কোথায় তুমি (রূপ)
_জ্বি ভাবি ডাকছিলেন (আতিয়া)
_একটা হেল্প করতে পারবা , আমাকে আধা ঘন্টা সময় দিতে পারবা । (রূপ)
_কি যে বলেন না ভাবি , আপনি বললে সারারাত আপনার কাছে বসে থাকবো, বলেন কি করতে হবে (আতিয়া)
_আত্তু এই রুম থেকে আমার সমস্ত জিনিস আমি আগে যেই রুমে ছিলাম ওই রুমে সিফ্ট করতে হবে , একটু হেল্প করবা (রূপ)
_রুপাঞ্জনা এইগুলা কাল করলে হতো না (আফরাজ)
_কাল কেন , কেন কাল কেন , মিষ্টার আফরাজ হুসেইন আজ যখন বলেছেন আজই হোক না , কাল কি নিয়তি বদলে যাবে নাকি (রূপ)
_রুপাঞ্জনা 😠😠(আফরাজ)
_আত্তু একটু তারাতারি করো , উনি আবার ঘুমাবেন (রূপ)

সেইদিন রাতেই রুপাঞ্জনা তার আগের রুমে চলে আসে । আফরাজ পেছনে পেছনে আসে রুপাঞ্জনার৷। সে কথা বলছে কিন্তু রুপাঞ্জনা কোন কথার উত্তর দিচ্ছে না তাই আফরাজের রাগ উঠে যায় । রুপাঞ্জনা তার একটা জিনিস আফরাজের রুমে রেখে এসেছে ওইটা আনতে যায় আফরাজ ও পিছনে পিছনে আবার তার রুমে যায় , রুপাঞ্জনা দরজার কাছে পা রাখতেই আফরাজ তাকে ধরে , আর রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে ।

_এই মেয়ে দাড়াও এইদিকে , কি হয়েছে তোমার , সমস্যা কি তোমার (আফরাজ)
_কিসের সমস্যা , বরং যেই সমস্যা টা ছিল সেইটা শেষ করে দিলাম এইভাবেই । (রূপ)
_কি হয়েছে তোমার , এতো তেজ দেখাচ্ছো যে , রুমে শুতে বারন করেছি তাই জিদ দেখাচ্ছো । আমার পাশে শুতে ভালো লাগে তা বললেই তো হয় , এতো জিদ দেখাও কেন আমাকে তুমি (আফরাজ)
_lowyer মানুষ মুখটা সংযোত রাখলে খুব খুশী হবো । আপনার সমস্যা হয় , রাতে ঘুমাতে পারেন না এই সেই এই গুলা আমার সমস্যা না এইগুলো তো আপনার সমস্যা । তাই সমস্যা গুলোর সমাধান করে দিলাম
আর হ্যা আমি না চাইতেও শুনেছি আপনি নাকি আমায় divorce দিবেন । কবে কি করতে হবে বলে দিবেন আমি সব করে দিয়ে চলে যাবো এইখান থেকে (রূপ)
_রুপাঞ্জনা 😮😮 (আফরাজ)
_আরে মশাই এর থেকে তো এটাই ভালো ছিল যে ৬ মাস আগে আমাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসতেন , কারন এখনো তো তাই হতে চলেছে 😭😭😭😭 (রূপ)

এইভাবেই আফরাজ আর রুপাঞ্জনার মাঝের দুরত্ব টা আরো বেড়ে যায় , রুপাঞ্জনা এখন আর আফরাজের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথাও বলে না । এইদিকে রুপাঞ্জনার কলেজে ওর পরীক্ষার ফিস , কলেজের বেতন , সেশন ফিস এইসবের জন্য রুপাঞ্জনা আফরাজ কে আর জড়ায় না । আফরাজ কে না জানিয়ে রুপাঞ্জনা একটা কোম্পানী তে জব করা শুরু করে দিয়েছে । এইভাবে কেটে যায় আরো দুইমাস , রুপাঞ্জনা সেইরাতের পর থেকেই নিজেকে অনেকটা স্বাবলম্বী করে নিতে শিখেছে । এইসব ব্যাপার আফরাজের চোখকে এড়াতে পারে না , খোজ নেয় রুপাঞ্জনার কলেজে , সেইখান থেকে জানতে পারে রুপাঞ্জনা তার কলেজে কোন টাকা বাকি নেই সবই তো পরিশোধ হচ্ছে , কিন্তু রুপাঞ্জনা তো কোন টাকাই নেয় না আফরাজ এর কাছ থেকে , এর মাঝে আফরাজও জানে না যে রুপাঞ্জনা গত দুইমাস যাবত জব করছে , কি হচ্ছে এই সব ? এমন কি হওয়ার কথা ছিল ? তাহলে কি যেই ঝড়ের কথা বলা হয়েছিল তার আলামত শুরু হয়ে গেছে ?
সব কিছুই এখন interrogative sentence মানে প্রশ্নবোধক বাক্য ।

এইদিকে বনশ্রী তে রুপাঞ্জনার এক কলিগ একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে । অনেকদিন যাবত তার কলিগ তাকে যেতে বলছে কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে যাওয়া হয়ে ওঠে নি আর । তবে আজ রুপাঞ্জনা গিয়েছিল তার সেই কলিগের বাসায় , সেইখানে গিয়ে যা দেখলো তার জন্যে হয়তো রুপাঞ্জনা তৈরি ছিল না ।

_hello রুপাঞ্জনা , কোথায় তুমি আসছো না যে ? (মুনা)
_মুনা এই তো প্রায় চলে আসছি , একটু অপেক্ষা করো প্লিজ (রূপ)
_তারাতারি এসো (মুনা)
_হুম আচ্ছা । ভাইয়া একটু তারাতারি চালান না প্লিজ (রূপ)

রুপাঞ্জনা ভাড়া দিয়ে যেই পিছনে ফিরেছে ওমনি যা দেখলো আকাশ থেকে পরার মতন অবস্থা হয়ে গেছে ওর । কি এমন দেখলো সে ?

_আফরাজ এইখানে , বনশ্রী তে ? কি করছে এইখানে সে ? কোথায় যাচ্ছে সে ? (রূপ)

আফরাজকে উপরে যেতে দেখে রুপাঞ্জনাও পিছনে পিছনে সিড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছে , অবশ্য আফরাজ লিফ্ট এ উঠে গেছে । আর রুপাঞ্জনা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠেছে । রুপাঞ্জনা দেখে , আফরাজ তিন তলায় একটা ফ্ল্যাট এ বেল বাজিয়ে যাচ্ছে । রুপাঞ্জনা পিছনে দাঁড়িয়ে সব টা খেয়াল করছে । রুপাঞ্জনার ভাবনার মধ্যে ছেদ ঘটিয়ে দরজা টা খুলল একটা মেয়ে । মেয়েটা কে দেখে রুপাঞ্জনার পায়ের নিচের মাটি সরে যায় । কে ছিল মেয়েটা ? যাকে দেখে রুপাঞ্জনার সব এলোমেলো হয়ে গেছে ।

_তুমি এসে গেছো (মেয়েটা)
_হুম , সরি একটু লেট হয়ে গেলো (আফরাজ)
_ওহ , সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম
এসো ভেতরে এসো (মেয়েটা)
_হুম , নাজিফা শুনো (মেয়েটা)

oh my god , she is nazifa . সে চলে আসছে । তার মানে এই হচ্ছে আফরাজের পরিবর্তন এর কারন , রুপাঞ্জনার কেমন যেনো লাগছিলো , কেমন যেনো গা গুলিয়ে আসছে , মাথা টা ঘুরছে , বমি পাচ্ছে খুব । কি দেখছে সে , আফরাজ তারই চোখের সামনে নাজিফার সাথে ভিতরে ঢুকে দরজা অফ করে দেয়

রুপাঞ্জনা আর এক মিনিট ও দাঁড়ায় নি সেইখানে , সোজা নিচে নেমে আসে । হঠাৎ দাড়োয়ান কে দেখে , তখন তাকে জিজ্ঞাসা করে আফরাজ এর কথা ,

_আচ্ছা চাচা , এই গাড়ি টা যার উনি কি রেগুলার এইখানে আসেন ? (রূপ)
_হ্যা মা , এই স্যার তো বিগত দুইমাস এর উপরে হবে এইখানে আসা যাওয়া করে , কেনো মা , কে তুমি (দাড়োয়ান চাচা)
_ওহ আচ্ছা কার কাছে আসে জানেন কিছু আপনি (রূপ)
_না গো মা , এইখানে তো কত মানুষই থাকে , তাহলে কার কাছে যায় কেমনে বলবো (দাড়োয়ান চাচ)
_ওহ (রূপ)

রুপাঞ্জনার আর কিছু বলার মতন শক্তি টাও নেই । সে আর এক মুহুর্তের জন্য সেইখানে দাঁড়ায় নি । ওর পুরা শরীর অসার হয়ে আসছে । কি দেখলো সে এইসব , নাজিফা কখন কিভাবে , আর আফরাজ , সে কিভাবে পারলো রুপাঞ্জনাকে ঠকাতে । এইসব ভাবতে ভাবতে কোন মতে বাসায় আসে সে । রাখে আল্লাহ মারে কে ? বাসায় এসেই সে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে নি , সেন্সলেস হয়ে যায় । ভালোই হয়েছে রাস্তায় তো আর পরে যায় নি এইটাই অনেক ভালো ।

সেইদিন প্রায় অনেক রাতেই আফরাজ বাসায় এসেছিল , প্রায় ১ টা বাজে । হয়তো নাজিফাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল , আর নয়তো কাজ নিয়ে ।

_ভাইয়া আসছেন , এতো দেরী করলেন যে (আতিয়া)
_কাজ ছিল একটু , (আফরাজ)
_ওহ , ভাইয়া খাবার দিবো ? (আতিয়া)
_না আত্তু আমি খেয়েই আসছি , তুমি যাও (আফরাজ)
_আচ্ছা , (আতিয়া)
_আচ্ছা আতিয়া , তোমার ভাবি খেয়েছে (আফরাজ)
_🙁🙁🙁🙁🙁 (আতিয়া)
_কি হলো (আফরাজ)
_আসলে ভাইয়া ভাবি আজ অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল , শুধু অসুস্থ না অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল , কোথায় যেনো গিয়েছিল , সেইখান থেকে এসেই অজ্ঞান হয়ে যায় , পরে আমিই ধরে বসাই পরে ডক্টর কে কল দিবো এমন সময় ভাবিই মানা করছে , তারপর কয়েকবার বমিও করছে , প্রেশার মনে হয় লো হয়ে গেছে , শরীরের কি কাপ? (আতিয়া)
_আর তুমি এখন আমায় এখন বলছো আতিয়া , কল দিলা না কেন (আফরাজ)
_ভাইয়া আমি কতবার যে কল দিতে চাইলাম , কিন্তু ভাবিই বার বার না করছে , তারপর সারাদিন শুয়েই ছিল , আমি জোর করে কয়েটা ভাত খাবিয়ে ওষুধ খাবিয়ে দিয়ে আসছিলাম , এখন কি করে কে জানে (আতিয়া)
_শীট ইয়ার , এই কয়েকটা দিন ওরদিকে ঠিক মতো খেয়াল রাখতে পারি নি , এতো টাই ব্যস্ত আমি যে ওর খোজ খবর টাও রাখি নাই । দেখি কি হয়েছে ,
আরে এ তো দরজা লক করে আছে , নক করবো নাকি , যদি ঘুমায় , তখন , কি করা যায় , থাক কাল সকালে না হয় কথা বলবো (আফরাজ)
_কি দরকার আমার সাথে দেখা করার , নাজিফা কে নিয়েই তো ভালো আছেন আপনি , তাই তো আমার থেকে লুকিয়ে ওকে আলাদা ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছে , সবই তো ঠিক আছে , এখন শুধু আমার এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পালা । আর কয়েকটা দিন , একটা বাসা খুজবো নিজের জন্য তারপর চলে যাবো (রূপ)

পরদিন সকালে , আফরাজ নিচে এসে রুপাঞ্জনা কে ডাকতে থাকে । তখন আতিয়া বলে ,

_ভাইয়া ভাবি তো নাই (আতিয়া)
_নেই মানে কোথায় গেছে (আফরাজ)
_বলল তো কলেজে গেছে (আতিয়া)
_কয়টা বাজে , এখন মাত্র ১০ টা , এতো তারাতারি কলেজে গেছে (আফরাজ)
_ভাইয়া ভাবি তো দুইমাস যাবত এই টাইমেই বের হয় , ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যায় ভাইয়া তবুও বলি আপনারা এমন কেন আর ভাইয়া আপনি এমন কেন বিগত দুইটা মাস একই বাসায় একই ছাদের নিচে আছেন আপনারা কেউ কারো সাথে কথা বলেন না , কেন ভাইয়া , ভাবির সাথে কি হইছে এমন , ভাবি কত লক্ষী মেয়ে আর আপনি এমন করছেন কেন ভাবির সাথে (আতিয়া)
_ও কখন যায় কখন আসে আতিয়া (আফরাজ)
_এইতো এমন টাইমে বের হয় আর সন্ধ্যায় বাসায় আসেন (আতিয়া)
_তুমি জানতে চাও নি এতো দেরী করে কেন আসে (আফরাজ)
_দুই একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম , পরে আর জিজ্ঞাসা করি নি আর তাছাড়া আপনি ও তো রাত ১২ টার আগে বাসায় আসেন না , তাই আমিও চুপ করে থাকি । আর এইভাবেই চলছে আপনাদের দুইজনের জীবন (আতিয়া)
_আচ্ছা আতিয়া আমি বের হচ্ছি আজ আর কিছুই খাবো না (আফরাজ)

আফরাজ মূলত রুপাঞ্জনার কলেজে যাবে তার জন্য তারাতারি বের হয়ে গেছে । আজ ওর সাথে কথা বলবেই কিন্তু কে জানতো যে আরো বড় ঝড় আসতে চলেছে , রুপাঞ্জনার কলেজে গিয়ে আফরাজ তার প্রিন্সিপাল এর সাথে দেখা করে জানতে পারলেন যে বিগত দুইমাসে রুপাঞ্জনা কলেজেই ঠিক মত আসে নি , এইটা শুনে আফরাজের মাথায় বাশ পরে যায় তাহলে প্রতিদিন রুপাঞ্জনা কলেজের নাম করে কোথায় যায় ? সকালে বের হয়ে সন্ধ্যায় বাসায় যায় , এতো টা সময় সে কোথায় থাকে ? আফরাজের রাগ যেনো তার নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে । আজ কোন কেয়ামত হয় কে জানে । তাই আজ আফরাজ সোজা বাসায় চলে গেলেন , আজ সে সারাদিন বাসায় কাটায় , সন্ধ্যার আগে সে নিচে ড্রইং রুমে এসে সোফায় বসে অপেক্ষা করছে রুপাঞ্জনার ফেরার পথের দিকে । আল্লাহ জানে আজকে কি হবে । অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি হয়ে নাজিফার এমন আগমন টা সত্যিই রুপাঞ্জনা আর আফতাজের জীবনে অনেক বড় তুফান নিয়ে এসেছিলো । কিন্ত এখন কথা হচ্ছে , নাজিফা কেন ফিরে এলো ? তার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ? আবার নাকি divorce হয়ে গিয়েছে । তাহলে কি divorce এর পরে সে আবার আফরাজের জীবনে ফিরে আসতে চাচ্ছে ? কিন্তু আফরাজ , সে কি করে এইটা মেনে নিতে পারে ? সবই তো interrogative mark মানে প্রশ্নবোধক চিহ্ন । তাহলে সঠিক উত্তর টা কে দিতে পারবে । আপাতত , রুপাঞ্জনার কপালে আজ কি শনি আছে সেইটা দেখা যাক ।



To be continue.........😉😉😉😉😉

1 comment :

  1. আরো নতুন নতুন Golpo পড়তে ভিজিট করুন
    www.valobasargolpo2.xyz

    ReplyDelete