রম্য গল্পঃ-
এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আমায় দেখেই খালুর প্রথম প্রশ্ন,তোর মুখে দাড়ি নাই কেনো?
-দাঁড়ী,কমা বইয়ের মাঝে থাকে মুখে না।
-তোদের কারণেই ইসলামটা ডুবলো।
-আপনার মুখেও তো দাড়ি নাই
-এই যে রাখছি না হাল্কা হাল্কা দেখিস না
-খালু এটাতো ফ্রেঞ্চকাট।
-দাড়ি তো। চল্লিশ কদম দূর থেকে দেখা গেলেই হলো।
-কই থেইকা পান এইরকম বাকওয়াস হাদিস?
-আমি সৌদিআরব থাকি। আমারে শিখাবি তুই?
আমি আর কোন কথা না বলে খালুর ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললাম," আসরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। এয়ারপোর্টের মসজিদে পড়ে নেন।
-এসি আছে মসজিদে?
-জানি না।
- তাহলে বাসায় গিয়ে কাজা পড়বো। আমি আবার এসি ছাড়া থাকতে পারি না।
কথাটা শুনে কিছু বিশুদ্ধ বাংলা গালি দিতে ইচ্ছে করছিলো। সম্পর্কে খালু হয়। তাই চুপ থেকে গেলাম। শুধু মনে মনে বললাম, "ফকিন্নির পুতের নাম মিয়া খাঁ।"
গাড়ীতে বসে আমিই প্রথম কথা বললাম। জিজ্ঞেস করলাম,
-খালু আপনার টয়লেটেও কি এসি আছে?
- আস্তাগফিরুল্লাহ! এটা কি ধরণের প্রশ্ন?
-জিগাইলাম আর কি। তবে টয়লেটে এসি থাকলে কিন্তু ভেতরটা পরিস্কার হয় না। কারণ গরমে শরীর ঘামে ; সেই সাথে পেটের ভেতরের সবকিছু হজম হয়ে টুক করে বের হয়ে যায়। তারপর শুধুই শান্তি.. আহা!
খালু এমনভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে মনে হচ্ছে গিলে খাবেন আমায়। প্রায় বিশ বছর ধরে সৌদি আছেন। শেষবার দেশে এসেছিলেন তিন বছর আগে। তিন বছর পর এসে টয়লেটে এসি আছে কিনা এমন কোন প্রশ্নের আশা তিনি অবশ্য করেন নি।
খালু চুপ হয়ে আছে দেখে আমি গাড়ীর ক্যাসেট প্লেয়ারে গান ছাড়লাম। বাহ! কি গান জেমসের।
- বৈশাখী ঝড়ে সে রুমাল উড়িয়ে দিয়ো ; বৈশাখী শুভেচ্ছা নিয়ো।
যথারীতি খালু বাগড়া দিয়ে বললেন, গান শুনলে পাপ হয় জানিস না? আরবী গান থাকলে আরবী গান ছাড়।
-খালু গান তো গানই। আরবী শুনেন আর বাংলা শুনেন পাপ তো দু'টাতেই।
-আমি সৌদি আরব থাকি। আমারে শিখাবি কোনটা পাপ?
কি আর করা! ক্যসেট প্লেয়ার অফ করে দিলাম।
খালু দেশে আসার কিছুদিন পরই নির্বাচন। আমিও আমার জীবনে প্রথমবার ভোট দিবো। নির্বাচনের আগের দিন একটা বিশেষ প্রয়োজনে খালুর বাসায় গেলাম কি যেনো কাজে।
আমায় বাসায় আসতে দেখেই খালু জিজ্ঞেস করলেন,কাল কাকে ভোট দিবি?
- দেখি কে এক হাজার টাকা দেয়।
আমার উত্তর শুনে খালু রেগে গেলেন। বললেন,চৌধুরীরে ভোট দিবি।
-খালু ওরা তো রাজাকার।
- আমার চেয়ে বেশী জানিস ? মুক্তিযুদ্ধের সময় তুই ছিলি?
- আপনিও তো ছিলেন না। বাবার কাছে শুনছিলাম সবার আগে আপনি ভারতে পালিয়েছিলেন।
খালু আমার কথা শুনে রেগে বললেন 'তুই জাহান্নামেও ঠাঁই পাবি না'
আর কথা বলার সুযোগ পেলাম না। খালা কিচেন থেকে চা নাস্তা হাতে করে নিয়ে এসে বললেন, এই তোদের তর্ক থামা। নাস্তা কর।
আমি আর দেরী করলাম না। গরম গরম ডালপুরি চায়ে ডুবিয়ে খেতে লাগলাম। আহা কি টেস্ট। খেতে খেতে খালাকে বললাম, "আপনার এক কপি ছবি আর আইডি কার্ডের ফটোকপি দেন তো। ব্যাংক একাউন্ট খুলবো। আম্মু গ্রামের বাড়ী। আমার টাকা আসবে কিছু। এই সপ্তাহের মাঝেই খুলতে হবে।
খালা জানতে চাইলেন,কোন ব্যাংকে খুলবি?
-স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে
কেনো ? ইসলামী ব্যাংকে খোল।
-ব্যাংক তো ব্যাংকই। সব ব্যাংকই সুদ দেয় এবং নেয়।
-কিন্তু ইসলামী ব্যাংকেরটা জায়েজ আছে। ওরা ইসলামী তরিকায় সুদ দেয় এবং নেয়।
খালার কথা শুনে আমার ডালপুরি গলায় আটকে গেলো। চায়ের কাপটা হাত থেকে টেবিলে রেখে খালার হাত ধরে বললাম, " সত্যি করে বলেন তো খালা! আপনি আর খালু এরকম আজগুবি কথা কই পান?
-তোর খালু বলছে
আমি খালুর দিকে তাকাতেই খালু বললেন, "আমি সৌদিআরব থাকি। আমার চেয়ে বেশী জানিস"
মাগরীবের ওয়াক্ত প্রায় হয়ে এসেছে। আমি খালুকে বললাম,যান খালু নামাজে যান।
- আমি বাসায় পড়বো নামাজ। এই মসজিদে এসি নাই।
-খালু নবীও কি এসিতে নামাজ পড়তো ? আপনি সৌদিআরব থাকেন তো তাই জানতে চাইলাম।
-মস্করা করিস আমার সাথে?
আমি চুপচাপ উঠে দাঁড়ালাম। ভাবলাম এখানে বসে থাকলে এই লোকটা পাগল করে দিবে। যাই রিয়ার রুমে গিয়ে বসি। রিয়া হচ্ছে আমার খালুর মেয়ে। আমরা প্রায় সমবয়সী।
আমাকে উঠতে দেখে খালুর আবার প্রশ্ন, কই যাস?
- রিয়ার রুমে
- তোর কি কোন আক্কেল বুদ্ধি নাই ? রিয়া পর্দা করে। ওর রুমে যাচ্ছিস।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার জানামতে রিয়া জিন্স প্যান্ট আর টি শার্ট পরে। মাথায় অবশ্য হিজাব পরে। তবে তা রাস্তার ধুলো থেকে চুলকে বাঁচানোর জন্য। আমার মনে হয় খালু রিয়া নয়,জানালার পর্দার কথা বলেছে।
আমি আবার প্রশ্ন করলাম, " খালু আপনি কি জানালার পর্দার কথা বলেছেন?
আমি রিয়ার পর্দার কথা বলেছি
আমি খালার চোখের দিকে তাকালাম। খালা মাথা নিচু করে ফেললেন। আমি আর ভান্ডা ফাঁস করলাম না। যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেভাবে বসে পরলাম।
খালু আবার বললেন, " তোর মতো কুলাঙ্গার নাকি আমার মেয়ে। সে নামাজ পড়ে, রোজা করে, পর্দা করে। সব করে।
-হুম! আমার বাবাও একটা মেয়েই চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার সার্ভারে সমস্যা ছিলো। তাই ভুলে আমার মতো একটা কুলাঙ্গার ছেলে ডাউনলোড হয়ে গেছে। তবে আপনার সার্ভারের জবাব নাই।
খালু আর রাগ সামলে রাখতে পারলেন না। একটা কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বললেন, " বের হো এখান থেকে। আর কখনো আসবি না"
প্রায় মাস তিনেক হয়ে গেছে। আমি আর খালুর বাসার দিকে ভুলেও যাই নি। হুট করে একদিন বিকেলে খালার নাম্বার থেকে কল আসলো। রিসিভ করতেই খালু বলে উঠলেন, " আমি তোর খালু বলছি। "
-তো কি হইছে ? এখন আমি নাচুম
-একটু বাসায় আয় জলদী। খুব দরকার তোরে। "
না করার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু খালুর কণ্ঠটা কেমন যেনো লাগলো। তাই ছুটে গেলাম।
আধাঘণ্টার মাঝে চলে আসলাম খালুর বাসায়। এসে দেখি এলাহি কাণ্ড। রিয়া প্রেগন্যান্ট। খালু কিছু বলার আগেই আমি বললাম, " কুলাঙ্গার কে এবার বুঝলেন তো ? খালাকে আগেও বলেছি রিয়া এক ছেলের সাথে আগানে বাগানে ঘুরে বেড়ায়। খালা আমার কথার পাত্তাই দেয় নি।
খালু আমার হাত ধরে বললেন, " এখন কি করি বল তুই। "
- আপনি তো সৌদিআরব থাকেন। আপনিই ভালো জানেন।
-বাচ্চা ফেলে দেবার জন্য কোন পরিচিত ক্লিনিক আছে তোর
- ছিঃ খালু! এটা আমার দ্বারা সম্ভব না। আপনি চাইলে আমি ওই ছেলের ফ্যামিলির সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারি।
কি আর করা ? অনিচ্ছাসত্ত্বেও খালু রাজী হয়ে গেলেন।
ছেলের ফ্যামিলি প্রথমে রাজী ছিলো না। কিন্তু থানা থেকে পুলিশ নিয়ে যাবার সাথে সাথে পরদিনই বিয়ের জন্য রাজী হয়ে গেলো। ধুমধাম করে না হলেও আত্বীয়স্বজন সবাইকেই ইনভাইট করা হলো। খাওয়া দাওয়া ও বিয়ের পর্ব শেষ। এখন মেয়ে বিদায় করার পালা।
বাসার গেটে বরের গাড়ী রাখা। আমরাও দাঁড়িয়ে আছি। রিয়া চলে যাবার আগে বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা কান্না করছে। চোখে কোন জল নেই। আর আমি কাজীর ফিস নিয়ে কাজীর সাথে দেন দরবার করছি।
এমন সময় একটা ট্যাক্সি এসে ব্রেক কষলো। দরজা খুলে দুধের মতো শাদা এবং জিরাফের মতো লম্বা একটা মহিলা নামলেন। অবশ্য শুধু মুখটাই দেখলাম ; বাকী শরীর কালো বোরখায় ঢাকা। সাথে একটা চার কি পাঁচ ববছর বয়সী একটা বাচ্চা। যদিও মানুষের বাচ্চা ; কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে ছোটখাটো হাতির বাচ্চা। মে বি আরবের অধিবাসী হবে। তবে বাচ্চাটার চুলগুলো আমাদের মতো কোঁকড়া।
ট্যাক্সি থেকে নেমেই কি কি যেনো বলতে লাগলেন আরবীতে। কাজী সাহেব চমকে উঠলেন। আমি কাজী সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, " আপনি তো আরবী জানেন। দেখেন তো কি বলে এই মহিলা "
কাজী সাহেব গিয়ে মহিলার কাছে গিয়ে আরবীতে কি কি যেনো কথা বললেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, " তোমার খালুর স্ত্রী এসেছেন। "
সবাই অবাক হয়ে খালুর দিকে তাকালো। খালু তোতলাতে তোতলাতে বললেন, " ইয়ে মানে আমি একা একা সৌদিআরব থাকি তো। তাই আর কি আরেকটা বিয়ে করে ফেলেছি!
( সমস্ত গল্প, ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই।কোন অংশ বা পুরো গল্প এবং কোন চরিত্র কোন ব্যক্তি বা কোন ঘটনার সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়। শুকরিয়া)
বাংলা রম্য গল্পটি আপনার ভালো লেগে থাকলে আমাদের জানাবেন। এমন আরো সব ভালোবাসার গল্প, হরর গল্প, রোমান্টিক গল্প, রহস্য গল্প, কবিতা পড়তে আমাদের সাথে রাখুন।
?
আরো নতুন নতুন Golpo পড়তে ভিজিট করুন
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz