------:কাউয়া সুন্দরী:------
:
:
বাসাটা চেন্জ করলাম আজকে।মালামাল নিয়ে
নতুন বাসায় এসে ঘর গুছাতে গুছাতে অনেক রাত
হয়ে গেল।
তারপর দিলাম এক ঘুম।
ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরী হয়ে গেল।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করা শেষ না
করতেই হাতে মা বাজারের ব্যাগ ধরাইয়া দিল।
বিকালে আমাদের বাসায় ছোট চাচি আসলো।
নতুন বাসা কেমন হয়েছে তা দেখতে।
কিন্তু পিচ্চি কাজিন সাদ খুব কান্না করতেছে।
আমাকে বললো, "তুই ওকে নিয়ে ছাদে যা।একটু
ঘুরে আয়।ড়েখ কান্না থামে কিনা।"
পিচ্চিরে কোলে নিয়া দোতলা থেকে সাত
তলার ছাদে উঠতে আমার জান কোরবান।
হাপাইতেছি।
মাগার পিচ্চি শুধু কান্না করে।
কোনোভাবেই থামাইতে পারতেছি না।
হঠাৎ দেখলাম পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে একটা
কাউয়া...!!!
আমি কাজিন সাদকে বললাম...
-- ওই যে ভাইয়া,দেখো একটা কাউয়া।কত্ত
সুন্দর!!! (হেহ কাউয়া নাকি সুন্দর)[আমি]
-- এইযে হ্যালো।কি বললেন আমাকে!!?? আমি
কাউয়া??চোখে কি সমস্যা আছে নাকি??
(মেয়ে)
আমি তো পুরাই টাসকি।একটু ভয়ও পাইলাম।
সিনেমায় আর গল্পে ইচ্ছাধারী নাগ নাগিনীর
গল্প শুনছি।যারা যখন খুশি সাপ থেকে মানুষে
রুপান্তরিত হতে পারে।
আর এতো দেখি বাস্তবে ইচ্ছাধারী কাউয়া। যখন
খুশি কাউয়া থেকে মানুষ হয়।
আমি আআআআ চিৎকার করে ছাদ থেকে
পিচ্চিরে কোলে নিয়া দৌড়।
--- ওরে বাচাও, ইচ্ছাধারী কাউয়ার হাত থেকে
আমারে বাচাও!!!(আমি)
তারপর নিচে গিয়া কাউকে কিছু বলি নাই।
পরদিন কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম। বের হতে
গিয়ে দেখি নিচে সেই ইচ্ছাধারী কাউয়া
দাড়াইয়া আছে।মনে হয় আমার জন্যই দাড়াইয়া
আছে।খাইছেরে।শাওন তুই পালা। আজকে
কলেজে যাওয়া লাগবে না।
আআআআ কইরা চিৎকার দিয়া বাসায় দৌড়।
সেদিন বিকালে ছাদেও যাইনি।
মোটকথা বাসা থেকেও বের হইনি। ওই ইচ্ছাধারী
কাউয়ার ভয়ে।বলা তো যায়না।যদি আমারে
ঠোকড়াইয়া মাথা হাফ ন্যারা করে দেয়।
পরদিন কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম হঠাৎ কে
যেন বললো....
-- এক্সকিউজ মি...!!(মেয়ে কন্ঠ)
তাকিয়ে দেখি সেই ইচ্ছাধারী কাউয়া।আমি
আবারো....
-- আআআআ......(আমি)
-- এই থামেন।কি খালি বাচ্চাদের মত এ্যাএ্যা
করেন।সমস্যা কি??(মেয়েটা)
-- কোন সমস্যা নাই!!
-- তাহলে পড়শু ছাদে আমাকে কাউয়া বললেন
কেন??
-- সরি ভুল হয়ে গেছে।আমি বুঝতে পারিনি আপনি
ইচ্ছাধারী কাউয়া।আমাকে ক্ষমা করে দিন।
-- মানে??
তারপর আমি সব খুলে বললাম। তখন মেয়েটা তো
শুধু হাসে।হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত
অবস্থা।
সেদিন ওটুকুই কথা হয়েছিল।
আর নামটা জানতে পারছিলাম।নাম শোভা।
ভারী ঝাল নাম।
আমি আমার ঘরটা ভাল মত গুছাচ্ছি।হঠাৎ একটা
মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসলো!!
-- শাওন ভাই প্যান্টটা দিন।(মেয়ে)
আমি এদিক ওদিক তারপর পিছনে ঘরের চারপাশ
খুজলাম কোনো মেয়ে খুজে পেলাম না।কন্ঠটা
তো ইচ্ছাধারী কাউয়ার মত লাগতেছে।
নির্ঘাত অদৃশ্য হয়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছে।
আমি চিৎকার দিবো দিবো ঠিক তখনই।।।।
-- আরে এদিকে দেখেন।(মেয়ে)
-- তাকিয়ে দেখি আমার জানালা বরাবর পাশের
বিল্ডিংয়ের জানালা দিয়ে আমাতে
ডাকতেছে।
পাধের বিল্ডিংটা আমাদের বিল্ডিং থেকে
প্রায় দুইহাতের দুরত্বে।
আর জানালাটাও আমার রুমের জানালা বরাবর।
-- ওহহহ আপনি ওখানে??(আমি)
-- হুম,প্যান্ট দেন।(শোভা)
-- মানে??
-- আরে আমার ভাইয়ের প্যান্ট।
--তা আমি কোথায় পাবো??
-- ওইযে আপনার বিছানায় দেখেন
-- আরে এটা এখানে কিভাবে এল??
-- আর বইলেন না। আমার ছোট ভাইটার বয়স আড়াই
বছর।খুব পাজি।
হাতের কাছে যা পায় সব জানালা দিয়ে ছুড়ে
ফেলে দেয়।
আর কিছু না পেলে নিজের পরনের প্যান্ট খুলে
ছুড়ে ফেলে দেয়।
-- হাহাহা...!!
-- হাইসেন না। প্যান্টটা দেন।
তারপর প্যান্ট দিলাম।আমার কি কপাল। ওই রুমটা
ওই মেয়েটারই ছিল। মাঝেমাঝে কথা হতো
জানালা দিয়ে।
তখন ওর নাম পাল্টে নাম দিলাম "কাউয়া সুন্দরী"
আমার বন্ধুদের কথাটা বলতে ওরা বল্ল প্রেম শুরু
কর।কিন্তু আমি হচ্ছি ছাত্রজীবনে প্রেম করার
ঘোড় বিরোধী। তবুও চিন্তা করি প্রেম না করি।
হুদাই লাইন মারমু।লাইন মারতে তো আর পয়সা
লাগে না।
আর লাইন মারলেই যে প্রেম করতে হবে এমন কথা
কোনো পুস্তকে লেখা নাই!!
যেই ভাবা সেই কাজ।
পরদিন থরকে শুরু হলো লাইন মারা।
পড়তে বসতাম জানালা সোজা।আর ওকে
দেখলেই মুখের দাঁতগুলো বের করে হনুমানের মত
দাঁত ক্যালিয়ে হাই দিতাম।
কখনো কখনো ফ্লাইং কিস দিতাম।কখনো কখনো
আবার কাগজে আই লাভ ইউ লিখে ওতে
দেখাতাম/ছুড়ে ওর রুমে মারতাম।
আগে কথা বলতে বলতে ফেসবুক আইডি আর
নাম্বার আনছিলাম তো।
এজন্য ফোন দিতাম।ফোন দিয়েই প্রথম কথা
বলতাম "আই লাভ ইউ"
ফোনেও মেসেজ পাঠাতাম।
বাট ও রিপ্লে না দিলেও সিন করে রাখতো।আর
ব্লক করতো না।নাম্বারও ব্লাকলিস্টে ফেলতো
না।
ফোনদিলে হাসতো।
আর জানালাও বন্ধ রাখতো না।শুধু একটু রাগি
চোথে তাকাতো।
এভাবে একমাস লাইন মারতেছি।
মজাই লাগতেছে লাইন মাইরা।ইনজয় করতেছি
হাফ বখাটে লাইফ।
আহা লাইন মারায় এত মজা জানলে কত আগেই শুরু
করতাম।
একদিন রুম থেকে মা ডাকলো। ড্রয়িং রুমে গিয়ে
দেখি। কাউয়া সুন্দরী ওরফে শোভা
সোফাই বসে আছে।আমিতো পুরাই টেনশন রাইখা
থার্টিনশনে পইড়া গেলাম।খাইছে মায়রে বইলা
দিলো নাকি!!
তাইলে আমি বাপ মা থাকতেও অনাথ হইয়া যামু
মানে আমাকে ত্যাজ্যপুত্র কইরা দিবে।
যাইহোক আল্লাহ মালুম।
ভয়ে ভয়ে বললাম...!!
-- হ্যা মা বলো কেন ডাকছো??(আমি)
-- দেখ তোর বান্ধবী আসছে।বললো কি নাকি
পড়া মিস করছে।সামনে এক্সাম।এগুলা তোর
থেকে বুঝে নিতে এসেছে।আর নোট নিতে
এসেছে।(মা)
-- ওহহহ।(স্বস্তির নিঃশাষ)
--তোরা কথা বল।আমি রান্নাঘরে গেলাম।রান্না
করতেছি।
আমি চুপচাপ অপরাধীর মত সোফায় বসলাম।
ভাবলাম হয়তো বকবে।আগে থেকে বকুনি হজম
করার জন্য প্রস্তুতি নিতেছি।
তারপর শোভা বললো!!
-- কি মিস্টার শাওন!! কেমন আছো??(শোভা)
-- ভালো!! আপনি??(আমি)
-- আপনি?? ওই আপনি কেন?? আমি কি তোমার
দূরের কেউ??
-- না মানে বেশি দূরের না।পাশের বিল্ডিংয়েরই
তো।
-- হাদারাম। সেকথা বলিনি। কালকে কোথায়
ছিলে??
-- কেন??
-- না জানালার কাছে গেলে না যে!!??
-- ওহহহ এক ফ্রেন্ডের বাসায় গেছিলাম।
-- ওহহহ। আমাকে একটু বলে গেলে কি হতো।
-- কেন??
-- আমি কত টেনশন করছি জানো??
-- কেন??
-- তুমি কেন জানালার পাশে আসলে না। কোনো
বিপদ হলো নাকি।জানো সারারাত ঘুমাতে
পারিনি।এজন্য আজ সকাল হতেই তোমার বাসায়
আসলাম!!
-- এ্যা!!(আমি পুরাই টাসকি।কি বলতেছে কিছুই
বুঝতাছি না)
-- এই পাঙ্গাস মাছের মত মুখ হা করে আছো
কেন?? এক্কেবারে বাজে লাগে।মুখ বন্ধ করো!!
একটু লজ্জা পেলাম।
-- কিন্তু আপনি এত কষ্ট করগে গেলেন কেন??
(আমি)
-- আবার আপনি?? ভালবাসার মানুষকে কেউ
আপনি বলে??(শোভা)
(খাইছে মাইয়া বলে কি??)
-- মানে কি। কে বললো আপনি আমার ভালবাসার
মানুষ।
-- দেখো ন্যাকামী করবা না।এমনিতে তো অনেক
বাদড়ামী করো।কাগজে ভালবাসি লিখে
জানালা দিয়ে আমার রুমে ছুড়ে মারো। ফোনে
ফেসবুকে কত হাজার বার বলেছো মনে রাখাও
দায়। আর এখন এত ভদ্র সাজো কেন??
-- আরে আমি মজা করছিতো।এমনি এমনি ওগুলা
করতাম!!
-- কি??!!!
-- হুম।
-- তুই তাইলে আমার সাথে মজা করছোস??
-- হুম!!
-- করছো ভালো করছো।এখন থেকে প্রেমও
করবি!!
-- না।
-- কেন??
-- আমার ইচ্ছা।
-- থাপ্পর চিনোস??এতদিন আমারে লাইন
মারছোস।আর এখন প্রেম করবি না!??
-- ইসসস লাইন মারলেই যে প্রেম করতে হবে।কোন
পুস্তকে লেখা আছে?? হ্যা??
-- থাকুক বা না থাকুক।তুই প্রেম করবি আমার
সাথে।
-- ইসসস মাগনা প্রেম মনে হয়।
-- হতচ্ছাড়া এতদিন লাইন মাইরা মজা নিবি।আর
প্রেম না কা চইলা যাবি।তাতো হবে না।তুই
আমার সাথেই প্রেম করবি আর তা আজ এবং এখন
থেকে।নইলে তোরে মাইরা ফালামু।
-- বললেই হইলো!! আমি প্রেম করমু না।
(মাইয়া সোজা আমার জামার কলার ধরলো!!)
-- ওই তুই কি মজা পাইছোস।লা যখন মারছো।
প্রেমও করবি।নইলে....
-- নইলে??(একটু ভীত হয়ে)
-- তোর সব চিঠি যেগুলা তুই জানালা দিয়া
দিছোস।মোট ৭৬২ টা।সবগুলা তোর মায়ের কাছে
দিমু।আর মেসেজগুলাও দেখামু।তারপর তোরে
মাইর খাওয়ামু।
-- এই না না...!!!
-- তাইলে প্রেম করতে হবে!!
-- না!!!
-- তাইলে কিন্তু চিঠিগুলা.......
-- আমাকে মাফ করে দেন প্লিজ!!!
-- কোনো মাফ নাই লাইন মারছো।সো প্রেম
করাই লাগবে।আমি যে তোর পাগলামীর কারনে
তোকে এত ভালবেসে ফেলছি।তার কোন মূল্য
নাই না??
-- নিশ্চুপ
-- বিকালে পার্কে দেখা করবি নইলে........জান
োই তো!!
-- আচ্ছা করবো!! (মুখ কালো করে!!)
-- এইতো গুড বয়।এখন আমি তাহলে!!
বাই।
বলেই আমার গালে লিপস্টিকের একটা সিল
(কিস) মেরে চলে গেল।
আর আমি বলদের মত বসে আছি। ভাবলাম কি যুগ।
ফ্রিতে একটু লাইনও মারা যায় না। ক্যান যে
লাইন মারতে গেছিলাম।এখন পুরাই ফাইসা
গেলাম। এখন কিনা প্রেম করা লাগবে।
মাইয়াও বড্ড ডেন্জারাস।প্রেম করা ছাড়া উপায়
নাই।
বন্ধুদের এটা বলা যাববে না। তাইলে ইজ্জত শেষ।
নাহ কাউয়া সুন্দরীটা ভারী মিষ্টি যদিও
ঝালের ফ্লেবার আছে। প্রেম করলে মন্দ হবে
না।
হঠাৎ মায়ের আসার শব্দ শুনে সোজা বেসিনের
দিকে দৌড়।গালের লিপস্টিকের দাগ ধোয়ার
জন্য।
এখন আসি।গোসল করে রেডি হতে হবে।বিকালে
আবার শোভার সাথে পার্কে দেখা করতে হবে।
বাই!! ভাল থাকবেন সবাই।!!
বি.দ্র.: মোবাইল দিয়ে লিখি।তাড়াতাড়ি
টাইপের কারনে লেখায় ভুল হতে পারে।ভুলগুলো
ক্ষমার চোখে দেখবেন!
.
লেখা: রাশেদ হাসান
Friday, October 26, 2018
কাউয়া সুন্দরী
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
আরো নতুন নতুন গল্প, কবিতা,জোকস পড়তে চাইলে আমার সাইটে ভিজিট করুন
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz